ছোটগল্প দেনা পাওনা প্রশ্ন উত্তর বাংলা
ছোটগল্প দেনা পাওনা প্রশ্ন উত্তর বাংলা
ছোটগল্প দেনা পাওনা প্রশ্ন উত্তর
দেনা পাওনা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ছোটগল্প দেনা পাওনা বড় প্রশ্ন উত্তর
ছোটগল্প দেনা পাওনা : প্রশ্ন) দেনা পাওনা গল্পের মর্মান্তিক পরিণতি আড়ালে রবীন্দ্রনাথের সমাজ ভাবনা যে পরিচয় আছে তা গল্পটি বিশ্লেষণ করে দেখাও?
অথবা, ‘দেনা-পাওনা’ গল্পে রবীন্দ্রনাথের সমাজ চেতনার যে পরিচয় আছে তা পরিস্ফুট কর।
উত্তর : ‘দেনাপাওনা’ গল্পে সমাজসচেতন গল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের সমাজব্যবস্থার পণপ্রথারপ গুরতর এটির প্রতি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন। কন্যাদায়গ্রস্ত, দরিদ্র পিতা, প্রতিশ্রত, বর-পণ প্রদানে অক্ষম হলে কিভাবে তিনি অর্থলােভী বরপক্ষের নিমম পৈশাচিক অত্যাচারের প্রতিবাদহীন শিকার হন ও অসহায় নববধ, দবিসহ মানবযন্ত্রণায় কিভাবে সংগােপনে তিলে তিলে আত্মবলি দিতে বাধ্য হয়, তারই নিখত বাস্তব একটি চিত্র গল্পকার আলােচ্য গল্পে উপস্থাপিত করেছেন।
রামসুন্দর মিত্র বড়-আদরের কন্যা নিরুপমার বিবাহ দেন বনেদী সম্পদশালী রায়বাহাদরের একমাত্র পুত্রের সঙ্গে। বরপক্ষের চাহিদা ছিল দশ হাজার টাকা নগদ এবং তদপযুক্ত অন্যান্য দান-সামগ্রী। রামসুন্দর বহুকষ্টে বিষয় আশয় বাঁধা দিয়ে, বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করতে শুরু করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাজার ছয়, সাত টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব হল না। বিবাহের দিন এসে গেলাে। অতিরিক্ত সুদে একজন বাকি টাকা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু ভাগ্যের এমনই নিঠুর পরিহাস যে যথাসময়ে সেই সুদখাের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তিটি টাকা নিয়ে হাজির হলাে না। অথচ টাকা না হলে শুভ-বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় না। শত অনুরােধ উপরােধেও রায়বাহাদর শুভকার্যের সম্মতি দিলেন না।
বর আজকালকার ছেলে ; সহসা পিতার অবাধ্য হয়ে ঘোষণা করল, কেনাবেচা দরদামের কথা আমি বুঝি না। বিবাহ করিতে আসিয়াছি, বিবাহ করিয়া যাইব। অতঃপর বিবাহ সম্পন্ন হল। নিরুপমা শ্বশুরবাড়ীতে একরকম নির্বাসিত হল। বাপ পরাে দাম দিতে পারেনি সুতরাং কন্যা শ্বশুরবাড়ীতে পরা যত্ন পাবে কেন ? শাশুড়ীর এই যুক্তি স্বীকার করে নিয়ে নিরুপমা দিন কাটিতে লাগল।
রামসুন্দর বাড়ী বিক্রি করে পনের টাকা দেবার মনস্থ করলেন। কিন্তু তিন বিবাহিত পুত্রের আপত্তিতে তা সম্ভব হলাে না। শেষে নানা স্থান থেকে বিস্তর সুদে অল্প করে সংগহীত তিন হাজার টাকা নিয়ে কন্যাদায়গ্রস্ত অপরাধী পিতা বেহাই বাড়ীতে উপস্থিত হলেন। দীর্ঘ ভূমিকার পর তিনি চাদরের ভেতর থেকে ঐ তিনহাজার টাকা বের করে হাসিমুখেই বেহাই রায়বাহাদুরকে দিতে গেলেন। কিন্তু নিষ্ঠর পিশাচ রায়বাহাদর অট্টহাস্য টাকাটা নিতে অসম্মতি জানালেন ; কারণ টাকাটা বর-পণের সম্পণ বকেয়া টাকা ছিল না। রায়বাহাদুর এমন একটা ভাব প্রকাশ করলেন—যেন সামান্য কারণে হাত দগধ করতে চান না। মর্মাহত রামসুন্দর সবিনয়ে মদস্বরে নিরকে তাঁর বাড়ীতে পাঠানাে প্রস্তাব রাখলেন, কিন্তু তাতেও রায়বাহাদর নারাজ। অতঃপর কন্যার উপর পিতার দাবি ত্যাগ করে রামসুন্দর বাড়ি ফিরলেন ।
আশ্বিন মাস। পুজোর সময়। রামসুন্দর বাড়িঘর বিক্রি করে পণ্যের বকেয়া সমূহ টাকা নিয়ে রায়বাহাদরের বাড়ি উপস্থিত হলেন নিরুপমাকে আনবার জন্যে। কিন্তু হঠাৎ বিনামেঘে বজঘাতের মতাে জ্যেঠপত্র হরমােহন দুই ছেলে সহ সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন, “ বাবা, আমাদের তবে এখন পথে বসালে। নাতি দুটি হাঁটু জড়িয়ে গাড়ি দেওয়ার জিদ ধরলো। রামসুন্দর নতশির। নিরুপমা সবই বুঝলাে। তাই সে সােচ্চারে প্রতিবাদ করে বলল ঃ আমি কি কেবল একটা টাকার থলি, যতক্ষণ টাকা আছে ততক্ষণ আমার দাম ! সুতরাং নির; এভাবে, এ সতে এ অবস্থায় বশর বাড়ি থেকে পিত্রালয়ে যেতে রাজি নয়। রামসুন্দর আবার চোরের মত বিদায় নিলেন।
রায় বাহাদুর মহিষী নিরুপমার স্বামী ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটের চাকুরি নিয়ে তখন প্রবাসী। এদিকে শ্বশুর, শাশুড়ী, চাকর-চাকরানীর চরম অবহেলায় এবং সর্বোপরি পিতার মর্মান্তিক মনােবেদনার কারণ হয়ে একটা দুঃসহ অনভূতিতে ‘নিরপেম কঠিন রােগে আক্রান্ত হল এবং অচিরাৎ সাংসারিক সব প্রকার জ্বালা যন্ত্রণা থেকে সে চিরমুক্তি পেলাে। রায়বাহাদর যথাযােগ্য মর্যাদায় কুলবধুর সংস্কার করলেন। এমন সময় নিরর স্বামী নিজের বাসায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করে পত্র দিলেন। পাত্রকে অকাতরে নিরর মত্যুসংবাদ জানালেন এবং সেইসঙ্গে ছটি নিয়ে পত্রকে বাড়ি আসতে বললেন আবার বিবাহের মানসিকতা নিয়ে ; আর এটাও জানালেন, এবার বিশহাজার টাকা পণ এবং হাতে হাতে আদায় ।
নিস্পাপ নিষ্কলঙ্ক নিরপমা কেবল গরিব পিতার কন্যা হওয়ার অপরাধে প্রাকৃতিক নিয়মে বিকশিত হওয়ার সুযােগ পেলাে না, সামাজিক পণপ্রথার নিষ্ঠর নিষ্পেষণে অকালে ঝরে পড়লো। ক্রমোন্নত আধুনিক সভ্যতার পাদপীঠে আজও দষ্ট গ্রহণরপ সামাজিক পণপ্রথার নিদয় কবলে আলােচ্য গল্পে নিরুপমার মতাে কত নিরপেমাই যে তিলে তিলে আত্মবলি দিচ্ছে, তার ইয়ত্তা নাই। নিঠুর নির্মম সমাজপতিরা, সমাজের ধারকবাহকেরা সভ্যতার আর অভিজাতের নিলজ্জ বড়াই করেন কিন্তু রবীন্দ্রনাথে নিরুপমাদের রক্ষা করার অনুকলে সামান্যতম শুভপ্রয়াসের ক্ষেত্রেও তাঁরা নীরব নিশ্চল—এটাই আধুনিক মানবসমাজের মানবতাবােধশূন্য প্রতিকারহীন এটি।
ছোটগল্প দেনা পাওনা প্রশ্ন উত্তর বাংলা
প্রশ্নঃ এবারে বিশহাজার টাকা পণ হাতে হাতে আদায়।” বক্তা কে ? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বক্তা একথা কাকে কখন বলেছেন লিখ । এই বক্তব্য বক্তার কিরূপ মনােভাবের পরিচয় দেয় ? এই প্রথার নিষ্ঠুরতা গল্পে কেমন ভাবে প্রদর্শিত হয়েছে তার পরিচয় দাও।
উত্তর : রবীন্দ্রনাথের ‘দেনাপাওনা’ গল্পে উল্লিখিত রায়বাহাদুরের মহিষী এই কথা বলেছিলেন।
অভিজাত রায়বাহাদরের পুত্রের সঙ্গে দরিদ্র রামসুন্দর মিত্রের সুন্দরী ও একমাত্র কন্যা নিরুপমার বিবাহ হয়েছিল। কিন্তু রামসুন্দর বর পণের সমহ টাকা যথাসময়ে পরিশোধ করতে অক্ষম হওয়ায় কন্যা নিরপেমাকে শ্বশুরালয়ে নিতান্ত অযত্নে এক রকম বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল। অবশ্য মত্যুর পর রায়বাহাদর নিরুপমার অন্তেষ্টিক্রিয়া অত্যন্ত ধুমধামে সম্পন্ন করেছিলেন। রায়বাহাদরের পুত্র বিদেশে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের পদে চাকুরীরত ছিলেন। পত্নী নিরপমার মত্যু সংবাদ যথাসময়ে তিনি পাননি। তিনি চাকুরীস্থলে থাকার সুবন্দোবস্ত করে পত্নী নিরুপমাকে নিজের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্যে পিতা রায়বাহাদরকে পত্র লেখেন। ইতিমধ্যে নিরুপমার জীবনাবসান ঘটেছে। তাই পত্রের উত্তরে রায়বাহাদর মহিষী পত্রকে জানালেন যে পত্রের আর একটি বিবাহের সম্বন্ধ স্থির হয়েছে। পত্র যেন ছটি নিয়ে অবিলবে বাড়ি আসে। আরও জানানো হলাে যে এবারে বর পণের টাকা ।
বিশ হাজার এবং হাতে হাতে আদায়। রায় বাহাদরে মহিষী পত্রবধ, নিরপেমার মত্যু সংবাদ না জানিয়ে পত্রকে এই প্রসঙ্গে এই কথাটি লিখেছিলেন।
রায়বাহাদর মহিষী অতি হৃদয়হীনা শাশুড়ী। তাঁর কাছে পুত্রবধূর রপগণ বড় কথা নয়, বরপণের টাকার অঙ্কটাই বড়। অথ‘লালসা তাঁকে অমানবীতে পরিণত করেছিল। তাই তার কাছে পিতৃদণ্ড অথেই কন্যার যথার্থ মূল্য।
গল্পটি রচিত হয়েছে প্রায় শতবর্ষেরও পবে। তখনকার এ-রপ অমার্জনীয় জলন্ত সমস্যা লেখকের রচনা নৈপুণ্য এক অসাধারণ বাস্তব সমস্যার পরিণতি অঙ্কিত হয়েছে।
রামসুন্দরের একমাত্র কন্যা নিরুপমা এই গল্পের কেন্দ্রীয় করণ চরিত্র। পিতা তার আদরের কন্যার জন্য নিজের ভবিষ্যৎ অবস্থার কথা না ভেবে অভিজাত বংশে বিবাহ স্থির করে। কিন্তু তার এই আবেগমিশ্রিত সিদ্ধান্তই নিরপমার জীবনে উপস্থিত হলাে এক করুণ পরিণতি। রায়বাহাদুর উপাধিপ্রাপ্ত এক হৃদয়হীন নিষ্ঠর প্রকৃতির বশর এবং শাশুড়ি নিরপমাকে সংসারে অনাদরে গঞ্জনা-লাঞ্ছনার মাধ্যমে নিষ্পেষিত করতে শুরু করে। এর কারণ পিতা বিবাহের সময় পণের টাকা সপণ দিনে অক্ষমতা প্রকাশ করে।
নিরপেমার এই যন্ত্রণা ভােগ যেন শ্বশুর বাড়িটি তার নিকট শরশয্যা মতাে হয়ে দাঁড়াল, প্রতিদিন অনবরত অপমান, অনাদর—এমন কি পিতৃগহের সঙ্গে সম্পক ছেদে নিরুপমা নিজেকে একেবারে অসহায় বােধ করল। পণের টাকা শােধ না করতে পারায় অনুশােচনা ও লজ্জায় পিতা কন্যার সাথে দেখা করতে পারে না। ছেলেদের বঞ্চিত করে পিতা রামসুন্দর বাড়ি বিক্রয় করে কন্যার বিয়ের পণের টাকা শোধ করতে চাইছে শুনে নিরুপমা তীব্র প্রতিবাদ করে পিতাকে ফিরিয়ে দেয়।
এ-প্রসঙ্গ অবগত হয়ে অগ্নিমতি শাশুড়ি ক্ষিপ্ত হয়ে নিরুপমার প্রতি চরম নিষ্ঠুর হয়ে উঠে। এরপ মানসিক অত্যাচার, অসম্মান, অবহেলায় ঘৃণিত জীবন অতিবাহিত করতে হয় নিরুপমাকে। তার উপর নিরুপমার স্বামীর কর্ম উপলক্ষ্যে অন্যত্র থাকায় শাশুড়ি নিবিচারে অকথ্য অত্যাচার ত্রিগুণ থেকে বৃদ্ধি করে চতুগুণে পোঁছায়। অবশেষে নিরুপমার জীবন নিরুৎসাহিত হয়ে যায়। তাই নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি কোন যত্ন গ্রহণ করা বা উহার প্রতিকার করা সম্ভব হয় নি। ভাবেই নিরুপমা সামান্য অসুখ থেকেই মত্যুমুখে অগ্রসর হয়। তার শ্বশুর-শাশুড়ি নিরুপমার চিকিৎসার জন্য বিন্দুমাত্র আগ্রহ বােধ করে নি। অবশেষে নিষ্ঠুর পণ প্ৰথার অপঘাতে নিরপমার মত্যু হয়। এই মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য যে পণ প্রথাই একমার দায় রবীন্দ্রনাথ এ-গপের মাধ্যমে সেই চিত্রই আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।
প্রশ্ন ) আমি কি কেবল একটা টাকার থলি, যতক্ষণ টাকা আছে ততক্ষণ আমার দাম।’—বক্তা কে ? কোন্ ঘটনায় বক্তার এইরূপ উক্তি? বক্তার এই উক্তির কোনাে সামাজিক মূল্য আছে কি ?
উত্তর : বক্তা হলাে দরিদ্র পিতা রামসুন্দর মিত্রের একমাত্র কন্যা সদ্যবিবাহিতা নিরুপমা।
রামসুন্দর মিত্র দশহাজার টাকা নগদ এবং তদপযুক্ত অন্যান্য দানসামগ্রী বর-পণ দিবার প্রতিশ্রুতিতে স্থানীয় বনেদী ধনী রায়বাহাদরের একমাত্র পুত্রের সঙ্গে বড় আদরের কন্যা নিরুপমার বিবাহ দেন। কিন্তু বহ, আন্তরিক প্রয়াস সত্বেও তিনি উক্ত বর পণের টাকার কিছু অংশ যথাসময়ে প্রদানে অক্ষম হন। পরিণতিরুপে রায়বাহাদরে বাড়িতে কন্যার প্রতি পিতার স্বাভাবিক দাবি অস্বীকৃত হয় এবং বারবার রামসুন্দর অপরাধী পিতা হিসাবে বিবেচনায় রায়বাহাদুর ও তাঁর পরিবার কতৃক ধিক্কৃত হন। পরিশেষে নরকগামী হওয়ার ভয়ে পিতা রামসুন্দর জমিজমা বাড়িঘর বিক্রি করে পণের বাকি টাকা অতিকষ্টে সংগ্রহ করেন এবং তা প্রদান করার জন্যে রায়বাহাদুরের বাড়ীতে উপস্থিত হন। কিন্তু ঐ সময়ে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হরমােহন দুই পুত্র সহ নিরুপমার শ্বশুর বাড়ীতে উপস্থিত হয়ে তাঁর কাছে তাকে সপরিবারে পথে না ভাসানাের দাবি জানায়। নিরুপমার বিষয়টি বুঝতে বিলম্ব হয় না। শ্বশুরবাড়ীতে কন্যা নিরুপমাকে বধুর মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্যেই তার পিতা সর্বস্ব বিক্রি করে এবং তার ভ্রাতাদের নিঃস্ব করে প্রতিশ্রত পণের বকেয়া অর্থ প্রদান করার জন্যে উপস্থিত হন। এই প্রতিশ্রত অথ না পাওয়ার জন্যেই রায়বাহাদরের কাছে পত্রবধুর কোনাে মূল্য ছিল না। টাকার থলির মুল্য ততক্ষণ যতক্ষণ থলিতে টাকা থাকে। সুতরাং নিরুপমা যেন টাকা শুন্য মূল্যহীন টাকার থলি। এই ঘটনার পরিপেক্ষিতে রায়বাহাদুরের হৃদয়হীন অর্থ লােলুপতার প্রতিবাদে নিরুপমার এই সােচ্চার ধনি।
তথাকথিত সমাজে, এমনকি আধুনিক সভ্য সমাজেও বক্তার এই উক্তি মূল্যহীন। কারণ পণপ্রথার আজিকার সমাজেও একটি ঘৃণ্য অথচ অপরিহার্য অভিজাত সংস্কার । প্রগতিবাদী সমাজে পণপ্রথার বিরুদ্ধে নীতিগতভাবে সবাই সােচ্চার, কিন্তু এই নিন্দনীয় প্রথাকে নির্বাসন দেওয়ার ব্যাপারে সকলেই প্রায় নিস্ক্রিয় ও নীরব। তাই নিদয় সমাজের কাছে নিরুপমার এই খেদোক্তি নিঃসন্দেহে নিস্ফল ও নিরর্থক।
দেনা পাওনা গল্পের প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ) এই দুর্ঘটনায় অন্তঃপুরে একটা কান্না পড়িয়া গেল। এখানে কোন দুর্ঘটনার কথা বলা হয়েছে ? অন্তঃপুরে কার কাপ্পা পড়ল ? সে সময় কে কি করছিল? কার কথায় কিভাবে কান্না থেমে গেল ?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথের লিখিত ‘ গল্পগচ্ছ’ গ্রথের ‘দেনাপাওনা’ গপে রামসুন্দর মিত্রের একমাত্র কন্যা নিরুপমার বিয়েতে বর-পনের সপণে টাকা পাত্রের পিতা রায়বাহাদুরের হাতে তুলে দিতে রামসুন্দর অক্ষমতা প্রকাশ করলে হৃদয়হীন রায়বাহাদুর পটই জানিয়ে দিলেন, ‘টাকা হাতে না পাইলে বর সভাস্থ করা যাইবে না। পক্ষের কাতর প্রার্থনায় বরপক্ষের বড়-কতা তার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় বিয়েটা শেষ অবধি ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়। বিয়ের মতাে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয় সেটাকেই এখানে ‘ দুর্ঘটনা’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
ছোটগল্প দেনা পাওনা প্রশ্ন উত্তর বাংলা
এ গল্পের নায়িকা নিরুপমার বিবাহ বন্ধের উপক্রম হওয়ায় কন্যার পিতা রামসুন্দর মিত্রের অন্তঃপরে কান্নার রােল পড়েছিল।
নিরুপমার বিয়ে ভেঙ্গে যাবার পরিস্থিতিতে বিয়ে বাড়ীর অন্দরমহলে বিশেষ করে মহিলারা কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। সে-সময় নিরুপমা চেলি পরে, গহনা পরে, কপালে চন্দনের টিপ পরে, চুপ করে ঘরে মনের দুঃখে বসেছিল। লগ্নভ্রষ্ট হবার ভয়ে কন্যার পিতা রামসুন্দর মিত্র বারবার রায়বাহাদরের হাতে-পায়ে ধরে অনুরােধ করলেন শুভকাৰ্যটা সম্পন্ন হতে বরকে সভাস্থ করতে। কিন্তু রায়বাহাদর কোনাে অবস্থাতেই বরকে সভাস্থ করলেন না।
কিন্তু একালের ছেলেরা প্রথার চেয়ে মানুষকে বেশী মর্যাদা দেন। অপদিন পথিবীতে এসেছে বলেই তারা প্রাচীন প্রথার দ্বারা আচ্ছন্ন হয় নি—এ শিক্ষাই দিচ্ছে বর্তমান। তাই অন্ধ অনুকরণকে নব্য-শিক্ষায় শিক্ষিত রায়বাহাদুরের ছেলে বর স্বয়ং পিতার অবাধ্য হয়ে উঠে । এর পর পাত্রের অসীম সাহসিকতায় শেষ অবধি বিয়েটা সম্পন্ন হয়। এ প্রসঙ্গে সে পিতাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, কৈনাবেচা-দরদামের কথা আমি বুঝি না; বিবাহ করিতে আসিয়াছে, বিবাহ করিয়া যাইব। পত্রের বলিষ্ঠ পদক্ষেপে রায়বাহাদুরের পরাজয় হলাে এবং বিয়েটা সম্পন্ন হয়ে অন্তঃপুরে কান্না মুগ্ধ হয়ে যায়।
ছোটগল্প দেনা পাওনা রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ) তঁাহার কোনো জোর নাই নিজের কন্যার উপরে পিতার স্বাভাবিক অধিকার আছে তাহা যেন পণের টাকার পরিবর্তে বন্ধক রাখতে হইয়াছে।’—প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : আলােচ্য মন্তব্যটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ গপগছ’ গ্রন্থের দেনাপাওনা’ গল্প থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে অতীতের কুসংস্কারগ্রস্ত প্রচলিত প্রথায় বরপণের টাকা পুরােপুরি না দেবার ফল কি দাঁড়ায় লেখক তারই এক করণ চিত্র অতি অল্প কথায় সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
প্রতিশ্রত বর-পণের দশ হাজার টাকা পরিশােধ করতে না পারায় পিতা হয়েও রামসুন্দর মিত্র পিতৃস্নেহকাতর হৃদয়কে তৃপ্ত করতে সক্ষম হন নি। নিরপেমা তার শ্বশুরবাড়ীতে নির্যাতিত হয়ে অন্তরীণ অবস্থায় দিন কাটাতে বাধ্য হয়। কিন্তু রায়বাহাদর বর-পণের দশ হাজার টাকা সম্পণেরণে না পাওয়া অবধি পুত্রবধু নিরুপমাকে তার পিতৃ-গছে যেতে দেবেন না। তাই কন্যাকে বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য যতবার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ততবারই রামসুন্দর অসহায়ের মতাে হৃদয়ের বেদনা চেপে রেখে নিজে একাকী বাড়ি ফিরে এসেছেন। এ যেন পিতা হিসাবে বিবাহিতা কন্যার ওপর তার কোনাে মানবিক অধিকার পুবের মতাে জোর বর্তমান থাকে । এই পবিত্র অধিকারটুকু যেন পণের টাকার পরিবর্তে তাকে বন্ধকের সামগ্রী হিসাবে রাখতে হয়েছ রায়বাহাদরের নিকট।
নিরপেমা নিজের মুখে তাকে বাড়ী নিয়ে যেতে বলেছে পিতাকে। তার পিতারও সে-বাসনা যে প্রবল ছিল এ কথা অবিশবাস করার মতাে কোনাে ঘটনা এখানে ঘটে নাই। এ পরিবেশে রামসুন্দর মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করেছেন, প্রতিশ্রুতি বর-পণের টাকা দিতে না পারায় মেয়ের উপর আজ আর তার কোনাে অধিকার নেই। এটাই পণ প্রথায় জর্জরিত সমাজের স্বাভাবিক পরিণত। বিবাহিত মেয়েকে তার শ্বশুরবাড়িতে তাদের নির্দেশ মতাে প্রতিবাদ না করে মুখবুজে সব কিছু সহ্য করতে হয়। এটাই কুসংস্কারগ্রস্ত সমাজের বিধান। এখানে কন্যার পিতা রামসুন্দরবাব, নিরুপমার মুখে হাসি ফোটাতে নিরুপায়। মেয়েকে নিজের ইচ্ছেমতাে বা মেয়ের খুশীমতাে পিতৃগৃহে নিয়ে যেতে পারেন নি। এজন্য মেয়ের শ্বশুরের অনুমতি দরকার। এই অনুমতি পাওয়ার পশ্চাতে রয়েছে বর-পণের টাকা প্রাপ্তির উপর নির্ভরশীল। বিবাহিত কন্যার প্রতি পিতার এই মাণবিক অধিকারটুকু যেন পণের টাকার পরিবর্তে তাকে পণ্যের সামগ্রীর মতাে বন্ধক রাখতে হয়েছে রায়বাহাদুরের নিকট। প্রতিশ্রুত বর-পণের অনাদায় টাকাটাই এখন ঋণ স্বরপ হয়ে দাঁড়িয়েছে রায়বাহাদুরের নিকট। এখানে রামসুন্দর ঋণী আর রায়বাহাদুর ঋণদাতা। ঋণী রামসুন্দর যে-দিন ঋণদাতা রায়বাহাদুরকে সম্পূর্ণ টাকা ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হবেন সে-দিনই রামসুন্দর ফিরে পাবেন পিতৃ-অধিকার। আর নিরুপমাও ফিরে পাবে পিতৃ-গহে যাবার অধিকার।
ঘৃণিত ‘পণপ্রথা আমাদের সমাজকে যে-ধংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তারই ইঙ্গিত রয়েছে এই ‘দেনাপাওনা’ গল্পে। সমাজের এই চিরাচরিত প্রথা মানুষের মধ্য দিয়েই কাজ করে চলেছে তাই ব্যক্তি ও সমাজের দ্বন্দ্ব এখানে ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির দ্বন্দ্বের রুপ নিয়েছে।
প্রশ্নঃ দেনাপাওনা নামকরণের সার্থক বিচার কর।
উত্তরঃ এক সময় হিন্দুদের শ্রেষ্ঠ বিবাহ পদ্ধতিতে সামান্যতম দান গ্রহণ অবৈধ
। ছিল এমন কি সামান্য দান গ্রহণ করলে সে বিবাহ সুবিধা হয়েছে বলেও মনে করা হতাে না। কিন্তু মধ্যযুগের কোনো এক সময় থেকে বর-পণের প্রথা আরম্ভ এবং সমাজে তা এক ভয়ঙ্কর ব্যাধিস্বরপ হয়ে ওঠে। কোনো কোনো সমাজে অবশা কন্যা-পণের প্রথাও চাল, আছে। এই পণ বহ, পরিবারকে একেবারে শেষ করে দিয়েছে এবং এখনও দিচ্ছে।
পাঁচটি পত্রের পর একটি কন্যা জন্মগ্রহণ করায় রামসুন্দর এবং তাঁর স্ত্রী অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন। কন্যা যে সুন্দরী সে বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ নানা ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু সুন্দরী হলেও এদেশে পণ প্রথার শিকার হতে হতাে সব মেয়েকেই। তাদের সুন্দরী কন্যা নিরুপমাকেও সেই প্রথার শিকার হতে হলাে।
কন্যার ভবিষ্যৎ ভেবে পিতা সপাত্রের সন্ধান করেন স্বাভাবিক ভাবেই—কোপটা সেই জন্যই কন্যার স্কন্ধে এসে পড়ে কঠিনতর হয়ে।
নতুন যুগের শিক্ষায় শিক্ষিত পত্র পণকে অগ্রাহ্য করে বিয়ে করলেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। বর-পণ মেটাবার জন্যে সবস্বান্ত হতে চলেছিলেন কন্যার পিতা রামসর, পথে বসাতে চলেছিলেন পুত্রদের এবং নাতি-নাতনীদের। তথাকথিত ধর্ম রক্ষার নামে অন্যায় প্রথা রক্ষায় হিন্দুদের পঙ্কে ডােবাবার উপক্রম করেছে। পণের টাকা মিটিয়ে দিতে নিষেধ করে নিরপেমা বাঁচিয়ে দিল তার ভ্রাতাদের। কিন্তু পণের বলি হয়ে নিজে প্রাণ বিসর্জন দিল।
পণপ্রথার ভয়ঙ্করতার কথাই বলা হয়েছে এই গল্পে। এই সামাজিক ব্যাধি এই গল্পের নায়িকা নিরপমাকে গ্রাস করেছে। গল্পের নাম দেওয়া হয়েছে দেনাপাওনা। বিবাহ স্থির করার সময় উভয় পক্ষ বসে স্থির করে কন্যার সঙ্গে কি যৌতুক দেওয়া হবে—এরই নাম দেনাপাওনার হিসেব। এরই অপর নাম বর-পণ।
কিন্তু নামকরণের দিক থেকে বর-পণ অপেক্ষা দেনাপাওনা নামটি সার্থকতর। এই নামকরণের একটা প্রচ্ছন্ন বিদ্রুপ আছে। বরপক্ষের পাওনা মেটাতে কন্যাপক্ষকে বােধ হয় সর্বসময়েই দেনা করতে হতাে। দেনা করে পাওনা মেটাতে হতাে বলেই কি বরপণের অপর নাম দেনাপাওনা ?
এই গল্পে রামসুন্দরকে দেনা করতে হয়েছে—যিনি বাকি পণের টাকাটা ঋণ দেবেন বলেছিলেন তিনি না আসায় রামসুন্দর বিবাহের পবে বরপক্ষের সমস্ত পাওনা মেটাতে পারেন নি। তারই ফলে নিতান্ত অবহেলায় নিরুপমাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল। ।
কিন্তু পাওনা আদায়ের এমনি আকর্ষণ যে, পুত্রবধুকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েও দ্বিতীয়বার হাতে হাতে বর-পণের বিশ হাজারের দিকে হাত বাড়াবার লােভটা সমবরণ করতে পারেন নি রায়বাহাদর এবং তাঁর পত্নী। এখানে তাই দেনাপাওনার সবগ্রাসী শক্তির পরিচয় দেওয়া হয়েছে এই গল্পে। এরই জন্যে মৃত্যু এবং একেই পুনরায় হাতে পাবার জন্যে দ্বিতীয় বিবাহের ব্যবস্থা।
‘দেনাপাওনা’ নামকরণ যে সার্থক হয়েছে একথা স্বীকার করতেই হবে।
ছোটগল্প দেনা পাওনা ছোট প্রশ্ন উত্তর
ব্যাখ্যা – সেইদিন প্রথম ডাক্তার দেখিল, এবং সেইদিন ডাক্তারের দেখা শেষ হইল।
আলােচ্য অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দেনাপাওনা’ গল্পটি থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। বর-পণ ঠিক মত মিটিয়ে না দেবার জন্যে বধুর ওপর কিরপ অত্যাচার হয় এখানে সে-কথাটাই বলেছেন রবীন্দ্রনাথ ; নানাপ্রকার অত্যাচার বন্ধুকে রােগগ্রস্ত করেছিল। পিতা এবং ভ্রাতাদের সাথে দেখার যে শেষ ইচ্ছাটুক, বধ, প্রকাশ করেছিল তাও তুচ্ছ করা হয়েছিল—অসুস্থতাকেও স্বীকার করা হয় নি। যেদিন তার শ্বাস উপস্থিত হলাে সেদিন ডাক্তার না ডেকে আর উপায় ছিল না। কিন্তু সেই শেষ মুহতে ডাক্তার ডাকা প্রহসন মাত্র। সেদিনই নিরুপমা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে —আর ডাক্তার প্রয়ােজনও ফুরিয়ে যায়।
ব্যাখ্যা – সকলেই এমন ভাব দেখায় যেন বধূর এখানে কোনাে অধিকার নাই, ফঁাকি দিয়া প্রবেশ করিয়াছে।
আলােচ্য অংশটি রবীন্দ্রনাথের ‘দেনাপাওনা’ গল্পটি থেকে গহীত। বর-পণ
দাবীদাররা যে কত নীচে নামতে পারে এখানে সেই কথাটাই আলােচিত হয়েছে। এদের দৃষ্টিতে বর অপেক্ষা কন্যা সর্বদাই নীচকয়েক হাজার টাকা এবং পরিমাণ মতাে দানসামগী যুক্ত হলে তবেই কন্যা বরের কাছাকাছি আসতে পারে। নিরুপমার বাবা বিয়েতে বর পক্ষের দাবী অনুযায়ী অর্থ সঙ্গে করে আনতে পারে নি। বিশেষ করে তার পিতার প্রতিশ্রুতি সত্তেও টাকাটা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে রায়বাহাদুর পরিবারকে। অতএব অর্থ ব্যতিরেকে নিরপেমার তাে রায়বাহাদরের বাড়ীতে প্রবেশের অধিকার ছিলনা। এতাে চুরি করে সকলের চোখে ধুলাে দিয়ে প্রবেশ করা। নিরুপমা তাই তার শ্বশুর-শাশুড়ীর দষ্টিতে, এমন কি, এ বাড়ীর দাস-দাসীদের চোখেও গােপন অনুপ্রবেশকারী। যে পণ নিয়ে আসে নি সঙ্গে করে, সে তাে-বধই হয়নি—তার কোনােই অধিকার নেই বশর বাড়ীতে প্রবেশ করার। যেন ফাঁকি দিয়ে প্রবেশ করেছে।
ব্যাখা।- তাহার কোনো জোর নাই—নিজের কার উপরে পিতার যে স্বাভাবিক অধিকার আছে তাহা যেন পণের টাকার পরিবর্তে বন্ধক রাখিতে হইয়াছে। এমনকি, কন্যার দর্শন সেও অতি সংকোচে ভিক্ষা চাহিতে হয় এবং সময়বিশেষ নিরাশ হইলে দ্বিতীয় কথাটি কহিবার মুখ থাকে না।
আলােচ্য অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকরের ‘দেনা পাওনা’ গল্পটি থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে কসংস্কারগ্রস্ত প্রচলিত প্রথায় বর-পণের টাকা পুরােপুরি না দিবার ফল কি লেখক অতি অল্প কথায় সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
মহাজনের কাছে ঋণ গ্রহণের সময় অনেক স্বণ অলঙ্কার বা মূল্যবান সামগ্রী বাঁধা রাখতে হয়। যা বাঁধা রাখা হয় তা ফেরত পেতে হলে সুদ সমেত ঋণের টাকাটা আগে শােধ করতে হয়। টাকাটা পুরােপুরি শােধ না করা পর্যন্ত ঋণগ্রহীতার বধকী দ্রব্যের ওপর কোনাে অধিকারই থাকে না—এমন কি সেটি মাঝে মাঝে দেখার অধিকারও বড়াে একটা থাকে না।
রবীন্দ্রনাথ বলতে চেয়েছেন যে, রামসুন্দরের অবস্থা ঋণগ্রহীতার ন্যায়। তিনি পণের যে টাকাটা দিতে পারেন নি সেটা যেন রায়বাহাদর তাঁকে ঋণ দিয়েছেন এবং সেই ঋণ গ্রহণের পরিবর্তে রামসর যেন তাঁর কাছে কন্যাকে বন্ধক রেখে তার ওপর নিজের অধিকার হারিয়েছেন। কন্যাকে রামসুন্দর দেখতে পাবেন কি পাবেন না তা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে ঋণদাতা রায়বাহাদুরের ওপর। কখনাে কখনাে রামসুন্দর কন্যাকে দেখতেও পান নি। রায়বাহাদুর সাক্ষাৎ করতে না দিলে অধিকারহীন রামসুন্দরের পক্ষে দ্বিতীয়বার প্রার্থনা করাও অসম্ভব ছিল। এটা খুবই অপমান কর।