Bengali

ছোটদের পথের পাঁচালী প্রশ্ন উত্তর| পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি প্রশ্ন উত্তর।।

ছোটদের পথের পাঁচালী প্রশ্ন উত্তর|ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি প্রশ্ন উত্তর।।

পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি প্রশ্ন উত্তর! ছোটদের পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণি প্রশ্ন উত্তর

ছোটদের-পথের-পাঁচালী-প্রশ্ন-উত্তর

পথের পাঁচালী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
পরিচ্ছেদ ১৯-২৭

এই আর্টিকেলটিতে ছোটদের পথের পাঁচালী প্রশ্ন উত্তর এবং বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।

ছোটদের পথের পাঁচালী: অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান ১

১. ভোর হতে না হতেই দুর্গার অসুখের বাড়াবাড়ির কারণে সর্বজয়া কাকে ডাকতে গিয়েছিল ?

ভোর হতে না হতেই দুর্গার অসুখের বাড়াবাড়ির কারণে সর্বজয়া নীলমণি মুখুজ্যেকে ডাকতে গিয়েছিল।

২.কে তার খাতায় অপুকে গল্প লিখে দিতে বলেছিল ?

ভুবন মুখুজ্যের মেয়ে রানি একখানা ছোটো বাঁধানো খাতা অপুর হাতে দিয়ে তাকে তাতে গল্প লিখে দিতে বলেছিল।

৩. দুর্গা কী রোগে মারা গিয়েছিল ?

* দুর্গা দীর্ঘদিন ম্যালেরিয়া জ্বরে ভুগে পথ্যহীন, চিকিৎসাহীন অবস্থায় থেকে অবশেষে হার্টফেল করে মারা গিয়েছিল।

৪. সর্বজয়া কোথায় কইমাছ পেয়েছিল ?

→ রাতে প্রবল বৃষ্টির পরদিন সর্বজয়া বাঁশতলায়, একটা ভেসে-আসা কুইমাছ পেয়েছিল।

৫. চড়কপূজা কী?

চৈত্রমাসের সংক্রান্তিতে শিবের গাজন উৎসব উপলক্ষ্যে চড়কপূজা হয়, যা অপুদের গ্রামে মেলার আকার ধারণ করে।

৬. অপু ইন্দুলেখার সঙ্গে কার মিল খুঁজে পেয়েছিল ?

অপু ইন্দুলেখার সঙ্গে তার দিদি দুর্গার মিল খুঁজে পেয়েছিল।

৭. অজয় কোন্ পালাতে ‘নিয়তি’ সাজত ?

অজয় ‘পরশুরামের দর্প-সংহার’ পালাতে নিয়তি সাজত।

৮. অপু কীসের পার্ট করবে ভেবেছিল ?

অপু জরির মুকুট মাথায় পরে তলোয়ার ঝুলিয়ে যুদ্ধরত সেনাপতির পার্ট করবে বলে ভেবেছিল।

৯. “রইল ওইখানে, কেউ জানতে পারবে না কোনো কথা, ওখানে আর কে যাবে”—এখানে কোন্ জিনিসের কথা বলা হয়েছে?

প্রশ্নে উদ্ধৃত জিনিসটা ছিল সেজোঠাকরুনের বাড়ি থেকে চুরি যাওয়া ছোট্ট সোনার সিঁদুর কৌটো, যা অপু দুর্গার মৃত্যুর পর খুঁজে পেয়ে জঙ্গলের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।

১০. চড়কপুজোর আগের রাতে কোন্ পুজো হয় ?

চড়কপুজোর আগের রাতে হয় নীলপুজো।

১১. বাবাকে অপু কৃপার পাত্র হিসেবে বিবেচনা করে কেন ?

গ্রামে এত বড়ো যাত্রাদল আসছে কিন্তু অপুর বাবা সে বিষয়ে কিছুই জানে না, তাই সে বাবাকে কৃপার পাত্ররূপে বিবেচনা করে।

১২. অপু কোথায় মাছ ধরতে বসে ?

সোনাডাঙা মাঠের নীচে ইছামতী নদীর ধারে ছাতিম গাছের তলায় অপু মাছ ধরতে বসে ।

১৩. “… অপেক্ষা মাত্র।”—অপুর একমাত্র অপেক্ষা কীসের জন্য?

অপুর একমাত্র অপেক্ষা বড়ো হয়ে ওঠার জন্য। বড়ো হয়ে অপু জগৎ-জানার, মানুষ-জানার, মানুষ-চেনার আনন্দ যজ্ঞে যোগ দেবে, মনে মনে তারই অপেক্ষায় থাকে সে।

১৪. অপু যাত্রাদলে কত টাকা মাইনে পেতে পারে বলে অজয় মনে করেছিল ?

অজয় মনে করেছিল অপু তার গানের গলার জন্য যাত্রার দলে অনায়াসে পনেরো টাকা মাইনে পেতে পারে।

১৫. দুর্গা মারা যাওয়ার আগে অপুর কাছে কোন্ ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল?

মারা যাওয়ার আগে দুর্গা তার আদরের ভাই অপুর কাছে রেলগাড়ি দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল।

১৬. দুর্গা টিনের বাক্সের খেলা না দেখে চলে যাচ্ছিল কেন?

দুর্গার কাছে খেলা দেখার পয়সা ছিল না বলে সে টিনের বাক্সের খেলা না দেখে চলে যাচ্ছিল।

১৭. হরিহর বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমে কোথায় গিয়েছিলেন ?

→ হরিহর বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমে নদিয়ার গোয়াড়ি কৃষ্ণনগরে গিয়েছিলেন।

১৮. দুর্গার কোন্ শক্তির উপর অপুর শ্রদ্ধা ছিল না ?

→ দুর্গা অর্থাৎ তার দিদির শিল্পানুভূতি শক্তির উপর অপুর কোনো কালেই শ্রদ্ধা ছিল না ।

১৯. “সর্বজয়া আর কোনোমতো চাপিতে পারিল না … কাঁদিয়া উঠিল।” —সর্বজয়া কার কাছে কীসের জন্য কাঁদিয়া উঠিল ?

[] সর্বজয়া হরিহরের কাছে দুর্গার মৃত্যুসংবাদ প্রকাশ করে কেঁদে উঠেছিল।

২০. “আমি কী করব, আমি তো আর বলিনি যাবার কথা ? – কে কাকে কথাগুলি বলেছিল ?

অপু রানিকে প্রশ্নের উত্তরে উদ্ধৃত কথাগুলি বলেছিল।

২১. রামকবচ লিখে হরিহর কার কাছ থেকে কত টাকা পেয়েছিল ?

‘রামকবচ’ লিখে হরিহর বেহারি ঘোষের শাশুড়ির কাছ থেকে তিন টাকা পেয়েছিল।

২২. অপু হরিহরকে কোন্ বই বারবার কিনে আনতে বলেছিল?

অপু হরিহরকে ‘পদ্মাপুরাণ’ বইটি কিনে আনতে বলেছিল।

২৩. অজয় অপুর মাকে কোন্ গানটা শুনিয়েছিল ?

অজয় অপুর মাকে ‘কোথা ছেড়ে গেলি এ বন-কান্তারে প্রাণপ্রিয় প্রাণ সাথি রে’—গানটি শুনিয়েছিল।

২৪. অপুর দফতরের চরিতমালা’ বইটির লেখক কে?

অপুর দফতরের ‘চরিতমালা’ বইটির লেখক হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

২৫. নীলমণি রায়ের বড়ো ছেলের নাম কী? সে কোন্ শ্রেণিতে পড়ে?

নীলমণি রায়ের বড়ো ছেলের নাম সুরেশ। সুরেশ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।

২৬. হরিহর রানাঘটের রাজারে অপুর জন্য কী বই কিনেছিল ? তার মূল্য কত ?

হরিহর রানাঘাটের বাজারে অপুর জন্য ‘সচিত্র চণ্ডী মাহাত্ম্য বা কালকেতুর উপাখ্যান’ বইটি কিনেছিল। উল্লিখিত বইটির মূল্য ছিল ছয় আনা ।

২৭. “রাজপুত্রের প্রতি সেনাপতির বিশ্বস্ততার নিদর্শন দেখা গেল না।”—রাজপুত্র এবং সেনাপতির প্রকৃত নাম কী কী ছিল ?

‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে উল্লিখিত রাজপুত্রের প্রকৃত নাম ছিল অজয় এবং সেনাপতির প্রকৃত নাম ছিল কিশোরী।

২৮. ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে দুর্গাকে জ্বরের সময় সর্বজয়া কী পথ্য দিয়েছিলেন?

‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে দুর্গাকে জ্বরের সময় সর্বজয়া পথ্য হিসেবে নিমছাল সেদ্ধ দিয়েছিলেন।

২৯. নবাবগঞ্জ থেকে দুর্গাকে কোন্ ডাক্তার দেখতে এসেছিলেন ?
> নবাবগঞ্জ থেকে দুর্গাকে শরৎ ডাক্তার দেখতে এসেছিলেন।

৩০. ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে সর্বজয়া নাপিতের বউয়ের কাছে কী বিক্রি করতে গিয়েছিল ?

→ ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে সর্বজয়া নাপিতের বউয়ের কাছে তার বিয়ের দান হিসেবে পাওয়া কাঁসার রেকাবি বিক্রি করতে গিয়েছিল।

৩১. অপু রাজকুমার অজয়কে কী কী গান শুনিয়েছিল ?

অপু রাজকুমার অজয়কে দাশু রায়ের পাঁচালির গান “শ্রীচরণে ভার একবার গা তোলো হে অনন্ত’ এবং অন্য একটি গান ‘খেয়ার পাশে বসে রে মন ডুবল বেলা খেয়ার ধারে’ শুনিয়েছিল।

৩২. “নীলমণি মুখুজ্যের স্ত্রী আশ্চর্য হইয়া বলিলেন—দুগ্‌গা? কেন কী হয়েচে দুগ্‌গার ?””—এ কথার উত্তরে সর্বজয়া কী বলেছিল?

→ নীলমণি মুখুজ্যের স্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে সর্বজয়া বলেছিল যে, কদিন থেকেই দুর্গার জ্বর আসছিল-যাচ্ছিল। দুর্গার ম্যালেরিয়া হয়েছিল, সন্ধ্যে থেকে জ্বর বেড়েছে। তার ওপর রাতে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি। চিন্তায় দিশাহারা হয়ে তাই সর্বজয়া নীলমণি মুখুজ্যেকে ডাকতে এসেছিল।

৩৩. “নিবারণের মা স্বীকার হইয়া গেল।”—নিবারণের মা কোন্ কাজের ক্ষেত্রে তার সম্মতি জানিয়েছে?

সর্বজয়া নিবারণের মায়ের কাছে বৃন্দাবনী চাদরের পরিবর্তে আধকাঠা চাল চেয়েছিল—এতে নিবারণের মা সম্মতি জানিয়েছিল।

৩৪. শরৎ ডাক্তার কোথা থেকে এসেছিলেন ?

→ শরৎ ডাক্তার নবাবগঞ্জ থেকে এসেছিলেন। ৩৫. হরিহর শ্যামাবিষয়ক গান গেয়ে কত টাকা প্রণামী পেয়েছিল ?

→ হরিহর একটি কাঠের গোলাতে শ্যামাবিষয়ক গান গেয়ে এক টাকা প্রণামী পেয়েছিল।

৩৬. চড়কের দিন কে মারা গিয়েছিল ?

চড়কের দিন গ্রামের আতুরি বুড়ি মারা গিয়েছিল।

 

ছোটদের পথের পাঁচালী: ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

১. অপুর চড়কের মেলা দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে চড়কের মেলার বর্ণনা আছে। এই চড়কের অভিজ্ঞতা অপুর জীবনে ভিন্ন রকমের ছিল। দিদি মারা যাওয়ার পর এ বারের চড়ক তার কাছে খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। আগের বছরও দুর্গা পট • কিনে আনন্দ করেছিল। কিন্তু এবার আর সে নেই। মেলার গোলমালে বাঁশির সুর শুনে গিয়ে বাঁশি কেনে অপু।

 এ ছাড়াও চিনিবাস ময়রার কাছ থেকে সে দু-পয়সার তেলেভাজা খাবার কেনে। সে দেখে নানা গাঁয়ের ছেলেমেয়েরা রঙিন কাপড়, জামা, কোরা শাড়ি পরে, বাঁশি ও নানারকম খেলনা কিনে বাড়ি ফিরছে। পরদিন অপুরা গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে, তাই অপু ঠিক করে নতুন জায়গায় যদি চড়ক না হয় তাহলে বাবাকে বলে সে নিশ্চিন্দিপুরে মেলা দেখতে আসবে।

২. অপুর যাত্রা দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।

‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে আমরা অপুর যাত্রা দেখার অভিজ্ঞতার বিবরণ পাই। যাত্রার দিন সন্ধে থেকেই অপু যাত্রার আসরে গিয়ে বসে। যাত্রা আরম্ভ হলে পুরো জগৎসংসার অপুর কাছে মুছে যায়। শুধুমাত্র যাত্রার মঞ্চটি ছাড়া সে আর কিছু দেখতে পায় না। কোনো দিকেই তার আর খেয়াল থাকে না।

বেহালার সুর, রাজা, মন্ত্রীর আনাগোনা তার মনকে মাতিয়ে দেয়৷ বাবা এই যাত্রা দেখল না বলে অপু মনে মনে আপশোশ করে। পরে বাবা এসেছে দেখে সে ভীষণ খুশি হয়। রাজার কার্যকলাপ, মন্ত্রীর চক্রান্ত, রাজপুত্র অজয়, রাজকুমারী ইন্দুলেখার কষ্ট, ইন্দুলেখার মৃত্যুতে অজয়ের হাহাকার অপুকে মুগ্ধ করে। যাত্রার চরিত্রদের দুঃখে অপুর মনও ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।

৩. “অপু তাহাকে সঙ্গে করিয়া নদীর ধারের দিকে বেড়াইতে গেল।”—অপু কাকে সঙ্গে নিয়ে নদীর ধারে গেল ? সে কী কী গান গেয়েছিল ? ১+২

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি : অপু যাত্রার দলের অভিনেতা অজয়কে সঙ্গে নিয়ে নদীর ধারে গেল।

গীত গান: নদীর ধারে গিয়ে অজয় অপুকে গান গাইতে অনুরোধ করে। অপুর গান গেয়ে বাহাদুরি নিতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু যাত্রাদলের ছেলের সামনে গান গাইতে তার মনে ভয় হয়। শেষে অনেক কষ্টে লজ্জা কাটিয়ে সে বাবার মুখে দাশুরায়ের পাঁচালি থেকে— ‘শ্রীচরণে ভার একবার গা তোলো হে অনন্ত’ গানটি শোনায় ।
অজয়ের প্রশংসায় উৎসাহিত হয়ে সে দিদির কাছে শেখা——খেয়ার পাশে বসে রে মন ডুবল বেলা খেয়ার ধারে’ গানটিও করে।

৪. দুর্গার কী হয়েছিল? তাকে কোন্ ডাক্তার দেখেছিল এবং কী বলেছিল ?

দুর্গার অসুস্থতা: দুর্গার ম্যালেরিয়া জ্বর হয়েছিল। সেই সঙ্গে অনিয়ম, জলে ভিজে ভিজে কচু শাক তোলা, ওষুধপথ্যের অভাব ওই জ্বরকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল।

দুর্গার জ্বর ভীষণ বেড়ে গেলে নীলমণি মুখুজ্যের ছেলে ফণী নবাবগঞ্জ থেকে শরৎ ডাক্তারকে ডেকে আনে। ডাক্তার দেখেশুনে ওষুধ দেন। জ্বর বেশি হলে জলপটি দেওয়ারও নির্দেশ দেন। পরদিন ঝড়বৃষ্টি থামে, রোদ ওঠে।
দুর্গা একটু সুস্থ হয়ে করুণ স্বরে দু-একটা কথাও বলে। কিন্তু পরের দিন দুর্গা মারা যায়। তখন শরৎ ডাক্তার এসে জানায়, ম্যালেরিয়ার শেষ পর্যায়ে, খুব জ্বরের পর যখন বিরাম হয়েছে তখনই দুর্গা হার্টফেল করেছে।

৫. মৃত্যুর পূর্বে দুর্গা অপুর কাছে কী দেখানোর অনুরোধ করেছিল? অপু তাকে উত্তরে কী বলেছিল ?

→ দুর্গার অনুরোধ: বৃষ্টিবাদলার মধ্যে নীলমণি মুখুজ্যের উদ্যোগে শরৎ ডাক্তার এসে ওষুধপত্র দেওয়ার পর দুর্গা আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকে। অপু সর্বদা দিদির কাছে বসে থাকে। এরকমই এক সকালে দুর্গা অপুকে ডাকে ও তার কাছে রেলগাড়ি দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে।

অপুর উত্তর: উত্তরে অপু তাকে জানায় যে দুর্গা সেরে উঠলেই বাবাকে বলে তারা সকলে মিলে রেলগাড়িতে চড়ে গঙ্গা নাইতে যাবে।

৬. “দিন নাই, রাত নাই, সর্বজয়া শুধুই স্বপ্ন দেখে।”—সর্বজয়া কী স্বপ্ন দেখত ?

সর্বজয়া স্বপ্ন দেখত, একদিন তারা আর গরিব থাকবে না। জীবনে কোনও কষ্ট থাকবে না তাদের। (পাড়ার একপাশে খড়ের দু-তিনখানা ঘর থাকবে। গোয়ালে গোরু থাকবে, গোলাভরতি ধান থাকবে ।(তার বাড়িটিকে ঘিরে থাকবে সবুজ প্রকৃতি, চারপাশ ভরে থাকবে পাখির ডাকে। অপু সকালে দুধমুড়ি খেয়ে পড়তে বসবে। দুর্গা আর ম্যালেরিয়ায় ভুগবে না। পাড়ার সবাই তাদের সম্মান করবে।

ছোটদের পথের পাঁচালী প্রশ্ন উত্তর অষ্টম শ্রেণী 

৭. “ছেলেমেয়ে ঘুমাইয়া পড়িলেও সর্বজয়ার ঘুম আসে না।”সর্বজয়ার ঘুম আসে না কেন ?

→ ছেলেমেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেও নানা দুশ্চিন্তায় সর্বজয়ার ঘুম আসে না খুব এক ঘন বর্ষার রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টিতে অপু-দুর্গাকে নিয়ে সর্বজয়ার ভয় হয়। হরিহরও তখন বাড়িতে ছিলেন না। এক অজানা আশঙ্কায় সর্বজয়ার বুকের ভিতরটা কেঁপে ওঠে। টাকা-পয়সার চেয়েও বাড়ির বাইরে থাকা হরিহরের জন্য তার বেশি চিন্তা হয় ।

৮. আতুরি বুড়িকে সবাই কী বলত? সে মারা যাওয়ার পর অপুর কী মনে হয়েছিল ?

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’ থেকে জানা যায় আতুরি বুড়িকে গ্রামের সবাই ডাইনি বলত ।

আতুরি বুড়ি মারা যাওয়ার পর অপুর মনে হয়েছিল, আতুরি বুড়ি আসলে ডাইনি নয়। গ্রামের একধারে লোকালয়ের বাইরে সে একা থাকত। সে ছিল দরিদ্র ও অসহায়। তার নিজের বলতে কেউ ছিল না ।

৯. সতু অপুকে কোন্ শর্তে বই দিতে রাজি হয়েছিল ? অপুর মা তাকে কী বলে বকেছিল?

> সতুর শর্ত: সতুদের বাড়ির আলমারিতে প্রচুর বই ছিল। অপু একটা বই পড়তে চেয়েছিল বলে সতু তাকে শর্ত দিয়েছিল যে, তাদের মাঠের পুকুরে রোজ মাছ চুরি হয়ে যাচ্ছে। তাই তার জ্যেঠামশায় তাকে বলেছে দুপুরে পাহারা দিতে। অপু যদি সেখানে তার বদলে যেতে রাজি থাকে তবে সে তাকে বই পড়তে দেবে। অপু বই পড়ার লোভে এই শর্তে রাজি হয়েছিল ।

» অপুর মায়ের তিরস্কার : অপুর মা সর্বজয়া তার বই পড়ার কাহিনি শুনে তাকে বকেছিল ‘হাবলা ছেলে’ বলে। একটা বই পড়ার লোভে সে পরের মাছ পাহারা দেয়, এতে সর্বজয়া তাকে বোকা বলেছিল ।

১০. হরিহর স্ত্রী-পুত্র-কন্যার জন্য কী কী উপহার কিনে এনেছিল ?

→ হরিহর কন্যা দুর্গার জন্য একটি লালপাড় কাপড় ও আলতার পাতা, পুত্র অপুর জন্য ‘সচিত্র চন্ডীমাহাত্ম্য বা কালকেতুর উপাখ্যান’ ও টিনের রেলগাড়ি এবং স্ত্রী সর্বজয়ার জন্য কাঠের চাকি-বেলুন ও অন্যান্য গৃহস্থালির জিনিস এনেছিল।

১১. যাত্রাপালায় অজয়কে দেখে অপুর কী মনে হয়েছিল ?

→ যাত্রাপালায় অজয়কে দেখে অপু মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার মনে হয়েছিল, টুকটুকে এই রাজপুত্র অজয়কেই এতদিন সে মনে মনে চেয়েছিল। মায়ের মুখে শোনা রূপকথার কাহিনি, শৈশবের কল্পনায় যে রাজপুত্রকে তার প্রাণ চেয়েছে, সেই রাজপুত্র অজয় ছাড়া আর কেউ নয়। তার চোখ, মুখ, গলার স্বর—সবকিছুই বড্ড কাছের, বড্ড চেনা বলে মনে হয়েছে তার।

১২. “দুর্গার অশান্ত, চঞ্চল প্রাণের বেলায় জীবনের সেই সর্বাপেক্ষা বড়ো অজানার ডাক আসিয়া পৌঁছিয়াছে।”—দুর্গার জীবনের সকরুণ পরিসমাপ্তির ছবি কীভাবে ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’-তে অঙ্কিত হয়েছে, তার পরিচয় দাও ।

→ বিভূতিভূষণ তাঁর মানসকন্যা দুর্গার মৃত্যুর যে চিত্র ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’ গ্রন্থে এঁকেছেন, তা অত্যন্ত করুণ ও বেদনাবিধুর। ম্যালেরিয়ায় কাবু দুর্গার জ্বর আগেরদিন সন্ধ্যা থেকেই খুব বাড়াবাড়ি হয়।
সেদিন রাতে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টিতে তাদের ভাঙা ঘরে আতঙ্কের প্রহর কাটে। ভোরে দুর্গার অবস্থা খুবই খারাপ হওয়ায় নবাবগঞ্জের শরৎ ডাক্তারকে ডেকে আনা হয়। সেদিন বিকেলে দুর্গার জ্বর ছেড়ে যায়। কিন্তু পরদিন বেলার দিকে হার্টফেল করে সে মারা যায়।

১৩. “মাছ ধরিবার শখ অপুর অত্যন্ত বেশি।”—অপুর মাছ ধরার শখের ছোটোদের পথের পাঁচালী’-তে কীভাবে ফুটে উঠেছে?

কে কথা ‘অপুর মাছ ধরার খুব শখ ছিল। সোনাডাঙা মাঠের নীচে ইছামতী নদীর ধারে কাঁচিকাটা খালের মুখে ছিপে প্রচুর মাছ ওঠে বলে সে সেখানে গিয়ে একটা বড়ো ছাতিম গাছের তলায় মাছ ধরতে বসে।
মাছ খুব কম ধরা পড়ে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা জলে ফাতনা স্থির হয়ে থাকে। অপু অধৈর্য হয়ে এদিক-ওদিক ঘুরে এসে অনেকক্ষণ পরে হয়তো ফাতনা একটু একটু নড়তে দেখে। মাছ না পেলে ছিপ গুটিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দেয় ৷

১৪. “ছেলের এত আদরের জিনিসটা জোগাইতে না পারিয়া তাহার বুকের ভিতর বেদনায় টনটন করে।”—কোন্ জিনিসের কথা বলা হয়েছে? হরিহরের বুকের ভিতর বেদনায় টনটন করত কেন?

উদ্দিষ্ট বস্তু : আলোচ্য উক্তিতে সাপ্তাহিক ‘বঙ্গবাসী” পত্রিকার কথা বলা হয়েছে।

হরিহরের বেদনার কারণ: অপু পড়তে খুব ভালোবাসত । তাই ছেলে বড়ো হয়ে পড়বে ভেবে হরিহর অনেক ‘বঙ্গবাসী’ পত্রিকা সযত্নে বান্ডিল বেঁধে তুলে রেখেছিলেন। এই পত্রিকাটির জন্য অপু পাগল ছিল। তাই শনিবার সকালবেলা খেলা ফেলে সে ডাকবাক্সের কাছে অপেক্ষা করত। পত্রিকাটির প্রতি অপুর এত ভালোবাসার কথা হরিহর জানতেন।

পত্রিকার দাম দিতে না পারায় হরিহরের বাড়িতে বঙ্গবাসী দেওয়া বন্ধ করেছিল কাগজওয়ালা। অর্থের অভাবে ছেলেকে তার আদরের পত্রিকাটি কিনে দিতে পারতেন না বলে হরিহর খুব কষ্ট পেতেন ।

১৫. “আর একটু বড়ো হইলে সে এদল ছাড়িয়া দিবে”–এ কথা কার মনে হয়েছিল ? কেন মনে হয়েছিল ?

এ কথা যাত্রাদলের কিশোর অভিনেতা অজয়ের।

অজয় যে যাত্রাদলের অভিনেতা, সেই দলের অধিকারী নীলমণি হাজরা অজয়কে খুব মারে। এ ছাড়া আশু পালের যাত্রা দলে খুব সুখে থাকা যায় ৷ সেখানে রোজ রাত্রে লুচি খেতে দেয়। না খেলে তিন আনা পয়সা খোরাকি দেয়। এ কারণেই অজয় ভেবেছে যে, একটু বড়ো হলেই সে নীলমণি হাজারার দল ছেড়ে দেবে।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর ছোটদের পথের পাঁচালী

১ “এরূপ অপরূপ বসন্তদৃশ্য অপু জীবনে এই প্রথম দেখিল।”— বসন্ত দৃশ্যটির বর্ণনা দাও।

উত্তর হিরু গাড়োয়ানের গাড়িতে অপু বাবা মায়ের সঙ্গে নিশ্চিন্দিপুর ছেড়ে চলে যাচ্ছিল। পড়ন্ত রোদে তাদের গাড়ি সোনাডাঙার মাঠ পেরোচ্ছিল। মাঠের এখানে-ওখানে বনঝোপ, শিমুল, বাবলা আর খেজুর গাছ। চারিদিকে শোনা যাচ্ছে পাপিয়ার বউ কথা কও ডাক।

বিরাট মাঠটির মাথার ওপরে তিসির ফুলের মতো রঙের ঘন নীল আকাশ উপুড় হয়ে পড়েছে। সবুজ ঘাসে মোড়া মাঠটির কোথাও চাষবাসের চিহ্ন নেই। শুধু গাছপালার সবুজ রং ছেয়ে গেছে। সামনের চওড়া মাটির রাস্তাটা দেখে মনে হয় যেন উদাস বাউল।
মাঠ পেরিয়ে তাদের সামনে পড়ল মধুখালির বিল। প্রাচীনকালের শুকিয়ে যাওয়া নদী এই মধুখালির বিলে ফুটে আছে অজস্র পদ্মফুল। অপু গাড়িতে বসে মাঠ ও চারধারের অপূর্ব আকাশের রংটা দেখছিল।

বসন্ত যেন চৈত্র-বৈশাখের মাঠ-বনবাগানকে অদ্ভুত আনন্দে ভরিয়ে তুলেছে। কোকিলের এলোমেলো ডাকে, নাগকেশর ফুলের ভারে, বনফুলের গন্ধ ভরা জ্যোৎস্নারাতের দখিনা বাতাসে বসন্ত যেন আনন্দনৃত্য শুরু করেছে। অপু বসন্তের এমন অপরূপ রূপ জীবনে যেন প্রথমবার দেখল।

২ অপু ফ্রান্স দেশটি সম্বন্ধে কী জেনেছিল?

উত্তর । সুরেশদার ইংরেজি ম্যাপে অপু ভূমধ্যসাগর দেখেছিল। সে জানত, ভূমধ্যসাগরের ওপারে অবস্থিত ফ্রান্স দেশ। বহুদিন আগে ফ্রান্সকে বিদেশি সৈন্যরা দখল করে নিয়েছিল। ফ্রান্স তখন বিপন্ন, রাজা শক্তিহীন এবং চারিদিকে অরাজকতা, লুঠতরাজ চলছে। দেশের এই খারাপ সময়ে লোরেন প্রদেশের এক অজপাড়াগাঁয়ে এক চাষির মেয়ে ভেড়া চরাতে যেত।

সে তার নীল চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেশের দুঃসময়ের কথা চিন্তা করত। অনেকদিন ধরে এই কথা ভাবতে ভাবতে তার সরল মনে যেন কার গলার আওয়াজ শুনতে পেল সে। কেউ যেন তাকে বলছে, তুমিই ফ্রান্সকে রক্ষা করবে। তুমি রাজসে জড়ো করে অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করো। দেশের মুক্তির দেবী মেরি তাকে উৎসাহ দেন।

স্বর্গ থেকে তাঁর আহ্বান তারপর তারই নেতৃত্বে নতুন উৎসাহে ফরাসি সৈন্যরা শ তাড়িয়ে দেয়। সেই ভাবুক কুমারী মেয়েটি নিজে অস্ত্র ধ সিংহাসনে বসায়। কিন্তু তার দেশের কুসংস্কারাছন্ন মানু ডাইনি অপবাদ দিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। অপু বই পড়ে এইসব কথা জেনেছিল।

৩. বর্ষা অপুদের দারিদ্র্যকে কীভাবে প্রকট করেে অংশ অনুযায়ী আলোচনা করো ।

উত্তর।

গ্রামে বর্ষার রূপ : হরিহর কাজের খোঁজে সেইসময় নিশ্চিন্দিপুর গ্রামে প্রবল বর্ষা নামে। নদীর জল বা জলে ভরে ওঠে। অপুদের বাড়ির বাঁশতলা, গ্রামের তেঁ করে জল জমে যায়। গ্রামের একধারের জীর্ণ কোঠাবাড়িে সর্বজয়া নিঃসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে। অপুদের চর উপবাসী থেকে কয়েকদিন ছেলেমেয়েকে ওলশাক খাওয়ানোর পর সর্বজয়ার ঘরে আর কিছুই ছিল না।

এব দুর্গার জ্বর এবং অন্যদিকে বাইরে থাকা স্বামীর জ অসহায়তাকে বাড়িয়ে তোলে। সংসারের অভাব চরমে ‘ বিক্রি করে দিয়ে কিছুটা চাল জোগাড়ের চেষ্টা করে সর্ব ঘরের ফুটো ছাদ দিয়ে সর্বত্র জল পড়তে থাকে।দুর্গার অ ওষুধের অভাবে দুর্গার জ্বর বাড়তে থাকে। বৃষ্টির জল যত অপুদের দারিদ্র্য তার থেকেও বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। প্র বাড়ির রান্নাঘরের দেয়াল পড়ে যায়।

দুর্গার মৃত্যু: এক গেলেও দুর্গার জ্বর কমে না। নবাবগঞ্জ থেকে ডাক্তার শেষপর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় দুর্গার মৃত্যু হয়। এভাবেই ঝ হরিহর ও সর্বজয়ার অভাবের সংসারকে সবদিক দিয়েই করে দিয়ে যায়।

 

৪ নিশ্চিন্দিপুর ছেড়ে যাওয়ার সময় অপুর যে অনুভূতি হয়েছিল তা লেখো। অথবা, “আজ সত্যসত্যই দিদির সহিত চিরকালের ছাড়াছাড়ি হইয়া গেল।”——কীভাবে এই চিরকালের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর। কাশীযাত্রার উদ্যোগ: দুর্গার মৃত্যুর পর অপুর বাবা হরিহর নিশ্চিন্দিপুর গ্রাম ছেড়ে কাশী যাওয়া স্থির করেছিলেন। নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের গাছপালা, পাখি, নদী, মাঠ, এগুলি ছিল অপুর শৈশবের সঙ্গী। তাই গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার ঠিক আগের দিন নারকেল গাছের পাতায় জ্যোৎস্নার আলো দেখে কষ্টে অপুর মন কেঁদে ওঠে।

গ্রামের প্রতি টান: নিজেদের বাড়ি, বাঁশবন, আমবাগান, নদীর ধার, দিদির সঙ্গে চড়ুইভাতি করার জায়গা—এগুলিকে বড়ো ভালোবাসত অপু। নারকেল গাছের দিকে তাকিয়ে তার মনে নানা ধরনের কল্পনার কাহিনি ভেসে উঠত।

খেলার সঙ্গী ও গ্রামের প্রকৃতি: কত খেলার সঙ্গী, যারা বালক অপুর শৈশবের একটা বড়ো জায়গাজুড়ে ছিল, তাদের কথাও ভাবে অপু। গ্রামের চড়কমেলার আনন্দ সে নতুন জায়গায় পাবে কি না, ভাবতে থাকে অপু। গ্রামের প্রকৃতি বারবার অপুর কাছে নতুন রূপ নিয়ে ধরা দিত, তার সঙ্গে অপুর শৈশবের প্রতিটা দিন যুক্ত ছিল।

দিদির স্মৃতি : জ্যোৎস্নার আলোয় কতদিন দিদির সঙ্গে এই গ্রামেই সে কাটিয়েছে। কত মাছ ধরার স্মৃতি, আম কুড়ানোর স্মৃতি, নৌকায় করে নদীযাত্রা, রেল-রেল খেলা—এই সমস্ত কিছুই অপুর মনে পড়তে থাকে। দিদি ছিল তার জীবনের এক অন্যতম অবলম্বন। তাই গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার সময় দিদির জন্য অপুর মন এক ‘বিচিত্র অনুভূতিতে’ ভরে উঠেছিল।

৫ অপুর শৈশবে দিদি দুর্গার ভূমিকা আলোচনা করো ।

উত্তর,

কথামুখ: ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে দুর্গা ছাড়া অপুকে ভাবাই যায় না। দুর্গা অপুকে নানাভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে।

প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয়: দুর্গা নিজে বনেজঙ্গলে ঘুরে বেড়াত এবং সে-ই অপুকে প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত করিয়েছিল। দুর্গাকে আমরা কখনো-কখনো লোভী হিসেবে দেখি। কিন্তু সেই দুর্গাই ভাই অপুকে স্নেহ ও মমতায় ভরিয়ে রেখেছিল।

দুজনের মধুর সম্পর্ক: অপুর সমস্ত দুরন্তপনা, মান-অভিমান একমাত্র বুঝতে পারত দুর্গাই। দিদির সঙ্গে আম কুড়োনো, মাঠে-জঙ্গলে ঘুরে গাছ, পাখি চেনা—এগুলিতে অপুর খুব আগ্রহ ছিল। ঘরের চাল, নুন চুরি করে দিদির সঙ্গেই সে চড়ুইভাতি করার অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল।

দিদির জন্য অপুর টান : পুঁতির মালা চুরির অপবাদে দিদি মার খেলে মার ওপর অপুর রাগ এবং দিদির জন্য কষ্ট হয়েছিল। দিদির প্রতি রাগ, অভিমান হলেও দিদিকে ঘরে দেখতে না পেলেই তার মন খারাপ করত।
দিদির সঙ্গেই রেলের রাস্তা দেখতে গিয়ে পথ হারানোর আনন্দ, পানিফল খাওয়ার আনন্দ, প্রভৃতি ছিল তার শৈশবের অভিজ্ঞতা। তাই গ্রামের বাইরে বেড়াতে গিয়েও দিদির অপূর্ণ সাধ পূরণ করার কথা ভেবেছিল সে। দিদিকে সে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসত।

বেড়ে ওঠার সঙ্গী: দুর্গা ছিল অপুর বেড়ে ওঠার সঙ্গী। দিদি তাকে যে জগৎ চিনিয়েছিল তা ছিল অপুর প্রাণের জগৎ। তাই গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার সময় দিদির কথাই অপুর বেশি মনে পড়ছিল।

৬.অপু’ চরিত্রটি তোমার কেমন লেগেছে আলোচনা করো।

উত্তর । শুরুর কথা: ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’ উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র অপু। অপুর শৈশবই এই উপন্যাসের মূল বিষয়। অপু গ্রামবাংলার একটি অতি সাধারণ ছেলে হয়েও আমার চোখে অসাধারণ হয়ে উঠেছে।

অপুর অনন্যতা: অপু গাছপালা, মাঠঘাটকে নিজের মতো করেই দেখে। অপুকে ওর কল্পনাশক্তির জন্যই আর পাঁচজনের থেকে আমার আলাদা বলে মনে হয়েছে। কল্পনাতেই সে মহাভারতের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, আকাশে ওড়ার কল্পনাতে কেটে গেছে তার কত বিনিদ্র দুপুর! আবার সে যাত্রা দেখতে গিয়েও যাত্রার ঘটনার মধ্যে মগ্ন হয়ে পড়েছে। জন্মগ্রামের প্রতি অপুর ভালোবাসা আমার মনকে ভরিয়ে তুলেছে।

আমার শৈশবের সাথে অমিল: অপু যেভাবে আম কুড়োনোর আনন্দ পেয়েছে, তা এখন আমাদের শৈশবে আর প্রায় নেই বললেই চলে। অপু যেরকম স্বাধীনভাবে প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে পারত সেভাবে আমি পারি না। আমি তাই নিজেকে অপু হিসেবে কল্পনা করে আনন্দ পাই। এভাবেই অপু আমার কাছে একটি প্রিয় চরিত্র হয়ে উঠেছে।

৭ অজয় কে ? তার সঙ্গে অপুর বন্ধুত্ব হল কীভাবে ?

উত্তর

অজয়ের পরিচয়:(বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’ গ্রন্থে অজয় চরিত্রটি খুব অল্প সময়ের জন্য এলেও অপুর ও পাঠকের মুগ্ধতা অর্জন করেছে। নীলমণি হাজরার যাত্রার দলে রাজপুত্র সাজে অজয়। সে ব্রাহ্মণের ছেলে, অপুরই সমবয়সী। তার কেউ নেই, এক মাসির কাছে মানুষ হয়েছিল, সেই মাসিও মারা গেছে। অজয় তাই একবছর ধরে যাত্রাদলে কাজ করছে।

→ অজয় আর অপুর বন্ধুত্ব: যাত্রাপালা শেষ হওয়ার পর অপু পান কিনতে দোকানে গিয়েছিল। সেখানে অবাক হয়ে সে দেখেছিল রাজপুত্র অজয় সেনাপতি বিচিত্রকেতুকে ‘কিশোরীদা’ সম্বোধন করে পান খাওয়ার আবদার করছে, কিন্তু সেনাপতি তাচ্ছিল্যের সঙ্গে সেই আবদার প্রত্যাখ্যান করছে। সেই সময় অপু তার স্বভাবগত লাজুক প্রবৃত্তি ত্যাগ করে অজয়কে পান খাওয়ানোর প্রস্তাব দেয়।

অজয়ের প্রতি তার অপার মুগ্ধতাই তাকে দিয়ে এ কাজ করিয়ে নিয়েছিল। এরপর অজয় অপুকে জিজ্ঞাসা করে যে, তাদের বাড়িতে দুপুরে তার খাওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কি না! এতে অপু যেন হাতে স্বর্গ পায়।
পরদিন দুপুরবেলা অজয় তাদের বাড়িতে খেতে আসে। অজয়ের জীবনের গল্প শোনে, তার গান শোনে, তাকে গান শোনায়। এভাবে অপুর সঙ্গে অজয়ের বন্ধুত্ব গাঢ় হতে থাকে।

৮ “মা যে আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে গিয়েচে।”—কথাটির মধ্যে যে মাতৃহৃদয়ের হাহাকার ফুটে উঠেছে তা বর্ণনা করো ।

উত্তর । এক করুণ আলেখ্য: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’ গ্রন্থের সবচেয়ে করুণ ও বেদনাময় ঘটনা হল দুর্গার মৃত্যু। প্রাণচঞ্চল সদাহাস্যময় একটি কিশোরী মেয়ের অপ্রত্যাশিত মৃত্যু পাঠকের হৃদয়কে দুমড়ে-মুচড়ে দেয়।

দুর্গার অপ্রত্যাশিত মৃত্যু : উপন্যাসে দুর্গার মা সর্বজয়া ও ভাই অপুর অনুভূতির মধ্য দিয়ে পাঠক সেই বিয়োগব্যথার স্পর্শ পায়। কিন্তু দুর্গার মৃত্যুর সময় তার বাবা হরিহর বাড়িতে ছিলেন না। ঠিকানা না জানায় তাঁকে খবর দেওয়া সম্ভব হয়নি। মাসখানেক পর তিনি স্ত্রী-পুত্র-কন্যার জন্য উপহার নিয়ে বাড়ি এসে উপস্থিত হন।

মাতৃহৃদয়ের হাহাকার : দুর্গার জন্য কিনে আনা উপহার দেওয়ার জন্য হরিহর তাকে ডাকতে থাকায় সর্বজয়া আর সামলাতে না পেরে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। সন্তানহারা মাতৃহৃদয়ের তাজা ক্ষত থেকে পুনরায় রক্তক্ষরণ হতে থাকে ।

৯.ছোটোদের পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে অপুর সঙ্গে নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের সম্পর্কের যে ছবি ধরা পড়েছে তা লেখো। তুমি এমন কোনো গ্রাম দেখে থাকলে তা তোমার কেমন লেগেছে লেখো ।

উত্তর।

অপুর শৈশবের ঠাঁই: উপন্যাসের প্রধান চরিত্র অপুর জন্মস্থান নিশ্চিন্দিপুর। এই গ্রামেই অপু-দুর্গার বেড়ে ওঠা। এই গ্রামের প্রস গুরুমহাশয়ের পাঠশালায় অপুর শিক্ষাজীবন শুরু।

অপুর প্রিয় বিষয়সমূহ: গ্রামের নীলকুঠির মাঠ, নদী, আমবাগান, বাড়ির সামনের নারকেল গাছ সবই অপুর অত্যন্ত প্রিয় ছিল। এই গ্রামের পটু, রানু, সতু, নীলু ছিল তার ছেলেবেলার খেলার সাথী। বনজঙ্গল, নদীর তীর ছিল তার খেলার জায়গা। নিশ্চিন্দিপুর গ্রামে চড়কপূজা, চড়কের মেলা, চড়কপূজায় যাত্রাপালার আসর অপুর মনকে ভরিয়ে তুলত।

কল্পনার জগতে অপু : নিশ্চিন্ত প্ৰকৃতিই অপুর মনে এক কল্পনায় জগৎ তৈরি করে দিয়েছিল। নারকেল গাছ বা বাঁশের কঞি—এই সামান্য জিনিসগুলোর ওপর ভর করেই তার কল্পনা ডানা মেলত ৷ গ্রামের পঞ্চানন্দ ঠাকুর বা বিশালাক্ষী দেবীকে নিয়ে অপু যেসব গল্প শুনেছিল, তা-ও তার এই কল্পনার জগৎকে বিস্তৃত করেছিল। তাই নিশ্চিন্দিপুর ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় স্বাভাবিকভাবেই অপুর মন বিষাদে ভরে উঠেছিল।

→ গ্রামের অভিজ্ঞতা : আমি এখন শহরে বাস করলেও আমার জন্ম গ্রামে ৷ আমার গ্রামটি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় অবস্থিত। এর নাম গোকর্ণী। আমার গ্রামটি গাছপালা, পুকুর, মাঠ দিয়ে ঘেরা। আমাদের বাড়ির পাশেই আছে আটচালা মন্দির ও চণ্ডীমণ্ডপ। আগে মাটির রাস্তা থাকলেও এখন আমাদের গ্রামের কিছুটা রাস্তা পাকা। আমাদের গ্রামে কয়েকটি পাড়া আছে। সেগুলির নাম দত্তপাড়া, বোসপাড়া, বামনপাড়া, নাপিতপাড়া ইত্যাদি।

আমাদের গ্রামে সরকারি মাঠ বলে একটা খেলার জায়গা আছে। সরকারি মাঠের পরেই আছে একটা বিরাট বাগান। সেখানে আম, জাম, নারকেল প্রভৃতি বড়ো বড়ো গাছ রয়েছে। আমাদের গ্রাম থেকে মূল সড়কে আসতে গেলে দুদিকে ধানজমি পড়ে। ওই রাস্তা দিয়ে যেতে আমার খুব ভালো লাগে।

১০ “দিন নাই রাত নাই, সর্বজয়া শুধুই স্বপ্ন দেখে।”—সর্বজয়া কী স্বপ্ন দেখে, নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর। স্বচ্ছলতার স্বপ্ন: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধায় রচিত ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে হরিহরের স্ত্রী সর্বজয়া স্বপ্ন দেখত এক নিশ্চিন্ত ভবিষ্যতের। দরিদ্র পরিবারে স্বপ্নই বেঁচে থাকার, লড়াই করার শক্তি জোগায় ।

সর্বজয়ার স্বামীর প্রতি আস্থা : তার স্বামী হরিহর যখন প্রথম কাশী থেকে এল, তখন সবাই তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ব্যাপারে একমত ছিল। সর্বজয়ারও বিশ্বাস ছিল, খুব শীঘ্রই তার স্বামীর একটা ভালো চাকরি হবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটল অন্যরকম। দিনে দিনে তাদের সাংসারিক অবস্থা দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হতে থাকল। ঘরের কবাট, কড়িকাঠ আরও জীর্ণ হয়ে ভেঙে পড়তে শুরু করল। কিন্তু সর্বজয়া আশা ছাড়ল না। হরিহরও যখনই বাড়িতে ফেরে, একরাশ আশার কথা শুনিয়ে যায়। কিন্তু কখনোই সেই কাঙ্ক্ষিত সময়টি আসে না।

হরিহরের প্রতিশ্রুতি :শেষবার যাওয়ার সময়ও হরিহর বলে গেছে, এবার সে এই বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা ঠিক করে আসবে। হরিহরের কথায় বিশ্বাস করে সর্বজয়া স্বপ্ন দেখতে থাকে।

স্বপ্নে সর্বজয়ার ঘরবাড়ি: সর্বজয়া স্বপ্ন দেখে, পাড়ার একপাশে নিকনো-পুছানো খড়ের দুতিনটে ঘর। গোয়ালে দুগ্ধবতী গাভি, মাচাভরা বিচালি, গোলা ভরা ধান। মাঠের ধারে মটর খেতের তাজা গন্ধ হাওয়ার সাথে ভেসে আসে। নীলকণ্ঠ, বাবুই, শ্যামাপাখির ডাকে সকলের ঘুম ভাঙে। অপু সকালে বড়ো মাটির ভাঁড়ে একপাত্র তাজা দুধের সঙ্গে গরম মুড়ি খেয়ে পড়তে বসে।

দুর্গা ম্যালেরিয়ায় ভোগে না, গরিব বলে কেউ অবহেলা করে না। এভাবেই মনে স্বপ্ন নিয়ে সংসার করে চলেছিল সর্বজয়া। সর্বজয়ার এই স্বপ্নের মধ্যে উচ্চাশা ছিল না, ছিল শুধু সাধারণ মানুষের মতো বেঁচে থাকার সামান্য চাহিদা ।

১১ অপুদের গ্রামে আসা যাত্রাপালা গ্রামের মানুষের মনে কেমন প্রভাব ফেলেছিল ?

উত্তর। গ্রামের সাংস্কৃতিক জীবন: অপুদের গ্রাম নিশ্চিন্দিপুর ছিল কয়েকঘর দরিদ্র ও কিছু বর্ধিষ্ণু পরিবারের বাসস্থান। তাদের জীবনে বিনোদনের অত্যন্ত অভাব ছিল) কাজেই গ্রামে যাত্রাপালা এলে তা প্রায় উৎসবের চেহারা নিত। (তাই সেই গ্রামে যাত্রাপালার অভিনেতা সেনাপতি বিচিত্রকেতুকে সশরীরে দোকানে এসে ধূমপান করতে দেখে ভিড় ভেঙে পড়ে। রাজকুমার দুপুরে তাদের বাড়িতে খেতে চাইলে খুশিতে অপুর গা কেমন করে।

যাত্রার প্রভাব: গ্রামসুদ্ধ লোকের মুখে যাত্রা ছাড়া আর কোনো কথা নেই। পথে, ঘাটে, মাঠে, নৌকাবাহক মাঝির মুখে, গোপালক রাখালের মুখে কেবলই যাত্রাপালায় শোনা গান। গ্রামের মেয়েরা যাত্রার ছেলেদের বাড়িতে ডেকে যার যে গান ভালো লেগেছে, তার মুখে সেই গান ফরমায়েশ করে শুনতে চায় ৷

১২ বুড়া বাঙাল মুসলমান কী খেলা দেখাত ? দুর্গা প্রথমে তা দেখতে পায়নি কেন? পরে কীভাবে দেখল?

উত্তর) প্রদর্শিত খেলা: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে বুড়ো বাঙালি মুসলমান একটা বড়ো রং-চং করা কাচ বসানো টিনের বাক্স নিয়ে খেলা দেখাত। এক পয়সা দিলে বাক্সের গায়ে একটা চোঙের মধ্যে চোখ দিয়ে ভেতরের নানা দৃশ্য দেখা যেত। বুড়ো মুসলমান বাক্স বাজিয়ে সুর করে বলত—“তাজ বিবিকা রোজা দেখো, হাতি বাঘকা লড়াই দেখো।”

→ দুর্গার খেলা না দেখা : দুর্গার কাছে বুড়া মুসলমানের খেলা দেখার মতো পয়সা ছিল না বলে সে তা দেখতে পায়নি।

> দুর্গার খেলা দেখার সুযোগ: দুর্গা খেলা না দেখে চলে যেতে উদ্যত হওয়ায় বুড়ো মুসলমানটি তাকে ডেকে খেলা না দেখার কারণ জিজ্ঞাসা করে। তাতে দুর্গা তার কাছে পয়সা নেই বলায় সে দয়াপরবশ হয়ে পয়সা ছাড়াই দুর্গাকে খেলা দেখতে ডাকে। তখন দুর্গা চোঙার মধ্যে তাকিয়ে সাহেব, মেম, ঘরবাড়ি, যুদ্ধ ইত্যাদি নানা দৃশ্য দেখেছিল।

১৩ “বইখানাতে যাঁহাদের গল্প আছে সে ওইরকম হইতে চায়।” বইটির নাম কী ? কার লেখা? ‘সে’ কে ? বইটিতে কাদের গল্প আছে?

উত্তর । গ্রন্থনাম বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’ উপন্যাস থেকে গৃহীত উদ্ধৃত অংশে যে বইটির কথা বলা হয়েছে, তা হল—‘চরিতমালা’।

রচয়িতা: চরিতমালা গ্রন্থটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখা।

‘সে’-এর পরিচয়: আলোচ্য অংশে ‘সে’ বলতে ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র অপুর কথা বলা হয়েছে।

গ্রন্থের বিবরণ: ‘চরিতমালা’ গ্রন্থে বিদ্যাসাগর দেশবিদেশের জ্ঞানী মানুবদের ছেলেবেলার জীবনসংগ্রাম তুলে ধরেছিলেন। হাটে আলু বেচতে গিয়ে কৃষকপুত্র রস্কো বেড়ার পাশে বসে বীজগণিতের চর্চা করত, কাগজের অভাবে চামড়ার পাতে ভোঁতা আল দিয়ে অঙ্ক কষত, মেষপালক ডুবাল তার মেষদের চরতে দিয়ে একমনে গাছের তলায় বসে ভূচিত্র পাঠ করত। বইটিতে এদের গল্প আছে।

১৪ “রাত্রি প্রায় দশটার সময় স্টেশনে আসিয়া গাড়ি পৌঁছিল।”স্টেশনে পৌঁছে অপুর যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা লেখো।

উত্তর। অপুর অভিজ্ঞতা: “ছোটোদের পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের সর্বশেষ অধ্যায়ে নিশ্চিন্দিপুর ছেড়ে যাওয়ার সময়কার কথা আলোচ্য উক্তিতে তুলে ধরা হয়েছে। অপুর চিরকালের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ট্রেন দেখার অপেক্ষায় অপু অনেকক্ষণ থেকে বসেছিল। অবশেষে রাত দশটায় তাদের গোরুর গাড়ি এসে স্টেশনে পৌঁছতেই সে দৌড়ে প্ল্যাটফর্মে গিয়ে উপস্থিত হল। জানা গেল, সাড়ে আটটার ট্রেন অনেকক্ষণ চলে গেছে। সারারাত আর ট্রেন নেই।

প্ল্যাটফর্মের বিবরণ : প্ল্যাটফর্মে একরাশ তামাকের গাঁট সাজানো ছিল। দুজন রেলকর্মচারী একটা লোহার বাক্সের মতো খুব লম্বা ডান্ডাওয়ালা কলে তামাকের গাঁট চাপিয়ে কিছু করছিল। জ্যোৎস্না পড়ে রেলের পাটি চিক চিক করছিল। রেললাইনের ধারে একটা উঁচু খুঁটির গায়ে দুটো লাল আলো, উলটোদিকে ঠিক একইরকম দুটো লাল আলো।
স্টেশনের ঘরে টেবিলের ওপর চৌপায়া তেলের লণ্ঠন জ্বলছিল। প্রচুর বাঁধানো খাতাপত্র ছিল সেখানে। একটা ছোটো খড়মের বউলের মতো জিনিস টিপে স্টেশনের বাবু খটখট শব্দ করছিল। পরে অপু জেনেছিল ওটাই টেলিগ্রাফের কল।

১৫ “সত্যিই সে ভুলে নাই।”—কোন্ কথা, কেন অপু ভোলেনি তা বুঝিয়ে দাও ।

উত্তর । বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’ গ্রন্থের শেষ অধ্যায়ের শেষ অংশে অপু সম্পর্কে এই উক্তি করা হয়েছে।

অপুর স্মৃতিতে দুর্গা: অপু তার অকালমৃত দিদি দুর্গাকে ভোলেনি। তার বাল্যকালের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল তার দিদি দুর্গা, তাদের গ্রাম নিশ্চিন্দিপুর। সেই গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় অপুর মনে হয়েছিল, দিদির মৃত্যুর পর অনেকদিন কেটে গেলেও এতদিনে সত্যিই তাদের ভাইবোনে ছাড়াছাড়ি হল।

গ্রামের পথেঘাটে, বাঁশবনে, আমতলায়, তাদের ভাঙা বাড়ির কোণে কোণে সে দিদির স্পর্শ পেয়েছে। সে চলে যাচ্ছে, দুর্গা যেন একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে। অপু মনে মনে শপথ করে দিদিকে সে কখনও ভুলবে না। ভবিষ্যতে অপুর জীবন তাকে অনেকদূর নিয়ে গিয়েছিল।
পৃথিবীর নানা দেশ-বিদেশ, প্রকৃতির বিভিন্ন রূপের সঙ্গে পরিচয়ের মুহূর্তে তার মনে পড়ত অনেককাল আগের এক বর্ষার রাতে, জীর্ণ কোঠাবাড়ির অন্ধকার ঘরে, রোগকাতর এক গ্রাম্য মেয়ের কথা। তার দিদি বলেছিল সেরে উঠলে তাকে রেলগাড়ি দেখানোর কথা। এসব কথা অপু কখনও ভোলেনি।

১৬ “মা যে আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে গিয়েছে।”—মা’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? সে কীভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে? 5+8

উত্তর। ‘মা’-এর পরিচয়: ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী’ রচনা থেকে উদ্ধৃত অংশটিতে ‘মা’ বলতে হরিহর ও সর্বজয়ার কন্যা দুর্গাকে বোঝানো হয়েছে। !

→ ‘মা’-এর ফাঁকি: দুর্গা বেশ কিছুদিন ধরেই ম্যালেরিয়া জ্বরে ভুগছিল ৷ বাবা হরিহর অনেকদিন আগে পাঁচ টাকা পাঠিয়েছিলেন। এরপর তাঁর না আসে কোনও খবর, না কোনও টাকা। তাঁকে দু-দুবার চিঠি পাঠানো সত্ত্বেও কোনও উত্তর আসে না। চাল ধার করে, রেকাবি বিক্রি করেও সর্বজয়া ছেলেমেয়ের মুখে ভাত তুলে দিতে পারে না। অসুস্থ মেয়েকে ডাক্তার দেখানো বা যথাযথ পথ্য দেওয়াও সর্বজয়ার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।

এরই মধ্যে অবিরাম বৃষ্টিতে তাদের বাড়িঘর ও ভগ্নপ্রায় ঘরের চাল ভেঙে জল পড়তে থাকে। দুর্গার জ্বর আরও বাড়ে। প্রতিবেশীদের সাহায্যে গঞ্জের শরৎ ডাক্তারকে ডেকে আনা হয়। তিনি দুর্গার জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করেন। ওষুধে দুর্গা খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠলেও শেষরক্ষা হয়নি। শেষপর্যন্ত সকলকে ফাঁকি দিয়ে দুর্গা মৃত্যুর পথে পা বাড়ায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *