বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার প্রশ্ন উত্তর Teacj Sanjib

বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার প্রশ্ন উত্তর Teacj Sanjib

বঙ্গভূমির প্রতি
মাইকেল মধুসূদন দত্ত

বঙ্গভূমির প্রতি :

বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার উৎস,সারমর্ম,বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার প্রশ্ন উত্তর,এবং বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার অনুশীলনীর প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।

বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার উৎস:

‘বঙ্গভূমির প্রতি’ মাইকেল মধুসূদন দত্তের একটি গীতিকবিতা। ‘মধুসূদন রচনাবলী’ সংকলন করতে গিয়ে সংকলক এই কবিতাটিকে সরাসরি সংকলন করেছিলেন গ্রন্থেরই ‘নানা কবিতা’ বিভাগে।

১৮৬২ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুন ফ্রান্সে যাওয়ার পূর্বে ৫ জুন কবি এই কবিতাটি রচনা করেন। বন্ধু গৌরদাস বসাককে লেখা একটি চিঠিতে এর উল্লেখ আছে।

বঙ্গভূমির-প্রতি-কবিতার-প্রশ্ন-উত্তর-Teacj-Sanjib

বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার সারমর্ম:

বিষয়সংক্ষেপ

মা যেন তাঁর চিরদাস কবিকে মনে রাখেন, বঙ্গভূমির প্রতি কবির এই মিনতি। মনের ইচ্ছাপূরণ করতে যদি কোনো ভুল ঘটে থাকে, তবুও মা যেন তাঁর লালপদ্ম সদৃশ মনকে মধুহীন না করেন। বিদেশে দৈবের বা ভাগ্যের কারণে যদি কবির জীবনতারা খসে পড়ে দেহের আকাশ থেকে, তাতে কবির কোনো খেদ বা দুঃখ নেই।
কারণ কবি জানেন জন্ম নিলে মরতে একদিন হবেই; কেউ কোথাও অমর নয়। নদীতে যেমন জল কখনও স্থির থাকে না, তেমনি জীবননদীতেও প্রাণ স্থির বা অচঞ্চল নয়। কিন্তু মা যদি কবিকে মনে রাখেন, তাহলে কবি মৃত্যুকেও ভয় পান না।

কারণ অমরতা দানকারী অমৃতে যদি মাছি গিয়ে পড়ে, তবে সে অমর হয় না, তারও মৃত্যু হয়। মানবসমাজে সেই ধন্য যাকে মানুষ কখনও ভোলে না, মনের মন্দিরে চিরকালের আসন দিয়ে ধরে রাখে। কিন্তু কবির এমন কোন্ গুণ আছে যে, দেশ-মায়ের কাছে এমন অমরতা কবি দাবি করতে পারেন।
তবে শ্যামা জন্মদাত্রী যদি তাঁকে দয়া করেন, ভুল বা দোষকে গুণ বলে ধরে নেন; তাহলে তিনি সুবরদাত্রী বলে কবিকে অমরতার বর দান করতে পারেন। কবি যেন স্মৃতিজলে ফুটে থাকেন মধুমাখা পদ্মের মতো, বসন্তে কিংবা শরতে।

বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার নামকরণের সার্থকতা:

নামকরণ

নামকরণ সাহিত্যের এমন একটি বিষয়, যা যে-কোনো সাহিত্যসৃষ্টির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেন-না উক্ত রচনার শিরোনামই পাঠকের সঙ্গে রচনাটির প্রাথমিক পরিচয় করিয়ে দেয়। কবিতার ক্ষেত্রে এই ভাবনা আরও যুক্তিসংগত, কারণ কবিতা অন্যান্য রচনার থেকে অনেক জটিল।
কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর এই কবিতায় মনের যে ভাবটিকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়েছেন, তা হল—দেশমাতৃকার প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা। তাঁর প্রবাসী মন সর্বদা ছুটে চলেছে যেন বঙ্গমাতাকে তথা

বঙ্গভূমিকে বন্দনা জানাতে। মনের সাধপূরণ করতে তাঁকে বরণ করে নিতে হয়েছে অনিবার্য প্রবাসজীবন। কিন্তু তিনি দেশমাতৃকার কাছে যেন নিজ মনটিকে গচ্ছিত রেখেছেন। সমগ্র কবিতাটিতে মায়ের কাছে সন্তানের একান্ত আবেদন-নিবেদনই চূড়ান্ত রূপলাভ করেছে।
অর্থাৎ মায়ের প্রতি সন্তানের নিজস্ব নিবেদনই কবিতাটিতে প্রাধান্য পেয়েছে। অতএব যাঁর কাছে তাঁর এই আত্মনিবেদন যেহেতু তিনি বঙ্গমাতা, তাই কবির এই কবিতার নামকরণ যথার্থ ও সার্থক।

বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার অনুশীলনীর প্রশ্ন উত্তর:

হাতেকলমে

১.ঠিক উত্তরটি খুঁজে নিয়ে লেখো :

১.১ ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় যে শীর্ষ উল্লেখটি আছে, সেটি কবি বায়রন-এর রচনা। তাঁর রচিত একটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল —
উত্তর: ডন জুয়ান।

১.২. লালবর্ণের পদ্ম ‘কোকনদ’। সেরকম নীল রঙের পদ্মকে— ও সাদা রঙের পদ্মকে— বলা হয়।

উত্তর: ইন্দিবর, পুণ্ডরীক।

২.সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :

২.১ “এ মিনতি করি পদে।”—কবি কার কাছে কী প্রার্থনা জানিয়েছেন?

উত্তর: কবি তাঁর দেশমাতৃকা তথা বঙ্গভূমির কাছে প্রার্থনা জাানিয়েছেন যেন দেশ-মা তাঁকে মনে রাখেন। প্রবাসে থাকাকালীন যদি তাঁর মৃত্যুও হয়, তাতেও তিনি দুঃখ পাবেন না। যদি দেশমাতা তাঁকে মনে রাখেন, তাহলে যমকেও তিনি ভয় পান না।

২.২ “সেই ধন্য নরকুলে,”– কোন মানুষ নরকুলে ধন্য হন?

উত্তর: ‘নরকুল’ বলতে এখানে মানবকুলকে বোঝানো হয়েছে। এই মানবকুলে সে-ই সর্বাপেক্ষা ধন্য বলে কবি মনে করেন—মানুষ যাকে কখনও ভোলে না। যে মানুষকে সকলে মনের মন্দিরে ঠাই দেয়, যাকে সর্বদা পুজো করে।

৩. গদ্যরূপ লেখ:

পরমাদ, যাচিব, কহ, যথা, জন্মিলে, দেহ, হেন, সাধিতে।

উত্তরঃ

পরমাদ = প্রমাদ
যাচিব = চাইব
কহ = বলো
যথা = যেমন/যেরূপ
জন্মিলে = জন্ম নিল
দেহ = শরীর
হেন = এরূপ
সাধিতে = সাধন করতে/সম্পাদন করতে

৪ শূন্যস্থানে উপযুক্ত বিশেষণ বসাও :

—– মন্দিরে,—-হ্রদে,—-তামরস।

উত্তর: মনের, অমৃত, মধুময়।

৫. পদপরিবর্তন করে বাক্যরচনা করো : মধু, প্রকাশ, দেহ, অমর, দোষ, বসন্ত, দৈব।

উত্তর

বিশেষ্য। বিশেষণ

মধু — মধুর / মধুরতা – বাক্য=রাম ও শ্যামের সম্পর্ক অতি মধুর।

প্রকাশ — প্রকাশিত- বাক্য=আগামীকাল আমাদের বিদ্যালয়ের বার্ষিক পত্রিকা প্রকাশিত হবে।

দেহ — দৈহিক – বাক্য= বর্তমানে অলস মানুষ আর দৈহিক শ্রম দিতে চায় না।

অমরত্ব — অমর – বাক্য= কবি অমৃত পান করে অমরত্ব লাভ করতে চাননি।

দোষ — দোষী – বাক্য= বিচারকের বিচারে লোকটি দোষী সাব্যস্ত হয়েছে।

বসন্ত — বাসন্তী – বাক্য= সরস্বতী দেবীকে বাসন্তী রঙের পোশাকে অপূর্ব মানিয়েছে।

দেব– দৈব – বাক্য= দৈব শক্তি এক যুক্তিতর্কের অতীত ব্যাপার।

৬.বিপরীতার্থক শব্দ লেখো :

প্রবাস, অমর, স্থির, জীবন,অমৃত।

উত্তরঃ

প্রবাস = স্বদেশ
অমর = মরণশীল/নশ্বর
স্থির = অস্থির/চঞ্চল
জীবন = মৃত্যু/মরণ
অমৃত = গরল

৭. ‘পরমাদ’ শব্দটি কোন্ মূল শব্দ থেকে এসেছে?

উঃ। ‘প্রমাদ’-এর পরিবর্তিত কোমল রূপই ‘পরমাদ’। ‘পরমাদ’ শব্দটি এসেছে মূল শব্দ ‘প্রমাদ’ থেকে।

৮. কবির নিজেকে বঙ্গভূমির দাস বলার মধ্য দিয়ে তাঁর কোন মনোভাবের পরিচয় মেলে?

উত্তর:- কবির নিজেকে বঙ্গভূমির দাস বলার মধ্য দিয়ে জন্মভূমি বঙ্গভূমির প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাপূর্ণ মনোভাবের পরিচয় মেলে।

৯. “মধুহীন কোরো না গো”—‘মধু’ শব্দটি কোন্ দুটি অর্থে প্রযুক্ত হয়েছে?

উত্তর:- ‘মধু’ শব্দটি দ্বারা কবি নিজের নাম মধু এবং পদ্মফুলের মধু এই দুটি অর্থ বুঝিয়েছেন।

১o . কবিতা থেকে পাঁচটি উপমা বা তুলনাবাচক শব্দ খুঁজে নিয়ে লেখো।

উত্তর:- ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় ব্যবহৃত পাঁচটি উপমা বা তুলনাবাচক শব্দ হল— মনঃকোকনদে, জীব-তারা, দেহ-আকাশ, জীবন-নদে, স্মৃতি-জলে।

১১. ‘মন্দির’ শব্দটির আদি ও প্রচলিত অর্থ দুটি লেখো।

উঃ। ‘মন্দির’ শব্দটির আদি অর্থ ‘গৃহ’ বা যে-কোনো বাড়ি এবং প্রচলিত অর্থ দেবালয় বা দেবগৃহ।

১২. ‘মানস’ শব্দটি কবিতায় কোন্ কোন্ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?

উ■ ‘মানস’ শব্দটির কবিতায় ব্যবহৃত একটি অর্থ—মন, অন্যটি—মানসসরোবর।

১৩. কবিতা টিতে কোন কোন ঋতুর উল্লেখ আছে।

উত্তর:- কবিতাটিতে বসন্ত ও শরৎ ঋতুর উল্লেখ রয়েছে।

১৪. কবির দৃষ্টিতে নশ্বর মানুষ কীভাবে অমরতা লাভ করতে পারে তা লেখো।

উঃ। মানুষ মরণশীল। কবি মনে করেছেন এই মরণশীল মানুষ তখনই অমরতা লাভ করতে পারে, যখন সাধারণ মানুষ তাকে ভোলে না, মনের মাঝে তাকে ঠাই দিয়ে রাখে।

বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার mcq

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর

নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নোত্তর

সঠিক উত্তর নির্বাচন করো

১. ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার কবি (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর/মাইকেল মধুসূদন দত্ত/সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত)।

উঃ। মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

২.কবি বঙ্গভূমির কাছে প্রার্থনা করেছেন (অর্থ/মোক্ষ/অমরতা)।

উঃ অমরতা।

৩.‘মধুহীন কোরো না গো তব মনঃকোকনদে।’—এখানে ‘মধু’ বলতে বোঝানো হয়েছে (কবি মধুসূদন/মধু/সুধা)-কে।

উঃ ও কবি মধুসূদনকে।

৪.‘কোকনদ’ শব্দের অর্থ হল – (লাল পদ্ম/নীল পদ্ম/সাদা পদ্ম/লাল গোলাপ)।

● লাল পদ্ম।

৫.কবি জীবনকে তুলনা করেছেন (নদের সঙ্গে/সমুদ্রের সঙ্গে/মরীচিকার সঙ্গে)।

উঃ নদের সঙ্গে।

৬. নরকুলে সে-ই ধন্য (লোকে যাকে ভুলে যায়/ লোকে যাকে ভোলে না/ যে প্রচুর ধনসম্পদ লাভ করে)।

উঃ লোকে যাকে ভোলে না।

৭. মধুময় তামরস/কি বসন্ত, কি (মাঘে/শরদে/আষাঢ়ে)!

উত্তর:- শরদে।

শূন্যস্থান পূরণ করো:

১. রেখো, মা দাসেরে মনে, এ— করি পদে।

উঃ মিনতি

২. —– কোরো না গো তব মনঃকোকনদে।

উঃ মধুহীন

৩ এ — হতে নাহি—তাহে

উঃ দেহ-আকাশ, খেদ

৪.চিরস্থির কবে —-হায় রে, জীবন-নদে?

উঃ নীর

৫. মনের মন্দিরে সদা সেবে—-।

উঃ সর্বজন।

৬.—- তামরস কি বসন্ত, কি শরদে!

উঃ মধুময়।

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর :

১.‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় এক বিদেশি কবির নাম আছে,তিনি কে?

উত্তর:- বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় এক বিদেশি কবির নাম আছে তিনি হলেন ইংরেজ কবি লর্ড বায়রন।

২.মা যাতে মনে রাখেন, সেইজন্য কবি নিজেকে কী বলে উল্লেখ করেছেন?

উঃ মা-এর মনে রাখার জন্য কবি নিজেকে ‘দাস’ বলে উল্লেখ করেছেন।

৩. ‘প্রবাস’ বলতে কী বোঝায়? ‘মক্ষিকা’ শব্দটির অর্থ কী?

উত্তর:- প্রবাস’ বলতে বোঝায়—বিদেশ।

৪.মক্ষিকা’ শব্দটির অর্থ কি?

উঃ ‘মক্ষিকা’ শব্দটির অর্থ হল ‘মাছি’

৫.অমৃত’ শব্দটি দিয়ে কবি কি বোঝাতে চেয়েছেন

উঃ ‘অমৃত’ শব্দটি দিয়ে কবি বোঝাতে চেয়েছেন—এমন এক পানীয়, যা পান করলে মৃত্যু হয় না।

৬.‘সুবরদে’ শব্দটি দিয়ে কবি কাকে সম্বোধন করেছেন?

উঃ সুবরদে’ শব্দটির অর্থ হল—সুবরদাত্রী, এই শব্দ দ্বারা তিনি বঙ্গভূমিকে সম্বোধন করেছেন।

৭. ‘ফুটি যেন স্মৃতি-জলে,’—এখানে কার, কী হয়ে ফোটার কথা বলা হয়েছে?

উঃ উদ্ধৃত অংশে কবির স্মৃতিজলে পদ্ম হয়ে ফুটে ওঠার কথা বলা হয়েছে।

একমুখী তথ্যানুসন্ধানী প্রশ্নোত্তর:

দুটি বা তিনটি বাক্যে উত্তর লেখো

1. ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় কবির প্রথম প্রার্থনা কী ছিল?

উত্তর:- প্রবাসে থাকাকালীন কবি এক মুহূর্তের জন্যও তাঁর অতি প্রিয় বঙ্গভূমিকে ভুলতে পারেননি। তাই বঙ্গভূমির প্রতি তাঁর প্রথম প্রার্থনাই ছিল, মা যেন দাস অর্থাৎ কবিকে মনে রাখেন। এই প্রার্থনাকেই তিনি ‘মিনতি’ বলেছেন।

2. ‘প্রবাসে, দৈবের বশে,’—প্রবাসে থাকাকালীন কোন্ ঘটনা ঘটার প্রসঙ্গ এনেছেন কবি?

উত্তর:- প্রবাসে থাকাকালীন ভাগ্যের পরিহাসে কবি তাঁর মৃত্যু ঘটার প্রসঙ্গ এনেছেন। এক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য ভাগ্যের পরিহাসে যদি তাঁর জীবনতারা দেহ-আকাশ থেকে খসে যায়, তবু তিনি সেজন্য দুঃখ করবেন না।

3. ‘চিরস্থির কবে নীর, হায় রে, জীবন-নদে?’—এই উদাহরণের আড়ালে কবি কী বলতে চেয়েছেন?

উত্তর:- ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় কবি বলতে চেয়েছেন মানুষ জন্মগ্রহণ করলে তাকে একদিন মরতেই হয়, কেউই অমর নয়। যেমন জীবনরূপ নদীতে জল কখনও স্থির হয়ে থাকে না, তেমনি মানুষের জীবনও যে-কোনো দিন শেষ হয়ে যেতে পারে।

৪ ‘হেন অমরতা আমি,’—এখানে কবির অমরতা লাভের রূপটি কেমন?

উত্তর:- ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতাটিতে কবি জন্মভূমির প্রতি তাঁর অকৃত্রিম শ্রদ্ধা-ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। মাতৃরূপিণী শ্যামা-জন্মদে-র কাছে সেই অমরতা প্রার্থনা করেছেন, যে অমরতা ধরা থাকে মানবমনে। কবির অমরতা হল মানুষ যেন তাঁকে না ভোলে, মনের মন্দিরে সর্বদা ধরে রাখে।

৫ ভুল দোষ, গুণ ধরো,’—’ভুল দোষ’ বা ‘গুণ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তরা কবি মধুসূদন মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে, স্বদেশ ত্যাগ করে, বিদেশে গিয়েছিলেন বিদেশি ভাষায় সাহিত্যচর্চা করে খ্যাতিমান হবেন বলে। মনের এই সাধকেই ‘ভুল দোষ’ বলা হয়েছে। আর কাব্য-নাটক রচনা করে তিনি যে বঙ্গভূমির সেবা করতে চান, তাকে ‘গুণ’ বলে প্রচার করেছেন।

বোধমূলক প্রশ্নোত্তর:

কমবেশি ছ-টি বাক্যে উত্তর লেখো

1.বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতাটি কার লেখা? বঙ্গভূমিকে কবি কী মিনতি করেছেন?

উত্তরা ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতাটি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা।

কবি তাঁর প্রবাসজীবনে ব্যথাভরা মন নিয়ে বঙ্গভূমিকে আন্তরিকভাবে স্মরণ করেছেন। তাঁর মনে হয়েছে, মা-এর স্নেহচ্ছায়া থেকে তিনি দূরে চলে এসেছেন বলে মা বুঝি তাঁকে ভুলে গেছেন। তাই তিনি মা-এর কাছে আত্মনিবেদনের মাধ্যমে করুণ মিনতি জানিয়েছেন। তাঁর এই মিনতিটি হল—মা যেন তাঁর মাতৃদাস এই সন্তানকে ভুলে না যান। মনের সাধ সাধন করতে গিয়ে যদি কোনো ভুল তাঁর হয়ে থাকে, তবু মায়ের মন যেন কখনও মধুহীন না হয়।

2. প্রবাসকালে কী ঘটলে কবি তার জন্য খেদ করবেন না?

উত্তর:- কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত একদা স্বেচ্ছায় প্রবাসজীবন বেছে নিয়েছিলেন। ফ্রান্সে যাওয়ার আগে তিনি বঙ্গভূমির প্রতি এক অকৃত্রিম টান বা আকর্ষণ অনুভব করেন। তারই অনিবার্য ছাপ লক্ষ করা যায় এই কবিতায়। তিনি বলেন – দৈব অনুগ্রহে প্রবাসে যদি তাঁর মৃত্যু হয়, তবে তার জন্য তাঁর কোনো খেদ থাকবে না। কারণ জন্ম হলে মৃত্যু ঘটবেই। কেউই এই পৃথিবীতে অমর নয়।

৩. মৃত্যুর অনিবার্যতা বোঝাতে কবি কবিতায় যে দুটি উদাহরণ রেখেছেন, সে দুটির উল্লেখ করো।

উত্তর:- মৃত্যু যে অনিবার্য তা বোঝাতে কবি প্রথমে বলেছেন— জীবননদীর জল কখনোই স্থির নয় –

‘চিরস্থির কবে নীর, হায় রে,জীবন-নদে? অন্যদিকে কবি বলেছেন—কোনো মাছি যদি অমৃতে পড়ে, তবুও অমৃতের সঞ্জীবনী গুণ তাকে অমরতা দেয় না, পরিবর্তে তার মৃত্যু হয়— মক্ষিকাও গলে না গো, পড়িলে অমৃত-হ্রদে!’

৪.‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় কবি নির্দেশিত প্রকৃত অমরতার রূপটি কেমন?

উত্তর:- ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় কবি দেশমাতৃকার কাছে তাঁর মনোগত অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। কবি বলেছেন—তিনি যদিও যথেষ্ট গুণের অধিকারী নন, তবুও অমরতার প্রতি তাঁর আসক্তি আছে। সেই অমরতা হল – লোকে যেন তাঁকে না ভোলে, মনের মন্দিরে তাঁকে ধরে রাখে এবং স্মরণ করে।

৫ অমরতার পরিপ্রেক্ষিতে কবি মায়ের কাছে প্রত্যাশা করেছেন?

উত্তর:- ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় দেশ মায়ের কাছে অমরতা চাইতে গিয়ে কবি মনে করেছেন তাঁর তেমন গুণ নেই, তবে মা যদি দয়া করে তাঁর ভুল-দোষগুলিকে গুণ বলে ধরেন, তবে তাঁকে বর দান করতে পারেন। যেহেতু মা সুবরদাত্রী, তাই সে বর অবশ্যই অমরতার বর, যে অমরতার অর্থ সৃষ্টির জন্য জনমানসে বেঁচে থাকা। কবি মায়ের কাছে এই বর প্রত্যাশা করেছেন।

৬.কবি সুবরদে বলতে কাকে বুঝিয়েছেন? তাঁর কাছে কবি কী বর চেয়েছেন? এভাবে ‘বর’ প্রার্থনার কারণ উল্লেখ করো।

উত্তর:- কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর ‘বঙ্গভূমি’ কবিতায় সুবরদে’ বলে মাতৃভূমি বঙ্গদেশকে বুঝিয়েছেন।

মাতৃভূমির কাছে কবি অমর হওয়ার বর চেয়েছেন

কবি মনে করেন তিনি জীবনে বহু ভুল করেছেন। ভুল করে তিনি বহু মূল্যবান সময়, সম্পদ, শক্তি নষ্ট করেছেন। মাতৃভূমির জন্য তিনি কিছু করতে পারেননি। মাতৃভূমি ও মাতৃভাষাকে অবহেলা করে তিনি বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। তাই কবি অনুতাপে মাতৃভূমির কাছে এভাবে বর প্রার্থনা করেছেন।

বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর:

কমবেশি আট-দশটি বাক্যে উত্তর লেখো

১.‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতাটি একটি সার্থক গীতিকবিতা কি না আলোচনা করো।

উত্তর ইউরোপে থাকাকালীন ফ্রান্সে যাওয়ার পূর্বে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতাটি রচনা করেন। এটি একটি গীতিকবিতা। এই ধরনের কবিতা হল এমন কবিতা, যেখানে কবির মনোভাবই কাব্যিক ব্যঞ্জনায় সার্থক রূপলাভ করে।

প্রবাসে কবি নিজেকে বৃহত্তম কাব্যমঞ্ঝের শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। বেশ কিছু কাব্যকবিতা ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল কবির। কিন্তু মাতৃভাষার প্রতি অকৃত্রিম টান অনুভব করেছিলেন কবি মনের গভীরে। দেশ, দেশীয় ভাষা, দেশের সারস্বত সমাজ, সাধারণ মানুষ তাঁকে গভীরভাবে টানলেও; কবিতাটির রচনাকালে তিনি এসব কিছু থেকে ছিলেন বহুদূরে।

তাই তাঁর মনের যন্ত্রণাই এই কবিতাটিতে প্রধান ভাব হিসেবে ব্যঞ্ছনাময় হয়ে উঠেছে। ছন্দ-অলংকার ও ভাষার সুন্দর প্রকাশে কবিতাটি তাই আধুনিক পদ্ধতিতে ভাবপ্রকাশের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হয়ে উঠেছে। কবিতার বক্তা অর্থাৎ কবি তাঁর মনের ব্যক্তিগত ভাবকেই কবিতায় বড়ো করে স্থান করে দিয়েছেন, আর এতেই কবিতাটি সার্থক হয়ে উঠেছে।

২.‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় কবির দেশভক্তির যে পরিচয় লিপিবদ্ধ আছে, তার পরিচয় দাও।

উত্তরা আধুনিক যুগের মহাকাব্যকার মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতাটি একটি গীতিকবিতা। কবিতায় প্রবাসে থাকাকালীন কবির দেশের প্রতি আন্তরিক টান ও ভালোবাসা প্রকাশিত হয়েছে।

কবি তখন ইউরোপে, ফ্রান্সে যাওয়ার পূর্বে যখন তিনি এই কবিতা রচনা করেন, তখন তাঁর মনে প্রবল আবেগ দেশকে নিয়ে। তাই এই কবিতায় দেশকে মা সম্বোধন করে তিনি বলেন—মা যেন তাঁকে মনে রাখেন, মনের সাধ সাধন করতে গিয়ে যদি তিনি কোনো ভুল করে থাকেন,
তবুও মা যেন তাঁর মনকুসুমকে মধুহীন না করেন। দেশমাতৃকাকে ভুলে তিনি যে প্রবাসী হয়েছেন—এই দুঃখ থেকে তিনি বলেন—ভাগ্যের বশে প্রবাসে যদি তাঁর মৃত্যুও হয়, তাতে তাঁর কোনো খেদ নেই; কারণ তিনি জানেন, জন্ম নিলে একদিন মরতেই হয়।

কেউই অমর নয়। মা যদি সন্তানকে মনে রাখেন, তবে তিনি যমকেও ভয় পান না। অবশেষে কবি বলেন—তাঁর তেমন কোনো গুণ নেই যা দিয়ে তিনি মা-এর কাছে অমরতা চাইতে পারেন। তবে মা যেহেতু সুবরদাত্রী, তাই তিনি যদি একান্তই কোনো বর দান করেন, তা যেন হয় দেশের মানুষের মনে চিরকালীন হয়ে বেঁচে থাকা। এইভাবেই কবি দেশমাতা তথা বঙ্গভূমির প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেছেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *