মাকু গল্পের প্রশ্ন উত্তর 11 অধ্যায়
মাকু গল্পের প্রশ্ন উত্তর 11 অধ্যায়
মাকু
লীলা মজুমদার
একাদশ পরিচ্ছেদ

এই আর্টিকেলটিতে মাকু গল্পের প্রশ্ন উত্তর 11 অধ্যায় সমস্ত রকমের প্রশ্ন-উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।
মাকু গল্পের প্রশ্ন উত্তর: বিষয়সংক্ষেপ
সোনা নিজের পুঁটলি থেকে ফুটো জ্যামের টিন, কেরোসিনের ফোঁদল আর রাবারের নল কাজে লাগিয়ে মাকুকে কাঁদার কল বানিয়ে দেয়। আনন্দের চোটে মাকু হোটলওয়ালার দাড়ি ধরে টানতেই মালিকের দাড়িগোঁফ খুলে আসল চেহারা বেরিয়ে পড়ে এবং সবাই তাকে সার্কাসের অধিকারীমশাই অর্থাৎ পলাতক নোটো মাস্টার বলে চিনে ফ্যালে।
সবার আদরে আপ্লুত মালিক
আনন্দে কাঁদতে কাঁদতে জানায় যে, হোটেল করে সে যা টাকা জমিয়েছে, তা দিয়ে সব ধার শোধ করে নতুন সার্কাস খুলবে সে। এইসময় সেই গর্তে পড়ে যাওয়া পেয়াদা এসে জানায় যে, সে পিয়োন এবং সং-এর লটারিতে পাঁচ হাজার টাকা জেতার চিঠি নিয়ে এসেছে। এ কথা শুনে সং অজ্ঞান হয়ে যায় ও হোটলওয়ালা অর্ধেক লটারির টিকিট হারিয়ে ফেলার দুঃখে কাঁদতে থাকে।
সঙের পকেটে আধখানা গোলাপি টিকিট দেখেই সোনা বুঝতে পারে যে, টিয়ার গোলাপি কানখুশকি আসলে বাকি আধখানা টিকিট। মায়ের রুপোর সিঁদুরকাঠি আধখানা টিকিটে জড়িয়ে তা তৈরি করেছিল টিয়া।
বটতলায় পৌঁছোনোর পর সেখানে এসে উপস্থিত হয় সোনা-টিয়ার মা, বাবা, ঠামু, আম্মা। বটতলায় অনেক পুলিশ-পেয়াদাও উপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে একজন খাকি পোশাক পরা সেই ব্যক্তি, যাকে সোনা-টিয়া প্রথমে মাকু বলে ভুল করেছিল।
জানা যায়, তিনি হলেন সোনা-টিয়ার পিসেমশাই, যিনি পুলিশে কাজ করেন। তিনি নোটো মাস্টার ও ঘড়িওয়ালাকে ধরতে এসে সোনা-টিয়ার সন্ধান পেয়েছিলেন। তাঁর লালচে কোঁকড়া চুল ও নাকের ওপর তিল দেখে সোনা-টিয়া তাঁকে মাকু মনে করে।
সবশেষে দড়াবাজির সবচেয়ে ছোটো ছোকরাই যে পরিদের রানি সাজে, এ কথা জানতে পেরে সোনা-টিয়া প্যাঁ-প্যা পুতুল নিয়ে বাড়ি ফিরতে রাজি হয়ে যায়।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর :মাকু গল্পের প্রশ্ন উত্তর
একমুখী তথ্যানুসন্ধানী প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন
১.ঘড়িওয়ালা সোনাকে কাঁদার কল বানিয়ে দিতে বলেছিল কেন ?
ঘড়িওয়ালা বলে মাকুকে রোজ রোজ বিয়ে দিতে হবে পরিদের রানির সঙ্গে, সেজন্য মাকুকে কাঁদার কল বানিয়ে দিতে হবে। এই কারণেই ঘড়িওয়ালা সোনাকে কাঁদার কল বানিয়ে দিতে বানিয়ে বলেছিল ।
২.সোনা পুঁটুলি খুলে কী কী বের করেছিল? কতক্ষণ ধরে মাকুর কান্না চলেছিল ?
সোনা পুঁটুলি খুলে ফুটো জ্যামের টিন, কেরোসিন তেল ঢালার ফোঁদল আর রবারের নল বের করেছিল।
৩. কতক্ষণ ধরে মাকুর কান্না চলে ছিল?
যতক্ষণ ধরে জ্যামের টিনের তলার ফুটো দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে সব জল বেরিয়ে টিন খালি না হয়, ততক্ষণ ধরেই মাকুর কান্না চলেছিল।
8 ফুর্তির চোটে মাকু কী করেছিল? তাতে কী হয়েছিল ?
ফুর্তির চোটে মাকু মালিকের দাড়ি খামচে ধরেছিল।
৫. মালিককে চিনতে পেরে সবাই কী করল ?
মালিককে চিনতে পেরে সবাই খুব আনন্দ করতে থাকে। কেউ মালিকের হাত ধরে নাড়ে, কেউ পায়ের ধুলো মাথায় নেয়, মালিকের দুই গালে দুটো চুমু খায় ।
৬. সে কিভাবে ঘড়িওয়ালা কে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল?
সংঘড়িওয়ালাকে আশ্বাস দিয়ে বলেছিল, সে লটারির টিকিট কিনেছে। লটারি জিতলে সেই টাকা ঘড়িওয়ালাকে দিয়ে সব দেনা মিটিয়ে দেবে ।
৭. তবে আরও পাঁচ হাজার টাকা হলেই হয় —এই টাকাটার প্রয়োজন হয়েছিল কেন?
উত্তর
ঘড়িওয়ালার এই টাকাটার প্রয়োজন হয়েছিল কারণ, ঘড়ির কারখানায় গিয়ে সে মাকুর যন্ত্রপাতির দাম চুকিয়ে ফেলতে চেয়েছিল, তাহলে তার আর পেয়াদার ভয় থাকবে না ।
৮.পেয়াদাকে দেখে ঘড়িওয়ালা কী করেছিল ?
পেয়াদাকে দেখে মাকুর হাত ধরে ঘড়িওয়ালা চাটাইয়ের পিছনে দ্রুত লুকিয়ে পড়েছিল।
৯. পেয়াদা কী খবর এনেছিল ? তা শুনে সং-এর কী হয়েছিল ?
পেয়াদা সং-এর লটারি জেতার খবর এনেছিল। পেয়াদার কথা শুনে সং ধপাস করে মাটিতে পড়ে গিয়েছিল।
১০. কোন্ কথা শুনে পেয়াদা আকাশ থেকে পড়েছিল ?
সবাই যখন পেয়াদাকে ঘিরে ধরে বলে যে, মালিক কালই সব টাকা শোধ করে জিনিস ছাড়িয়ে আনবে, এখন সে যেন চলে যায়—এ কথা শুনে পেয়াদা যেন আকাশ থেকে পড়েছিল।
১১.পেয়াদার কথা শুনে মালিক কী করেছিল ?
পেয়াদার কথা শুনে মালিক সং-এর দেওয়া লটারির টিকিটের আধখানা হারিয়ে ফেলার জন্য বুক চাপড়ে ডুকরে কাঁদতে শুরু করেছিল।
১২ কীসের দিকে তাকিয়ে সোনা চমকে উঠেছিল ?
সং-এর পকেট থেকে গোলাপি রঙের লটারির টিকিটের আধখানা বেরিয়েছিল, তার দিকে তাকিয়েই সোনা চমকে উঠেছিল।
১৩ টিয়া গোলাপি কাগজের মোড়কে কী রেখেছিল ?
টিয়া গোলাপি কাগজের মোড়কে মামনির সিঁদুর পরার রুপোর কাঠি রেখেছিল।
১৪ বটতলায় পৌঁছে সবাই কী দেখেছিল ?
বটতলায় পৌঁছে সবাই দেখেছিল বটতলা আলোকময়। তিনটি উনুনে রান্না হচ্ছে। আর অনেক লোক জমেছে সেখানে।
১৫. সবার ক্লান্তি কিভাবে দূর হতে থাকলো?
বটতলার রান্নার গন্ধে চারদিকটা ভুরভুর করছিল। সেই সুগন্ধ একটুখানি নাকে ঢুকতেই সকলের সব ক্লান্তি দূর হতে থাকল ।
১৬. সোনা ও টিয়ার পিছে কিসের চাকরি করতেন?
সোনা ও টিয়ার পিসেমশাই পুলিশের চাকুরি করতেন।
১৭ সোনা, টিয়া যাকে মাকু বলে ভেবেছিল তিনি প্রকৃতপক্ষে কে?
সোনা, টিয়া যাকে মাকু বলে ভেবেছিল তিনি প্রকৃতপক্ষে তাদেরই পিসেমশাই।
১৮ সোনা-টিয়া যাকে পেয়াদা মনে করেছিল তার পরিচয় কী?
১৯ বাঘধরা ফাঁদের মধ্যে কারা লুকিয়েছিল ?
বাঘধরা ফাঁদের মধ্যে তিন জন পেয়াদা লুকিয়েছিল।
২০ মালিক লজ্জায় মাথা নীচু করেছিল কেন ?
সোনা, টিয়ার বাপি স্বর্গের সুরুয়া খেয়ে মালিকের এত প্রশংসা করে যে, মালিক তাতে লজ্জা পেয়ে মাথা নীচু করেছিল।
২১. কে পরিদের রানি সাজত ?
দড়াবাজির দলের সবথেকে ছোটো ছেলেটি পরিদের রানি সাজত।
মাকু গল্পের প্রশ্ন উত্তর: বোধমূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন১. মাকু কিভাবে কাঁদতে পারলো?
উত্তরা
সোনা মাকুর মাথার ভিতরে কাঁদার কল লাগিয়ে দিয়েছিল। ঘড়িওয়ালা ঘুমন্ত মাকুর দুই কান ধরে খুব করে প্যাঁচ দিতেই মাকুর মাথার খুলি কট করে বাক্সের ঢাকনার মতো খুলে যায়। সবাই দ্যাখে যে, ভিতরে কলকবজার মাঝে মাঝে ফাঁকা রয়েছে। সোনা তখন পুঁটুলি খুলে জ্যামের টিন, কেরোসিন তেল ঢালার ফোদল আর রবারের নল বের করে।
তারপর কলকবজার ফাঁকে সবার উপর জ্যামের টিনটি বসিয়ে তার তলায় ফেঁাঁদল দিয়ে, তার মুখে রবারের নল লাগিয়ে, নলের অন্য দিকটাকে মাকুর মুণ্ডুর ভিতরে দুই চোখের মাঝে গুঁজে দিয়ে টিনে জল ঢালে। তারপর ঢাকনা বন্ধ করে নাকের কাছে অবস্থিত টিপকল টিপতেই মাকু উঠে বসে কেঁদে ভাসিয়ে দেয়। এইভাবে সোনার কেরামতিতে মাকু কাঁদতে পারে।
####
২.হোটেলওয়ালাই যে নোটো মাস্টার তা কীভাবে বোঝা গেল ?
উত্তর
সোনা মাকুকে কাঁদার কল লাগিয়ে দিলে মাকু খুব কাঁদে।এত কাঁদতে পেরে মাকু শেষে আনন্দের চোটে হেসে ওঠে। তারপর ফুর্তির চোটে মালিকের দাড়ি খামচে এক লাফে যেই উঠে দাঁড়ায়, সঙ্গে সঙ্গে হ্যাঁচকা টান লেগে মালিকের দাড়ি-গোঁফ খুলে মাকুর হাতে চলে আসে।
আর মালিকের চাঁচাছোলা ন্যাড়া মুখটা সবার কাছে প্রকাশ পায়। এভাবে হোটেলওয়ালার নকল সাজ খুলে যেতেই সার্কাস দলের সকলেই তাকে চিনে ফ্যালে এবং তিনিই যে তাদের নোটো মাস্টার, তাতে কারও আর সন্দেহ থাকে না ।
৩. মালিকের কী দুঃখ ছিল? পরে তার সুখ এল কীভাবে ?
উত্তর
হোটেলওয়ালা বুঝতে পেরেছিল যে, জিনিসপত্র কিনে দাম না দিয়ে সার্কাস দলের সবাইকেই সে অকুলপাথারে ভাসিয়েছিল। আবার তাদের পিছনে পেয়াদাও ঘুরে ফিরছিল—এ কথা ভেবেই হোটেলওয়ালার দুঃখের অন্ত ছিল না ।
পরে তার আর কোনো দুঃখ ছিল না; কারণ পুলিশের ভয়ে ছদ্মবেশে বহুদিন হোটেল চালিয়ে সে যা অর্থ জমায়, আর জন্মদিনে যে উপহার পায় তা দিয়ে সে সব ধার শোধ করে, জিনিসপত্র ছাড়িয়ে এনে নতুন তাঁবুতে আবার নতুন করে সার্কাসের দল খুলতে পারবে। এভাবেই তার সুখের দিন আসে ।
“৪. এই বলে দুই ভাই হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল।”—দুই ভাই কেন কেঁদেছিল? এই প্রসঙ্গে ঘড়িওয়ালা কী বলেছিল ?
উত্তর
দুই ভাই হল ঘড়িওয়ালা আর হোটেলওয়ালা। তারা বহুদিন ধরে বাড়ির বাইরে রয়েছে, বহুদিন মায়ের সঙ্গে তাদের কোনো দেখাসাক্ষাৎ হয়নি। মায়ের হাতের রান্না খাওয়াও হয়নি বহুদিন, সেই কথা মনে হতেই তারা দুই ভাই কেঁদে উঠেছিল। ঘড়িওয়ালা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলেছিল যে—আরও পাঁচ হাজার টাকা হলেই তার হবে, তাহলেই সে ঘড়ির কারখানায় গিয়ে মাকুর যন্ত্রপাতির দাম মিটিয়ে দিতে পারবে।
তখন তার আর পেয়াদার ভয় থাকবে না; তখন প্রতিদিন খেলা দেখিয়ে অনেক-অনেক টাকা জমাবে সে। তারপর একদিন ছুটি নিয়ে তারা দুই ভাই মায়ের কাছে যাবে। সেখানে পেট ভরে চাপড়ঘণ্ট, মোচা-চিংড়ি আর দুধপুলি খাবে। অর্থাৎ মায়ের স্নেহ-আদরের স্পর্শ ফিরে পাবে।
৫. সোনা ও টিয়া কীভাবে তাদের মা-বাবার সঙ্গে মিলিত হল ?
উত্তর
ঘাসজমিতে খেলা শেষ হওয়ার পরে সবাই বটতলার দিকে ছুটেছিল। টিয়া হঠাৎ খচমচ করে মালিকের কোল থেকে নেমে দু-হাত তুলে ‘মা-মা’ বলে এলোমেলোভাবে দৌড়োয়। সোনাও দু-হাতে ঠোট চেপে জাদুকরের কোল থেকে নেমে অন্ধের মতো এগাছে-ওগাছে ধাক্কা খেতে খেতে ছুটতে থাকে।
এমনসময় বটতলার ভিড়ের মধ্যে গোলাপি শাড়ি পরা একজন সুন্দর মানুষ খুন্তি নামিয়ে দৌড়ে এসে দু-হাত বাড়িয়ে দুজনকে বুকে চেপে ধরেন। ইনিই হলেন সোনা-টিয়ার মা। এরপরেই মোটাসোটা লম্বা যে লোকটি হাসি হাসি মুখ করে তাদের কাছে আসেন, তিনি হলেন সোনা-টিয়ার বাপি অর্থাৎ বাবা। এইভাবেই সোনা-টিয়া তাদের মা-বাবার সঙ্গে মিলিত হয়
৬. খাবারগুলি দ্বিগুণ মিষ্টি হয়ে উঠেছিল কীভাবে ?
উত্তর
বটতলায় মালিকের জন্মদিনে খাবারের আয়োজন হয়েছিল। সবাই মিলে ঠেলেঠুলে খেতে বসে। মামনি বললেন সার্কাসের লোকজন সারাদিন খাটাখাটনি করেছে, তাই ওরাই আগে খেতে বসুক। পরিবেশন করবেন মামনিরা। বাজনদাররা মিছিমিছি দেরি করার জন্য প্রথম দলে তাদের জায়গা হয় না । তখন তারা গাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়ে বসে—ভোঁপর ভোঁপর ভোঁ করতে থাকে।
অর্থাৎ তারা আবার বাজনা বাজাতে শুরু করে দেয়। পরিবেশটা আনন্দঘন হয়ে ওঠে। সকলের মনে এত আনন্দ, এত আবেগ ছিল যে সেই আনন্দের আবেগে খাবারগুলি দ্বিগুণ মিষ্টি হয়ে উঠেছিল ।
৭. পিসেমশাই কেন বনে ঢুকেছিলেন ? পিয়োন কীভাবে গর্তের বাইরে এসেছিল ?
উত্তর পিসেমশাই ছিলেন প্রকৃতপক্ষে পুলিশের লোক। তিনি জানতে পারেন যে, নোটো মাস্টার আর ঘড়িওয়ালা বনের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। তাদের ধরার জন্যই পিসেমশাই বনে প্রবেশ করেছিলেন।
সোনা ও টিয়া যাকে পেয়াদা বলে মনে করেছিল, আসলে সে ছিল পোস্টাপিসের পিয়োন। পিয়োন সোনা-টিয়ার পিছনে ছুটতে গিয়ে বাঘধরার ফাঁদে পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই ফাঁদে অর্থাৎ গর্তে আগে থেকেই তিন জন পেয়াদা ঘাঁটি গেড়ে লুকিয়ে ছিল। পিয়োন তাদের ঘাড়ের উপর গিয়ে পড়লে, তারা পিয়োনকে অনেক জেরা করে এবং শেষে ঠেলেঠুলে পিয়োনকে গর্তের বাইরে তুলে দেয়। এইভাবেই পিয়োন গর্তের বাইরে বেরিয়ে এসেছিল।
৮. ঠামু ডাল থেকে পড়ে যান কীভাবে? সোনা-টিয়া বাড়ি যেতে আপত্তি করলে মালিক কী বলেছিল?
উত্তর
বটতলায় খাওয়াদাওয়ার চলছিল। এমনসময় সোনা-টিয়াদের পিসেমশাই হঠাৎই নিজের বুকপকেট থেকে গলায় রেশমি ফিতে বাঁধা দুটো খরগোশ ছানা বের করে সোনা-টিয়ার হাতে দেন। তা দেখে মামনি, পিসি, ঠামু, আম্মা খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। ঠামু এতটাই চমকে গিয়েছিলেন যে, ডাল থেকে পড়ে গিয়েছিলেন।
সোনা-টিয়া পরিদের রানিকে না দেখে কিছুতেই বাড়ি ফিরে যেতে চাইছিল না। তখন তাদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বাড়িতে পাঠানোর জন্য মালিক বলেছিল—‘রোজ সার্কাস হবে, রোজ মাকুর সঙ্গে পরিদের রানির বিয়ে হবে, রোজ তোমাদের বাড়ির সকলকে পাস দেওয়া হবে। এখন বাড়ি যাও কেমন ?’
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
কমবেশি আট-দশটি বাক্যে উত্তর লেখো
ও টিয়া কীভাবে তাদের বাড়ির লোকেদের
১. পোস্টাপিসের পিয়োন কী খবর এনেছিল? সেই খবর শুনে সেখানে কেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল আলোচনা করো।
উত্তর
পোস্টাপিসের পিয়োন সং-এর লটারি জেতার খবর নিয়ে এসেছিল। পোস্ট মাস্টার ফেলারাম -এর মতে সং লটারির টিকিটটা অফিসে জমা দিলেই পাঁচ হাজার টাকা পাবে। এই খবরই পিয়োন সকলকে জানিয়েছিল।
পিয়োনের মুখ থেকে এমন কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সং অজ্ঞান হয়ে ধপাস করে মাটিতে পড়ে যায়। মালিক বুক চাপড়ে ডুকরে কেঁদে উঠে বলে যে, সে সং-এর টিকিটের আধখানা হারিয়ে ফেলেছে। টিয়া টিকিট খুঁজে দেয়নি বলে মালিক টিয়াকে একটু দোষ দেয়। সোনা ওই আধখানা গোলাপি রঙের টিকিট দেখে চমকে উঠে টিয়ার হাত থেকে পুঁটুলি কেড়ে নিয়ে তার থেকে গোলাপি চাবিকাঠি বের করে, তার বাইরের গোলাপি মোড়ক খুলে ফ্যালে। সেই মোড়ক থেকে মামনির সিঁদুর পরার রুপোর কাঠি বেরিয়ে আসে। ওই মোড়কটি মালিকের হাতে দিয়ে সোনা বলে সেটাই টিকিটের বাকি আধখানা, খুঁজে পেয়ে টিয়া সেটা লুকিয়েছে। সোনা টিয়াকে একটু বকুনিও দেয়—সে মামনিকে না বলে সিঁদুর কাঠি নিয়েছে বলে। বকুনি খেয়ে টিয়া ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলে। তারপরে সে বলে কাগজটা সে বটতলা থেকে তুলে মাকুর চাবিকাঠি বানিয়েছিল। তা শুনে সোনা, ঘড়িওয়ালা, জাদুকর, অধিকারী সবাই হেসে ফেলে; মূর্ছা ভেঙে সংও হেসে ফ্যালে আর তাই দেখে টিয়াও ফিকফিক করে হাসতে শুরু করে। এই ঘটনা দেখে অন্যান্যরা পেটে হাত দিয়ে হো-হো করে হেসে গড়িয়ে পড়ে।
২. সোনা ও টিয়া কিভাবে তাদের বাড়ির লোকেদের সঙ্গে ঘরে ফেরে ?
উত্তর
প্রখ্যাত সাহিত্যিক লীলা মজুমদারের ‘মাকু’ গল্পে সোনা ও টিয়া তাদের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে শেষপর্যন্ত ঘরে ফেরে। ঘাসজমিতে খেলা শেষ হওয়ার পরে সবাই ছোটে বটতলার দিকে। সেখানে মালিকের জন্মদিনের ভোজের আয়োজন হয়েছিল। টিয়া হঠাৎ মালিকের কোল থেকে নেমে দু-হাত তুলে ‘মা-মা-মা’ বলে এলোমেলোভাবে দৌড়োতে থাকে। সোনাও দু-হাতে ঠোঁট চেপে জাদুকরের কোল থেকে নেমে অন্ধের মতো এগাছে-ওগাছে ধাক্কা খেতে খেতে ছুটতে শুরু করে। এমনসময় বটতলার ভিড়ের মধ্যে গোলাপি শাড়ি পরা ওদের মামনি খুন্তি নীচে রেখে ছুটে এসে সোনা-টিয়াকে জড়িয়ে ধরেন। একটু পরেই মোটাসোটা লম্বা চেহারার ওদের বাপি (বাবা) হাসি হাসি মুখে ওদের কাছে আসেন। এইভাবে সোনা-টিয়া তাদের মা-বাবার সঙ্গে মিলিত হয়। এরপর অনেক হাসি-আনন্দের মধ্যে আম্মা, ঠামুর সঙ্গে ওদের দেখা হয়। কেউ ওদের বকে না, সবাই আদর করতে চায়। ওদের পিসি, পিসেমশাই, পিসির খোকা বোম্বাও আসে বটতলাতে। খাওয়াদাওয়া শেষ হলে ওদের পরিবারের সবাই বাড়ি যাওয়ার আয়োজন করলে প্রথমে সোনা-টিয়া যেতে আপত্তি করে কারণ, তারা পরিদের রানিকে না দেখে যাবে না । তখন দড়াবাজির সবথেকে ছোটো ছেলেটি জানায় যে, সে-ই পরিদের রানি সেজে খেলা দেখাত। তখন সোনা-টিয়া বাড়ি ফিরে যেতে রাজি হয়। তখন পিসেমশায়ের জিপে চেপে সোনা ও টিয়া কালিয়ার জঙ্গলের অভিযান সমাপ্ত করে বাড়ির লোকদের সঙ্গে ঘরে ফিরে আসে।
