চরিত্রগঠনে খেলাধুলার ভূমিকা বাংলা প্রবন্ধ রচনা Teacj Sanjib
চরিত্রগঠনে খেলাধুলার ভূমিকা বাংলা প্রবন্ধ রচনা Teacj Sanjib
॥ চরিত্রগঠনে খেলাধুলার ভূমিকা ॥
চরিত্রগঠনে খেলাধুলার ভূমিকা: * ভূমিকা :
“খেলা মোদের লড়াই করা, খেলা মোদের বাঁচা মরা ; খেলা ছাড়া কিছুই কোথাও নাই।”
চরিত্রগঠনে খেলাধুলার ভূমিকা: প্রাচীন কাল থেকেই খেলাধুলা মানুষের শারীরিক গঠন ও মানসিক বিকাশের প্রধান উৎস হিসাবে স্বীকৃত। দেহ এবং মনের পরিপূর্ণ বিকাশের মধ্যে দিয়ে মানুষের পূর্ণাঙ্গ চরিত্র গঠন সম্ভব হয়। মনের বিকাশের জন্য যেমন জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজন, তেমন দৈহিক বিকাশ ও সুস্থতার জন্য প্রয়োজন খেলাধুলা।
দেহ সুস্থ না থাকলে মনের বিকাশও সম্ভব নয়। স্বামী বিবেকানন্দের একটি বিখ্যাত উক্তি এ প্রসঙ্গে স্মরণীয়“দুর্ব্বল মস্তিষ্ক কিছুই করিতে পারে না। আমাদিগকে উহা বদলাইয়া সবল মস্তিষ্ক হইতে হইবে। তোমরা সবল হও। গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্গের সমীপবর্তী হইবে।” বস্তুত খেলাধুলার মধ্যেই মানুষ খুঁজে পায় অফুরন্ত ENCA আনন্দের ভাণ্ডার।
* খেলাধুলার বিবর্তন ও বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ :
খেলাধুলা মানব সমাজে আদিকাল থেকে চলে আসছে। দেশ ও জাতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, নিজস্ব জীবনবোধ, ভৌগোলিক অবস্থানের মধ্য দিয়ে খেলাধুলার অভ্যাস, প্রকৃতি ও পদ্ধতি গড়ে ওঠে। ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, লন টেনিস, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, ভলি, দাবা—ইত্যাদি এক এক দেশের নিজস্ব খেলা আজ বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গনে বিস্তৃতি লাভ করেছে। দেশে দেশে এখন নিয়মিত খেলার আসর বসে। অজস্র ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের মন জয় করেছে ক্রীড়াবিদ্রা। ভৌগোলিক বেড়াজাল, জাতিগত ও ধর্মগত ভিন্নতা মুছে গিয়ে মানুষ মানুষের আরও নিকটে আসার সুযোগ পেয়েছে।
অলিম্পিক ক্রীড়ানুষ্ঠান বিশ্বের ক্রীড়ামোদী মানুষের এক মিলন ক্ষেত্রে এই সব ক্রীড়ানুষ্ঠান পরিণত হয়েছে। অলিম্পিকের অনুসরণে গড়ে উঠেছে এশিয়াড। দূরের ব্যবধান ঘুচিয়ে মানুষকে আরও কাছে টেনে এনেছে। এর মধ্যে দিয়েই এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের শুভেচ্ছা বিনিময় ঘটে। ভাবের আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সম্প্রীতির সেতুবন্ধন গড়ে উঠেছে।
দূরদর্শনের পর্দায় খেলা দেখে সারা বিশ্বের কোটি কোটি ক্রীড়াপ্রেমী দর্শক মুগ্ধ হন এবং অকুণ্ঠ প্রশংসা ও ভালোবাসায় অভিনন্দিত করেন খেলাধুলার ক্রীড়াবিদদের।
* খেলাধুলার মধ্য দিয়ে চরিত্র গঠনের সূত্রপাত ঃ
জন্মলগ্ন থেকে শিশুর প্রতি এক সহজাত আকর্ষণ থাকে। শিশু জন্মের পর থেকে পা-ছুঁড়ে খেলা করে। এই ভাবে খেলার মধ্য দিয়ে ধীর ধীরে সে বড়ো হতে থাকে। বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গৃহের গণ্ডি পেরিয়ে বৃহত্তর ক্রীড়াঙ্গনে প্রবেশ করে। এইভাবে বৃহত্তর জগতে প্রবেশের ফলে সে মানুষের মানসিক সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হবার সুযোগ পায়।
* খেলাধুলা ও শৃঙ্খলাবোধ ঃ
নিয়মিত খেলাধুলা ও শরীরচর্চার মধ্য দিয়ে মনে গড়ে ওঠে এক শৃঙ্খলাবোধ। ক্রীড়াঙ্গনে নিয়মিত শৃঙ্খলাবোধের অনুশীলনে দেহ হয়ে ওঠে সুস্থ সবল, মন হয়ে ওঠে সতেজ ও সুন্দর। মনে এক সমষ্টি বোধের জাগরণ ঘটে। ফলে দলগ ও আদর্শ ও ঐক্যবোধ উন্মেষ হয়। ব্যক্তিগত স্বার্থ মন থেকে বিলুপ্ত হয়। সেই জায়গায় সমি কল্যাণ চিন্তা বা দলগত ঐক্য মুখ্য হয়ে ওঠে। এই দলগত শৃঙ্খলা বোধই একটি জাতির উন্নতির সোপান। এই জন্য বর্তমানে প্রত্যেক রাষ্ট্রেই খেলাধুলোর মূল্য অপরিসীম।
* খেলাধুলো ও চরিত্রগঠন ঃ
নিয়মিত শৃঙ্খলা সংযম মেনে খেলাধুলার মধ্য দিয়ে এক চারিত্রিক দৃঢ়তা ও মানসিক বলিষ্ঠতার জন্ম হয়। ভারসাম্যের সৃষ্টি করে। খেলার মাঠে ও জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে মধ্য দিয়ে অগ্রসর হত হয়। এই প্রতিযোগিতায় সাফল্য ব্যর্থতা, জয়-প: সাফল্যের বা জয়ের উল্লাসে যেমন অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস এবং আত্মতুষ্টি ভালো নয়, তেমনি ব্যর্থতা বা পরাজয়ের মনোবল হারানো বা ভেঙে পড়াও ঠিক নয়। খেলাধুলার মাধ্যমে সব রকম প্রতিকূলতার মধ্যে সম মানসিকতা বজায় রাখার অভ্যাস গড়ে ওঠে। খেলাধুলো মানুষকে শেখায় নিয়মানুবর্তিতা, পরমত সহিষ্ণুতা, সহনশীলতা, সঙ্কল্পের দৃঢ়তা, ধৈর্য, একাগ্রতা ও উদারতা।
উপসংহার ঃ
বর্তমানে দেশের বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী আজ খেলাধুলার সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত। কিন্তু শিক্ষালাভের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীরা খেলাধুলার সুযোগসুবিধা পেলে ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্য বিষয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। ফলে অপসংস্কৃতির দিকে তাদের প্রবণতা কমবে ; বাড়বে সাহস ও শৌর্য। ভীরুতা ও কাপুরুষতার খোলস মুক্ত হয়ে তারা হয়ে উঠবে বিপদভয়হীন, নিঃশঙ্ক ও উদারচেতা।
# অনুরূপে : (১) ত্রজীবনে খেলাধুলার স্থান (২) ছাত্রজীবনে খেলাধুলার প্রভাব (৩) জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব।