Bengali Grammar

বিরাম চিহ্ন কাকে বলে বিরাম চিহ্ন ব্যবহারের নিয়ম বাংলা ব্যাকরণ teacj sanjib

 


বিরাম চিহ্ন কাকে বলে বিরাম চিহ্ন ব্যবহারের নিয়ম বাংলা ব্যাকরণ teacj sanjib

 

বিরাম-চিহ্ন-কাকে-বলে-বিরাম-চিহ্ন-ব্যবহারের-নিয়ম-বাংলা-ব্যাকরণ-teacj-sanjib

 

বিরাম চিহ্ন

বিরাম চিহ্ন: গদ্য-পদ্য উভয় রীতিতেই বিরাম-চিহ্নের গুরুত্ব কম নয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলা গদ্যের সাহিত্যিক প্রয়োগ শুরু হলেও তখনও গদ্যরচনার পথ ছিল অবশ্যই অপরীক্ষিত এবং বাংলা গদ্যের পঠনরীতি ছিল যথেষ্ট অপরিচিত। সেই সময় প্রথম সচেতন গদ্যশিল্পীরূপে আবির্ভূত হন বিদ্যাসাগর। বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পসম্মত রূপ গড়ে ওঠে এই বিদ্যাসাগরের হাতেই। তিনিই প্রথম অনুভব করেছিলেন যে বাংলা গদ্যের পঠনরীতির মধ্যে মাঝে মাঝে যতি বা বিরামস্থল এসে উপস্থিত হয়। সেইজন্যই বোধহয় তাঁর রচিত গদ্যে অজস্র পাদচ্ছেদ বা কমা-চিহ্ন ব্যবহার করে যতিস্থলগুলি চিহ্নিত করে দিয়েছিলেন। কিছুটা অতিরিক্ত হলেও এ-ব্যবহারের মাধ্যমে তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল গদ্য পাঠকদের কাছে বাংলা গদ্যের পঠন-পদ্ধতি নির্দেশ করা।

বিরাম চিহ্ন কাকে বলে

বিদ্যাসাগর স্বরচিত গদ্যের পঠনরীতিকে নির্দিষ্ট করে দেওয়ার জন্য গদ্যভাষায় যে বেশিমাত্রায় কমা-চিহ্ন ব্যবহার করেছিলেন, আজকের শিক্ষার্থীদের গোচরে আনার জন্য একটা উদাহরণস্বরূপ তা উল্লেখ করা যেতে পারে।—

“ইহা শুনিয়া, বেতাল, পূর্বকৃত প্রতিজ্ঞা অনুসারে, শ্মশানে গিয়া, পূর্ববৎ বৃক্ষে লম্বমান হইল ; রাজাও তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবমান হইয়া, তাহাকে বৃক্ষ হইতে অবতারণপূর্বক, স্কন্ধে করিয়া, সন্ন্যাসীর আশ্রম অভিমুখে চলিলেন।”

এই উদ্ধৃতিটিতে দেখা যাচ্ছে হ্রস্ব যতির ক্ষেত্রে কমা-চিহ্ন বা পাদচ্ছেদ, বিলম্বিত যতির ক্ষেত্রে সেমিকোলন বা অর্ধচ্ছেদ, পূর্ণযতির ক্ষেত্রে দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ দিয়ে বোঝানো হয়েছে।

একথা স্বীকার করতেই হবে বাংলাগদ্যে বিরাম স্থান যথাযোগ্যভাবে যদি রক্ষিত না হয় তাহলে অনেক বাক্যের অর্থ পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। যেমন—’বিশ্বজিৎ, তোমার সেখানে যাওয়া উচিত, না গেলে ক্ষতি হয়ে যাবে।’—বাক্যটিতে যদি যতিপতন এলোমেলো হয়ে যায় তাহলে বাক্যের অর্থও বিপর্যস্ত হবে। যেমন—বিশ্বজিৎ তোমার সেখানে যাওয়া উচিত না, গেলে ক্ষতি হয়ে যাবে।’—বাক্যটিতে বিশ্বজিৎ-এর পর কমা-চিহ্ন না দেওয়া এবং ‘না’-এর পর কমা-চিহ্ন দেওয়ায় অর্থগত বিপর্যয় ঘটে গেল।

প্রথমত, যতি ও ছেদ উভয়ের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য উল্লেখ করা যায়। আমরা যখন কবিতা আবৃত্তি করি বা গদ্যের সরব পাঠ দিই তখন আমাদের পক্ষে একটানা উচ্চারণ করে যাওয়া কখনোই সম্ভব হয় না— ( দম নেওয়ার জন্য খানিকক্ষণ জিহ্বাকে বিশ্রাম দেওয়ার প্রয়োজন হয়। ছন্দের ক্ষেত্রে একবারের প্রচেষ্টার পর জিহ্বার যেখানে বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন হয় তাকে প্রধানত যতি বলে।)

বাক্যের অন্তর্গত ভাবকে বা অর্থকে পরিস্ফুট করার জন্য আমাদের থামতে হয়—এই বিরামকে বলে ছেদ।

যতি পড়ে জিহ্বার প্রয়াস অনুসারে, আর ছেদ পড়ে বাক্যের অর্থ বা ভাবানুসারে। বস্তুত ছন্দশাস্ত্রে ছেদ ও যতি সমার্থক নয়। ছেদের প্রয়োজন অর্থ প্রকাশের জন্য, আর যতির প্রয়োজন জিহ্বার বিশ্রামের জন্য। যাইহোক বর্তমানে বিদ্যাসাগরীয় রীতিকে অনুসরণ করে অজস্র কমা-চিহ্নের ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। বাক্যের অর্থ পরিস্ফুট করার জন্য বিভিন্ন বিরাম-চিহ্ন বা ছেদ-চিহ্ন ব্যবহারের রীতি বাংলা গদ্যে রয়েছে। বাংলায় যে-বিরামচিহ্নগুলি প্রচলিত আছে তাদের দু-দিক থেকে বিচার করা যেতে পারে। একদিক থেকে বলা যায় বাক্যের সাধারণ অর্থ পরিস্ফুট করার জন্য কিছু বিরাম-চিহ্ন বা ছেদ-চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যেমন পূর্ণচ্ছেদ বা দাঁড়ি, অর্ধচ্ছেদ বা সেমিকোলন, পাদচ্ছেদ বা কমা-চিহ্ন, অপরদিকে থেকে বলা যায়—বাক্যের বিশেষ বিশেষ অর্থ প্রকাশের জন্য কিছু বিরাম-চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যেমন—জিজ্ঞাসা-চিহ্ন, বিস্ময়সূচক-চিহ্ন, উদ্ধারচিহ্ন, ড্যাশ বা রেখা-চিহ্ন, বন্ধনী-চিহ্ন, কোলন ও কোলন-ড্যাশ-চিহ্ন ও হাইফেন বা পদসংযোগ-চিহ্ন।

বিরাম চিহ্ন কয়টি ও কি কি

বিরাম চিহ্ন–
সাধারণ ভাব প্রকাশে ,বিশেষ বিশেষ ভাব প্রকাশে। জিজ্ঞাসা-চিহ্ন হাইফেন-চিহ্ন পাদচ্ছেদ উদ্ধার-চিহ্ন অর্ধচ্ছেদ কোলন ও কোলন-ড্যাস চিহ্ন বিস্ময়-সূচক চিহ্ন বন্ধনী চিহ্ন পূর্ণচ্ছেদ ড্যাশ ধা রেখাচিহ্ন

বিরাম চিহ্ন ব্যবহারের নিয়ম

১। দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ চিহ্ন, চিহ্ন (।) ঃ বাক্যের অর্থ যেখানে সম্পূর্ণতা লাভ করে অর্থাৎ মনের ভাব যেখানে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় সেক্ষেত্রে এই ভাব-সমাপ্তি বোঝাবার জন্য বাক্যের শেষে দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ ব্যবহার করতে হয়। এই দাঁড়ির পর শুরু হয় নতুন বাক্য।

২। অর্ধচ্ছেদ বা সেমিকোলন চিহ্ন, চিহ্ন (;) :

অনেক সময় একটি বড়ো বাক্যের মধ্যে অপেক্ষাকৃত ছোটো বাক্য এক বা একাধিক থাকে এবং পরস্পরের মধ্যে একটি অর্থগত যোগ স্পষ্ট হয়ে উঠে। এরূপ ছোটো বাক্যের শেষে অর্ধচ্ছেদ বা সেমিকোলন ব্যবহার করতে হয়—সেই অখণ্ড অর্থগত যোগকে স্পষ্ট করে তোলার জন্য। অর্ধচ্ছেদের বিরাম কাল পূর্ণচ্ছেদের চেয়ে কম। কয়েকটি উদাহরণ লক্ষ কর :

“এরা এক মুঠো ছাতু খেয়ে দুনিয়া উল্টে দিতে পারে ; আধখানা রুটি খেলে ত্রৈলোক্যে এদের তেজ ধরবে না; এরা রক্তবীজের প্রাণসম্পন্ন।”

“তাহা হইলেই এককালে সকল সন্দেহ দূর হইবেক ; অথবা পরস্ত্রীসংক্রান্ত কোনও কথা জিজ্ঞাসা করা উচিত নয়।”

মনে রাখা দরকার অর্ধচ্ছেদের দ্বারা যেগুলি যুক্ত হয় সেগুলি সম্পূর্ণ বাক্যের অর্থ বহন করে।

বিরাম চিহ্নের ব্যবহার

৩। পাদচ্ছেদ বা কমা-চিহ্ন, চিহ্ন (,) ঃ

সংক্ষিপ্ত বিরাম বোঝাবার জন্য এই চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। অপূর্ণ বাক্যাংশের শেষে, একই ধরনের একাধিক পদ পরপর উল্লেখ করতে পাদচ্ছেদ ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া কাউকে সম্বোধন করতে অথবা সাল, তারিখ, ঠিকানা, উপাধি উল্লেখ করতে, অথবা উদ্ধৃতি-চিহ্ন প্রয়োগ করার আগে পাদচ্ছেদ বা কমা-চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। পাদচ্ছেদের বিরাম-কাল অর্ধচ্ছেদের চেয়ে কম। কয়েকটি উদাহরণ লক্ষ কর :

অপূর্ণ বাক্যাংশের শেষে :

“যুধিষ্ঠির লক্ষ করলেন, অক্ষটি শকুনির অক্ষেরই অনুরূপ, তেমনি সুগঠিত, সুমসৃণ, ধার এবং পৃষ্ঠগুলি ঈষৎ গোলাকার, প্রতি বিন্দুর কেন্দ্রে একটি সুক্ষ্ম ছিদ্র।”

একাধিক পদ পরপর উল্লেখে :

রমেন, গগন রুপালি, সন্ধ্যা, সুজন, অনীক সকলেই আজ উপস্থিত ছিল।

সম্বোধনে :

“বাবা, আমাকে একবার বাড়ি লইয়া যাও।” সুজন, কাল অবশ্যই আসবে। সাল, তারিখ, ঠিকানা উল্লেখে :

২৫শে বৈশাখ, ১৩৬১ সাল। ১৬, কবি নবীন সেন রোড়, কলকাতা-৭০০০২৮

উপাধি উল্লেখে :

ড. রমাপদ মুখোপাধ্যায় এম. এ, বি. এড, পি-এইচ-ডি, সাহিত্যভারতী।

উদ্ধৃতি-চিহ্ন প্রয়োগের পূর্বে ঃ

দ্রোণাচার্য বলিলেন, “আমি তোমার সঙ্গে একমত।”

সুজয় বলল, “রবিন, কবে আসবে?”

৪। জিজ্ঞাসা চিহ্ন, চিহ্ন (?) ঃ

প্রশ্ন করা বোঝাতে গেলে বাক্যের শেষে প্রশ্ন-চিহ্ন দিতে হয়। তা না হলে প্রশ্ন করার অর্থ পরিস্ফুট হয় না। এরূপ চিহ্নের স্থানে পূর্ণচ্ছেদের মতোই থামতে হয়। কয়েকটি উদাহরণ লক্ষ কর :

ডাকছ কেন? তোমার কি এখানে আসার কোনো প্রয়োজন ছিল? আমার জীবনবৃত্তান্ত জেনে তোমার কী লাভ? লোকটাকে আপনি কি চেনেন? মনে রাখতে হবে এই চিহ্ন ব্যবহারের মাধ্যমে বাক্যের শ্রেণি নির্দেশ করা যায়।

৫। বিস্ময়-সূচক চিহ্ন, চিহ্ন (!) ঃ

যে-বাক্যে মনের কোনো বিশেষভাবকে প্রকাশ করা হয় তার সমাপ্তিতে বিস্ময়-বোধক চিহ্ন ব্যবহার করতে হয়। বক্তার মনের আনন্দ, ভয়, ক্রোধ, ঘৃণা, বিস্ময়, বিষাদ, বিরক্তি প্রভৃতি অনুভূতি প্রকাশে এই চিহ্ন ব্যবহার করতে হয়। বিস্ময়-বোধক চিহ্নের বিরাম কাল পূর্ণচ্ছেদের মতোই। কয়েকটি উদাহরণ লক্ষ কর ঃ

কী চমৎকার দৃশ্য! এ তো তোমার অদ্ভুত কথা! হ্যাঁ, দামোদর গোস্বামীর বরাত বটে! বাঃ, কী অপূর্ব সুন্দর গোলাপ ফুলটি! ওর কী অভাবনীয় সহিষ্ণুতা শক্তি! মনে রাখতে হবে এই চিহ্ন ব্যবহারের মাধ্যমে বাক্যের শ্রেণি নির্দেশ করা যায়।

৬। উদ্ধার-চিহ্ন, চিহ্ন (“ ..”) :

কোনো উদ্ধৃতি, কোনো মত অথবা মন্তব্য প্রকাশ করতে গেলে কিংবা কারো মুখের উচ্চারিত কথা যথাযথ বর্ণনা করতে গেলে উদ্ধার-চিহ্নের ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। তবে উদ্ধার চিহ্নের আগে যদি বাক্যের কোনো অংশ থাকে তাহলে সেই বাক্যের পরে পাদচ্ছেদ বা কমা-চিহ্ন ব্যবহার করতে হয়। কয়েকটি উদাহরণ লক্ষ কর ঃ

বাবু হুকুম দিলেন, “ধরে আনো বেটাকে।” হতভাগ্য ছেলেটি করুণ সুরে বললে, ‘বাবু, আমি বড়ো গরিব। আমার একটা পয়সা দিন। আমি পঙ্গু।” সাহিত্য সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্রের মন্তব্য, “সাহিত্য ধর্ম ছাড়া নহে। কেননা সাহিত্য সত্যমূলক।” বলরাম উত্তর দিলেন, “বিশেষ কিছু হয়নি, একটি ঘুঘুর কীট শকুনির অক্ষে ছিল।”

৭। ড্যাশ বা রেখা-চিহ্ন, চিহ্ন (-)

কোনো বিষয়ে দৃষ্টান্ত দেওয়ার পূর্বে, অথবা কোনো বক্তব্যকে স্পষ্টতর করে তোলার জন্য অন্যতর বাক্যাংশের পূর্বে, অথবা বক্তব্যের প্রসঙ্গ হঠাৎ বদল হলে, অথব৷ বাক্যে কোনো বক্তব্য অসমাপ্ত থাকলে রেখা-চিহ্ন বা ড্যাশ ব্যবহার করা হয়। কয়েকটি উদাহরণ

না, আজ রাতে কিছু খাব না, আমার শরীরটা—

উপরের বাক্যটিতে শরীরটা ‘ভালো নেই’—এই কথা বোঝাতে ড্যাশ বা রেখাচিহ্ন দিয়ে শেষ করা হয়েছে।

রমেনের সঙ্গে অনেক কথা আছে -তা বলতেই এখানে এসেছি। মানুষের কাম্য – স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থ, যশ।

চাকরটা অনেককাল আমার সঙ্গে ঘুরিয়াছে— আমার মুখ দেখিয়া আমার মনের ভাব বুঝিতে পারে।

৮। হাইফেন বা পদ-সংযোগচিহ্ন, চিহ্ন (-) :

একাধিক পদ যখন সমাসবদ্ধ অথবা সন্ধিবদ্ধ পদ হিসেবে ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় তখন পদ দুটির মধ্যে হাইফেন ব্যবহার করা হয়। তাতে দুটি পদের সংযোগ ঘটে এবং পদটি অর্থবহ হয়ে ওঠে। আবার অনেক সময় কোনো পংক্তির শেষে একটি পদ সম্পূর্ণরূপে বসাবার জায়গা থাকে না তখন পদটির প্রথমাংশের পরে হাইফেন দিয়ে পরের পংক্তির শেষাংশ লিখতে হয়। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে উপাধিজ্ঞাপক সাংকেতিক অক্ষরের মধ্যেও হাইফেন বসানো যায়।

বিরাম চিহ্ন এর উদাহরণ

কয়েকটি উদাহরণ লক্ষ কর ঃ

ঘরে-বাইরে আনেক সমস্যা। মাথা-ধরা তোমার রোগ। জ্ঞান অর্জন না করে বিষয়কে নিজের আয়ত্তে আনা যায় না। “তাহার হিন্দুধর্ম-প্রচারিনী, ধূমপান-নিবারণী ও দুর্নীতিদলনী—এই তিন তিনটা সভার আস্ফালনে গ্রামে চাষা-ভূষার দল পর্যন্ত সন্ত্রস্ত হইয়া উঠিল।

আজকের কার্য-বিবরণী সভা কক্ষে উপস্থিত করা উচিত।

প্রাক্তন উপাচার্য ড. রসময় চট্টোপাধ্যায় (এম. এ, পি-এইচ-ডি, ডি-লিট) আজকের সভায় উপস্থিত থাকবেন।

প্রসঙ্গত মনে রাখা দরকার ড্যাশ বা রেখা-চিহ্নের সঙ্গে হাইফেন বা পদ সংযোগ চিহ্নের রূপগত ও প্রয়োগগত পার্থক্য আছে। ড্যাশ-এর আকার বড়ো কিন্তু হাইফেন-এর আকার অপেক্ষাকৃত ছোটো। উদাহরণগুলি লক্ষ করলে উভয়ের পার্থক্য স্পষ্ট বোঝা যায়। বস্তুত আধুনিক বাংলায় হাইফেন বা পদসংযোগ চিহ্নের ব্যবহারের প্রাধান্য বেড়েছে।

৯। কোলন ও কোলন-ড্যাশ চিহ্ন, চিহ্ন (ঃ,  ঃ—) ঃ

কোনো বিষয়ের তালিকা দিতে গিয়ে কোলন বা কোলন-ড্যাশ ব্যবহার করতে হয়। আজকাল কোলন-ড্যাশ-এর ব্যবহারের থেকে কোলন-এর ব্যবহার প্রাধান্য পেয়েছে। কয়েকটি উদাহরণ লক্ষ কর :

গ্রাম বাংলার গ্রীষ্মকালীন ফল : আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল।

এই আদিকালের বাড়িটাতে যাঁরা আছেন তাঁহা হলেনঃ — পিসেমশাই, রানি পিসি, দুঃখীরাম ও নন্দরানি।

১০। বন্ধনী-চিহ্ন, চিহ্নরূপ .…….…….., ….….…….] :

বন্ধনী-চিহ্নরূপ দুভাবে ব্যবহার করা হয়—অঙ্ক শাস্ত্রের প্রথম বন্ধনী (……) ও তৃতীয় বন্ধনীর [……] মতো।

বিরাম চিহ্ন মনে রাখার কৌশল

বাক্যের মধ্যে ব্যাখ্যামূলক কোনো অংশ যুক্ত করতে হলে, অথবা স্বগতোক্তিমূলক কোনো মন্তব্য প্রকাশ করতে হলে অথবা কোনো উদ্ধৃত মন্তব্যের আকর-সূত্র নির্দেশ করতে

হলে বন্ধনী চিহ্নের ব্যবহার করা হয়। এছাড়া নাটকের অভিনয়ের মঞ্চ-নিদের্শের বিষয়গুলিও বন্ধনী-চিহ্নের অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়। কয়েকটি উদাহরণ লক্ষ কর :

ঘৃণায়, লজ্জায়, ক্রোধে, ক্ষোভে রমেশের চোখ-মুখ উত্তপ্ত হইয়া উঠিল কিন্তু কণ্ঠস্বর শান্ত রাখিয়াই বলিল, আপনি যখন কিছুই করবেন না বলে স্থির করেছেন তখন এখানে দাঁড়িয়ে তর্ক করে লাভ নেই।” (পল্লিসমাজ, শরৎচন্দ্র) গাঁয়ের পাশ দিয়ে নবাবি আমলের ধুলে-ভরা সড়ক তখন (ইংরেজের রেলপথ হয়নি) কিছু দূরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র উপায়।

মুখে সাহস এনে বললাম, ভয় নেই (অবশ্য ভরসাও নেই), আমরা দুজন আছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *