Bengali Class ix

আবহমান কবিতার প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা

 আবহমান কবিতার প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা

 

আবহমান

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

 

আবহমান কবিতার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর গুলি আলোচনা করা হয়েছে।

আবহমান-কবিতার-প্রশ্ন-উত্তর-নবম-শ্রেণী-বাংলা

 

আবহমান কবিতার সারাংশ

 

বিষয়-সংক্ষেপ

 

অনেক বছর আগে গ্রামকে গভীর অনুরাগে ভালােবেসে গ্রামে বাস ছিল মানুষের। বাড়ির উঠোন ছিল। লাউয়ের মাচা ছিল। তাতে ছােটো ফুল ফুটত। সন্ধ্যার বাতাসে দুলত। তারপর । জীবিকা অর্জনের তাগিদে নগরবাসে চলে যেতে হয় তাদের কাউকে কাউকে। কিন্তু গ্রাম, গ্রামের বাড়ি, গ্রাম্য প্রকৃতি কোনাে কিছুর সঙ্গে নাড়ির বাঁধন ছিন্ন হয় না। গ্রাম্য জীবন হারিয়ে গিয়েও হারিয়ে যায় না। গ্রামের মাটি, জল ও হাওয়াকে যে ভালােবাসে, গ্রামকে তার পুরােপুরি ভােলা কি সম্ভব ? গ্রামের প্রতি ভালােবাসা ও আকর্ষণ ফুরায় না। গ্রামে তার যাওয়া-আসা অব্যাহত থাকে। গ্রামে ফেরার দুরন্ত বাসনা থেকেই যায়। গ্রামে এলে তারা দিনভর ঘাসের গন্ধ মাখে। রাতভর তারায় তারায় স্বপ্ন আঁকা চলে। তার দুঃখ-যন্ত্রণা বুকের মাঝে জেগে থাকে। বাগানের ফুলের হাসি, সূর্য ওঠা, সন্ধ্যার আঁধার নামলে নদীর হাওয়া ছুটে আসা কোনাে কিছু ফুরায় না, হারিয়ে যায় না। প্রকৃতির যা কিছু যুগ যুগ ধরে ঘটে এসেছে তা একই রকমভাবে ঘটতে থাকে। সেই উঠোন, লাউমাচা, ছােটো ফুল ফোটা, সন্ধ্যার বাতাসে দুলতে থাকা। সবই তাে চিরন্তন, আবহমানকালের।

 

আবহমান কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

 

প্রশ্ন ) ফুৱয় না, তার কিছুই ফুৱয় না,/ নটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না!’-উৎস উল্লেখ করাে। প্রসঙ্গ নির্দেশ করাে। উদ্ধৃতিৱ অর্থ বিশ্লেষণ করাে।

 

. উত্তর: উৎস : আলােচ্য উদ্ধৃতিটি প্রখ্যাত কবি

 

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী রচিত ‘আবহমান কবিতা থেকে গৃহীত। প্রসঙ্গ : গভীর অনুরাগে ও মাটি-হাওয়াকে ভালােবেসে গ্রামের মুক্ত প্রকৃতির মাঝে ঘর বেঁধেছিল এককালে মানুষ। তারপর বংশপরম্পরায় বাস করে আসছে গ্রামীণ মানুষের বংশধররা। কালক্রমে গ্রামীণ সভ্যতার পাশাপাশি নগর-সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটেছে। সেখান থেকে প্রকৃতি নির্বাসিত। গ্রামে মানুষ হওয়া অনেককে রুজিরােজগারের প্রয়ােজনে গ্রাম ছেড়ে শহরবাসী হতে হচ্ছে। গ্রাম ও গ্রামের প্রকৃতির সঙ্গে যােগাযােগের সুতােয় টান পড়ছে। শহরের কৃত্রিমতায় ক্লান্ত অবশ হয়ে পড়া শরীর ও মন অবসর সময়ে গ্রাম ও গ্রামের ফেলে-আসা প্রকৃতির হাতছানি অনুভব করছে। সবকিছু ফেলে-আসার দুঃখকষ্ট-যন্ত্রণা মর্মে মর্মে অনুভব করছে। শিকড়ের টানে কখনাে-কখনাে গ্রামের আজন্ম পরিচিত জন্মস্থানে গিয়ে দাঁড়ালে দেখছে সেখানকার প্রকৃতি কিন্তু যথারীতি একই আছে। জল-মাটি-হাওয়া, ঘাসের গন্ধ, বাগানে কুন্দফুলের হাসি, লাউয়ের মাচা, লাউফুলের হাতছানি দিয়ে ডাকা, সূর্য ওঠা, সন্ধ্যার অন্ধকার নামা, নদীর সান্ধ্য বাতাস ছুটে  আসা, সব যথারীতি একইরকম। এই আলােচনা প্রসঙ্গে প্রশ্নের উদ্ধৃতি।

 

উদ্ধৃতিৱ অর্থ বিশ্লেষণ : গ্রাম্য প্রকৃতির কিছুই ফুরয় না, কিছুই শেষ হয়ে যায় না। আবহমান কালের ধারা অব্যাহত। যা চিরকালের, শাশ্বত কালের, তা ফুরােতে পারে না, শেষ হতে পারে। সময়ের ধারা নদীর স্রোতের মতাে। বহমান সময়ের ধারায় বয়স বাড়ে। বেড়ে ওঠা বয়সের ছাপ পড়তে পারে, কিন্তু শেষ হয়ে যায় না। নটেগাছটি আবহমান কালের প্রতীক। তার শরীরে সময় বৃদ্ধির ছাপ আছে। সে বয়সের ভারে বুড়িয়ে গেছে। কিন্তু ছিন্নমূল হয়ে উপড়ে গিয়ে শেষ হয়ে যায়নি। সে শাশ্বত কালের পরমায়ু নিয়ে বহমান সময়ের সাক্ষী, আবহমান কালের জীবন্ত চিহ্ন।

 

প্রশ্ন ) গ্রাম্য প্রকৃতির কোলে আবাল্য লালিতপালিত মানুষটির প্রকৃতি-বিচ্ছিন্ন দুঃখকষ্ট-যন্ত্ৰণৱ স্বরূপ ব্যাখ্যা করাে। প্রকৃতির কোলে ফিরে আসার ব্যাকুলতা ও দিনরাতভৱ আত্মমগ্ন হয়ে থাকার ছবিটি তুলে ধরে। 

 

উত্তর: দুঃখকষ্ট-যন্ত্রণার স্বরূপ ব্যাখ্যা : শহরনগরের প্রকৃতি নির্বাসিত সৌধমিছিলের মাঝে আজন্ম মানুষ হওয়া আর গ্রাম্য প্রকৃতির উদার-উন্মুক্ত কোলে আজন্ম লালিতপালিত হওয়ার মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। গ্রামে জন্মে বড়াে হয়ে ওঠে জীবন ও জীবিকার একান্ত প্রয়ােজনে যাদের গ্রাম ছেড়ে শহর-নগরে বা দূর-দূরান্তে চলে যেতে হয়, গ্রাম ও গ্রাম্য প্রকৃতিকে ছেড়ে যাওয়ার দুঃখকষ্ট ও যন্ত্রণার ভুক্তভােগী হিসেবে তারাই তা মর্মে মর্মে অনুভব করতে পারে। একইভাবে তার জন্মস্থান ও সেখানকার প্রকৃতি তার পালিত সন্তানের বিচ্ছেদ বেদনায় কাতর থাকে। এই দুঃখ-যন্ত্রণার অবসান হয় না। নেভে তার যন্ত্রণা যে, দুঃখ হয় না বাসি, প্রকৃতপক্ষে মা আর সন্তানের শিকড়ের বাঁধন কি ঘেঁড়ে ? তাই প্রবাসী ছেলের জন্য মায়ের যেমন দুঃখ-যন্ত্রণা, সন্তানের দুঃখ-যন্ত্রণাও তেমনি। সন্তান তাই অবসর মুহূর্তে ঘরে ফেরার ব্যাকুলতায় থাকে অধীর। লাউমাচার আন্দোলিত ছােট্ট ফুলটি তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। তাকে দাঁড়াতে বলে উঠোনে। হয়তাে সন্তান সশরীরে আসতে পারে না। কিন্তু ভাবনার ব্যাকুলতায় আসা-যাওয়ার কাজ সেরে নেয়।

 

আত্মমগ্ন হয়ে থাকার চিত্র : শিকড়ের টানে তাকে লাউমাচার পাশে উঠোনে এসে দাঁড়াতে হলে দিনরাতভর প্রকৃতির কোলে নিজেকে নিঃশেষে সঁপে দেয়। সারাটা দিন – আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে,/সারাটা রাত তারায়-তারায় স্বপ্ন এঁকে রাখে। তার অবস্থা দুর্ভিক্ষের ক্ষুধায় কাতর মানুষের মতাে। প্রকৃতির আবহমান কালের সাজানাে সম্পদের ভাণ্ডারে আত্মমগ্ন ও আত্মলীন হয়ে থাকা। যেন দুর্ভিক্ষের রাক্ষুসে খিদে নিয়ে গােগ্রাসে গিলে উদরপূর্তি করা।

 

প্রশ্ন ) কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে অসে,/ এই মাটিকে এই হাওয়াকে অব্যৱ ভালােবাসে।’-কাৱ লেখা কোন কবিতা থেকে গৃহীত? উদ্ধৃতাংশেৱ তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। 

 

উত্তর: খ্যাতিমান কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ‘আবহমান কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত।

 

প্রসঙ্গ : জন্মস্থান মায়ের মতাে। মা ও সন্তানের মধ্যে যেমন নাড়ির বাঁধন, তেমনি জন্মভূমির সঙ্গে প্রতিটি মানুষের শিকড়ের বাঁধন অটুট। গ্রাম জীবনের সূচনা হয়েছিল গ্রামীণ সভ্যতা বিকাশের আদিকাল থেকে। মায়ের কোলে সন্তান যেমন লালিত পালিত হয়, তেমনি করে প্রতিটি গ্রাম্য মানুষও শিশু অবস্থা থেকে বড়াে হয়ে ওঠে। জন্মের পর থেকে গ্রামের মাটি, গ্রাম্য প্রকৃতির সঙ্গে তার সম্পর্কের বাঁধন দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়।

 

জন্মস্থান গ্রামকে গভীর ভালােবেসে ফেলে। গ্রাম সৃষ্টির সেই আদি যুগ থেকে মানুষ এইভাবে ভালােবেসে ঘর বেঁধেছে। সংসার-সমাজ গড়েছে। গ্রামীণ সভ্যতার বিকাশ হয়েছে।

 

তাৎপর্য : দিন যত এগিয়েছে নগরায়ণের প্রভাব গ্রামকে গ্রাস করেছে। শহর-নগরের সমৃদ্ধ জীবনাচরণের বিলাসবৈভব, কিংবা জীবন-জীবিকার স্বার্থ গ্রামের মানুষকে শহরমুখী করেছে। কিছু মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরবাসী হয়েছে। কিন্তু শহরের সুখ-সমৃদ্ধির মােহে হারিয়ে গিয়েও গ্রামের জীবনের শিকড়ের টানে আবার ফিরে এসেছে ছুটিছাটার অবকাশে। গ্রামের মাটি ও সে ভুলতে পারেনি। ফের ভালােবাসার বাঁধনে বাঁধা প্রকৃতিকে পড়েছে। এই বাঁধন অবহমান কালের, চিরকালের ও চিরন্তন।

 

প্রশ্ন: )  ফুৱয় না সেই একগুঁয়েটার দুৱন্ত পিপাসা —কবি কী অর্থে একগুঁয়েটার দুৱন্ত পিপাসা’ শব্দগুচ্ছ ব্যবহাৱ কৱেছেন? একগুঁয়েটার দুৱন্ত পিপাসা ফুৱয় না কেন? 

 

উত্তর : জীবন-জীবিকার স্বার্থে কিংবা বিত্ত-বৈভবের টানে গ্রামের কেউ কেউ শহরমুখী হয়ে শহরবাসী হয়েছে। কিন্তু গ্রামের শান্ত স্নিগ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশ ও তার অপার সৌন্দর্য ওই শহরবাসী মানুষটি ভুলতে পারেনি। গ্রামের সহজ-সরল জীবনধারা আজও তাকে টানে। তাই গ্রামে ফেরার আকুলতা তাকে একরােখা করে তােলে। ফিরে আসার প্রবল ইচ্ছা ও আকুতিই হলাে তার দুরন্ত পিপাসা। আবহমান কবিতায় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা’ শব্দগুচ্ছ এই অর্থে ব্যবহার করেছেন।

 

শহরবাসী ওই মানুষটির গ্রামে ফেরার দুরন্ত ইচ্ছা ও আকুলতা মরে যায় না। গ্রামে আজন্ম মানুষ হওয়ার স্মৃতি তাকে সময় সময় গ্রামমুখী করায় আসলে গ্রামের সঙ্গে নাড়ির যােগ। অতীত গ্রাম জীবনের শিকড়ের টান বরাবর তাকে গ্রামে এনে ফেলে। অবকাশ-অবসরে গ্রামের সঙ্গে যাওয়া-আসার যােগসূত্র থেকে যায়। জন্মস্থানে পা ফেললে উঠোনের পাশে লাউমাচা ও তাতে বাতাসে আন্দোলিত ছােট্ট ফুলটি অতীত স্মৃতিকে উসকে দেয়। জল-মাটি-হাওয়ার সঙ্গে অনুরাগের সম্পর্ক আজও বুঝি অটুট। বন্ধন পুরানাে হলেও ছিন্ন হয় না। গ্রামে আসা-যাওয়ার দুরন্ত ও সুতীব্র বাসনা তার মধ্যে বেঁচে থাকে। গ্রামে এলে ঘাসের গন্ধ মেখে দিন কাটানাে, তারায় তারায় স্বপ্ন এঁকে রাত্রিযাপন অপার আনন্দময় অনুভব। জন্মভূমি ছেড়ে যাওয়ার দুঃখকষ্টযন্ত্রণার অবসান হয় না। কিন্তু তার স্মৃতিতে তন্ময় হয়ে থাকে গ্রাম জীবনের সহজ সরল প্রবাহ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অবিনশ্বরতা।

আবহমান কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন‘) তেমনি কৱেই সূর্য ওঠে, তেমনি করেই ছায়া/নামলে আবাৱ ছুটে আসে সান্ধ্য নদীৱ হাওয়া। —গ্রাম্য প্রকৃতির বর্ণনা প্রসঙ্গে উধৃতাংশের প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্য ও তাৱ বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে।

 

উত্তর: গ্রাম্য প্রকৃতির বর্ণনা প্রসঙ্গ : আমরা প্রকৃতির সন্তান। প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক মা ও সন্তানের সম্পর্কের মতাে অটুট ও অচ্ছেদ্য। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ‘আবহমান’ কবিতায় গ্রাম্য প্রকৃতির সঙ্গে গ্রামীণ মানুষের অটুট বন্ধনের আলােচনা প্রসঙ্গে গ্রাম্য প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যের বর্ণনা দিয়েছেন। গ্রামের প্রবাসী মানুষ গ্রাম্য প্রকৃতির টানে সময় অবসরে গ্রামে ফিরে আসে। গ্রামের মাটি ও হাওয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক আজন্মের। তাকে সারাদিন মাতােয়ারা করে রাখে ঘাসের গন্ধ। গ্রামের রাস্তার ধারে মাঠে-ময়দানে সবুজ ঘাসের গালিচা পাতা। গ্রামের খােলা রাতের আকাশে তারার মেলা। বাগানে কুন্দফুলের অমলিন হাসি। প্রকৃতির এই রূপবৈচিত্র্য শুধু তুলনাহীন নয়, গ্রামের সম্পদ।

 

© প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্য ও তাৱ বৈশিষ্ট্য : এই প্রসঙ্গে কবি আরও কিছু প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্যের বর্ণনায় এসেছেন। গ্রামের প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্য আবহমান কালের। তাই গ্রামীণ সভ্যতার সেই আদিকাল থেকে প্রতি সকালে সূর্য একইভাবে ওঠে। সন্ধ্যাও নামে তার ছায়া বিস্তার করে প্রতিদিন সেই সুদূর অতীত থেকে একই ভাবে। সন্ধ্যার অন্ধকার নামার পরে নদী থেকে বয়ে আসে সান্ধ্য স্নিগ্ধ বাতাস। তাই গ্রামের প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্যের যা কিছু ঘটনা-সংঘটন সবই আবহমান কালের। এটাই তার বৈশিষ্ট্য।

 

আবহমান কবিতা সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

 

প্রশ্ন ) ‘হাৱায় না তার বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি।”—উভৃতির মধ্যে নিহিত জীবন সত্যটি ব্যাখ্যা করে।

 

আলােচ্য উদ্ধৃতিটি কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান কবিতা থেকে গৃহীত। কবি বলেছেন যে, কিছু ক্ষেত্রে জীবন ও জীবিকার স্বার্থে, কিছু ক্ষেত্রে বিত্ত ও বৈভবের লােভে গ্রামের কিছু মানুষ নগরমুখী হয়। নগরজীবনে ক্লান্তি ও অবসাদ তার দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু গ্রামের প্রকৃতিপুঞ্জের দেওয়া শান্তি ও সহজ সরল জীবনধারার প্রবাহন হয় না। বাগানের কুন্দফুলের হাসির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শাগ কালের। তা কখনােই অবলুপ্ত হয় না।

 

প্রশ্ন ) ‘এখনও সেই ফুল দুলছে,’—কথাটির তাৎপ বুঝিয়ে দাও।

 

উত্তর: বাংলার গ্রামসভ্যতার শ্রীবৃদ্ধি ও গৌরব অনেকটাই নষ্ট হয়েছে নগরসভ্যতার অভিঘাতে। কিন্তু গ্রামবাংলার যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তা শাশ্বত কালের। তা হারিয়ে যায়নি। ত এখনও গ্রামবাংলার সম্পদ হয়েই আছে। এই যে চিরকালের থাকে। এই অর্থে ‘এখনও’ শব্দটি কবি ব্যবহার করেছেন চিরকালের বা অতীত থেকে এখনও অবধি অর্থে যে ‘আবহমান শব্দ তার প্রতীক হলাে লাউমাচার ফোটা ফুলটি ও তার আনন্দোজ্জ্বল আন্দোলিত রূপটি। 

 

প্রশ্ন ) ছােট্ট ফুলটির বাৱৱ কৱে দোলার মধ্যে কী ভাবের প্রকাশ ঘটেছে? হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে ? আসে’-কী অর্থ প্রকাশ করছে ?

 

উত্তর : লাউয়ের ছােট্ট ফুলটি বারবার করে দুলছে। দুলছে সন্ধ্যার বাতাসে। দুলে দুলে যেন হাতছানি দিয়ে আহ্বান করছে গ্রাম্য প্রকৃতির সহজ, সরল, সুন্দর ও শান্তিময় জীবনে ফিরে আসার জন্যে।

 

জীবন ও জীবিকার স্বার্থে মানুষকে জন্মস্থান ছেড়ে যেতে হয় অন্যত্র। কিন্তু আজন্ম পরিচিত জন্মস্থান ও তার প্রাকৃতিক পরিবেশকে ভােলা কি সম্ভব ? মাতৃভূমির জল-হাওয়া-মাটির সঙ্গে তার যে শিকড়ের বন্ধন তা ছিন্ন হয় না। শিকড়ের টানে অনুপস্থিত থেকেও উপস্থিত হওয়ার ব্যাকুলতা তাকে অস্থির করে তােলে।

 

প্রশ্ন ) ‘নটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না। -ব্যাখ্যা করাে।

 

উত্তর : আলােচ্য অংশটি কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ‘আবহমান কবিতা থেকে গৃহীত | জল-হাওয়া-মাটি শাশ্বত কালের, চিরন্তন। প্রকৃতির এইসব উপাদান ফুরােয় না। বহমান সময়ের ধারায় বয়স বাড়ে। বয়সের ছাপও পড়ে। কিন্তু ফুরােয় না। শেষ হয় না। নটেগাছ তাে তার বড়াে প্রমাণ। বয়স বাড়ায় সে বুড়িয়ে যায়। বয়সের ছাপ তার শরীরে স্পষ্ট দেখা যায়। কিন্তু সে ছিন্নমূল হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে না। প্রকৃতির বুক থেকে মুছে যায় । সে আবহমান কালের প্রতীক।

 

প্রশ্নঃ ‘ফুৱয় না তার যাওয়া এবং ফুৱয় না তার আসা,/ফুৱয় না সেই একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা।–এই উদ্ধৃতিতে কবির বক্তব্য কী?

 

উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতিতে কবির স্পষ্ট বক্তব্য এই যে, জীবন ও জীবিকার স্বার্থে জন্মস্থান ছেড়ে অন্যত্র যেতে হলেও জন্মভূমি ও জন্মভূমির প্রকৃতিলােকের সঙ্গে নাড়ির বাঁধন থেকে যায়। অবসর পেলেই মাতৃভূমির টানে মানুষটাকে আসা-যাওয়া করতে হয়। গ্রামে ফেরার একরােখা প্রচণ্ড পিপাসা তথা তাগিদ তাকে অস্থির করে তােলে। আজন্ম যে জল-মাটি-হাওয়াগাছগাছালিকে ভালােবেসেছে তাদের কি ভুলে থাকা সম্ভব ? শিকড়ের বাঁধনে যে অটুট। তা ছিন্ন করবে কী করে?

 

প্রশ্নঃ ‘সারাটা দিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে,/ সাৱাটা ব্রত তারায়-তারায় স্বপ্ন এঁকে রাখে। -তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। 

 

উঃ: কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ‘আবহমান’ কবিতায়

 

চিরাচরিত রীতির আলােচনা প্রসঙ্গে বলতে চেয়েছেন যে, ঘরে ফেরা প্রবাসী মানুষটি প্রকৃতির স্নেহ-সােহাগে আত্মলীন হয়েছে। সুতীব্র ব্যাকুলতা নিয়ে প্রকৃতির কোলে দিনভর নিজেকে সমর্পণ করেছে। ঘাসের স্নেহ-কোমল স্নিগ্ধ গন্ধ সারা শরীরে দিনভর মেখে নিয়েছে। দিনে যেমন সে আহার-তৃয়ার তাগিদ ভুলে গেছে, রাতে তেমনি বুঝি। ঘুমানাের কথাও ভুলেছে। রাতভর মাথার ওপর তারায়-তারায় এঁকেছে স্বপ্নের নানা ছবি। দিনরাতভর প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।

 

প্রশ্ন ) ‘নেভে না তার যন্ত্রণা যে, দুঃখ হয় না। বাসি,/হাৱায় না তার বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি। —অর্থ বিশ্লেষণ করাে। 

 

উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতিটি কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘আবহমান কবিতা থেকে গৃহীত। কবি বলেছেন যে, জীবন ও জীবিকার স্বার্থে অনেককে অনেক সময় জন্মভূমির বাইরে যেতে হয়। মাতৃভূমি ও তার সন্তান উভয়ের দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণার শেষ থাকে না। দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণার অবসানও হয় না। কুন্দফুল শুভ্র ও অনাবিল। বাগানে তার হাস্যময় অবস্থান। অন্ধকারের পাশে যেমন আলাে থাকে, তেমনি দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণার পাশে থাকে কুন্দফুলের আনন্দময় অবস্থান।

 

প্রশ্ন ) ‘কে এইখানে ঘর বেঁধেছে’—উদ্ধৃতির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। 

 

উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতিটি কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ‘আবহমান কবিতা থেকে নেওয়া। বাংলার ভূখণ্ডে প্রথম যারা বাস করতে এসেছিল, তারা কে কবি তা নির্দিষ্ট করে বলেননি। ‘কে’ হলাে অনির্দেশক সর্বনাম। কবি অনির্দিষ্ট অর্থেই ‘কে’ ব্যবহার করেছেন। যারাই আসুক তারা নিশ্চয় দেখেছিল তাদের বাসস্থান গড়ার উপকরণ আছে এই নতুন ভূখণ্ডে। সেই উপকরণ দিয়ে গভীর অনুরাগ ও মমত্ব সহকারে তাদের ঘর বাঁধার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করা যায়। গ্রামবাংলার মাটি, জল, হাওয়া আর সুজলা সুফলা প্রকৃতিকে গভীর অনুরাগে ভালােবেসে ফেলে।

 

প্রশ্নঃ কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে,-“হারিয়ে গিয়েও ফিরে আসার বিষয়াট বুঝিয়ে দাও। 

 

উত্তর : সুদূর অতীতে বাংলার মাটি ও প্রকৃতিকে ভালােবেসে তার টানেই একদল মানুষ ঘর বেঁধেছিল। সেই জনপদ সম্প্রসারিত হতে হতে কালক্রমে বিস্তৃত গ্রামবাংলাকে ঘিরে ফেলে। বাংলার গ্রামীণ সভ্যতার বিকাশ ঘটে। গ্রামীণ সভ্যতায় একসময় ভাঙন ঘটে শহুরে সভ্যতার বিকাশে। শহরের বিত্তবৈভবের টানে গ্রামের কিছু মানুষ শহরমুখী হয়। কিন্তু নগরজীবনের ক্লান্তি-অবসাদ গ্রামজীবনের জন্য তাদের ব্যাকুল করে তােলে। ছুটি-ছাটার অবকাশে গ্রামে ফিরে আসে। গ্রাম থেকে হারিয়েও হারায় না।

 

আবহমান কবিতার ছোটো প্রশ্ন উত্তর বাংলা

 

প্রশ্ন ) ‘সারাটা দিন আপন মনে ঘাসের গন্ধ মাখে,—উদ্ধৃতিটিতে কী বলতে চাওয়া হয়েছে?

 

উত্তর : গ্রামে ফেরা মানুষটি দিনভর আপন মনে নিরালায় ঘাসের স্নেহস্পর্শ ও সবুজ গন্ধ প্রাণভরে শরীরে মেখে নেয়।

 

প্রশ্ন ) লোকটি রাতভর তারায়-তারায় কী আঁকে?

 

উঃ ; লােকটি রাতভর তারায়-তারায় আঁকে জীবনের হারিয়ে যাওয়া কিংবা না-পাওয়া অতৃপ্ত নানা বাসনার স্বপ্ন।

 

 প্রশ্ন ) বাগান থেকে কুন্দফুলের হাসি হারায় না কেন?

 

উত্তর : বাগানে শুভ্র ও অনাবিল কুন্দফুলের হাস্যময় অবস্থান হলাে দুঃখের পাশে আনন্দের অবস্থিতি।

 

প্রশ্ন ) ‘তেমনি কৱেই সূর্য ওঠে,’—এ কথা বলার অর্থ?

 

উত্তর : সূর্য ওঠা চিরকালের প্রাকৃতিক নিয়ম—এই হলাে শাশ্বত বা চিরন্তন রীতি।

 

প্রশ্ন ) তেমনি করে ছায়া নামলে কী হয়?

 

উত্তর: তেমনি করে ছায়া নামলে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে আর নদীর বাতাস ছুটে আসে। .

 

প্রশ্ন )‘একগুঁয়েটার দুৱন্ত পিপাসা’ বলতে কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন?

 

উত্তর : ধুলার ধরণীর প্রতি মানুষের দুর্নিবার জীবনাকাঙ্ক্ষাকেই ‘একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা বলা হয়েছে।

 

প্রশ্ন ) ছোট্ট ফুল কেন দুলছে?

 

উত্তর: ছােট্ট ফুলের দুলে ওঠা যেন পল্লিপ্রকৃতির নীর আহ্বান। সে মানুষকে পল্লির বুকে ফিরে আসার জন্য দুলে দুলে। স্বাগত জানাচ্ছে।

 

প্রশ্ন ,) ‘যা গিয়ে ওই উঠানে তােৱ দাড়া, ‘তােৱ’ শব্দেৱ দ্বাৱা করি কাকে বােঝাতে চাইছেন?

 

উত্তর:‘তাের’ শব্দটির দ্বারা কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বর্তমান প্রজন্মকে বােঝাতে চেয়েছেন।

 

প্রশ্ন ) ‘আবহমান’ কবিতার মূল বক্তব্যটি সংক্ষেপে লেখ।

 

উত্তর : নিসর্গ প্রকৃতির কোলে মানুষ অতীতে সহজ সরল গ্রামীণ জীবনযাত্রার সূচনা করেছিল তা বর্তমান ছুঁয়ে যাত্রা করবে। ভবিষ্যতের দিকে। পৃথিবীর বুকে এই নিত্যনাটের খেলা কোনােদিনও ফুরিয়ে যাবে না।

 

প্রশ্ন ) ‘নটেগাছটা বুড়িয়ে ওঠে, কিন্তু মুড়য় না! উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য লেখাে।

 

উত্তর: মাটির বুকে প্রাণপ্রবাহ পরিণত হয়, সভ্যতার বয়স বাড়ে কিন্তু শেষ হয় না।

 

প্রশ্ন ) ‘নেভে না তাৱ যন্ত্রণা যে, দুঃখ হয় না। বাসি,—এখানে কাৱ দুঃখ-যন্ত্রণার কথা বলা হয়েছে?

 

উত্তর: ধূলি ধূসরিত পল্লি জীবনযাত্রার দুঃখ-যন্ত্রণাগুলি কখনােহ ফুরিয়ে যায় না। 

 

প্রশ্ন ) ‘উঠান’ ও ‘লাউমাচা’ কীসের প্রতীক?

 

উঃ: ‘উঠান’ হলাে ধুলার ধরণী তথা মাটির প্রতীক এবং : ‘লাউমাচা’ হলাে পল্লিপ্রকৃতির প্রতীক।

 

প্রশ্ন ) ‘আবহমান’ কবিতায় মানুষের কোথায় যাওয়া ও কোথায় আসা?

 

উত্তর : মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ঘরে ফেরা এবং জন্মের মধ্য দিয়ে। মাটির কাছে, পৃথিবীর ‘উঠানে ফিরে আসা।

প্রশ্ন ) গ্রামে ফেরা মানুষটিকে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে বলা হয়েছে?

 

উত্তর : গ্রামে ফেরা মানুষটিকে তার বাড়ির উঠোনে লাউমাচার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলা হয়েছে।

আবহমান কবিতার ছোটো প্রশ্ন উত্তর

প্ৰশ্ন) লাউমাচার পাশে দাঁড়াতে বলা হয়েছে কেন?

 

উত্তর : ফেলে যাওয়া গ্রাম্য প্রকৃতির সােহাগমাখা সহজ সরল সুন্দর জীবনের সন্ধান সেখানে পাবে, সেই কারণে।

 

প্রশ্ন ) ছােট্ট ফুলটির সন্ধ্যার বাতাসে দোলার কারণ কী?

 

উত্তর: ছােট্ট ফুলটি সন্ধ্যার বাতাসে দুলতে দুলতে গ্রামে ফেরা মানুষটিকে হাতছানি দিয়ে আহ্বান করছে, এই কারণে।

 

প্রশ্ন ) এখানে অনেক বছর আগে আসা মানুষটি কী করছে?

 

উত্তর : অনেক বছর আগে গায়ে আসা মানুষটি গ্রামকে ভালােবেসে গভীর অনুরাগে ঘর বেঁধেছে।

 

প্রশ্নঃ এখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে কেন?

 

উত্তর: জীবন ও জীবিকার স্বার্থে গ্রাম ছাড়তে হয়, কিন্তু গ্রামের  মাটি-হাওয়ার টানে আবার ফিরে আসতেও হয়।

 

প্রশ্ন ) ‘ফুৱয় না তার কিছুই ফুৱয় না, বলার অর্থ কী?

 

: উত্তর : কোনাে কিছু শেষ হয়ে যায় না, জন্মস্থানের জল-হাওয়ামাটি শাশ্বত কালের, আবহমান কালের।

 

প্রশ্ন ) ‘ফুৱয় না তাৱ যাওয়া এবং ফুৱয় না তার আসা,–এর দ্বাৱা কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন?

 

উত্তর : কাজের ও অর্থ উপার্জনের তাগিদে জন্মভূমি ছাড়তে হলেও নাড়ির টান ছিন্ন হয় না, যাওয়া-আসা চলতে থাকে।

 

প্রশ্ন ) ‘ফুৱয় না সেই একগুঁয়েটার দুরন্ত পিপাসা। -তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

 

উত্তর : গ্রামের জন্মস্থানে ফেরার যে একরােখা প্রচণ্ড তাগিদ, পিপাসাতুল্য দুর্বার, তা শেষ হয়ে যায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *