আগামী কবিতার প্রশ্ন উত্তর Teacj Sanjib
আগামী কবিতার প্রশ্ন উত্তর Teacj Sanjib
আগামী
সুকান্ত ভট্টাচার্য
আগামী কবিতার প্রশ্ন উত্তর
আগামী কবিতার প্রশ্ন উত্তর: রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর
আগামী কবিতার প্রশ্ন উত্তর: প্রশ্ন : । “তবু ক্ষুদ্র ও শরীরে গোপনে মর্মরধ্বনি বাজে।”—কার লেখা এবং থেকে পংক্তিটি নেওয়া হয়েছে? কার শরীরের কথা বলা হয়েছে? ক্রমপরিণতির মধ্য দিয়ে কি করে সে বৃহৎ সম্ভাবনার দিকে গতিলাভ করে? কঠিন কুঠারের আঘাত পেলেও তার প্রতিশ্রুতি কি? তার সম্ভাবনাময় জীবনের ‘সম্মতি’ সে কার কাছ থেকে পেয়েছিল?
• উত্তর : কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আগামী’ কবিতা থেকে পংক্তিটি নেওয়া হয়েছে।
→ একটি অঙ্কুরিত বীজের শরীরের কথা এখানে বলা হয়েছে।
→ সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আগামী’ কবিতায় বীজ থেকে সদ্য উদ্গত একটি অঙ্কুরের আত্মকথনের মাধ্যমে ক্রমপরিণতিতে তার ‘বৃহতের দলে’ মিশে যাবার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। অঙ্কুরিত বীজ মৃত নয়, জড় পদার্থ নয়, অন্ধকারের খনিজ পদার্থও নয়, সে একটি জীবন্ত প্রাণ। সে মাটির বুকে সস্নেহে লালিত; আকাশের আন্তরিক আহ্বানে সে তার ভীরু সন্দিগ্ধ চোখ মেলে দিয়েছে দুটি কচি পাতার বিস্তারের মাধ্যমে।
আগামী ভবিষ্যতের স্বপ্নে সে বিভোর। অঙ্কুরিত বীজ বনস্পতির সম্ভাবনা নিয়ে অন্ধকার ভূমিগর্ভ ভেদ করে জীবনের প্রথম সংগ্রামে জয়ী হয়ে পাখা মেলেছিল আলোকের সন্ধানে; বৃহদরণ্যের সামিল হওয়ার বিশাল চেতনা রয়েছে তার শিকড়ে। ক্রমে ক্রমে সে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাতা মেলে ‘উদ্দাম হাওয়ার তালে তালে’ দোল খেয়ে সকলের সম্মুখে একদিন সুবিস্তৃত শাখা মেলে দেবে। প্রস্ফুটিত করবে অপরূপ সব পুষ্প।
তার দৃঢ়প্রাণ সংহত শিকড়গুলি তাকে মাটির সঙ্গে অটুট বন্ধনে বেঁধে রাখবে। আগ্রাসী ঝড় প্রত্যাহত হবে তার দৃঢ়প্রাণ সংহত শিকড়ে ও শাখার প্রতিরোধে। তার আহ্বানে অন্য অঙ্কুরিত বীজ-বন্ধুরা জেগে উঠবে এবং এক নব অরণ্য সৃজন করবে। বৃহৎ বৃক্ষের সমাজে যদিও আজ সে নগণ্য, ক্ষুদ্র, তুচ্ছ, তবু ধীরে ধীরে এসব স্তর অতিক্রম করে আগামী বসন্তে অনুকূল পরিবেশে নবাঙ্কুর ‘বৃহতের দলে’ সে মিশে যাবে।
আগামী বসন্তের অনুকূল পরিবেশে ক্ষুদ্র চারাগাছ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হয়ে উঠবে বনস্পতি। সৃষ্টি করবে নব অরণ্য। নব অরণ্যের গান গেয়ে পরবর্তী প্রজন্মকে সে উৎসাহিত করবে। সবাই তাকে তখন সম্বর্ধনা জানাবে। তারপর শত্রুমিত্র সকলকে সুশীতল ছায়ায় সে আশ্রয় দান করবে। যদি কেউ তার বুকে কঠিন কুঠারাঘাত করে, তবে আঘাতের বদলে প্রত্যাঘাত নয়, শত্রুতার বদলে শত্রুতা নয়, ক্ষমাসুন্দর ব্যবহারে সে সকলকে দেবে সাদর আতিথ্য।
‘হানো যদি কঠিন কুঠারে, তবুও তোমায় আমি হাতছানি দেব বারে বারে।’ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য সু-রসাল ফল সে দেবে; সৌন্দর্য পিপাসা চরিতার্থ করবার জন্য সে দৃষ্টিনন্দন সুবাসিত ফুল দেবে; চিত্তবিনোদনের জন্য পাখির সুমধুর কলতান দেবে,—‘ফল দেব, ফুল দেব, দেব আমি পাখিরও কূজন’। একই মাটির রসে পুষ্ট সমস্বার্থভোগী গাছটি আপনার জনদের মাঝে সব রকমে সহযোগী হয়ে উঠবে।
আজ যে সবেমাত্র অঙ্কুরিত বীজ, একদিন সে বৃহদরণ্যের সামিল হবে। সে মাটি বিদীর্ণ করে আলোকের সন্ধান পেয়েছে; তাই তার শিকড়ে জেগেছে ‘অরণ্যের বিশাল চেতনা’। যখন সে বিকশিত হবে, তখন সকলেই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তাকে সম্বর্ধনা জানাবে। বৃষ্টির ঝর্ণাধারায় ও মৃত্তিকার সঞ্জীবনী সুধারসের কাছ থেকেই তার সম্ভাবনাময় জীবনের ‘সম্মতি’ সে পেয়ে এসেছে।
প্রশ্ন : । ‘বিদীর্ণ করেছি মাটি, দেখেছি আলোর আনাগোনা।/শিকড়ে আমার তাই অরণ্যের বিশাল চেতনা।’—কার লেখা এবং কোন্ কবিতার অন্তর্গত? উদ্ধৃত অংশটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : ১ম অংশ : প্রশ্নে উদ্ধৃত পঙ্ক্তি দুটি সাম্যবাদী কিশোর-কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা। পঙ্ক্তি দুটি ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় কবিতা ‘আগামী’-র অন্তর্গত।
→ ২য় অংশ : উদ্ধৃত অংশটির বক্তা ‘আগামী’ কবিতার সদ্য অঙ্কুরিত একটি চারাগাছ। গাছ এখানে একটি রূপক। নির্বাক গাছের ওপর সবাক মানুষের চেতন সত্তা আরোপিত হয়েছে। সদ্য অঙ্কুরিত বীজের মধ্যেও একটু একটু করে শক্তির সম্ভাবনা প্রকাশিত হতে থাকে,—এ বিষয়টি বোঝানোর প্রসঙ্গে তরুশিশুর এই আত্মকথন।
অন্ধকার ভূমিগর্ভ ভেদ করে প্রোথিত বীজের অঙ্কুরোদ্গম হয়। সেই মুকুলিত বীজের ওপর পড়ে সূর্যের আলো। ক্রমে সে হয়ে ওঠে তরুশিশু। দেহের প্রতি অণুতে অণুতে সে অনুভব করে আলোর নিঃশব্দ আনাগোনা। মৃত্তিকা থেকে সঞ্জীবনী সুধারস আহরণ করে এবং আলো-বাতাস থেকে শক্তির উপাদান সংগ্রহ করে সে লালিত ও পুষ্ট হয়ে ক্রমে ক্রমে বিরাট এক বনস্পতিতে পরিণত হয়ে অরণ্যের অধিকার অর্জন করবে। শিকড়ই গাছের মধ্যে ওই চেতনার সঞ্চার করে।
উদ্ধৃত পঙ্ক্তি দুটিতে একটি সদ্যোজাত অঙ্কুরের রূপকে কবি একটি সদ্যোজাত মানবশিশুর বিকাশের কথা প্রকারান্তরে শুনিয়েছেন। মাতৃগর্ভ থেকে আলোর জগতে একটি মানবশিশুর জন্ম যেন একটি বীজ থেকে একটি গাছের উত্তরণ। পূর্ণ বয়স্কদের তুলনায় সদ্যোজাত মানবশিশু নগণ্য হলেও তার মধ্যে থাকে বাঁচার স্পন্দন, বড় হবার আকাঙ্ক্ষা।
গাছ এবং মানুষ উভয়েই প্রাণের অধিকারী। প্রাণের স্বভাবই হল নিজেকে প্রকাশ করা, বিকাশ করা এবং বিস্তার করাঁ। আজ যে প্রাণ কণিকাটি ক্ষুদ্র, সেই ক্ষুদ্রপ্রাণ একদিন রসপুষ্ট হয়ে বিরাট, বিপুল হয়ে উঠবে। তার মধ্যে বিশাল প্রাণের প্রকাশ এবং স্পন্দন অনুভব করা যাবে।
আজকের যে গাছটি শিশু, আগামী দিনে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়ে সে বিরাট একটি বনস্পতিতে পরিণতি লাভ করবেই। তেমনি মানুষ জন্ম মুহূর্তে ক্ষুদ্র থাকলেও সমাজের স্নেহ ভালোবাসার বলে পুষ্ট হয়ে একদিন সে পূর্ণ বয়স্ক মানুষে পরিণতি লাভ করে এবং গাছের মতই একদিন বিরাট মানুষদের একজন হতে পারে।
আগামী কবিতার প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন: । ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই’—উক্তিটি কার? সে ক্ষুদ্র হলেও তুচ্ছ নয় কেন? মানবসমাজকে সে কী দেবে? তার আত্মকথনের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আগামী’ কবিতায় একটি সদ্য অঙ্কুরিত চারাগাছ এই কথাগুলি বলেছে।
→ ছোট্ট চারাগাছটি আজ ক্ষুদ্র হলেও, তুচ্ছ নয়; কারণ তার মধ্যে বিরাট মহীরুহের সম্ভাবনা প্রবল। আজ সে বনস্পতিদের দলে অপাংক্তেয়, কিন্তু আগামী দিনে সে পত্রপুষ্পে বিকশিত হয়ে
সকলের দ্বারা সম্বর্ধিত ও সম্মানিত হবে। তার প্রাণ আছে, সে স্বপ্ন দেখতে পারে; এই তাকে সার্থকতার পথে আগামী দিনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
→ গাছটি যখন বিরাট বনস্পতিতে পরিণত হবে, তখন সে শুধু নিজেই বড় হবে না, অন্য বন্ধু গাছেদেরও বড় হতে সাহায্য করবে। সকলকে দেবে সাহায্য ও সহযোগিতার আশ্বাস। মানুষের প্রতিও থাকবে তার উদার আতিথ্য ও গভীর আন্তরিকতার আশ্বাস, –
‘ফল দেব, ফুল দেব, দেব আমি পাখিরও কূজন একই মাটিতে পুষ্ট তোমাদের আপনার জন ॥’
→ ‘আগামী’ কবিতাটি একটি রূপকধর্মী কবিতা। একটি অঙ্কুরিত বীজের রূপকে কবি শোনাতে
চেয়েছেন একটি মানবশিশুর আত্মজাগরণের এবং তার অনন্ত সম্ভাবনার কথা।
প্রশ্ন : । ‘জানি আমি ভাবী বনস্পতি’,—বক্তার এই দৃঢ় প্রত্যয়ের কারণ কী? বক্তা বনস্পতি
হয়ে উঠে কী কী দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে? আলোচ্য কবিতাটিতে কবির সাম্যবাদী চেতনার [ বা সমাজ সচেতনতার] যে পরিচয় পাওয়া যায় তা আলোচনা কর।
• উত্তর : কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আগামী’ কবিতায় বীজ থেকে সদ্য উদ্গত একটি অঙ্কুর বা চারাগাছ জানিয়ে দিচ্ছে, সে হল ভাবী এক বনস্পতি; অর্থাৎ আজ সে ছোট; আজ তার শাখাপ্রশাখা পত্রপুষ্প কিছুই নেই। কিন্তু সে একদিন বিরাট মহীরুহে পরিণত হবে। কারণ প্রকৃতির দান তাকে এই সম্ভাবনার পথে এগিয়ে দিচ্ছে। আকাশ তাকে বৃষ্টি দান করছে, মাটি দিচ্ছে তার শিকড়ে শিকড়ে প্রাণ রসের জোগান। এই ভাবে একটি বৃক্ষশিশুর জীবন ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছে। প্রকৃতির সাদর আতিথ্য ও স্বীকৃতি পেয়েই গাছের আত্মপ্রত্যয় সুদৃঢ় হচ্ছে।
গাছের মত মানবশিশুর মধ্যেও লুকিয়ে রয়েছে অনন্ত সম্ভাবনা। সেও প্রকৃতির আলো, বাতাস এবং সমাজভূমি থেকে রস সংগ্রহ ক’রে তার প্রাণকে পুষ্ট করে চলেছে এবং আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে জীবনের ক্রমবিকাশের পথে এগিয়ে চলেছে।
→ একটি শিশুগাছ যেদিন বিরাট বনস্পতিতে পরিণত হবে, সেদিন তার ওপর বর্তাবে অনেক গুরুদায়িত্ব, অনেক কর্তব্য। একটি গাছ হল একটি জীবন্ত প্রাণ। প্রাণের ধর্ম হল নিজেকে প্রকাশ করা, বিস্তার করা এবং প্রতিকূলতার মধ্যে লড়াই করে টিকে থাকা। তাই অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সে মাটির সঙ্গে শিকড়ের বন্ধন দৃঢ় করে এবং শাখা-প্রশাখার ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় ঝড়ের আঘাতকে প্রতিহত করে।
কিন্তু শুধু নিজের বেঁচে থাকাই তার কাছে বড় নয়, অপরকে বাঁচতে সাহায্য করাও তার সর্বপ্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই আজকের চারাগাছ আগামী দিনে তার বন্ধু গাছদের বিকশিত
হতে সাহায্য করবে, তাদের জাগাবে, তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পরবর্তী গাছগুলিও বড় হবে এবং অরণ্যের মধ্যে বিরাট এক প্রাণচেতনার সঞ্চার করবে; তারা গাইবে নবজীবনের গান।
মানুষের ক্ষেত্রেও এই একই কথা। আজ যে শিশু, আগামী দিনে সে হবে জাতির পিতা; তার দায়িত্বও তাই অনেক। গাছের জবানীতে সেই গুরুদায়িত্বটিকে প্রকাশ করে সুকান্ত বলেছেন,
‘হানো যদি কঠিন কুঠারে,
তবুও তোমায় আমি হাতছানি দেব বারে বারে;
—অর্থাৎ আঘাতের বদলে প্রত্যাঘাত নয়, শত্রুতার বদলে শত্রুতা নয়; আঘাত খেয়েও পরম বন্ধুর মত আতিথ্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে সে বলে—
‘ফল দেব, ফুল দেব, দেব আমি পাখিরও কূজন একই মাটিতে পুষ্ট তোমাদের আপনার জন।।’
মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব। তাই গাছের মত সহযোগিতার এই দায়িত্ব তারও সর্বপ্রধান দায়িত্ব, পবিত্র কর্তব্য। কারণ পরস্পরে হানাহানি করে নয়, অপরকে সহানুভূতি ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েই পারবে। মানুষ টিকে থাকবে।
→ সুকান্ত সমাজ-সচেতন কবি। কবিতাটির মধ্যে যেমন আছে গাছের রূপকে মানুষের আত্মবিকাশের কথা, আশা ও সম্ভাবনার কথা, তেমনি কবির সাম্যবাদী চিন্তার স্বরূপটিও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে। একটি নতুন সমাজ গঠনের স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন; যে সমাজে জাতিধর্ম, নারীপুরুষ নির্বিশেষে সকলে ভোগ করবে সমান অধিকার। ‘মর্মরধ্বনি’, ‘আলোর আনাগোনা’, ‘বিশাল চেতনা’, ‘নব অরণ্যের গান’ প্রভৃতি বাক্যাংশের মাধ্যমে কবি দেখাতে চেয়েছেন এক সংঘবদ্ধ ঐক্যশক্তি যা একদিন সেই আকাঙ্ক্ষিত নবজীবনের সূচনা করবে।
তারই ইশারা কবি এখানে দিয়েছেন। সেই সমাজে কোন বিদ্বেষ, হানাহানি, আঘাতের বদলে প্রত্যাঘাত থাকবে না; বরং পরস্পরের সহযোগিতা ও সহানুভূতির ছত্রছায়ায় সকলে একত্রিত হয়ে বসবাস করবে—ফল দেব, ফুল দেব, দেব আমি পাখিরও কূজন’—অর্থাৎ প্রতিশ্রুতি রইল, ক্ষুধার খাদ্য এবং হৃদয় মনের আনন্দের উপকরণ সকলেই ভাগ করে নেওয়া হবে।
আগামী কবিতার প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন । ক্ষুদ্র আমি, তুচ্ছ নই—জানি আমি ভাবী বনস্পতি, বৃষ্টির, মাটির রসে পাই আমি তারি সম্মতি।
—কার লেখা, কোন্ কবিতার অংশ? বক্তা ক্ষুদ্র হলেও তুচ্ছ নয় কেন? ‘ভাবী বনস্পতির’ প্রতিশ্রুতি কী? বক্তা তার সম্ভাবনাময় জীবনের সম্মতি কাদের কাছ থেকে পেয়েছে, লেখ।
• উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আগামী’ কবিতার এটি একটি স্মরণীয় উক্তি।
→ এখানে বক্তা সদ্য অঙ্কুরিত একটি চারাগাছ। সে বলছে, আজ সে ক্ষুদ্র একটি চারাগাছ হলেও, সে উপেক্ষণীয় বা তুচ্ছ নয়। কারণ তার মধ্যে ঘুমিয়ে রয়েছে বিরাট এক মহীরুহের সম্ভাবনা। সে জড় নয়, সে একটি জীবন্ত প্রাণ; এবং প্রাণের ধর্মই হল নিজেকে প্রকাশ করা ও বিস্তার করা। সে স্বপ্ন দেখতে জানে; এই স্বপ্নই তাকে একদিন জীবনে সার্থকতার পথে পৌঁছে দেবে।
সে অন্ধকার ভূমি-গর্ভ ভেদ করে যখনই উঠেছে তখনই সে পেয়েছে আলোর সন্ধান। আলোই তার মধ্যে এনেছে বিশাল অরণ্যের প্রাণস্পন্দন। এই প্রাণ একদিন পত্রে-পুষ্পে বিকশিত হয়ে উঠবে। আজকের চারাগাছ আগামী দিনে তার শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী শক্তি নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। তার আহ্বান অপর গাছকেও জাগাতে সাহায্য করবে। এই ভাবে আজ যে ক্ষুদ্র, সে একদিন বিরাট হয়ে উঠবে। তাই সে তুচ্ছ নয়।
এই চারাগাছ কিন্তু এখানে রূপকার্থে ব্যবহৃত। চারাগাছের মধ্যে দিয়ে কবি একটি ক্ষুদ্র মানবশিশুর অনন্ত সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের কথাই বলতে চেয়েছেন। মানবশিশুও আশা করা যায়, সমাজের আনুকূল্যে বলিষ্ঠ আত্মপ্রত্যয় এবং বড় হবার স্বপ্ন নিয়ে, একদিন পূর্ণ মনুষ্যত্ব লাভ করবে।
মানুষ বুদ্ধি বিবেচনাশক্তিতে শ্রেষ্ঠ জীব। তাই প্রকৃতি ও পরিবেশ যে পবিত্র নিয়ে তাকে পালন করেছে, মানুষকেও বড় হয়ে সেই দায়িত্ব পালন করতে এগিয়ে আসতে হবে। মানবসভ্যতার উন্নতি হানাহানিতে নয়, প্রীতি ও সহযোগিতার মাধ্যমেই তা সম্ভব।
→ আজকের অঙ্কুরিত চারাগাছটি যে আগামী দিনের সম্ভাবনাময় বিরাট মহীরুহে পরিণতি লাভ করবে, তার মূলে আছে গাছটির বুক ভরা বড় হওয়ার স্বপ্ন এবং বলিষ্ঠ আত্মপ্রত্যয়। এছাড়া প্রকৃতির আপন দান ও সহযোগিতা তাকে এগিয়ে দিচ্ছে এই সম্ভাবনার পথে। আকাশ তাকে বৃষ্টি দান করছে, মাটি দিচ্ছে তার শিকড়ে শিকড়ে রসের জোগান।
বৃষ্টির ঝর্ণাধারায় ও মৃত্তিকার সঞ্জীবনী সুধারসের কাছ থেকেই তার সম্ভাবনাময় জীবনের ‘সম্মতি’ সে পেয়েছে। এই ভাবে একটি বৃক্ষশিশুর জীবন ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছে। প্রকৃতির সাদর আতিথ্য ও স্বীকৃতি পেয়েই গাছের আত্মবিশ্বাস গভীর ও সুদৃঢ় হয়েছে।
বৃক্ষশিশুর মত মানবশিশুও প্রকৃতির আলো, বাতাস এবং সামাজিক মানুষের আন্তরিক ভালোবাসা ও সহযোগিতা পেয়ে তার প্রাণকে পুষ্ট করে এবং আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে জীবনের ক্রমবিকাশের পথে এগিয়ে যায়।
আগামী কবিতার প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন : । ‘অঙ্কুরিত বীজ’ ভাবে ‘বৃহতের দলে’ মিশে যাবে ‘ কবিতাটির অন্তর্নিহিত ভাবসত্যটি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দাও।
• উত্তর
→ : সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ‘আগামী’ কবিতায় একটি অঙ্কুরিত বীজের রূপকে একটি মানবশিশুর আত্মজাগরণ, স্বপ্ন, আশা এবং তার বিশাল সম্ভাবনা ও ভাবী কর্তব্যের কথা শুনিয়েছেন। অঙ্কুরিত বীজের মতো একটি মানবশিশুও অপরিণত সত্তা নিয়ে জন্মায়, কিন্তু তার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকে বিশালত্বের সম্ভাবনা।
মানব-শিশুর সমাজসত্তার জাগরণ তখন ঘটে না। তার সুপ্ত সম্ভাবনা ক্রমে ক্রমে পাখা মেলে এবং বিকশিত হয়। সমাজের আনুকূল্যে, বলিষ্ঠ আত্মপ্রত্যয় এবং বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সে পরে পূর্ণ মনুষ্যত্বে পরিণতি লাভ করে।
—সে হয়ে ওঠে সুঠাম সুন্দর শক্তিশালী বুদ্ধিদীপ্ত এক সামাজিক মানুষ। জীবনযুদ্ধে সে হয়ে ওঠে প্রতিরোধী সৈনিক। সমাজ তাকে স্বীকৃতি দেয়। তার উন্নত ভাবকল্পনা দিয়ে সে সমাজকে সমৃদ্ধ করে। শত আঘাত সত্ত্বেও চারাগাছ যেমন বনস্পতি হয়ে সকলকে ফুল, ফল ও স্নেহের ছায়া প্রদান করে, একটি মানবশিশুও তেমনি বড় হয়ে সকলের প্রতি ভালোবাসা ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে মহৎ মানুষ হয়ে ওঠে।
আগামী দিনের স্বপ্ন ও আশা মানুষকে তার সমস্ত সংকীর্ণ সীমা ছাড়িয়ে জীবনের বিরাট ক্ষেত্রে উত্তীর্ণ করে দেয়। সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করে মানুষ বিভ্রান্ত প্রতিবেশীকেও নবচেতনায় উদ্বুদ্ধ করে তোলে। ‘আগামী’ কবিতায় এই ভাবসত্যটি সুস্পষ্ট ও সুন্দরভাবে ব্যক্ত হয়েছে।
আগামী কবিতার প্রশ্ন উত্তরসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন: । ‘জড় নই, মৃত নই, নই অন্ধকারের খনিজ’—কে কেন জড়, মৃত বা অন্ধকারের খনিজ নয়?
উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আগামী’ কবিতায় সদ্য-অঙ্কুরিত চারাগাছটি একথা বলেছে। নিজেকে প্রকাশ করা,
→ চারাগাছটি জড় নয়, কারণ তার মধ্যে প্রাণ রয়েছে। প্রাণের ধর্মই হল বিস্তার করা। চারাগাছটিও একটি বীজ থেকে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং আগামী দিনে সে বিরাট এক বনস্পতি হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তাই সে জড় পদার্থ নয়, সে সজীব।
→ সে মৃত নয়; কারণ মৃতের মধ্যে প্রাণ থাকে না; মৃতবস্তু অন্য কোন প্রাণেরও সৃষ্টি করতে পারে না; তাছাড়া মৃতদেহে কিছুক্ষণ পরেই পচন শুরু হয়। কিন্তু চারাগাছ নিজেকে দিনে দিনে পুষ্ট করে বিরাট বনস্পতি হবে এবং সে পত্রে পুষ্পে সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। তাই তাকে মৃত বলা যায় না।
→ সে লোহা বা কয়লার মত কোন খনিজ পদার্থও নয়; কারণ সে বীজের অন্ধকার গর্ভকোষ থেকে নির্গত হলেও আপন প্রাণশক্তিতে সে বৃদ্ধি পায়, রূপান্তরিত হয়। খনিজ পদার্থের তেমন
কোন নিজস্ব শক্তি নেই, তাকে খনি থেকে উত্তোলন না করলে, সে ওপরে ওঠে না। কেউ রূপ না দিলে সে কুরূপ। তাই চারাগাছ কোনো খনিজ পদার্থ নয়। → এখানে চারাগাছের রূপকের অন্তরালে কবি মানুষের জন্ম, বৃদ্ধি এবং পূর্ণ মনুষ্যত্ব লাভের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
প্রশ্ন : । ‘শিকড়ে আমার তাই অরণ্যের বিশাল চেতনা।’ কেন সেই চেতনাকে বিশাল বলা হয়েছে?
উত্তর : কথাটি বলেছে সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আগামী’ কবিতার সদ্য অঙ্কুরিত একটি চারাগাছ। গাছ এখানে রূপক এবং এই নির্বাক গাছের ওপর সবাক মানুষের চেতন-সত্তা আরোপিত হয়েছে। একটি শিশুমানব যেমন সমাজের স্নেহ ভালোবাসার বলে পুষ্ট হয়ে একদিন পূর্ণবয়স্ক মানুষে পরিণতি লাভ করে, তেমনি একটি চারাগাছও মাটির রসে পুষ্ট হয়ে বিরাট বনস্পতিতে পরিণত হয়,—সে অরণ্যের অধিকার অর্জন করে।
তখন সে পথিককে ছায়া দেয়, ফল-ফুল পাখির কূজনে ভরে যায় তার শাখা-প্রশাখা। শিকড়ই গাছের মধ্যে চেতনার সঞ্চার করে। এই ভাবে গাছের মত মানুষও একদিন বৃহত্তর সমাজের একজন হয়ে যায়।
→ চারাগাছের মত শিশুমানবও নিজের মধ্যে সেই আগামী দিনের চেতনাকে অনুভব করছে। তাই ওই চেতনাকে কবি বিশাল বলেছেন।
প্রশ্ন : । ‘আগামী’ বসন্তে জেনো মিশে যাবো বৃহতের দলে’—কেন বসন্তের উপর জোর দেওয়া হয়েছে? ‘বৃহতের দলে’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর : গণচেতনার কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আগামী’ কবিতায় অঙ্কুরিত চারাগাছটি বলেছে, সে আগামী বসন্তে বেশ বড়ো হয়ে বৃহতের দলে মিশে যাবে। বসন্ত ঋতুতেই শুষ্ক জীর্ণ পাতা ঝরে গিয়ে সর্বাধিক পরিমাণে নব কিশলয় উদ্গত হয়। সঞ্চার হয়ে নতুন জীবনের চারাগাছটি গভীর প্রত্যয়ের সঙ্গে তাই বলছে, আগামী বসন্তে সে পত্রে পুষ্পে নিশ্চিত ভাবে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এছাড়া বসন্তের আরও একটু তাৎপর্য আছে। কবি হয়তো আশা করেছেন, ভবিষ্যতে সমগ্র জাতির জীবনে এমন এক বসন্ত দিন আসছে, যেদিন দেশের যৌবন শক্তি পত্রপুষ্পে জেগে উঠবে; বসন্ত এখানে যৌবনধর্মের প্রতীক। এইজন্য বসন্তের ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যৌবন সমৃদ্ধ প্রাণের স্বভাব হল সমস্ত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে জীবনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
চারাগাছটিও তার দু’চোখে স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বাস করছে যে, সে আজ ক্ষুদ্র হলেও, আগামী কোন এক বসন্তের দিনে সে সমস্ত শক্তি ও সৌন্দর্য নিয়ে সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে এবং বিরাট বনস্পতিদের সঙ্গে মিশে যাবে। চারাগাছের রূপকের মাধ্যমে কবি দেখাতে চেয়েছেন, যে মানবশিশু আজ ক্ষুদ্র অসহায়, পরে কিন্তু সে একদিন পরিপূর্ণ প্রাণশক্তি নিয়ে পূর্ণ মনুষ্যত্ব লাভ করবে এবং দেশের যারা কর্ণধার, সেও তাদের অন্যতম হয়ে উঠবে।
এই ভাবেই সে বৃহতের দলে মিশে যাবে। —বৃহতের দল বলতে এখানে বনস্পতির দলকে বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন : । “জানি আমি ভাবী বনস্পতি”—বনস্পতি হলে বক্তা কী কী করবে লেখো।
উত্তর : কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আগামী’ কবিতায় উদ্ধৃত পংক্তিটি আছে। একটি অঙ্কুরিত বীজের জবানিতে কিশোর কবি তাঁর ব্যক্তিচেতনা, অনুভূতি, আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও উপলব্ধি অতি সুন্দর ও স্পষ্ট ভাষায় বিবৃত করেছেন। আজ যে ক্ষুদ্র অঙ্কুরিত বীজ, সে তুচ্ছ বা নগণ্য নয়। কারণ, সে ভবিষ্যতে বৃহৎ বনস্পতিতে পরিণত হবে।
বৃষ্টির ধারায় স্নাত হয়ে, মৃত্তিকার প্রাণরসের সঞ্জীবনীসুধা পান করে, সে একদিন বৃহৎ বৃক্ষে পরিণত হবে; সেদিন সে সকলকে তার শীতল ছায়াদানে তৃপ্ত করবে; যদি কেউ তার বুকে কঠিন কুঠারাঘাত করে, তবুও সে তাকে ক্ষমাসুন্দর ব্যবহারে কাছে টেনে নেবে; ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য সু-রসাল ফল দেবে, সৌন্দর্যপিপাসা চরিতার্থ করবার জন্য দৃষ্টিনন্দন সুবাসিত ফুল দেবে; চিত্ত বিনোদনের জন্য সুমধুর পাখির কলতান দেবে। কারণ, ‘একই মাটিতে পুষ্ট’ সকলেই কবির আপনজন; তাই সকলের জন্য কবির সমভাব, সমান সহানুভূতি এবং সমবেদনা।
প্রশ্ন : । ‘একই মাটিতে পুষ্ট তোমাদের আপনার জন।’—কে কাদের বলেছে? ‘একই মাটিতে পুষ্ট’ বলতে বক্তা কী বোঝাতে চাইছে? ‘আপনার জন’ কথাটির তাৎপর্য কী?
• উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আগামী’ কবিতায় অঙ্কুরিত চারাগাছটি মানুষকে এ কথা বলেছে।
→ গাছের দিক থেকে বিচার করলে একই মাটি বলতে পৃথিবীর মাটিকেই বোঝায়। গাছ যেমন মাটি থেকে প্রাণ রস নিয়ে পুষ্ট হয় ও বৃদ্ধি পায়, তেমনি মানুষও মাটির রসে পুষ্ট হয়ে খাদ্য ও জল খেয়ে জীবন ধারণ করে। সেদিক থেকে দেখলে বোঝা যায়, তারা উভয়ে একই মাটিতে পুষ্ট। চারাগাছ এখানে শিশু-মানবের রূপক। তাই সে যাদের উদ্দেশ্যে কথাগুলি বলেছে, তারাও যেমন মানুষ, সেও তাদের মত। এদিক থেকে বিচার করলে এ মাটি সমাজের মাটি। দেশের মাটি। দেশ ও সমাজভূমি সব মানুষকেই স্নেহ, ভালোবাসা, ও সাহায্য দিয়ে লালন করে।
→ একই পৃথিবীর মাটিতে পুষ্ট হয়ে অরণ্যের গাছগুলি পরস্পরের আত্মীয় হয়ে ওঠে। কারণ মাটি তাদের মায়ের মত সকলকে প্রাণরস বিতরণ করে। এমনিভাবে প্রতিটি মানুষ ছোট হোক, বড় হোক, সকলেই তাদের সমাজ বা দেশমাতার স্নেহরসে পুষ্ট। তাই তারা সকলে পরস্পরের আত্মীয়তার কথাই
আপনার জন। মাতৃত্বের সম্পর্কে তারা আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। চারাগাছটি বলেছে। আসলে মানবপ্রেমিক কবির এই মানবসন্তান সদৃশ গাছটির মধ্য দিয়ে তাঁর নিজের আদর্শ ও ইচ্ছার কথাই অভিব্যক্ত হয়েছে।
প্রশ্ন: । ‘আগামী’ কবিতায় অঙ্কুরিত গাছটি ভাবীকালের মানুষের কাছে যে আবেদন জানিয়েছে তা উল্লেখ করে তার তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
• উত্তর : সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আগামী’ কবিতায় অঙ্কুরিত গাছটি ভাবীকালের মানুষদের বলেছে, আজ সে ক্ষুদ্র, কিন্তু একদিন সে এমন ক্ষুদ্র থাকবে না, পত্রপুষ্পে সমৃদ্ধ হয়ে সে বিশাল বনস্পতিতে শীঘ্রই রূপান্তরিত হবে। সেদিন তারা যেন তার ছায়ায় এসে আশ্রয় নেয়। যদি কেউ শত্রুতা করে তার ডালপালা কাটবার জন্য তাকে কুঠারাঘাতও করে, সে কিন্তু পাল্টা কোন প্রত্যাঘাত হানবে না। বরং প্রতিদানে সে তাদের ফুল ফল দেবে এবং পাখির গান দিয়ে তাদের মনোরঞ্জন করবে। কারণ তারা একই মাটিতে পুষ্ট, তাই পরস্পরের আত্মীয়। কোন শত্রুতার সম্পর্ক তাদের মধ্যে থাকা উচিত নয়।
→ এখানে সমাজমনস্ক জনদরদি কবি সুকান্ত গাছের রূপকে একটি মানবশিশুর জন্ম, সমৃদ্ধি এবং মনুষ্যত্ব-সাধনের কথা বলেছেন। এক অর্থে গাছের আত্মকথন কবির নিজেরও আত্মকথন। সুস্থ মানবসমাজ গঠন করতে হলে মানুষকে ভালোবাসাই হল শ্রেষ্ঠ উপায়। সুকান্ত মানুষের এই শ্রেষ্ঠ আদর্শকেই এখানে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। মাটির কাছাকাছি মানুষের কবি হয়ে অখ্যাত অজ্ঞাত মানুষকে সহযোগিতা, ভালোবাসা এবং ঐক্যবদ্ধ শক্তির মাধ্যমে বাঁচবার পথের নিশানা দিয়েছেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। ‘আগামী’ কবিতাটি তাই সঙ্গতভাবেই আগামী দিনের আগমনী।
প্রশ্ন : । ‘সম্বর্ধনা জানাবে সকলে’—কারা কাকে কীভাবে সম্বর্ধনা জানাবে লেখো।
উত্তর : বৃহদরণ্যের পরিণত একদিন নবীন বৃক্ষকে সম্বর্ধনা জানাবে। → শাখা-প্রশাখা-পত্ৰপুষ্পহীন অঙ্কুরিত বীজ ক্রমপরিণতির মধ্য দিয়ে আগামী দিনে সম্ভাবনাময় বিরাট একটি বনস্পতিতে পরিণতি লাভ করবে এবং অরণ্য সমাজে ‘বৃহতের দলে’ সে মিশে যাবে। অজস্র পত্র-পল্লব ও পুষ্প শোভিত বৃক্ষের এই পরিণত রূপকে সম্বর্ধনা জানাবে। → জয়ধ্বনির মাধ্যমে বনস্পতি সমাজ তাকে সম্বর্ধনা জানাবে।
→ ক্রম পরিণতির মধ্য দিয়ে অঙ্কুরিত বীজ নবযৌবন প্রাপ্ত হয়ে বৃহৎ বৃক্ষে একদিন পরিণতি লাভ করবে। এই রূপান্তর বা পরিণতির মধ্যে প্রাণশক্তির সার্থক অভিব্যক্তি ঘটবে। সেই কারণে অন্যসব পরিণত বৃক্ষেরা তাকে সম্বর্ধনা জানাবে।
প্রশ্ন । ‘ক্ষুদ্র আমি—তুচ্ছ নই” –আমি কে? সে ক্ষুদ্র কিন্তু তুচ্ছ নয় কেন? • উত্তর : কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা ‘আগামী’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত পংক্তিতে ওই ‘আমি’ হল সদ্য অঙ্কুরিত একটি চারাগাছ।
সদ্য অঙ্কুরিত ওই চারাগাছটি স্বীকার করেছে যে, সে ক্ষুদ্র; কারণ সে সবেমাত্র অঙ্কুরিত। কিন্তু তার দৃপ্ত ঘোষণা : ক্ষুদ্র সে হতে পারে; তা বলে সে কখনোই তুচ্ছ নয়। কেন? না, তার মধ্যে বিরাট মহীরুহের সম্ভাবনা প্রবল। আজ সে বনস্পতির দলে অপাংক্তেয়, কিন্তু আগামী দিনে সে পত্রপুষ্পে বিকশিত হয়ে সকলের সম্বর্ধিত ও সম্মানিত বনস্পতিতে হবে। তার প্রাণ আছে, সে স্বপ্ন দেখতে পারে; এই স্বপ্নই তাকে আগামী দিনে সার্থকতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেই, সে ক্ষুদ্র হলেও, কখনোই ‘তুচ্ছ’ নয়।
প্রশ্ন । তারপর দৃপ্তশাখা মেলে দেব সবার সম্মুখে’ –কোন্ কবিতায় কার উক্তি? ‘দৃপ্তশাখা’ -কথাটির অর্থ বিশ্লেষণ কর।
● উত্তর: কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘আগামী’ কবিতায় উদ্ধৃত ওই কথাগুলি বলেছে সদ্য অঙ্কুরিত একটি চারাগাছ।
সদ্য অঙ্কুরিত চারাগাছটি হল একটি জীবন্ত প্রাণ। সে মাটির বুকে সস্নেহে লালিত। আগামী ভবিষ্যতের স্বপ্নে সে বিভোর। তার বিশ্বাস, বৃহদারণ্যে সামিল হওয়ার মতন বিশাল চেতনা রয়েছে তার শিকড়ে শিকড়ে। ক্রমশই সে তার ছোট ছোট পাতা মেলে ‘উদ্দাম হওয়ার তালে তালে’ দোল খেয়ে সকলের সামনে একদিন ‘দৃপ্তশাখা’ মেলে দেবে। আসলে ‘সদ্যোজাত’ অঙ্কুরের রূপকে কবি সদ্যোজাত একটি মানবশিশুর ভবিষ্যৎ বিকাশের কথা শুনিয়েছেন। ‘দৃপ্তশাখা’ মেলে দেওয়ার অর্থ সকলের কাছে সাহায্য এবং সহযোগিতার আশ্বাসের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
আগামী কবিতার প্রশ্ন উত্তর