মাকু গল্পের প্রশ্ন উত্তর হাতে কলমে
মাকু গল্পের প্রশ্ন উত্তর হাতে কলমে
মাকু
লীলা মজুমদার
প্রথম পরিচ্ছেদ

মাকু হাতেকলমে
এই আর্টিকেলটিতে মাকু গল্পের প্রশ্ন উত্তর হাতে-কলমে আলোচনা করা হয়েছে।
১ অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :
[১১] আম্মা কে ছিলেন?
উত্তর: লীলা মজুমদারের কিশোর উপন্যাস ‘মাকু’-র এক বৃদ্ধা চরিত্র আম্মা। তিনি সোনা-টিয়ার বাপির ছোটোবেলাকার ধাইমা। বাপি তাকে আইমা বলে ডাকতেন। সোনা ছোটোবেলায় আইমা বলতে পারত না বলে, আম্মা বলত, দিদির দেখাদেখি টিয়াও আম্মা বলত।
[১.২ সং কে ? সে বনের মধ্যে কী করছিল?
উত্তর সং হল সার্কাস দলের সদস্য, সে মজা করে লোককে হাসাত। আমরা সং-দের জোকার বলে থাকি। বনের মধ্যে সং সার্কাসের নোটো মাস্ট অধিকারীকে খুঁজছিল।
১.৩ ঘড়িওয়ালার দাদা কে?
উত্তর ঘড়িওয়ালার দাদা হল হোটেলওয়ালা। সে প্রকৃতপক্ষে নোটোমাস্টার অর্থাৎ সার্কাস দলের অধিকারী।
১.৪ সোনা-টিয়া যাকে পেয়াদা ভেবেছিল সে আসলে কে?
উত্তর: সোনা-টিয়া যাকে পেয়াদা ভেবেছিল সে আসলে পোস্টম্যান অর্থাৎ পিয়োন।
১.৫ যে চাবি দিয়ে টিয়া মাকুকে চালু করেছিল সেটা আসলে কী ছিল ?
উত্তর : টিয়া যে চাবি দিয়ে মাকুকে চালু করেছিল সেটা ছিল অর্ধেক লটারির টিকিট দিয়ে মোড়ানো সোনা-টিয়ার মামনির রুপোর সিঁদুর কাঠি।
১.৬ জাদুকর সোনা-টিয়াকে কী দিয়েছিল ?
উত্তর: জাদুকর সোনা-টিয়াকে তুলোর মতো তুলতুলে দুটি সুন্দর খরগোশ দিয়েছিল।
১. ৭ পিসেমশাই কী চাকরি করতেন ?
উত্তর :পিসেমশাই পুলিশের দারোগার চাকরি করতেন।
১. ৮ ‘স্বর্গের সুরুয়া’ কেমনভাবে রান্না করা হত?
উত্তর : সুরুয়ার মধ্যে হোটেলওয়ালা তার দাড়ি-গোঁফ ফেলে দিত এবং তা ঘেঁটে ‘স্বর্গের সুরুয়া’ রান্না করা হত।
২ সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও : মাকু
২. ১ কালিয়ার বন কোথায়? সেখানে কীভাবে যেতে হয় ?
উত্তর
সোনা ও টিয়াদের গ্রামের একেবারে প্রান্তে অবস্থিত কালিয়ার বন ।
সোনা, টিয়াদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গলির পরেই আছে বড়োরাস্তা, তারপরে রয়েছে গির্জা আর তারও পরে রয়েছে গোরস্থান। এই গোরস্থান পার হলে পড়বে শুনশুনির মাঠ। শুনশুনির মাঠ পার হলে দূর থেকে ঘন নীল কালিয়ার বনকে দেখা যায়। গোরস্থানের পাশ দিয়ে সেই মাঠে যেতে হয়।
2.2 ঘড়িওয়ালার হ্যান্ডবিলে কী লেখা ছিল সংক্ষেপে লেখো ।
উত্তর
ঘড়িওয়ালার গোলাপি হ্যান্ডবিলে লেখা ছিল— “মাত্র পঁচিশ পয়সায় !
অদ্ভুত ! অত্যাশ্চর্য!!
মাকু দি গ্রেট! ! !
অভাবনীয় দৃশ্য দেখে যান !
কলের মানুষ চলে ফেরে, কথা কয়, অঙ্ক কষে, টাইপ করে, সেলাইকল চালায়, হাতুড়ি পেটে, রান্না করে, মশলা বাটে, বাসন ধোয়, ঘর মোছে, হারানো জিনিস খুঁজে দেয়, নাচে, গায়, সাইকেল চাপে, দোলনা ঠেলে ও আবার পরীক্ষার প্রশ্নের জবাব দেয়”।
২.৩ মাকুর চাবি কতদিনের জন্য ঘড়িওয়ালা দিয়েছিল ? তারপর কী হবার কথা ?
উত্তর
ঘড়িওয়ালা এক বছরের জন্য মাকুর চাবি দিয়েছিল।
একবছর পর চাবি ফুরিয়ে গেলেই মাকু নেতিয়ে পড়বে; সে আর চলাফেরা, কাজকর্ম করতে পারবে না। তখন চোর-ডাকাত মাকুকে পেলে তার শরীর থেকে কলকবজা খুলে নিয়ে তা বিক্রি করে দেবে।
2.4 হোটেলওয়ালাকে কেমন দেখতে? সে সোনা-টিয়াকে কীভাবে সাহায্য করেছিল ?
উত্তর
হোটেলওয়ালার মুখভরা ঝুলো গোঁফ আর থুতনি ঢাকা ছাই রঙের দাড়িতে। তার এমন চেহারা দেখে তো সোনা ও টিয়ার হাসি পেয়েছিল।
হোটেলওয়ালা সোনা-টিয়াকে খুব সাহায্য করেছিল। সে নিজের হোটেলে বিনা পয়সাতে সোনা-টিয়ার খাওয়ার ও থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।
২.৫ সং কেন সপ্তাহে তিনবার পোষ্টাপিশে যেত?
উত্তর
সং একটি লটারির টিকিট কিনেছিল। লটারি জিততে পারলে তার আর অভাব থাকবে না, সে বড়োলোক হয়ে যাবে। তাই পোস্টাপিসে গিয়ে সে খোঁজ নিয়ে আসত যে, সে লটারি জিতেছে কি না। অর্থাৎ লটারি জিতেছে কি না জানার জন্যই সং সপ্তাহে তিনবার করে পোস্টাপিসে যেত ।
২.৬ সং-এর লটারির টিকিটের আধখানা হোটেলওলা কীভাবে হারিয়েছিল ?
উত্তর
সং তার লটারির টিকিটের আধখানা রাখতে দিয়েছিল হোটেলওয়ালাকে। হোটেলওয়ালা সেটা কানে গুঁজে রেখেছিল। তারপর নানা কাজেকর্মে ব্যস্ত থাকতে গিয়ে কোনো সময় টিকিটটা কান থেকে পড়ে যায়। অনেক খুঁজেও সে সেটা পায়না। নিজের অবহেলাতেই সে সং-এর টিকিটের আধখানা বনের মধ্যে হারিয়ে ফ্যালে।
২.৭ ‘বাঘধরার বড়ো ফাঁদ—কীরকম দেখতে?
উত্তর বাঘধরার বড়ো ফাঁদ তৈরি করার জন্য মাটিতে বেশ খানিকটা গর্ত করা হত। সেই গর্তের উপরে কাঠকুটো এমনভাবে চাপা দেওয়া থাকত যে, বাইরে থেকে বোঝা যেত না এর নীচেই রয়েছে গর্ত বা ফাঁদ। বহুদিন ধরে সেগুলির ব্যবহার নেই বলে এখন ফাঁদের মুখে লতাপাতায় ঢেকে আছে। কোনো জানোয়ার বা প্রাণী বুঝতে না পেরে এর উপরে উঠলেই হুড়মুড়িয়ে সেই ফাঁদে পড়ে যাবে।
২.৮ হোটেলওয়ালা আসলে কে?
উত্তর হোটেলওয়ালা প্রকৃতপক্ষে সার্কাসের নোটো মাস্টার অর্থাৎ অধিকারী মশাই। অনেকের কাছ থেকে টাকা ধার করে শোধ না করায় তার নামে হুলিয়া জারি হয়েছিল; তাই সে বনের মধ্যে আত্মগোপন করে ছিল হোটেলওয়ালা সেজে।
[ ২.৯ মাকুকে কে দম দিয়ে আবার চালু করল ? কীভাবে?
উত্তর
মাকুকে টিয়া দম দিয়ে নতুন করে চালু করেছিল।
সং-এর লটারির টিকিটের আধখানা মামনির সিঁদুর কাঠির সঙ্গে জড়িয়ে টিয়া চাবি বানিয়েছিল। সেই চাবি মাকুর চাবির ফুটোতে ঢুকিয়ে খুব করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চাবি দিয়েছিল। চাবি দেওয়া শেষ হলে সে পুট করে মাকুর নাকের টিপকলটা টিপে দিতেই খরখর্ করে শব্দ করে মাকু আবার জীবন্ত হয়ে উঠেছিল। এভাবেই টিয়া দম দিয়ে মাকুকে চালু করেছিল।
২. ১০ সং-এর লটারির টিকিটের আধখানা কীভাবে খুঁজে পাওয়া গেল ?
উত্তর টিয়া এক সময় সং-এর টিকিটের আধখানা গোলাপি কাগজ বনের মধ্যে পেয়ে তা মামনির সিঁদুর কাঠির সঙ্গে জড়িয়ে মাকুর চাবি বানিয়েছিল। টিয়া বুঝতে পারেনি ওই কাগজটিই সং-এর লটারির টিকিটের আধখানা। পিয়োন যখন বলে সং লটারি জিতেছে, সে-কথা শুনেই সং জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়। তখন তার পকেটে টিকিটের বাকি অংশটি বিশেষ করে গোলাপি কাগজ দেখে সোনা চমকে ওঠে। তখন সে টিয়ার পুঁটুলি থেকে গোলাপি চাবিকাঠি বের করে মালিককে দিতেই সকলে বুঝতে পারে ওই গোলাপি কাগজটিই টিকিটের বাকি অংশ। এভাবেই সং-এর লটারির টিকিটের আধখানা খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল।
৩. -” নিজের ভাষায় উত্তর দাও: মাকু
৩. ১ মাকু কে? সে কেন ঘড়িওয়ালাকে খুঁজছিল?
উত্তর : প্রখ্যাত সাহিত্যিক লীলা মজুমদারের ‘মাকু’ গল্পে মাকু ছিল কলের পুতুল। ঘড়িওয়ালা বহু বছর ধরে ঘড়ির কারখানার পুরানো কলকবজা দিয়ে মাকুকে তৈরি করেছিল। সে বিভিন্ন প্রকারের কাজ করে দিতে পারত।
মাকু নানারকম কাজ করতে পারলেও কাঁদতে পারত না একেবারেই; কারণ ঘড়িওয়ালা তার শরীরে কাঁদার কল বসায়নি। এদিকে পরিদের রানিকে দেখে মাকু তাকে বিয়ে করতে চায় ৷ অথচ সে কাঁদতে পারে না বলে পরিদের রানির সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় বলে জাদুকর জানায়।
মাকু তাই ঘড়িওয়ালার কাছে বায়না করে যে, তাকে কাঁদার কল বানিয়ে দিতেই হবে । কিন্তু মাকুকে বানাতে গিয়েই ঘড়িওলার সব বিদ্যা ফুরিয়ে গেছে। তাই মাকুর জন্য কাঁদার কল বানানো তার পক্ষে সম্ভব নয় বলেই সে মাকুর কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। অন্যদিকে মাকুর কাদার কল চাই-ই চাই। তাই সে ঘড়িওয়ালাকে খুঁজে চলে।
৩.২] নদীতে জানোয়ারদের চান করার যে দৃশ্য সোনা-টিয়া দেখেছিল, তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: সোনা ও টিয়া কালিয়ার বনে প্রবেশ করার পর দৌড়োতে দৌড়োতে যখন তাদের পা ব্যথা হয়, তেষ্টা পায়, সেইসময় তারা একটি সুন্দর সরু নদী দেখতে পায়। নদীর জল এতটাই স্বচ্ছ যে, নদীর তলার পাথরগুলিও চকচক করছিল। সুন্দর একটা ছলছল ঝরঝর শব্দ তাদের কানে আসে। নদীর ধারের একটা কালো পাথরে ঠেস দিয়ে সোনা-টিয়া বসে পড়ে। নদীর জলে হাত-মুখ ধোয়। একসময় পাথরের আড়ালে পুঁটুলি মাথায় দিয়ে ঘুমিয়েও পড়ে তারা ।
মটমট করে পায়ের চাপে কাঠকুটো ভাঙার শব্দে তাদের ঘুম ভাঙে । তারা দেখতে পায় নদীর ওপারে সরু নালা বেয়ে জানোয়াররা জল খেতে আসছে। প্রথমে দুটো ঘোড়া, তাদের তাড়িয়ে আনছে টুপি পরা দুটি বাঁদর; তাদের পিছনে গলায় ঘণ্টা বাঁধা একটা ছাগল, তার পিছনে পর পর দুটি মোটা ভাল্লুক, তার পিছনে ছয়টি কোঁকড়া লোমওয়ালা কুকুর আর তাদের তাড়িয়ে নিয়ে আসছিল নীল পোশাক পরা রংচঙে লাঠি হাতে সং।
নদীর কিনারা ধরে জানোয়াররা সারি সারি মুখ নীচু করে অনেকক্ষণ ধরে জল খায়। নিমেষের মধ্যে জায়গাটা টুংটুং, কিচিমিচি, ঘেউ ঘেউ, ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দে পূর্ণ হয়ে ওঠে। এমন দৃশ্যই সোনা ও টিয়ার চোখে পড়ে। !’-
3.3 ‘হোটেল বলে হোটেল! সে এক এলাহি ব্যাপার– বনের মধ্যে এই হোটেল কে চালাত? তার কীর্তিকলাপের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।
উত্তর: বনের মধ্যে হোটেল চালাত নোটোমাস্টার অর্থাৎ সার্কাস দলের অধিকারী।
বহু মানুষের কাছ থেকে বহু জিনিসপত্র কিনে সার্কাস দল চালাবে বলে ঠিক করেও কোনো মানুষের ধারদেনা শোধ না করেই নোটো মাস্টার পালিয়ে গিয়েছিল। ফলে তার নামে পুলিশ হুলিয়া জারি করে। তখন সে বনের মধ্যে হোটেল খুলে বসে এবং টাকা উপার্জন করতে থাকে। সে এখানে ছদ্মবেশে থাকত এবং সবাইকে হোটেলওয়ালা বলেই পরিচয় দিত। একটা বিরাট আকারের বটগাছের তলায় তার হোটেলটি ছিল। তিনটি পাথর সাজিয়ে উনুন তৈরি করা হয়েছিল। গাছের গুঁড়ির উপরে কাঁচা কাঠের তক্তা ফেলে খাবারের জায়গা করা হত।
সে গোপনে দাড়ি-গোঁফ রান্নার মধ্যে ফেলে সুরুয়া বানাত। সেই সুরুয়া এতই সুস্বাদু হত যে, লোকে তাকে স্বর্গের সুরুয়া বলত। সার্কাস দলের মহড়ার দেখাশোনাও সে করত। এভাবেই বনের মধ্যে সকলকে নিয়ে হোটেলওয়ালা তার কাজকর্ম করত।
৩৪। সার্কাসের লোকেরা বনের মধ্যে কেন ছিল? হোটেলওয়ালা সোনা-টিয়াকে কী ব্যাখ্যা দিয়েছিল ?
উত্তর সার্কাস দলের অধিকারী অর্থাৎ নোটো মাস্টার অনেকের কাছ থেকে জিনিসপত্র কিনে টাকাপয়সা শোধ না করেই ফেরার হয়েছিল। পুলিশ তাদের জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করেছিল এবং সার্কাস দলের সকলের নামেই হুলিয়া জারি করেছিল। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়েই সার্কাসের লোকেরা পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল এবং সেই কারণেই তারা বনের মধ্যে গা-ঢাকা দিয়ে ছিল।
অধিকারীমশাই সবার জন্য নতুন পোশাক বানিয়ে, জিনিসপত্র হোটেলওয়ালাই সোনা-টিয়াকে বলেছিল যে, সার্কাসের কিনে কারও টাকা শোধ না করেই পালিয়েছে। সেই কারণেই তাকে এবং তার দলের লোকদের পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছে। ফলে সার্কাসের সকলেই আত্মগোপন করে আছে বনের মধ্যে।
৩.৫ ঘড়িওয়ালা বনের মধ্যে লুকিয়ে বেড়াত কেন ?
উত্তর ঘড়িওয়ালা বহু বছর ধরে অনেক পরিশ্রম করে মাকুকে তৈরি করেছিল। ঘড়িওয়ালা ঘড়ির কারখানার বিদেশি ঘড়ির পুরানো কলকবজা কারখানার মালিককে না বলে নিয়েছিল এবং সেই কলকবজা দিয়েই সে মাকুকে তৈরি করেছিল।
কারখানার মালিক ওইসব পুরানো যন্ত্রপাতির মূল্য পাঁচ হাজার টাকা জানিয়ে ঘড়িওয়ালার নামে চুরির অভিযোগ এনে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছিল। ফলে থানা থেকে ঘড়িওয়ালার নামে হুলিয়া জারি ছিল। পুলিশ ঘড়িওয়ালাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। এই কারণেই ঘড়িওয়ালা বনের মধ্যে লুকিয়ে বেড়াত ।
৩.৬। বনের মধ্যে সোনা-টিয়া কী কী জন্তুজানোয়ার দেখেছিল নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর বনের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে সোনা-টিয়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকার জন্তুজানোয়ার দেখতে পেয়েছিল। প্রথমেই বনের মধ্যে নালার ধারে তারা ঘোড়া, বাঁদর, ছাগল, ভাল্লুক, কুকুর প্রভৃতি সার্কাসের জানোয়ারদের দেখেছিল। বনের মধ্যে সোনা-টিয়া মাকুকে খুঁজতে খুঁজতে খরগোশ দেখেছিল। গিরগিটি, প্রজাপতিও দেখেছিল। বেজির মতো লোমওয়ালা লম্বা লেজযুক্ত জানোয়ার তারা দেখতে পেয়েছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে সাপ, ব্যাং, মাকড়সা প্রভৃতি প্রাণী বা জন্তুজানোয়ার দেখেছিল সোনা-টিয়া।
[ ৩.৭ হোটেলওয়ালার জন্মদিনের উৎসব কেমন হয়েছিল লেখো।
উত্তর : হোটেলওয়ালার জন্মদিন উপলক্ষ্যে বেশ ভালো রকমের খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল। ভুনাখিচুড়ি আর মাংস রান্না করে সবাইকে বিনা পয়সায় খাওয়ায় হোটেলওয়ালা। সার্কাস দলের লোকেরা বিভিন্ন রকমের খেলা দেখাবার ব্যবস্থা করে। বনের আশপাশের বহু মানুষ টিকিট কেটে আসে সার্কাসের খেলা দেখতে। সবাই খুব সাজগোজ করে, এমনকি জানোয়ারদেরও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়। ঘাসজমিতে বড়ো আলোর নীচে খেলা দেখানো হয়েছিল।
দড়াবাজির লোকেরা বিভিন্ন খেলা দেখায়; সোনা-টিয়া নাচ-গান করে সবাইকে আনন্দ দেয়, জাদুকর আকাশ থেকে পরিদের রানিকে নামায়; মাকু নাচ করে, নানা ধরনের খেলা দেখিয়ে দর্শকদের হাসায়। সেদিন রাতে পরিদের রানির সঙ্গে মাকুর বিয়ে দেওয়া হয়। খেলাশেষে সবাই বটতলায় ফিরে এসে দেখে সেখানে সোনা-টিয়াদের মামনি, বাপি, আম্মা, ঠামু, পিসি, পিসেমশাই, বোম্বা উপস্থিত। সবাই মিলে খাওয়াদাওয়া করা হয় আনন্দের সঙ্গে। এভাবেই হোটেলওয়ালার জন্মদিনের উৎসব পালন করা হয়।
‘৩. ৮ মাকু’ পড়ে তোমার কেমন লাগল সংক্ষেপে লেখো। কোন্ চরিত্রকে সব থেকে ভালো লাগল সেকথাও লেখো।
উত্তর ‘মাকু’ লীলা মজুমদারের একটি কিশোর উপন্যাস। উপন্যাসটিতে দুটি ছোটো মেয়ের সাহসিকতা এবং বিভিন্ন কার্যকলাপ আমাকে আনন্দ দিয়েছে। বনের মধ্যে বিভিন্ন জীবজন্তুর আচরণ বা চালচলন বেশ মজার ব্যাপার। সার্কাস দলের লোকদের খেলা দেখানো, জাদুকরের পরিদের রানিকে নামানো, মাকুর নানা রকমের কায়দাকৌশল খুব ভালো লেগেছে। হোটেলওয়ালার সহৃদয় ব্যবহার, ঘড়িওয়ালার মাকুর প্রতি ব্যাকুলতা মনকে নাড়া দেয়। সব মিলিয়ে ‘মাকু’ কাহিনিটি আমার ভালো লেগেছে।
‘মাকু’ কাহিনিটিতে আমার সবথেকে ভালো লেগেছে সোনা-টিয়াদের পিসেমশাইকে, যাকে সোনা-টিয়া ‘মাকু” বলে মনে করেছিল। পিসেমশাই পুলিশের একজন বড়ো কর্তা হলেও শিশুদের সঙ্গে খুব সহৃদয় আচরণ করেছেন। এমনকি হোটেলওয়ালা তাকে চাকরের মতো খাটিয়ে নিলেও তিনি কখনোই বুঝতে দেননি যে, তিনি একজন বড়ো অফিসার। বড়ো হলেও যে ছোটোদের সঙ্গে ছোটোদের মতো করেই মিশতে হয়, তা পিসেমশাই চরিত্র থেকে আমরা শিখতে পারি। নাম কি ‘সোনা-টিয়ার অ্যাডভোর’হলে
৩.৯ ‘মাকু” বইয়ের বেশি ভালো হত? তোমার কী মনে হয় ? এ বিষয়ে তোমার মতামত লেখো।
উত্তর ‘মাকু’ অ্যাডভেঞ্চারধর্মী কিশোর উপন্যাস। উপন্যাসের কাহিনি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, দুটি বালিকা সোনা ও টিয়া সাহসের উপর ভর করে কালিয়ার জঙ্গলে প্রবেশ করেছে। তাদের বিভিন্ন কার্যকলাপের মধ্যে অ্যাডভেঞ্চারের দিকটিও প্রকাশিত হয়েছে। তবে শুধু এইটুকুর জন্যই কাহিনিটির নামকরণ ‘সোনা-টিয়ার অ্যাডভেঞ্চার’ ঠিক নয় বলে আমি মনে করি।
অন্যভাবে বলা যায়, কাহিনিটির নাম ‘মাকু’ হওয়ার পিছনে যথেষ্ট কারণ আছে। মাকু চরিত্রটি খুব আকর্ষণীয় এবং কাহিনির প্রায় সবটাই জুড়ে আছে তার কার্যকলাপ। ঘড়িওয়ালা কর্তৃক মাকুর সৃষ্টি, পরিদের রানিকে বিয়ে করার জন্য মাকুর বায়না ও ঘড়িওয়ালার খোঁজে ঘুরে বেড়ানো, মাকুর জন্য ঘড়িওয়ালার ব্যাকুলতা, মাকুকে জীবন্ত করে তোলার জন্য সকলের চিন্তা, সোনা-টিয়ার মাকুকে ভালোলাগা, টিয়ার মাকুকে জীবিত করে তোলা, মাকুর নাচ ও বিভিন্ন কাজ এবং শেষে পরিদের রানির সঙ্গে ধূমধাম করে মাকুর বিয়ে—এই সবই কাহিনির মূল বিষয় হয়ে উঠেছে।
অর্থাৎ কাহিনিটি আবর্তিত হয়েছে মাকুকে কেন্দ্র করেই। তাই আমার মনে হয়, কাহিনিটির নাম ‘সোনা-টিয়ার অ্যাডভেঞ্চার’ না হয়ে ‘মাকু’ হওয়াই যথাযথ হয়েছে
