বাচ্য কাকে বলে ? বাচ্য পরিবর্তন করার নিয়ম বাংলা ব্যাকরণ টেকজ সঞ্জীব
বাচ্য কাকে বলে ? বাচ্য পরিবর্তন করার নিয়ম বাংলা ব্যাকরণ টেকজ সঞ্জীব
বাচ্য পরিবর্তন করার নিয়ম
বাচ্য
বাচ্য কাকে বলে
ক্রিয়ার (সমাপিকা ক্রিয়া) সঙ্গে কর্তা ও কর্মের সম্বন্ধ প্রকাশ করলে ক্রিয়ার যে রূপভেদ হয় তাকে বাচ্য বলে।
বাচ্য কয় প্রকার ও কি কি
বাচ্য প্রধানতঃ তিন প্রকার ঃ ১. কর্তৃবাচ্য, ২. কর্মবাচ্য এবং ৩. ভাববাচ্য। এছাড়া আরও একপ্রকার বাচ্য আছে তাকে কর্মকর্তৃবাচ্য বলা হয়।
১. কর্তৃবাচ্য ঃ যে-বাচ্যে কর্তার প্রাধান্য থাকে এবং ক্রিয়া কর্তার পুরুষের অনুগামী হয় তাকে কর্তৃবাচ্য বলে।
যেমন—গীতা গান ভালবাসে।
আমরা নিয়মিত ক্রিকেট খেলি।
পাগলে কিনা বলে?
২. কর্মবাচ্য : যে-বাচ্যে কর্মই প্রধান এবং ক্রিয়া কর্মের অনুগামী হয়, তাকে কর্মবাচ্য বলে। কর্মবাচ্যে কর্মে প্রধানত শূন্য বিভক্তি হয়। কর্তা গৌণভাবে অবস্থান করে অর্থাৎ ‘র’ বা ‘এর’ বিভক্তি যুক্ত হয় এবং এরপর দ্বারা, দিয়া, দিয়ে, কর্তৃক প্রভৃতি অনুসর্গ বসে। অবশ্য আধুনিক বাংলায় কখনো কখনো কর্মে বিভক্তি যুক্ত হয়। তাছাড়া কর্তৃবাচ্যের ক্রিয়াপদের মূল রূপের সঙ্গে ‘আ’ বা ‘ওয়া’ যুক্ত হয় এবং ‘ই’ ধাতুর আগমন ঘটে। তবে সেই ‘হ’–ধাতু কর্তৃবাচ্যের ক্রিয়ার কালকে অনুসরণ করে।
যেমন—রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলি কাব্য রচনা করিয়াছেন (কর্তৃ) রবীন্দ্রনাথের দ্বারা গীতাঞ্জলি কাব্য রচনা করা হইয়াছে (রচিত হইয়াছে)। (কর্মবাচ্য)
পুলিশ এলাকার ত্রাস সৃষ্টিকারী বাঘাকে ধরেছে (কর্তৃবাচ্য) পুলিশের দ্বারা এলাকার ত্রাস সৃষ্টিকারী বাঘাকে ধরা হয়েছে (বাঘা ধৃত হয়েছে)।
৩. ভাববাচ্য ঃ যে-বাচ্যে ক্রিয়ার ভাবই প্রধান এবং ক্রিয়া অকর্মক ও কর্তার সঙ্গে ক্রিয়ার অন্বয় হয় না, তাকে ভাববাচ্য বলে। ভাববাচ্যে ক্রিয়া প্রায় সময়ই হ-ধাতু যুক্ত এবং প্রথম পুরুষের একবচন হয়। ভাববাচ্যের অন্যান্য পরিবর্তন কর্মবাচ্যের মতো।
যেমন—তোমার বই বেশ কাটছে।
ভূগোলে পড়া গেছে।
পেট কামড়ায়।
বাচ্য পরিবর্তন:
বাচ্য পরিবর্তন—বাক্যের অর্থের কোনো পরিবর্তন না করে এক বাচ্যকে অন্য বাচ্যে পরিবর্তিত করার নাম বাচ্য পরিবর্তন কর্তৃবাচ্যের ক্রিয়া যদি সকর্মক হয় তবে তাকে কর্মবাচ্য এবং যদি অকর্মক হয় তাহলে তাকে ভাববাচ্যে রূপান্তরিত করা চলে।
বাচ্য পরিবর্তনের নিয়ম
ক. কর্তৃবাচ্য থেকে কর্মবাচ্য ঃ
বাক্যকে কর্তৃবাচ্য থেকে কর্মবাচ্যে রূপান্তরিত করতে হলে কর্তৃপদের সঙ্গে দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক যোগ করতে হয় এবং মূল ধাতুর সঙ্গে ‘আ’ প্রত্যয় যোগে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য পদ গঠন করে ‘হ’, ‘যা’, ‘আছ’ প্রভৃতি ধাতুর ক্রিয়া ব্যবহার করতে হয়। উভয়ক্ষেত্রেই ক্রিয়া কর্মের অনুসারী হয়। প্রসঙ্গত বলতে হয়, সংস্কৃত রীতি অনুসারে কর্মবাচ্যে রূপান্তরিত করতে হলে মূল ধাতুর সঙ্গে ‘ক’ প্রত্যয় যুক্ত করেও করা যায়।
কর্তৃবাচ্য—রাম রাবণকে নিহত করেন। কর্মবাচ্য— রাম কর্তৃক রাবণ নিহত হন।
কর্তৃবাচ্য—বিভূতিভূষণ ‘পথের পাঁচালী’ রচনা করেন।
কর্মবাচ্য—বিভূতিভূষণ কর্তৃক ‘পথের পাঁচালী’ রচিত হয়।
কর্তৃবাচ্য—পুরানো বই বিক্রি করে কত টাকা পেলে?
কর্মবাচ্য—পুরানো বই বিক্রি করে কত টাকা পাওয়া হল?
কর্তৃবাচ্য—ক্রমে সবই জানলাম।
কর্মবাচ্য-ক্রমে সবই জানা গেল।
কর্তৃবাচ্য—আমি চাঁদ দেখিলাম।
কর্মবাচ্য—আমা কর্তৃক চাঁদ দৃষ্ট হইল।
কর্তৃবাচ্য— ‘তাহাকে শিয়ালে খাইয়াছে।’ কর্মবাচ্য – সে শিয়াল কর্তৃক ভক্ষিত হইয়াছে।
কর্তৃবাচ্য—তিনি টিকিট কেনেন নি। কর্মবাচ্য—তাঁর দ্বারা টিকিট ক্রীত হয়নি।
কর্তৃবাচ্য থেকে ভাববাচ্য :
কর্তৃবাচ্য—মশাই, যাবেন কোথায়?
ভাববাচ্য—মশায়ের কোথায় যাওয়া হবে?
কর্তৃবাচ্য——কী করিতেছ?
ভাববাচ্য—কী করা হইতেছে?
কর্তৃবাচ্য—আমি খাইব না।
ভাববাচ্য—আমার খাওয়া হইবে না।
কর্তৃবাচ্য—আপনি কোথায় থাকেন?
ভাববাচ্য—আপনার কোথায় থাকা হয়? কর্তৃবাচ্য—তাই তোমাকে চিঠি লিখছি।
ভাববাচ্য—তাই তোমাকে চিঠি লেখা হচ্ছে।
কর্তৃবাচ্য—আসুন, বসুন।
ভাববাচ্য—আসা হোক, বসা হোক।
কর্তৃবাচ্য—একটা সভা আহ্বান কর।
ভাববাচ্য—একটা সভা আহ্বান করা হোক।
ভাববাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্য :
ভাববাচ্য—লোকটির কোথায় থাকা হয়?
কর্তৃবাচ্য—লোকটি কোথায় থাকে?
ভাববাচ্য—রেখার গাওয়া হবে না।
কর্তৃবাচ্য—রেখা গাইবে না।
ভাববাচ্য—আপনার কি এখন যাওয়া হবে?
কর্তৃবাচ্য—আপনি কি এখন যাবেন?
ভাববাচ্য—–কমলাকান্তের এ জন্মে আর বলা হইল না।
কর্তৃবাচ্য—–কমলাকান্ত এ জন্মে আর বলিতে পারিল না। ভাববাচ্য—বাবুর সহিত দেখা হইবে না। কর্তৃবাচ্য—বাবু দেখা করিবেন না।
ভাববাচ্য—ইঁহাদের খ্যাতি প্রতিপত্তির সীমা ছিল না। কর্তৃবাচ্য—ইহারা অপরিসীম খ্যাত ও প্রতাপশালী ছিলেন।
কর্মবাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্য :
কর্মবাচ্য—তাহার এখনও বইখানি পড়া হয় নাই।
কর্তৃবাচ্য—সে এখনও বইখানি পড়ে নাই।
কর্মবাচ্য—দৌবারিক কর্তৃক চোর ধৃত হইল।
কর্তৃবাচ্য—দৌবারিক চোরকে ধরিল।
কর্মবাচ্য—তবু আমার দ্বারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া হইবে না।
কর্তৃবাচ্য—তবু আমি মিথ্যা সাক্ষ্য দিব না।
কর্মবাচ্য—মহাজন কর্তৃক তাহারা ধৃত হইতেছে।
কর্তৃবাচ্য—মহাজন তাহাদিগকে ধরিতেছে
। কর্মবাচ্য-–পূর্বে এখানে নরবলি হইত।
কর্তৃবাচ্য–পূর্বে এখানে নরবলি দিত।
বাচ্য পরিবর্তন অনুশীলনী
নির্দেশ অনুসারে বাচ্য পরিবর্তন কর :
(ক) বালিকা নাচিতেছে । (ভাববাচ্যে)
(খ) বালকগুলি খেলিবে । (ভাববাচ্যে)
(গ) রাম সীতাকে পরিত্যাগ করিলেন। (কর্মবাচ্যে)
(ঘ) গোড়া থেকে বলা থাক। (কর্তৃবাচ্যে) (ঙ) জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না। (ভাববাচ্য
(চ) আমাকেই হারমোনিয়াম বাজাইতে হইবে। (কর্তৃবাচ্যে)
(ছ) ঝড়ে আমাদের বড়োই উপকার করিয়াছে? (কর্মবাচ্য)
(জ) শিশুটি মাতার জন্য কাঁদিতেছে। (ভাববাচ্যে)
(ঝ) হয়তো তার মনে হয়েছিল। (কর্তৃবাচ্যে
ঞ) আর বেশি লিখলে ডাক পাওয়া যাবে না? (কর্তৃবাচ্যে)
৳) আমি লোকটাকে পছন্দ করি। (কর্মবাচ্যে)
(ঠ) তোমাকে অসুস্থ দেখাচ্ছে। (কর্তৃবাচ্যে)
(ড) রাত্রে আপনি কী খান? (কর্মবাচ্যে)
(ঢ) তার কথাগুলো শোন। (কর্মবাচ্যে)
(ণ) ছেলেটা নৌকা বাইছে। (কর্মবাচ্যে)
ত ) সেকথা সকলের জানা আছে। (কর্তৃবাচ্যে)
(থ) এসো, অঙ্কটা করে ফেলা যাক। (কর্তৃবাচ্যে)
(দ) তুমি সব সময় শুয়ে থাকবে। (ভাববাচ্যে
(ধ) আমি উপবাসে থাকব। (ভাববাচ্যে)
(ন) একটু বসতে চাইছি। (ভাববাচ্যে)
(প) বাড়িতে অল্প-স্বল্প পড়া হচ্ছে। (কর্তৃবাচ্যে
(ফ) পালিয়ে বাঁচা যাবে। (কর্তৃবাচ্যে)
(ব) তোমার দ্বারা হবে না। (কর্তৃবাচ্যে) ভ)প্রয়োজনে বলা যাবে। (কর্তৃবাচ্যে)
(ম) আমার সঙ্গে এসো। (ভাববাচ্যে)
(য) তোমার কোথায় থাকা হয়? (কর্তৃবাচ্যে
(র) ভিতর হইতে কিছু তো দিলাম না। (কর্মবাচ্যে)
(ল) সভ্য সমাজ একাজ অনুমোদন করে না। (কর্মবাচ্যে)
(শ) গান শুনলে? (কর্মবাচ্যে)
(ষ) তাকে বাঘে খেয়েছে। (কর্মবাচ্যে)
(স) পড়াটা শেষ করো। (কর্মবাচ্যে)
বাচ্য পরিবর্তন করার নিয়ম
Thank you so much! It helped me so much. It helped in my exam.