সিরাজদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি বাংলা টেকজ সঞ্জীব

 সিরাজদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি বাংলা টেকজ সঞ্জীব

সিরাজদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর:

সিরাজদ্দৌলা

শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত

সিরাজদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি

 

 সিরাজদ্দৌলা নাটকের বিষয়বস্তু, নামকরণ এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর আলোচনা করা হয়েছে।

সিরাজদ্দৌলা-নাটকের-প্রশ্ন-উত্তর-দশম-শ্রেণি-বাংলা-টেকজ-সঞ্জীব

সিরাজদ্দৌলা শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত

সিরাজদ্দৌলা নাটকের উৎস

 

পাঠ্য সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশটি নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের সিরাজদ্দৌলা’ (১৯৩৮) নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্য থেকে গৃহীত। পূর্ণাঙ্গ নাটকটি তিনটি অঙ্ক এবং প্রতিটি অঙ্কের বেশ কয়েকটি দৃশ্যে বিভাজিত হয়ে রচিত।

সিরাজদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর:

সিরাজদ্দৌলা নাটকের নাটকের পটভূমি

 

বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলা এবং ইংরেজইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির বিবাদ, সংঘাতের, পাশাপাশি ইংরেজদের সাম্রাজ্য বিস্তার বৃত্তান্ত বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। নবাবি আমলে ইংরেজরা যেমন বাংলাদেশে বসবাস এবং ব্যাবসাবাণিজ্য করত তেমনি ফরাসিরাও বসবাস এবং ব্যাবসাবাণিজ্য করত। কিন্তু ইংরেজরা ফরাসি বণিকদের সর্বদা মারমুখি ভাব দেখাত। ইংরেজদের এই মনােভাবে সুজাউদ্দিন খান থেকে আলিবর্দি খাঁ পর্যন্ত সকলেই চিন্তিত ও বিরক্ত হয়ে উঠে ছিলেন, কিন্তু তারা ইংরেজদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। তবে আলিবর্দি খাঁর মৃত্যুর কিছুকাল আগে ইংরেজরা কলকাতায় দুর্গ সংস্কার এবং সেটার দুর্ভেদীকরণের প্রক্রিয়া শুরু করে।

 

 আলিবর্দির মৃত্যুর পর বাংলার মসনদে বসেন তার দৌহিত্র সিরাজদ্দৌলা। সিরাজের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আলিবর্দির অপর দৌহিত্র শওকৎ জঙ্গ। আর ঘসেটি বেগম ছিলেন এঁদের দুজনের মাসি। ঘসেটি বেগম শওকতের পক্ষ নিলে চূড়ান্ত পারিবারিক বিবাদ শুরু হয়। চতুর শত্রু ইংরেজরা এর অপেক্ষায় ছিল এবং তারা মসনদঘটিত এই বিবাদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিরাজ মসনদে বসলে ইংরেজদের সঙ্গে সিরাজের সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং বিদ্বেষ শুরু হয়। এমনকি সিরাজ মসনদে বসার পর প্রচলিত রীতি অনুযায়ী ইংরেজরা নবাবকে কোনাে নজরানা পাঠায়নি এবং কাশিমবাজারে তাদের এলাকায় ইংরেজরা সিরাজকে প্রবেশ করতে দেয়নি। সুতরাং ইংরেজদের এই আচরণ ও ঔদ্ধত্য সিরাজের ভালাে লাগেনি। এই পরিস্থিতিতে নবাব ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। ইংরেজদের কাশিমবাজার কুঠির এবং কলকাতা দুর্গ নবাব দখল করে নেন। এরপর ক্লাইভ এবং ওয়াটসন এসে কলকাতা দুর্গ পুনরাধিকার করেন, হুগলি লুণ্ঠন করেন। স্বাভাবিক কারণেই ভয় পেয়ে এবং অন্যান্য কয়েকজন রাজপুরুষদের চাপে সিরাজ আলিনগরের সন্ধি করে আবার শান্তি ফিরিয়ে আনলেন।

 

আবার আলিনগরের সন্ধির কিছুকাল পর বিভিন্ন কারণে সিরাজ ও ইংরেজদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। এই সময় ক্লাইভ চন্দননগর দখল করে ফরাসিদের বাংলা থেকে বিতাড়িত করেন। নবাব ইংরেজদের বিরুদ্ধে অস্ত্র না ধরলেও ফরাসিদের আশ্রয় দিলেন। এদিকে ইংরেজ শক্তি উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পেতে লাগল এবং সিরাজ পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললেন। ইংরেজদের চাপে নবাব শেষ পর্যন্ত ফরাসিদের বিতাড়িত করলেন। এই সময় ইংরেজরা নবাবকে মসনদ থেকে সরিয়ে তাদের বন্ধুভাবাপন্ন কাউকে সিংহাসনে বসাতে; অন্যদিকে একদল রাজপুরুষও এই রকম চিন্তা করলেন। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা গােপনে বৈঠক করে চুক্তি সেরে ফেললেন। সিরাজকে গদিচ্যুত করা হবে এবং সেই স্থানে অর্থাৎ, বাংলার নবাব হবেন মিরজাফর। এই পরিস্থিতিতে ইংরেজরা নবাব সিরাজদ্দৌলার বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করল। পলাশির প্রান্তরে ইংরেজ এবং নবাব দুই পক্ষ মুখােমুখি হয়। মিরজাফর, রায়দুর্লভ প্রমুখের বিশ্বাসঘাতকতায় পলাশির যুদ্ধে (১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন) নবাব সিরাজদ্দৌলার পরাজয় ঘটে। এরপর সিরাজ ইংরেজদের হাতে ধরা পড়েন এবং তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসের এই রক্তাক্ত অধ্যায়ের প্রেক্ষাপটে নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকটি রচিত।

 

সিরাজউদ্দৌলা নাটকের বিষয়বস্তু

 

বিষয়-সংক্ষেপ

 

দরবার কক্ষের পরিবেশ, যেখানে নবাব সিরাজসহ দেশি-বিদেশি সভাসদবর্গ উপস্থিত]

 

দরবারে সিরাজ ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসকে স্মরণ করান তিনি। যখন কলকাতা জয়ের জন্য যাত্রা করেছিলেন, জয় করে আলিনগর নাম রেখেছিলেন এবং সেই সময় আলিনগরে নবাবের সঙ্গে কোম্পানির শর্ত ওয়াটসের জানা। কেননা, সে নবাবের সঙ্গী ছিল। কিন্তু ইংরেজদের স্পর্ধা, অপরাধ, অসভ্যতায় নবাব সিরাজ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং ওয়াটসকে শাসাতে থাকেন। ওয়াটস অপরাধের কারণ স্পষ্ট বুঝতে না পারলে সিরাজ মুন্সিজিকে ওয়াটসকে লেখা কর্নেল ক্লাইভের পত্র পড়তে বলেন। পত্রের বিষয় থেকে জানা যায়। ক্লাইভ বাংলাকে আক্রমণ করে আগুন জ্বালিয়ে দেবেন। ওয়াটস ও ক্লাইভের মধ্যে পত্র পেশের কারণ হিসেবে ওয়াটস জানান যে সে তার কাজ করেছে মাত্র –I can only say that I have done: my duty’। প্রচণ্ড ক্ষুব্ব, অসন্তুষ্ট হয়ে সিরাজ ওয়াটসকে দরবার থেকে দূর করে দেন।

 

সিরাজ ফরাসি প্রতিনিধি মসিয়ে লা-কে জানান এবং ক্ষমা চেয়ে নেন যে, ফরাসিদের ইংরেজদের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করার ক্ষমতাতার এখন নেই। কেননা, কলকাতা ও পূর্ণিয়ার যুদ্ধে নবাবের বহু লােকক্ষয় ও অর্থব্যয় হয়েছে ; এ ছাড়া নবাবের মন্ত্রীমণ্ডলও যুদ্ধের পক্ষপাতী নন। মসিয়ে লা সিরাজকে বিপদ সম্পর্কে সচেতন করে দিয়ে বন্ধুত্বের পরিচয় দেন, এবং কুর্নিশ করে স্থান ত্যাগ করেন।

 

এরপর রাজদরবারে সিরাজ, রাজবল্লভ, মিরজাফর, জগৎশেঠ, মােহনলাল, মিরমদন, গােলাম হােসেন প্রমুখের কথােপকথন, বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। রাজবল্লভ, মিরজাফর এবং জগৎশেঠ এক হয়ে সিরাজকে বিভিন্নভাবে অপমান করতে শুরু করেন, সিরাজের পূর্বকৃত বিভিন্ন কাজকর্মের প্রসঙ্গ তুলে হেয় প্রতিপন্ন করেন। সিরাজ সমস্ত অপরাধ স্বীকার করেন এবং বলেন যে, ওসব ভুলে বর্তমানে নিজেদের কথা, শান্তির কথা, দেশকে ইংরেজদের হাত থেকে রক্ষা করার কথা ভাবতে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মিরজাফর, জগৎশেঠ, রাজবল্লভ না শুনলে, মিরমদন ও মােহনলাল তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন এবং নবাব যে দুর্বল বা একা নন তাও বুঝিয়ে দেন। তখন মিরজাফর প্রমুখরা সভা ত্যাগ করে চলে যেতে চান।

 

রাজদরবারে এই চরম পরিবেশে সিরাজ অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে সভাসদদের জানান যে এখন বিচারের সময় নয়, অন্যায় তিনি নিজে যেমন করেছেন তেমনি সকলেই করেছেন। বাংলার দুর্দিনে বিবাদ ভুলে। একত্রিত থাকাই বাঞ্ছনীয়। বাংলার মানমর্যাদা, স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রত্যেকের শক্তি, বুদ্ধি ও সহযােগিতার সাহায্য চান। পাশাপাশি এও জানান বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার পর তার (সিরাজের) বিচার করবেন। এরপর উপস্থিত সকলে বিবাদ, ক্রোধ হয়ে ভুলে একত্রিত হয়ে সিরাজকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। সিরাজ নিজেকে ধন্য মনে করেন এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য পলাশি যাত্রার আদেশ দেন। সকলে প্রস্থান করেন।

 

এরপর সিরাজের মাসি ঘসেটি বেগম উপস্থিত হন। সিরাজ ও ঘসেটি বেগমের কথােপকথন শুরু হয়। ঘসেটি সিরাজকে বিভিন্নভাবে অপমান ও অভিশাপ দিতে থাকেন। সিরাজের প্রিয়তমা স্ত্রী লুৎফা ছুটে এসে ঘসেটি বেগমকে অনুরােধ করেন সিরাজকে ওসব কুকথা না বলতে। কিন্তু লুৎফাকেও ঘসেটি বেগম বাক্যবাণে আক্রমণ করেন। ঘসেটি অভিশাপ দেন পলাশির প্রান্তরেই নবাবের ধ্বংসের কথা। সিরাজ ঘসেটি বেগমের কথায় মর্মাহত এবং স্তম্ভিত হন। তখন লুফা নবাবকে বিশ্রাম নেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু নবাব সিরাজ জানান যে, পলাশির যুদ্ধের পর তাঁর বিশ্রামের অবসর হবে। পলাশির প্রান্তরে যুদ্ধের কথা শুনে নবাব পত্নী লুৎফা বিস্মিত ও আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। নবাব লুৎফাকে জানান যে, হয়তাে এটা শেষ যুদ্ধ—“যদি জয়ী হই তাহলে হয়তাে আর যুদ্ধ হবে না—আর যদি পরাজিত হই, তাহলে তাে নয়ই।”লুফা হতবাক হয়ে পড়েন। কেবল বিস্মিত হয়ে পলাশি’উচ্চারণ করেন। সিরাজ জানান পলাশি অতীতে হয়তাে লাল পলাশ ফুলে রক্তিম হয়ে থাকত, তাই আজও পলাশির বুকে সেই রক্তের তৃয়া রয়েছে; তিনি জানেন না কার রক্তনবাবের না ইংরেজের, সেই রাক্ষসী পলাশি পান করতে চাইছে।

 

এরপর নবাবের প্রস্থান, মঞ্চ অন্ধকার হয়ে যায় এবং বাংলার এই দুর্দিনে, নবাবের এই বিপদের জন্য করুণ সুরে বাদ্য বাজতে লাগল, যবনিকা পড়ল।

 

সিরাজউদ্দৌলা নাটকের নামকরণের সার্থকতা

 

নামকরণ

 

নামকরণ হলাে রচনার মর্ম আলাে করা শব্দ বা শব্দগুচ্ছ। নামকরণের মধ্য দিয়ে পাঠক রচনার বিষয়বস্তুর আভাস পেয়ে থাকে। এককথায় নামকরণ হলাে রচনার চাবিকাঠি। বাংলাসাহিত্যে নামকরণর করার কতগুলি বিশেষ রীতি গ্রহণ করা হয়। আমাদের পাঠ্য ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকটি শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা বিখ্যাত ঐতিহাসিক নাটক ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্য। এই নাটকের নামকরণ করা হয়েছে বিখ্যাত ঐতিহাসিক চরিত্র ‘সিরাজদ্দৌলার নাম অনুসারে। তাই নাটকের নামকরণটি হলে চরিত্রকেন্দ্রিক নামকরণ। নামকরণটি কতটা সার্থক তা আলােচ্য অংশে বিচার্য।

 

নাটকের সূচনা থেকে নবাব সিরাজদ্দৌলার প্রত্যক্ষ উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। নাটকে উপস্থিত সকল চরিত্রের প্রতি তাঁর সজাগ দৃষ্টি দেখা যায়। প্রত্যেক চরিত্রের কার্যকলাপতার জানা। তার বিরুদ্ধে গােপন ষড়যন্ত্রের কারণ সে জানে। নাটকের নায়কের মতাে তাঁর মধ্যে ট্র্যাজিক দ্বন্দ্ব দেখা যায়। সে জানে বাংলার পরিণতির জন্য সে নিজে কতটা দায়ী। নিজের অক্ষমতায় সচেতন থেকেও তিনি। চেয়েছিলেন বাংলার হৃত গৌরবকে ফিরিয়ে আনতে।

 

এক যােগ্য নবাবের মতাে তিনি দেশকে ভালােবাসেন। এই স্বদেশপ্রেম বা দেশপ্রেম তার চরিত্রকে উজ্জ্বলতা দান করেছে। ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতি কঠোর হওয়ার পরিবর্তে আবেগপ্রবণভাবে অনুরােধ করেছেন ইংরেজদের হাত থেকে বাংলাকে রক্ষা করবার জন্য। আর এই কোমল হৃদয়তা ও স্নেহপ্রবণতার সুযােগে 

 

ষড়যন্ত্রকারীরা আরও বেশি সক্রিয় হয়েছে। যার অনিবার্য পরিণতি হয়েছে নবাবের পরাজয়।

 

সমগ্র নাট্যাংশে বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের মতাে সিরাজের প্রেমিক সত্তা, দেশপ্রেমিক সত্তা, স্নেহপ্রবণ মানসিকতা, ক্ষমাপ্রবণতা উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তাই নায়কের নামানুসারে নাট্যাংশের নামকরণ সার্থক হয়েছে, এ কথা বলতে দ্বিধা নেই।

 

সিরাজউদ্দৌলা নাটকের বড় প্রশ্ন উত্তর

 

সিরাজদ্দৌলার প্ৰশ্ন

 

প্রশ্ন ।। – লক্ষ্য করা যায়? “ওখানে কী দেখচ মূখ, বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখাে!”— বক্তা কে? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি বস্তার কী মনােভাব লক্ষ্য করা যায়?

 

উত্তর : প্রখ্যাত নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত আলােচ্য অংশটির বক্তা সিরাজদ্দৌলার মাসি ঘসেটি বেগম।

 

নবাব সিরাজদ্দৌলা এবং তাঁর মাসি ঘসেটি বেগমের মধ্যে ছিল সিংহাসন প্রাপ্তিকে ঘিরে পারিবারিক দ্বন্দ্ব। নবাব আলিবর্দি খাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা ঘসেটি বেগম চেয়েছিলেন পুত্র শওকৎ জঙ্গকে বাংলার সিংহাসনে বসাতে। শিশু সিরাজ তাকে হত্যা করে বাংলার সিংহাসনে বসলে ঘসেটি বেগমের সঙ্গে চিরশত্রুতার সূত্রপাত ঘটে। কূটকৌশলী ঘসেটি বেগম নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে তার সিপাহসালাদের খেপিয়ে তােলেন। নবাব ঘসেটি বেগমের কূট চক্রান্ত বুঝতে পারেন। তখন তাকে মতিঝিল প্রাসাদে নজরবন্দি করে রাখেন। ইংরেজ শক্তির অভ্যুত্থানেনবাবের সিংহাসন যখন বিপন্ন দশায় পড়েছে, সেই সময় ঘসেটি বেগম উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন নবাবের দুর্দশা দেখে। ঘসেটি বেগম তার মনের তীব্র জ্বালা থেকে নবাবের অসহায় অবস্থা তথা দুর্দশা প্রত্যক্ষ করে উক্ত মন্তব্যটি করেছিলেন।

 

প্রশ্ন ) “এইবার হয়তাে শেষ যুদ্ধ!”—কোন্ যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে? বক্তা এই যুদ্ধকে ‘শেষ যুদ্ধ’ বলেছেন  কেন?

 

উত্তর : প্রখ্যাত যাত্রাপালাকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’নাট্যাংশ থেকে আলােচ্য অংশটি গৃহীত।উদ্ধৃত অংশে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার সঙ্গে মুরশিদাবাদের পলাশির প্রান্তরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। ইতিহাসে এই যুদ্ধ পলাশির যুদ্ধ (১৭৫৭ খ্রি.)নামে খ্যাত।

 

‘ অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে বাংলার নবাব আলিবর্দি খাঁর মৃত্যুর পর বাংলার সিংহাসনে আসীন হন তাঁরই দৌহিত্র সিরাজদ্দৌলা। সিংহাসন আরােহণের অব্যবহিত কাল থেকেই তাকে স্বদেশ রক্ষার জন্য নানা যুদ্ধ-সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয়। ফলে দেশের অভ্যন্তরে নিজের মন্ত্রীমণ্ডলীর নানা ষড়যন্ত্রের মুখােমুখি হতে হয় তাকে। ঘরে-বাইরে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁকে রুখে দাঁড়াতে হয়। ইংরেজরা গােপনে দেশের আমীর-ওমরাহ, সভাসদদের নবাবের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তােলে। একদণ্ডও নবাব শান্তিতে অবস্থান করতে পারেননি। দেশের মধ্যে সর্বদা অস্থিরতা তাঁকে যন্ত্রণাবিদ্ধ করে তােলে। শত্রু ইংরেজদের বিরুদ্ধে নবাব যুদ্ধ ঘােষণা করেন এবং সেনাপ্রধানদের পলাশির আমবাগানে সৈন্য সমাবেশের নির্দেশ দেন। নবাবের সিপাহসালার জগৎশেঠ, রাজবল্লভ, মিরজাফর, উমিচাদ ইংরেজের সঙ্গে জঘন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে নবাবকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করে। নবাবের কাছে সভাসদদের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার কথা ফাঁস হয়ে গেলে তিনি পলাশির যুদ্ধে জয়লাভের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হয়ে ওঠেন। তাই তিনি হতাশা জড়ানাে প্রশ্নোধৃত উক্তিটি করেছেন মহিষী লুৎফা বেগমের উদ্দেশ্যে।

 

প্রশ্নঃ।। দরবার ত্যাগ…… । কে কার উদ্দেশ্যে উক্তিটি করেছেন? বক্তা কেন দরবার ত্যাগ করতে চান?

 

উওর: প্রখ্যাত নাট্যকার ও বিশিষ্ট যাত্রাপালাকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশ থেকে আলােচ্য উদ্ধৃতিটি গৃহীত হয়েছে। বক্তা নবাব সিরাজদ্দৌলার প্রধান সেনাপতি মিরজাফর নবাবের উদ্দেশ্য তার এই উক্তি।

 

নবাব সিরাজদ্দৌলার বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী হিসেবে তাঁর প্রধান সেনাপতি মিরজাফরের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠলে সভাকক্ষে মিরজাফরসহ ‘সিপাহসালার’ সকলকে ডাকা হয় দরবারে। আসন্ন যুদ্ধের প্রাক্কালে নবাবের ওপর চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে অনুগত সেনাপতি রাজা রাজবল্লভ, জগৎশেঠ (শেঠজি), রায় দুর্লভকে নিয়ে দরবার ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। নবাব সিরাজ ব্রিটিশ প্রতিনিধি ওয়াটসের গােপন ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার জন্য তাকে মুরশিদাবাদ থেকে বিতাড়িত করে দেন। ওয়াটসের ষড়যন্ত্রে মূলচক্রী ছিলেন মিরজাফর, রাজা রাজবল্লভ, জগৎশেঠ ও রায় দুর্লভ। এঁরাই নবাবকে যারপরনাই নানাভাবে বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলেন। নবাবের বিশ্বস্ত ও অনুগত সেনাপতিদ্বয় মােহনলাল, গােলাম হােসেন, মিরমদন নিম্নপদস্থ কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও কুচক্রী মিরজাফরদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন। মিরজাফর এতে ক্রোধান্বিত হয়ে নবাবের ওপর চাপ দিয়ে বলেন যে, কর্মক্ষম, পরম বিচক্ষণ মন্ত্রী আর সেনাপতিদের ওপর ভরসা না করে সাধারণ ও অপেক্ষাকৃত নিম্নপদস্থদের ওপর নবাব যদি ভরসা করেন, তাহলে তাঁরা দরবার ত্যাগ করতে বাধ্য হবেন। আর তাই মিরজাফরউক্ত উক্তিটি করেছেন। 

সিরাজদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি বাংলা টেকজ সঞ্জীব

সিরাজদৌল্লা নাটকের প্রশ্ন উত্তর বাংলা

 

প্রশ্ন ) সিরাজদ্দৌলা নাটকের লুৎফা চরিত্রটি আলােচনা করাে।

 

উত্তর : নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশের একটি উল্লেখযােগ্য নারী চরিত্র হলাে লুফা। লুফা তথাৎ, তার প্রকৃত নাম লুৎফউন্নিসা। তিনি বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলার প্রিয়তমা পত্নী। আমাদের পাঠ্য ‘সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশে তাকে দেখা যায় একেবারে শেষ পর্যায়ে যখন নবাবের মাসি ঘসেটি বেগমের সঙ্গে নবাবের কথােপকথন চলছিল। এই পরিস্থিতিতে ঘসেটি লুঙ্কাকেও নানা কটু কথা বলেন কিন্তু তার কোনাে প্রতিবাদ করেননি। এর মধ্য দিয়ে তাঁর চরিত্রের প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি নবাব যখন পলাশির প্রান্তরে সঙ্গে যুদ্ধ নিয়ে চিন্তিত বা ঘসেটি বেগম যখন নবাবকে ম অপমান বা অভিশাপ দিতে থাকেন তখন লুঙ্কা। পাশে থেকে নবাবকে সাহস জুগিয়েছেন বা সান্ত্বনা দিয়ে ২ থ রাখার চেষ্টা করেছেন। এই ধরনের আচরণের মধ্য দিয়ে লুঙ্কার পত্নীপ্রেম এবং দেশপ্রেমের পরিচয় ফুটে উঠেছে। আসলে নাট্যকারের হাতে লুত্যা চরিত্রটি নবাবের আদর্শ জীবনসঙ্গিনীতে পরিণত হয়েছে।

 

প্রশ্নঃ।। বাংলা শুধু …….. এই বাংলা। এই কথাটি বলা হয়েছে কাদের উদ্দেশ্যে? এখানে বক্তার কি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে?

 

উত্তর : প্রখ্যাত যাত্রাপালাকার ও নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত আলােচ্য উক্তিটির বক্তা বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলা। তিনি তাঁর সিপাহসালার মিরজাফর ও তার অনুগামী সেনাপতিদের উদ্দেশ্য করে একথা বালেছেন।

 

আলোচ্য উধৃতিটিতে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে ক্ষতবিক্ষত এক রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবকে দেখা যায়। নবাব সিরাজ সাম্রাজ্য পরিচালনায় ঘরে-বাইরে নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বাংলাকে ভালােবাসেন, বাংলার

 

, মানুষকে ভালােবাসেন। আর তাই এই সমস্যাকে ব্যক্তিগত ভাবে। নিয়ে দেশের ও জাতির বিপদ বলেই মনে করেছেন। একদিকে বহিঃশত্রু ইংরেজের ক্ষমতা দখলের দুর্মর চেষ্টা, আবার অন্যদিকে পারিবারিক হিংসা ও ষড়যন্ত্রে নবাব পর্যন্ত। এরূপ পরিস্থিতিতে বাংলার মান, মর্যাদা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সমত ন্যায়-অন্যায় বিচার ও ভেদাভেদ ভুলে সকলকে একসঙ্গে নিয়ে চলার সংকল্প করেন। নবাব জানেন যে, লােভ বা মােহের বটে মানুষ অন্যায় কাজে প্রবৃত্ত হয়। কিন্তু স্বদেশের সংকট মুহূর্তে মান-অভিমান ভুলে ঝাপিয়ে পড়াই প্রকৃত দেশপ্রেমের কাজ হবে। তাই মিরজাফর, রাজবল্লভ, জগৎ শেঠ কিংবা রায়দুর্লভদে বাংলাকে হিন্দু কিংবা মুসলমানের বাংলা হিসেবে না দেখে প্রিয় মাতৃভূমিকে রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি নিজেকে মুসলমান হিসেবে না দেখে, সকলের অংশীদার হিসেবে নিজেকে নবাব প্রতিপন্ন করতে চান। আসলে প্রিয় স্বদেশভূমিকে ধর্ম, বিভাজনের উর্ধ্বে তুলে সম্প্রীতির বার্তাই যেন ছড়িয়ে দিতে চান।

 

 

প্রশ্নঃ।। মুন্সিজি……দিন। পত্রটি কার কাকে লেখা? কি লেখা ছিল পত্রে?

 

উত্তর : রবীন্দ্র -পরবর্তী যুগের প্রখ্যাত নাট্যকার ও যাত্রাপালাকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশ থেকে নেওয়া আলােচ্য উদ্ধৃতিটিতে যে পত্রের কথা বলা হয়েছে সেটি ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির নৌ-সেনাপতি ওয়াটসন লিখেছিলেন। নবাবের দরবারে নিয়ােজিত প্রতিনিধি ওয়াটসকে।

 

আলিনগরের সন্ধির শর্ত রক্ষার জন্য নবাব সিরাজের দরবারে নিয়ােজিত ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসের সঙ্গে নৌ-সেনাপতি ওয়াটসনের মধ্যে চক্রান্তপূর্ণ দুটি চিঠির আদানপ্রদান গােপনে হয়েছিল-সেই দুটি চিঠিই নবাবের হাতে পড়ে। চিঠির শেষাংশে নবাবের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করার স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল। চিঠির সারমর্ম রাজদরবারের মুনশি পড়ে শােনান। চিঠিতে লেখা ছিল যে, ক্লাইভের পাঠানাে সৈন্য অতি শীঘ্রই কলকাতায় পৌছাবে। নৌ-সেনাপতি ওয়াটসনও শীঘ্রই মাদ্রাজে যুদ্ধজাহাজ পাঠাবেন এবং কলকাতায় আরও সৈন্য ও রণতরী পাঠানাের কথা জানাবেন। তার উদ্যোগে বাংলায় জ্বলে উঠবে আগুন। চিঠির মূল উদ্দেশ্যই হলাে সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়ে বাংলা দখল করা। |

সিরাজদ্দৌলা শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত দশম শ্রেণী

প্রশ্ন ) “বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন ।’-কাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলা হয়েছে? কোন্ দুর্দিনের জন্য তার এই আবেদন? 

 

উত্তর : পেশাদারি থিয়েটারের যুগে বিখ্যাত নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশ থেকে আলােচ্য উদ্ধৃতিটি নেওয়াহয়েছে। বাংলার শেষ স্বাধীননবাবসিরাজদ্দৌলা সিপাহসালার মিরজাফর ও তার অনুগামীদের উদ্দেশ্যে উক্ত কথাটি বলেছেন।

 

নবাব সিরাজদ্দৌলা বাংলার সিংহাসনে বসার পর মসনদ প্রাপ্তিকে কেন্দ্র করে ঘরে-বাইরে তাকে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়তে হয়। আত্মীয়পরিজন, রাজকর্মচারীরা শত্রু ইংরেজদের সঙ্গে গােপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তাই নবাব এসব ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে মনে করেছিলেন দেশের চরম দুর্দিনে মাথা ঠান্ডা রেখে ধৈর্য সহকারে মিরজাফর ও তাঁর অনুগামী জগৎ শেঠ, রাজা রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ প্রমুখদের সঙ্গে সৌহার্দ্য স্থাপন করার বিনীত আবেদন জানিয়েছেন। নবাব উপলব্ধি করেছেন মসনদ নিয়ে নিজেদের বিবাদের চেয়ে আশু প্রয়ােজন সম্মিলিতভাবে শত্রু ইংরেজদের দমন করা। ওয়াটসকে লেখা অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের চিঠিতে সামরিক অভ্যুত্থান ও কলকাতায় দুর্গ স্থাপনের কথা নবাব জানতে পারেন। প্রশ্নোধৃতিটিতে বাংলার এই দুর্দিনে শত্রুতা ভুলে একযােগে লড়াইয়ে পাশে থাকার জন্য সিপাহসালার মিরজাফর ও তাঁর অনুগামীদের কাছে নবাব আবেদন জানিয়েছেন।

 

সিরাজউদ্দৌলা নাটকের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর

 

প্রশ্ন ) সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশ অবলম্বনে সিরাজদ্দৌলার চরিত্র বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে।

 

উত্তর : বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলা ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত চরিত্র। আলােচ্য ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশটি শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ঐতিহাসিক নাটক ‘সিরাজদ্দৌলা থেকে নেওয়া হয়েছে। এই অংশে নবাবের এক উজ্জ্বল দেশপ্রেমিক চরিত্র আমরা দেখতে পাই।

 

নাট্যাংশের প্রথমেই দেখা যায় তিনি মিরজাফর ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের দ্বারা ষড়যন্ত্রের শিকার। এই কথা জেনেও কোনাে প্রতিকার করার ক্ষমতা তার নেই। এক্ষেত্রে তার চরিত্রের রাজনৈতিক বিচক্ষণতার অভাব, হঠকারিতা ও নিন্দনীয় ব্যক্তি চরিত্র খানিকটা দায়ী।

 

তবে নাট্যকার এই অংশে সিরাজের অকৃত্রিম দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন। বিদেশি শক্তির হাত থেকে বাংলার হৃত-গৌরবকে ফিরে পাওয়ার জন্য তিনি ষড়যন্ত্রকারীদেরও ক্ষমা করেছেন। এই অংশে সিরাজের দুর্বল, স্নেহপ্রবণ ও আবেগপ্রবণ মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। তাই ষড়যন্ত্রকারী মিরজাফর ও ঘসেটি বেগমের ক্ষেত্রে তিনি কঠোর হতে পারেননি।

 

অতি বিশ্বাসপ্রবণতাই তার জীবনের প্রধান দুর্বলতা। এই  দুর্বলতার প্রকাশ এই নাট্যাংশে আছে। আমি জানি কেমন করে । ওদের কণ্ঠ রােধ করা যায়।………….পারি না শুধু পরের ব্যথায় আমার প্রাণ কেঁদে ওঠে বলে।

সিরাজদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি বাংলা টেকজ সঞ্জীব

সিরাজের এই সব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তাকে ট্র্যাজিক নায়কে পরিণত করেছে। তিনি তার অনিবার্য ধ্বংস এবং নিষ্ঠুর নিয়তির অনিবার্য সংকেত দেখতে পেয়েছিলেন। তাই বলতে পেরেছিলেন‘পলাশি, রাক্ষসী পলাশি!’ এককথায় সিরাজের চিত্তকোমলতা, হতাশা, স্বদেশপ্রেম আমাদের অভিভূত করে।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক

প্রশ্ন ।।  ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশ অবলম্বনে মিরজাফর চরিত্রটি আলােচনা করাে।

 

উওর: নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশে মিরজাফর চরিত্রটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক চরিত্র এবং নায়ক নবাব সিরাজের বিপরীতে খল চরিত্র। মিরজাফরের পুরাে নাম মিরজাফর আলি খান। আলিবর্দি খাঁর সৎ বােন শাহ খাতমের সঙ্গে তার বিবাহ হয়। সিরাজদ্দৌলা সিংহাসনে বসলে তিনি সিরাজের প্রধান সেনাপতি অর্থাৎ, সিপাহসালার পদে নিযুক্ত হন। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিজের স্বার্থসিদ্ধি, ক্ষমতার লােভে তিনি ইংরেজদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হন।

 

রাজদরবারে তাঁর বিভিন্ন কথােপকথনের মধ্য দিয়ে চরিত্রের নাটকে চিত্রিত করেছেন।

 

অসহিষ্ণুতা, উগ্রতা নবাবকে অবমাননার দিকগুলি ফুটে ওঠে। এমনকি মােহনলালকে ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন করে দিয়ে নিজের চরিত্রের আত্মকেন্দ্রিকতার দাম্ভিক দিকটি দেখিয়ে দেন। এ ছাড়া দেশের স্বার্থবিসর্জন দিয়েও গােপনে ইংরেজদের পক্ষ নিয়ে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে দ্বিধা করেননি। এই মানসিকতার মধ্য দিয়ে তার চরিত্রের বিশ্বাসঘাতকতার দিকটি প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে। অতএব নাট্যকার চরিত্রটিকে একটি জীবন্ত ঐতিহাসিক চরিত্র করে নাটকে চিত্রিত করেছেন।

 

সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন

 

প্রশ্ন ।। ‘বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন ।’—বক্তা কে? কাদের উদ্দেশে বক্তার এই উক্তি? বক্তার এ কথা বলার কারণ কী? 

 

উত্তর : আলােচ্য অংশটি নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত। উক্তিটির বক্তা হলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলা।

 

বক্তা সিরাজদ্দৌলা সিপাহসালার মিরজাফর ও তাঁর অনুগামীদের উদ্দেশ্যে এই উক্তি করেছেন।

 

সিরাজদ্দৌলা বাংলার সিংহাসনে বসার পর তার বিরুদ্ধে তাঁর আত্মীয়পরিজন, রাজকর্মচারীরা নিজেদের স্বার্থে ষড়যন্ত্র শুরু করেন এবং ইংরেজদের সঙ্গে মিলিত হন। সিরাজ এই ষড়যন্ত্র বুঝতে পারেন। তাই নবাব সিরাজ বিপদের সময় এবং দেশের চরম দুর্দিনে মাথা ঠান্ডা করে ধৈর্য সহকারে মিরজাফর ও তার অনুগামী-জগৎশেঠ, রাজা রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ প্রমুখদের সঙ্গে সৌহার্দ্য স্থাপন করার বিনীত আবেদন জানিয়েছেন। বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সিরাজদ্দৌলার এই বিনয়ী মনােভাব তাঁকে দেশপ্রেমিকও করে তুলেছে।

সিরাজদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণি বাংলা টেকজ সঞ্জীব

প্রশ্ন ।। “আজ ভয় হচ্ছে শেষটায় না বাধ্য হয়ে তােমাকে বন্দিনীর মতােই কারাগারে স্থান দিতে হয়।”—কে, কাকে এ কথা বলেছেন? বক্তা কে এ কথা বলেছেন?

 

উত্তর : আলােচ্যঅংশটি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবসিরাজদ্দৌলা তার মাসি ঘসেটি বেগমকে বলেছেন।

 

সিরাজদ্দৌলা বাংলার নবাবের সিংহাসনে বসে দেশকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সিরাজকে বাংলার নবাব হিসেবে তার বেশ কিছু আত্মীয়পরিজন মেনে নিতে চাননি এবং সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে শুরু করেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন সিরাজের মাসি ঘসেটি বেগম। ঘসেটির নিজস্ব এলাকা, প্রাসাদ মতিঝিল থেকে এনে নবাব মুরশিদাবাদের রাজপ্রাসাদে মায়ের মতােই রেখেছিলেন। কিন্তু এর পূর্বে ঘসেটির পুত্র শওকৎ জঙ্গকে নবাব হত্যা করেন— একদিকে নিজ সন্তান হারানাের যন্ত্রণা, অন্যদিকে মতিঝিলের অধিকার চলে যাওয়ায়

 

 ঘসেটি বেগম বিদ্রোহিনী হয়ে ওঠেন এবং নবাবের ক্ষতি কামনা করেন। এই প্রসঙ্গে নবাব ধৈর্য হারিয়ে আলােচ্য উক্তি করেছেন।

সিরাজদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *