দেবতাত্মা হিমালয় প্রশ্ন উত্তর || দেবতাত্মা হিমালয় প্রশ্ন উত্তর class 7
দেবতাত্মা হিমালয় প্রশ্ন উত্তর || দেবতাত্মা হিমালয় প্রশ্ন উত্তর class 7
দেবতাত্মা হিমালয়
প্রবোধ কুমার সান্যাল

দেবতাত্মা হিমালয় প্রশ্ন উত্তর এই আর্টিকেলটিতে দেবতাত্মা হিমালয় গল্পের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।
দেবতাত্মা হিমালয় প্রশ্ন উত্তর: দেবতাত্মা হিমালয় বিষয়বস্তু
ডাক্তার গৃহিণীর ডাইনিং-এ প্রাতরাশ সেরে লেখক ও তার সঙ্গীরা বের হন কালিম্পং-এর রেনক্ রোড ধরে তিব্বতের উদ্দেশে। এই পথের দুর্গমতার কারণে অনেকেই গ্যাংটকের পথে যাত্রা করেন। রেনক্ রোড গিয়েছে ‘জেলাপ-লা’ গিরিসংকটে, তারপরেই তিব্বতের সীমানা। পূর্বে এই পথ ধরেই তিনজন প্রখ্যাত বাঙালি পুরুষ তিব্বত যাত্রা করেছিলেন।
তাঁরা হলেন বৌদ্ধ পণ্ডিত শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর, ভারতপথিক রাজা রামমোহন রায় এবং শ্রী শরৎচন্দ্র দাস মহাশয়। প্রায় নয়শত বছর } আগে তিব্বতে বৌদ্ধধর্ম প্রচারের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন। শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর। তিব্বতীরা তাঁকে ভগবান বুদ্ধের পরেই শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছেন। শরৎচন্দ্র দাসের ভ্রমণবৃত্তান্ত থেকেই তিব্বত বিষয়ে প্রথম সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
এমনকি বিংশ শতকের শুরুতেই স্যার ফ্রান্সিস ইয়ংহাসব্যান্ড যখন তিব্বত জয় করেন, তখন শরৎচন্দ্র দাসের তিব্বত সম্পর্কিত তথ্যকেই তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তবে এদেরও বহু আগে যশোরের } রাজপুত্র শান্ত রক্ষিত তিব্বতে গিয়েছিলেন এবং তিনি তিব্বতের লামার কাছে রাজকীয় সংবর্ধনা লাভ করেছিলেন।
কাশ্মীরের পূর্ব প্রান্তে ভারত-তিব্বত বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র হল গারটক। তাকলাকোট হল তিব্বতিদের প্রধান ঘাঁটি। কলকাতা থেকে বিমানে দিল্লি যেতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা, কিন্তু ওই একই গতিতে লাসা যেতে এত সময়ও লাগে না। কালিম্পঙে অনেক পশমের ঘাঁটি রয়েছে। পশম তিব্বতিদের প্রধান ব্যাবসা । ব্যাবসার সমৃদ্ধির কারণেই এখানে বহু অট্টালিকা আর কুঠিবাড়ি গড়ে উঠেছে।
মেঘময় আকাশে ভোরের দিকে কনকনে শীতল হাওয়াকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে চলেছিল লেখকদের গাড়ি, নানা চড়াই অতিক্রম করে অনেকটা উঁচুতে ‘গ্রেহামস হোম’-এর দিকে। এই হোমে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান আর সাহেবসুবোদের অভিভাবকহীন সন্তানগণ পড়াশোনা করে থাকে। লেখক ঘুরে দেখেন সেখানকার পরিবেশ।
প্রায় ঘণ্টা তিনেক ঘুরে তারা অভিজাত পল্লিতে ড.দাশগুপ্তের বাড়িতে ফিরে আসেন। এর এক পাশে সংকীর্ণ গলির নীচে একটি মন্দির চত্বরে দাঁড়াতেই লেখকের মনে পুরোনো দিনের ছবি ভেসে উঠল। ১৪ বছর আগে তিনি যখন এই কালিম্পং-এ এসেছিলেন, তখন এখানে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটেছিল।
সেবার রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি ও তাঁর মহান ব্যক্তিত্বের কাছে হিমালয়ের সৌন্দর্যও ম্লান বলে মনে হয়েছিল লেখকের। ২৫ বৈশাখের অপরাহ্ণে গৌরীপুর প্রাসাদে হীরেন দত্ত, রথীন্দ্রনাথ, প্রতিমা দেবী, অনিল চন্দ, মৈত্রেয়ী দেবী প্রমুখদের সামনে অমল হোমের কলম আর রজনীগন্ধার গুচ্ছ কবিগুরুর করকমলে সমর্পণ করেছিলেন লেখক।
কালিম্পং-এ নিজের ঘরে বসে কবিগুরু কবিতা আবৃত্তি করবেন ২৫ বৈশাখের একটি নির্দিষ্ট জন্মদিনে, আর তা বেতারে সম্প্রচার করতে হবে—এই উদ্দেশে কালিম্পং-এ টেলিযোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল। সন্ধ্যা সাতটা বা আটটার সময় লেখকরা কাচের ঘরের বাইরে থেকেই কবির আবৃত্তি উপভোগ করেছিলেন।
বেতারে কবির দীপ্ত কণ্ঠের মূর্ছনায় তারা আবেগে আপ্লুত হয়েছিলেন। তখন বাইরে ছড়িয়ে পড়েছিল জ্যোৎস্নার ঝরনাধারা। একটা মায়াচ্ছন্ন স্বপ্নলোকে যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন লেখক।
দেবতাত্মা হিমালয় নামকরণ:
নামকরণ হল সাহিত্যের অন্যতম প্রধান উপাদান। নামকরণ থেকেই রচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আগাম ধারণা করা যায়। তাই নামকরণকে রচনার অন্দরমহলের প্রবেশপথও বলা যায় । নামকরণ বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে, যেমন—চরিত্রকেন্দ্রিক, ঘটনাপ্রধান, ব্যঞ্জনাধর্মী ইত্যাদি। এবার আলোচনা করে দেখা যাক আমাদের পাঠ্য প্রবোধকুমার সান্যালের ‘দেবতাত্মা হিমালয়’ শীর্ষক গদ্যাংশের নামকরণটি সার্থক কি না।
আলোচ্য পাঠ্যাংশে কালিম্পং-এর যাত্রাপথের বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে তিব্বতিদের ব্যাবসাবাণিজ্যের বর্ণনাও রয়েছে। একই পথ ধরে বহু পূর্বে তিব্বতে গমন করেন যেসকল মহামানবগণ, যেমন—শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর, রাজা রামমোহন রায়, বৌদ্ধ পণ্ডিত শান্ত রক্ষিত, শ্রী শরৎচন্দ্র দাস—তাদের প্রসঙ্গও উক্ত কাহিনিতে উঠে এসেছে। তবে সবথেকে বেশি যে
অংশটি পাঠককে আলোড়িত করেছে, তা হল ১৪ বছর পূর্বে ওই কালিম্পং-এর স্মৃতিচারণ, যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এক ২৫ বৈশাখ, অর্থাৎ বিশ্বকবির জন্মদিনে কবিকণ্ঠে নবরচিত কবিতা আবৃত্তি বেতারে সম্প্রচারকে কেন্দ্র করে লেখক ও তার সঙ্গীদের মনে যে আবেগঘন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তার এক অতিসুন্দর আলেখ্য আলোচ্য গদ্যাংশে তুলে ধরা হয়েছে।
হিমালয়ের প্রসঙ্গেই লেখক বেশ কিছু অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করেছেন, যেগুলি হিমালয়কে দেবত্ব আরোপের সহায়ক হয়ে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনে অসংখ্যবার হিমালয়ের কোলে সময় কাটিয়েছেন। তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথও হিমালয়ের মধ্যে পরমাত্মার উপস্থিতি লক্ষ করেছিলেন। সুতরাং আমাদের পাঠ্যাংশের নামকরণ সম্পূর্ণভাবে সার্থক হয়েছে।
দেবতাত্মা হিমালয় প্রশ্ন উত্তর: হাতেকলমে
১.বন্ধনীতে দেওয়া একাধিক উত্তরের মধ্যে ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে নীচের বাক্যগুলি আবার লেখো :
১. ১. লামারা রাজকীয় সম্বর্ধনা জানিয়েছিলেন রাজপুত্র (তিষ্য রক্ষিত/শান্ত রক্ষিত/কুমার রক্ষিত)-কে।
উত্তর : শান্ত রক্ষিতকে।
[১.২ তিব্বতীদের প্রধান ব্যাবসা (পশম / রেশম / তাঁতবস্ত্র)-এর।
উঃ পশম।
[১৩] কালিম্পঙের ল্যান্ডমার্ক (বড়ো মন্দির / বড়ো মসজিদ / বড়ো গির্জা) ।
উত্তর বড়ো গির্জা।
[১.৪] রবীন্দ্রনাথের হাতে লেখক তুলে দিয়েছিলেন (অমৃতবাজার পত্রিকা / যুগান্তর / আনন্দবাজার পত্রিকা)-র ‘রবীন্দ্রজয়ন্তী সংখ্যা’।
উত্তর যুগান্তর।
[ ১.৫ নবরচিত একটি কবিতা রেডিওতে আবৃত্তি করতে } রবীন্দ্রনাথের সময় লেগেছিল (আধ ঘণ্টা / পঁয়তাল্লিশ মিনিট পনেরো মিনিট)।
উত্তর পনেরো মিনিট।
২. ঘটে-যাওয়া ঘটনার ক্রম অনুযায়ী নীচের এলোমেলো ঘটনাগুলি সাজিয়ে লেখো
২. ১কলকাতা থেকে তৎক্ষণাৎ জবাব এল –ও.কে
২. ২ কবি তাঁর ঘরের আসনে বসে টেলিফোনে কবিতা পাঠ করবেন।
২.৩ ২৫ বৈশাখের সন্ধ্যায় জন্মদিন উপলক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথ দেশবাসীর উদ্দেশে একটি কবিতা পাঠ করবেন।
২.৪ প্রস্তুতির সময়ে নধর মখমল বসানো চেয়ারে বসে হ্যালো * কয়েকবার ডাকলুম, ‘হ্যালো ক্যালকাটা ..’ ? ……..
২.৫ সেজন্য পাহাড়ে পাহাড়ে টেলিফোনের খুঁটি বসানো * এবং তার খাটানো হলো কদিন ধরে।
২. ৬ বেতার কর্তৃপক্ষ কবির কণ্ঠস্বরটি ধরে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে প্রচার করবেন, তাই এই ব্যবস্থা।
[২. ৭] কবির জন্মদিনের কবিতাপাঠের জন্য কলকাতা কালিম্পঙের মধ্যে টেলিফোনের বন্দোবস্ত হলো।
উত্তর ২.৩ ⇒ ২.৭ ⇒ 2.5 → 2.2 → 2.6 → 2.8 →
২.১।
৩.। নীচের বাক্যগুলিতে দাগ-দেওয়া শব্দগুলোর অনুরূপ শব্দ পাঠ্য অংশটিতে পাবে। উপযুক্ত শব্দ খুঁজে নিয়ে বাক্যগুলি আবার লেখো :
৩.১ শরত্চন্দ্র দাসের ভ্রমণের বিবরণ থেকেই প্রথম তিব্বতের কথা জানা যায় ৷
উত্তর শরৎচন্দ্র দাসের ভ্রমণবৃত্তান্ত থেকেই প্রথম তিব্বতের কথা জানা যায় ৷
[3.2] এই পথে তিনজন বিশ্ববিখ্যাত বাঙালি তিব্বতে গিয়েছিলেন।
উত্তর এই পথে তিনজন জগৎপ্রসিদ্ধ বাঙালি তিব্বতে গিয়েছিলেন।
৩.৩ সবার অগোচরে আত্মগোপনের জন্য অন্যরকম পোশাক পরে নেতাজি সুভাষচন্দ্র একদিন কলকাতা ছেড়ে গিয়েছিলেন।
উত্তর সবার অগোচরে ছদ্মবেশে নেতাজি সুভাষচন্দ্র একদিন কলকাতা ছেড়ে গিয়েছিলেন।
[৩.৪ ভুল মানুষমাত্রেরই হতে পারে, তবে নিজের দোষ স্বীকার করে নেওয়ার সাহস থাকা উচিত।
উত্তর ভুল মানুষমাত্রেরই হতে পারে, তবে স্বীকারোক্তির সাহস থাকা উচিত ।
৩.৫। যাদের ওপর পরিচালনার ভার, এ কাজের জন্য আগে তাদের দাবি-ত্যাগের প্রমাণপত্র প্রয়োজন ।
উত্তর যারা কর্তৃপক্ষ, এ কাজের জন্য আগে তাদের ছাড়পত্র প্রয়োজন।
[৩.৬] যাঁরা নিজের নামেই বিখ্যাত, ভারতের সেই বরণীয় মানুষদেরই সম্মাননার আয়োজন হয়েছে এই সভায় ৷
উত্তর স্বনামখ্যাত ভারতের সেই বরণীয় মানুষদেরই সম্বর্ধনার আয়োজন হয়েছে এই সভায় ।
নীচের শব্দগুলির সন্ধি ভেঙে লেখো : শশাঙ্ক, হিমালয়, সর্বাপেক্ষা, অন্যান্য, রক্তিমাভা, যুগান্তর, মায়াচ্ছন্ন, অপরাহ্ণ, সর্বাধিক, রথীন্দ্র, নৃপেন্দ্র, স্বীকারোক্তি, শয়ান, সম্বর্ধনা, উন্নতি, অপরিচ্ছন্ন, দিগ্বলয়, বারম্বার, উদ্বোধন, উচ্ছ্বসিত। উত্তর অধিবদ্ধ পদ সন্ধি বিচ্ছেদ
শশাঙ্ক –শশ + অঙ্ক।
হিমালয় — হিম + আলয়।
সর্বাপেক্ষা — সর্ব + অপেক্ষা।
অন্যান্য —-অন্য + অন্য
রক্তিমাভা —-রক্তিম + আভা।
যুগান্তর —যুগ + অন্তর।
মায়াচ্ছন্ন —- মায়া + আচ্ছন্ন
অপরাহু — অপর + অহ্ন।
সর্বাধিক — সর্ব + অধিক ।
রথীন্দ্র — রথী + ইন্দ্র
নৃপেন্দ্ৰ —- নৃপ + ইন্দ্ৰ ৷
স্বীকারোক্তি — স্বীকার + উক্তি।
শেয়ান — শে + অন ।
সম্বৰ্ধনা —সম্ + বৰ্ধনা ।
উন্নতি — উৎ + নতি ৷
অপরিচ্ছন্ন — অপরি + ছন্ন।
দিগ্বলয় — দিক্ + বলয় ৷
বারম্বার — বারম্ + বার ।
উদ্বোধন — উদ্ + বোধন।
উচ্ছ্বসিত — উদ + শ্বসিত।
১৩. নীচের প্রতিটি শব্দের মধ্যেই দুটি করে শব্দ আছে, বুঝে নিয়ে ভেঙে লেখো : জগৎপ্রসিদ্ধ, গিরিসংকট, কুলগুরু, ঠাকুরবাড়ি, ভ্রমণবৃত্তান্ত, রাজপুত্র, ছদ্মবেশ, কুঠিবাড়ি, অর্থব্যয়, নবরচিত, মহাকবি, ভারতবরেণ্য, স্বনামখ্যাত, স্বপ্নলোক, জন্মদিন।
প্রদত্ত শব্দ
জগৎপ্রসিদ্ধ
কুলগুরু
ঠাকুরবাড়ি
ভ্ৰমণবৃত্তান্ত
রাজপুত্র
ছদ্মবেশ
কুঠিবাড়ি
অর্থব্যয়
নবরচিত
মহাকবি
অর্থব্যয়
ভারতবরেণ্য
স্বনামখ্যাত
স্বপ্নলোক
জন্মদিন
উত্তর গুলো এখানে দেখে নাও :: শব্দভান্ডার ::– জগৎ, প্রসিদ্ধ। গিরি, সংকট। কুল, গুরু। ঠাকুর, বাড়ি। ভ্রমণ, বৃত্তান্ত রাজ, পুত্র। ছদ্ম, বেশ। কুঠি, বাড়ি। অর্থ, ব্যয়। নব, রচিত। মহা, কবি । ভারত, বরেণ্য। স্বনাম, খ্যাত। স্বপ্ন, লোক ।জন্ম, দিন।
১৪. নিম্নরেখাঙ্কিত পদগুলির কারক-বিভক্তি নির্ণয় করো :
উত্তর
১৪.১ তিব্বতবাসীরা তাঁর মূর্তিকে আজও বোধিসত্ত্ব নামে পূজা করে ।
তিব্বতবাসীরা—কর্তৃকারকে শূন্য’ বিভক্তি; মূর্তিকে – কর্মকারকে ‘কে’ বিভক্তি।
১৪.২ তিনি ছদ্মবেশে গিয়েছিলেন তিব্বত
ছদ্দবেশে — করণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।
১৪.৩ কবি তাঁর ঘরের আসনে বসে টেলিফোনে কবিতা পাঠ করবেন।
ঘরের আসনে—অধিকরণ কারকে‘এ’বিভক্তি; টেলিফোনে —করণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।
১৪.৪ কবি সেদিন আমাকে বাগে পেয়েছিলেন।
আমাকে— কর্মকারকে ‘কে’ বিভক্তি
১৪.৫ শরৎচন্দ্র দাসের ভ্রমণবৃত্তান্ত থেকেই তিনি সর্বাধিক সাহায্যলাভ করেছিলেন।
ভ্রমণ বৃত্তান্ত — অপাদান কারকে ‘থেকে’ অনুসর্গ ।
১৫. একটি বাক্যে উত্তর দাও :দেবতাত্মা হিমালয় প্রশ্ন উত্তর
১৫.১ প্রাচীন পথ ধরে কোন্ তিনজন প্রসিদ্ধ বাঙালি অতীতে তিব্বতে গিয়েছিলেন ?
উত্তর শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর, রাজা রামমোহন রায় এবং শ্রী শরৎচন্দ্র দাস প্রাচীন পথ ধরে অতীতে তিব্বতে গিয়েছিলেন।
১৫.২ কোন্ প্রাচীন পথের রেখা ধরে তাঁরা গিয়েছিলেন?
উত্তর কালিম্পং-এর উপর দিয়ে, রেনক্ রোড ধরে তাঁরা গিয়েছিলেন।
১৫.৩ এখনকার পর্যটকরা এই প্রাচীন পথটি পরিহার করেন কেন?
এই পথ দুর্গম এবং পথচলা প্রায় দুঃসাধ্য বলে পর্যটকগণ এই পথ পরিহার করে চলেন।
১৫.৪. কোন্ দুই বিখ্যাত বাঙালি তিব্বতে গিয়ে বোধিসত্ত্ব উপাধি লাভ করেছিলেন ?
উত্তর শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর এবং শান্ত রক্ষিত তিব্বতে গিয়ে বোধিসত্ত্ব উপাধি লাভ করেছিলেন।
১৫.৫ ছদ্মবেশে কে তিব্বতে গিয়েছিলেন?
ছদ্মবেশে তিব্বতে গিয়েছিলেন শ্রী শরৎচন্দ্র দাস ৷
১৫.৬ স্যার ফ্রান্সিস ইয়ংহাসব্যান্ডকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিল তিব্বত-বিষয়ক কোন্ বইটি ?
উত্তর শরৎচন্দ্র দাসের লেখা ‘তিব্বতের ভ্রমণবৃত্তান্ত’ ইয়ংহাসব্যান্ডকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিল।
১৫.৭ কালিম্পঙের কোথায় পড়াশোনা করে অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ও ইংরেজ অনাথ ছেলেমেয়েরা ?
উত্তর কালিম্পং-এর ‘গ্রেহামস হোম’-এ অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ও ইংরেজ অনাথ শিশুরা পড়াশোনা করে।
১৫.৮ গৌরীপুর প্রাসাদে কারা ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গী ?
উত্তর গৌরীপুর প্রাসাদে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গী ছিলেন—পুত্ৰ রথীন্দ্রনাথ, পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী, অনিল চন্দ, মৈত্রেয়ী দেবী, চিত্রিতা দেবী, বৈদান্তিক অ্যাটর্নি হীরেন দত্ত প্রমুখ ব্যক্তিগণ ।
১৫.৯ লেখকের অনুরোধে কোন্ পত্রিকার জন্য অনেকবার লেখা দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
লেখকের অনুরোধে ‘যুগান্তর’ পত্রিকার জন্য অনেকবার লেখা দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ।
১৫.১০ ২৫ বৈশাখের সেই বিশেষ দিনটি যে ছিল শুক্লপক্ষ,লেখা থেকে সে-কথা জানতে পারো কেমন করে?
উত্তর ‘দেবতাত্মা হিমালয়’শীর্ষক পাঠ্যাংশের শেষ প্রান্তে লেখক বলেছেন যে—‘জ্যোৎস্না ছিল সেদিন বাইরে’; এই উক্তি থেকেই বোঝা যায় যে, সেই দিনটা ছিল শুক্লপক্ষ।
১৬. চার-পাঁচটি বাক্যে উত্তর দাও :দেবতাত্মা হিমালয় প্রশ্ন উত্তর
১৬.১] কীভাবে গেলে পৌঁছোনো যায় কালিম্পঙের গ্রেহামস হোম-এ? এই হোমটির বিশিষ্টতা কী?
। কালিম্পং-এর ল্যান্ডমার্ক বড়ো গির্জার পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে যে চড়াইপথ, সেটা ধরে এদিক-ওদিক ঘুরে অনেক উঁচুতে গেলে গ্রেহামস হোম-এ পৌঁছোনো যায় ।
গ্রেহামস হোমে অ্যাংলো ইন্ডিয়ান এবং সাহেবসুবোর অভিভাবকহীন ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে মানুষ হয় ।
১৬.২ ২৫বৈশাখের ‘যুগান্তর’ পত্রিকার প্রথম পাতায় শিল্পীর আঁকা যে বিশেষ রেখাচিত্রটি প্রকাশ পেয়েছিল, তার বিষয় কী ছিল? রবীন্দ্র-জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে ছবির এই বিষয়টি তোমার যথার্থ মনে হয় কি না,
উিত্তর ২৫ বৈশাখের ‘যুগান্তর’ পত্রিকার প্রথম পাতায় শিল্পীর আঁকা কবির একখানা রেখাচিত্র প্রকাশ পেয়েছিল। গ্রাম-নগর-দেশ-মহাদেশ এবং দিগ্বলয় ছাড়িয়ে কবির মাথা উঠেছে ধবলাকার গৌরীশৃঙ্গের মতো। হিমালয়ের চেয়ে তিনি বড়ো—পৃথিবীর উচ্চতম শিখর তিনি। এই ছিল রেখাচিত্রটির বিষয়।
রবীন্দ্রনাথের রেখাচিত্রটির মধ্য দিয়ে তাঁর সমুজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব, বিশ্বজনীনতা প্রকাশ পেয়েছে। তাই রবীন্দ্র-জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে ছবির এই বিষয়টি আমার যথার্থ বলেই মনে হয় ।
১৬.৩ ‘কাজটি দুরূহ, অনেকদিন সময় লাগবে’—কোন্ কাজটি সম্পন্ন করবার ইচ্ছে লেখককে জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ? কেন সে-কাজ করার ইচ্ছে হয়েছিল তাঁর ? কার সাহায্য প্রত্যাশা করেছিলেন ওই কাজে ?
উত্তর উদ্ধৃতাংশটি প্রবোধকুমার সান্যাল রচিত ‘দেবতাত্মা হিমালয়’-এর প্রথম খণ্ডের ‘কালিম্পঙ’ অধ্যায়ের অন্তর্গত ‘দেবতাত্মা হিমালয়’ নামক পাঠ্য ভ্রমণমূলক গদ্যাংশ থেকে গৃহীত এখানে যে কাজটি সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে, তা হল সমগ্র মহাভারত নিজের হাতে লেখার ইচ্ছে লেখককে জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ
মহাভারতের মতো এত বড়ো এপিক পৃথিবীর কোনো কালের কোনো সাহিত্যে নেই। তাই এটি নিজে হাতে লেখার ইচ্ছে হয় রবীন্দ্রনাথের
ওই কাজে রবীন্দ্রনাথ হীরেন দত্তের সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন।
১৬.৪ ‘এ ছাড়া আর ঠাকুরবাড়ি কোথায় হে?’– কোন্ প্রসঙ্গে এই পরিহাস রবীন্দ্রনাথের ?
উত্তর ‘দেবতাত্মা হিমালয়’ রচনাংশের লেখক প্রবোধকুমার সান্যাল যখন কবিকে জানান যে, তিনি কালিম্পং-এর স্থানীয় একটি ঠাকুরবাড়িতে এসে উঠেছেন, তখনই কবিগুরু লেখককে উদ্দেশ করে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন। আসলে কবির ছিল সরস ও কৌতুকপ্রবণ মন ।
তিনি যখন বুঝতে পারেন যে, লেখক সেখানকার এক পান্থশালা ‘ঠাকুর বাড়ি’-তে উঠেছেন, তখন কবির রসিকমন সচেতন হয়ে ওঠে এবং তিনি লেখককে বোঝাতে চান যে—তিনি নিজেই তো ঠাকুর (অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর), তাঁর আবাসন অর্থাৎ গৌরীপুর প্রাসাদটিই হল ঠাকুরবাড়ি। অর্থাৎ এই বাড়িটি ছাড়া অন্য ঠাকুরবাড়ি এখানে আর থাকতেই পারে না। কবির এরূপ মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তার সহজসরল ও কৌতুকপ্রবণ মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে।
১৬.৫ ‘কবি সেদিন আমাকে বাগে পেয়েছিলেন।’ ‘বাগে পেয়েছিলেন’—এই বিশিষ্ট ক্রিয়াপদটির অর্থ কী ? তাঁকে কবির ‘বাগে পাওয়া’র কী পরিচয় রয়েছে লেখকের সেদিনের বিবরণে?
উত্তর ‘বাগে পেয়েছিলেন’ এই বিশিষ্ট ক্রিয়াপদটির অর্থ হল নাগাল বা আয়ত্তে পাওয়া ।
লেখক জানিয়েছেন সেদিন দু-চারটি কথার পরেই কবির পরিহাসপূর্ণ সরস বাক্যবাণ ছুটতে লাগল। আর সেই বাক্যবাণে বারবার বিদ্ধ হচ্ছিলেন লেখক। আর এপাশে-ওপাশে হাসির রোল উঠছিল। কবির লেখককে ‘বাগে পাওয়া’র এই পরিচয়ই রয়েছে লেখকের সেদিনের বিবরণে।
১৬.৬ ‘কালিম্পঙে টেলিফোন ছিল না, এই উপলক্ষে তার প্রথম উদ্বোধন’– কোন্ বিশেষ উপলক্ষ্যে, কীভাবে এই উদবোধন সম্পন্ন হলো?
উত্তর
প্রবোধকুমার সান্যাল রচিত ‘দেবতাত্মা হিমালয়’-এর প্রথম খণ্ডের ‘কালিম্পঙ’ অধ্যায়ের অন্তর্গত ‘দেবতাত্মা হিমালয় নামক পাঠ্য গদ্যাংশ থেকে জানতে পারি ২৫ বৈশাখের সন্ধ্যায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেশবাসীর উদ্দেশে তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে একটি নবরচিত কবিতা বেতারযোগে পাঠ করবেন বলে কলকাতার বেতারকেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ কলকাতা ও কালিম্পং-এর মধ্যে টেলিফোনের বন্দোবস্ত করেছিলেন।
১৬.৭ ‘কিন্তু নৃপেন্দ্রবাবুর ফরমাশ শুনতেই হলো’–নৃপেন্দ্রবাবু কে? কী ছিল তাঁর ফরমাশ? কীভাবে তা শুনেছিলেন লেখক?
উত্তর
নৃপেন্দ্রবাবু হলেন স্বনামধন্য বেতার-বিশেষজ্ঞ শ্রী নৃপেন্দ্ৰ মজুমদার মহাশয়।
নৃপেন্দ্রবাবু লেখককে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্য নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে বেতারযন্ত্রে মুখ রেখে কলকাতাকে একবার ডাকতে ফরমাশ করেছিলেন।
প্রথমে লেখক নৃপেন্দ্রবাবুর কথামতো উক্ত চেয়ারে বসতে দ্বিধা প্রকাশ করেন। তবে যখন অনুভব করেন যে, তাঁর কণ্ঠস্বরে সূক্ষ্ম যন্ত্রটি বিদীর্ণ হয় কি না পরীক্ষা করার জন্যই এইপ্রকার নির্দেশ { দেওয়া হয়েছে, তখন তিনি কবির জন্য নির্দিষ্ট চেয়ারে বসেন এবং বেতারযন্ত্রে মুখ রেখে কলকাতাকে আহ্বান জানান। এভাবেই লেখক নৃপেন্দ্রবাবুর ফরমাশ শুনেছিলেন।
১৬৮ জন্মদিনে কবির স্বকণ্ঠে বেতার-সম্প্রচারিত কবিতা শোনাবার মুহূর্তটি কীভাবে ধরা দিয়েছিল তাঁর শ্রোতাদের চেতনায় ?
উত্তর প্রবোধকুমার সান্যাল রচিত ‘দেবতাত্মা হিমালয়’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের ‘কালিম্পঙ’ অধ্যায়ের ‘দেবতাত্মা হিমালয়’ নামক পাঠ্যাংশে দেখি এক ২৫ বৈশাখের সন্ধ্যায় কলকাতা বেতারকেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ বিশ্বকবির জন্মদিন উপলক্ষ্যে একটি নবরচিত কবিতা বেতারযোগে সরাসরি সম্প্রসারণের জন্য কলকাতা ও কালিম্পঙের মধ্যে টেলিফোনের বন্দোবস্ত করেছিলেন।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা কিংবা আটটা নাগাদ বেল বাজার পর কবি উঠে যন্ত্রের সামনে বসেন। সবাই বাইরে এসে দাঁড়ায়। কাচের ঘরে দরজা বন্ধ করে কবি পনেরো মিনিট কবিতা পাঠ করেন। সকল শ্রোতার পায়ের নীচে কালিম্পং থরথর করছিল কি না তখন আর কারও মনে থাকেনি। বাইরে ছিল জ্যোৎস্না। একটা মায়াচ্ছন্ন স্বপ্নলোকের মধ্যে সকলে হারিয়ে যেতে থাকে। সকলেই পরস্পরের অস্তিত্ব ভুলে যায়।
১৭. নিজের ভাষায় উত্তর লেখো :দেবতাত্মা হিমালয় প্রশ্ন উত্তর
১৭.১ এ লেখায় একটা হারিয়ে-যাওয়া সময়ের ছবি আছে, ভারতবর্ষ তথা বাংলার শ্রেষ্ঠ কয়েকজন সন্তানের কথা আছে, যাঁদের সঙ্গে একসময় তিব্বতের নিবিড় যোগ রচিত হয়েছিল। লেখাটি অনুসরণ করে বাংলার ওই শ্রেষ্ঠ মানুষগুলি সম্পর্কে তোমার যে ধারণা হয়েছে, নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর প্রবোধকুমার সান্যাল রচিত ‘দেবতাত্মা হিমালয়’ নামক ভ্রমণমূলক গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের ‘কালিম্পঙ’অধ্যায় থেকে গৃহীত ‘দেবতাত্মা হিমালয়’নামক পাঠ্যাংশ থেকে জানতে পারি কয়েকজন জগপ্রসিদ্ধ বাঙালি যেমন—অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান, রামমোহন রায়, শরৎচন্দ্র দাস, যশোহরের রাজপুত্র শান্ত রক্ষিত তিব্বতে গিয়েছিলেন । রাজা
অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য তিব্বতে গিয়েছিলেন প্রায় নশো বছর আগে। তিনি প্রায় তেরো বছর সেখানে ছিলেন। তিনি ছিলেন ঢাকা বিক্রমপুরের সন্তান। বিক্রমশীলা মহাবিহারের অধ্যক্ষ ছিলেন, লাসার কাছেই তাঁর মৃত্যু হয়। গৌতম বুদ্ধের পরে তিব্বতবাসীরা তাঁর মূর্তিকে আজও বোধিসত্ত্ব নামে পূজা করে ।
আধুনিক ভারতের পথিকৃৎ রাজা রামমোহন রায়ও তিব্বত যাত্রা করেছিলেন।
উনিশ শতকের শেষ ভাগে তিব্বতে গিয়েছিলেন শরৎচন্দ্র দাস। তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্ত শুনে আমরা প্রথম তিব্বতের বিষয়ে জানতে পারি। বিংশ শতাব্দীর প্রথমে স্যার ফ্রান্সিস ইয়ংহাসব্যান্ড যখন তিব্বতে যান, তখন শরৎচন্দ্র দাসের ভ্রমণবৃত্তান্ত থেকেই সর্বাধিক সাহায্যলাভ করেছিলেন।
এ ছাড়াও অষ্টম শতাব্দীতে যশোহরের রাজপুত্র শান্ত রক্ষিত তিব্বতে যান। লামারা তাঁকে রাজকীয় সংবর্ধনা জানায়। ইনিও বোধিসত্ত্ব উপাধি লাভ করেন।
১৭.২ এই লেখার একটি প্রধান চরিত্র রবীন্দ্রনাথ আর তাঁর ব্যক্তিত্বময় উপস্থিতি। কালিম্পঙ শহরে অতিবাহিত তাঁর একটি বিশেষ জন্মদিন উদ্যাপনের সম্পূর্ণ ছবিটি যেভাবে এখানে ফুটে উঠেছে, তার পরিচয় দাও ।
{ } উত্তর ‘দেবতাত্মা হিমালয়’ ভ্রমণকাহিনির লেখক প্রবোধকুমার সান্যাল একবার কালিম্পঙে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্যলাভ করেছিলেন। সেদিনটি ছিল এক ২৫ বৈশাখ, অর্থাৎ কবিগুরুর জন্মদিবস। সেই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য স্থির হয় যে—কবি তাঁর ঘরে বসে নবরচিত কবিতা আবৃত্তি করবেন এবং তা টেলিফোনের মাধ্যমে কলকাতা বেতারকেন্দ্রে প্রেরিত হয়ে সরাসরি বেতারে সম্প্রচারিত হবে।
কিন্তু তখন কালিম্পঙে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। তাই জরুরি ভিত্তিতে টেলিযোগাযোগ স্থাপন করা হয়। এই উপলক্ষ্যে কলকাতা থেকে কয়েকজন বেতার-বিশেষজ্ঞকে কালিম্পঙে নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন নৃপেন্দ্ৰ মজুমদার। সংশয় ছিল কবির গলা ঝাড়া দেওয়ার দাপটে সূক্ষ্ম যন্ত্র বিদীর্ণ না হয়।
তাই পরীক্ষা করার জন্য নৃপেন্দ্রবাবুর ফরমাশ অনুসারে লেখক বেতারযন্ত্রে মুখ লাগিয়ে কলকাতাকে আহ্বান করেন—“হ্যালো, ক্যালকাটা…..’। কলকাতা থেকে তৎক্ষণাৎ জবাব আসে——ও-কে।’
সন্ধ্যা সাতটা বা আটটার সময় কবি গিয়ে বসেন যন্ত্রের সামনে। একটি আলোর নিশানা পেয়ে কবিগুরুর দীর্ঘ দীপ্ত কণ্ঠের মূর্ছনা উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিল নবরচিত কবিতায়—“আজ মম জন্মদিন। সদাই প্রাণের প্রান্তপথে / ডুব দিয়ে উঠেছে সে বিলুপ্তির অন্ধকার হ’তে / মরণের ছাড়পত্র নিয়ে।”
সেই সময়ের অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে লেখক বলেছেন— “জ্যোৎস্না ছিল সেদিন বাইরে। একটা মায়াচ্ছন্ন স্বপ্নলোকের মধ্যে আমরা যেন হারিয়ে যাচ্ছিলুম। ভুলে গিয়েছিলুম পরস্পরের অস্তিত্ব”।
এইভাবেই কবিগুরুর সেই নির্দিষ্ট জন্মদিন উদ্যাপনের ছবিটি লেখকের রচনায় সুন্দরভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
১৭.৩ ইতিহাস-ভূগোলের ইতিবৃত্তে জড়ানো কালিম্পঙ নামে একটা শহরকে নতুন করে চিনতে তোমার কেমন লাগল, একটা অনুচ্ছেদে তা লেখো।
উত্তর প্রবোধকুমার সান্যাল রচিত ভ্রমণমূলক গ্রন্থ ‘দেবতাত্মা হিমালয়’’-এর প্রথম খণ্ডের ‘কালিম্পঙ’ অধ্যায় থেকে গৃহীত দেবতাত্মা হিমালয়’ গদ্যাংশ থেকে আমরা ইতিহাস-ভূগোলের ইতিবৃত্তে জড়ানো কালিম্পং শহরকে নতুন করে চিনতে পারলাম। কালিম্পং-এর উপর দিয়েই রেনক্ রোড তিব্বতের দিকে চলে গিয়েছে, কিন্তু এ পথে দুর্যোগ বেশি।
সুতরাং এই প্রাচীন পথ ছেড়ে সবাই গ্যাংটকের পথ দিয়ে যায়। সমগ্র উত্তর ভারতের মধ্যে কালিম্পং থেকে তিব্বত সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী। কালিম্পংং-এর পাশ দিয়ে উত্তর দিকে চলে যাওয়া পথেই পশমের ঘাঁটি। বড়ো গির্জা হল কালিম্পঙের ল্যান্ডমার্ক। তার পাশ দিয়ে অনেক উঁচুতে উঠে গ্রেহামস হোম। এখানেই অ্যাংলো ইন্ডিয়ান এবং সাহেবদের অভিভাবকহীন ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে ।
কালিম্পঙের প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই মনোরম। শীতের কনকনে হাওয়া, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, ঝিরঝিরে বৃষ্টি সবমিলিয়ে কালিম্পং আমাদের মন কেড়ে নেয়। লেখকের বর্ণনায় বড়ো বড়ো অট্টালিকা ও কুঠিবাড়িপূর্ণ কালিম্পং শহর আমাদের চোখের সামনে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে।
