মাধ্যমিক ইতিহাস উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত বিংশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব প্রশ্ন উত্তর

 মাধ্যমিক ইতিহাস উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত বিংশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব প্রশ্ন উত্তর

 

এখানে উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত বিংশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব দশম শ্রেণির ইতিহাসের এই অধ্যায়ের খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।

 

উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত বিংশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব বড় প্রশ্ন উত্তর

 

প্রশ্ন )*ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠন কীভাবে সম্পন্ন হয়েছিল তা আলােচনা করাে। অথবা, স্বাধীনতার পরে ভাষার ভিত্তিতে ভারত কীভাবে পুনর্গঠিত হয়েছিল ? 

মাধ্যমিক-ইতিহাস-উত্তর-ঔপনিবেশিক-ভারত-বিংশ-শতকের-দ্বিতীয়-পর্ব-প্রশ্ন-উত্তর

 

  ভূমিকা : ভারতে দেশীয় রাজ্যের অন্তর্ভুক্তি বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করেছিল এবং এই রাজ্যগুলির সীমানা কী হবে অথবা রাজ্যগুলি ভাষাভিত্তিক বা উপজাতিভিত্তিক রাজ্য হবে কিনা সে সম্পর্কে বিতর্ক দেখা দেয়। স্বাধীন তেলুগু ভাষাভিত্তিক অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠন এই বিতর্কে ইন্ধন জোগায়।

 

> ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠন : ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন ও আইনের ভিত্তিতে ১৬টি প্রদেশ ও ৩টি কেন্দ্রশাসিত রাজ্য গঠনের কথা বলা হয়। এই আইনের ভিত্তিতে (১) হায়দরাবাদ থেকে তেলেঙ্গানাকে বিচ্ছিন্ন করে অন্ধ্রপ্রদেশের সঙ্গে যুক্ত করা হয়; (২) মালাবার ও ত্রিবাঙ্কুর কোচিনকে যুক্ত করে গঠন করা হয়। কেরালা; (৩) কন্নড়ভাষী অঞ্চলগুলিকে মহীশূরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়; (৪) কচ্ছ, সৌরাষ্ট্র ও হায়দরাবাদের মারাঠিভাষী অঞ্চলের সমন্বয়ে গড়ে তােলা হয় বৃহত্তর বােম্বাই প্রদেশ; (৫) বিহারের পূর্ণিয়া জেলার কিছু অংশ ও পুরুলিয়াকে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

 

> প্রতিক্রিয়া : এভাবে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠিত হলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিক্রিয়ার সূচনা হয় এবং ভাষাভিত্তিক। রাজ্য পুনর্গঠনের দাবি আরও জোরালাে হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত। (১) ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে বােম্বাই-প্রদেশকে দুভাগ করে মারাঠি-ভাষী মহারাষ্ট্র ও গুজরাটি-ভাষী গুজরাট রাজ্য তৈরি করা হয় এবং (২) পাঞ্জাব প্রদেশকে ভেঙে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা নামক দুটি রাজ্য তৈরি করা হয় (১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ)।

 

>গুরুত্ব : ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠনের মাধ্যমে অন্ত্রপ্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র প্রভৃতি ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গড়ে ওঠার ফলে বিভিন্ন ভাষাগােষ্ঠী গুরুত্ব লাভ করে।

 

উপসংহার : ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠন ভারতের জাতীয় সংহতির পক্ষে আপাত ক্ষতিকারক হলেও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গিতে তা ক্ষতিকারক ছিল না।

 

উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত প্রশ্ন উত্তর

 

প্রশ্নঃ।।  হায়দরাবাদ রাজ্যটি কীভাবে ভারতভুক্ত হয়েছিল?

 অথবা, হায়দরাবাদের ভারতভুক্তির প্রেক্ষাপট আলােচনা করাে।

 

উত্তর) 

 ভূমিকা : ভারতের স্বাধীনতালাভের প্রাক্কালে ভারতের অন্যতম প্রধান সমস্যা ছিল দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণ সমস্যা। এক্ষেত্রে প্রধানতম সমস্যা ছিল হায়দরাবাদও কাশ্মীর সমস্যা? হায়দরাবাদ : হায়দরাবাদের নিজাম ওসমান আলি খান মুসলমান হলেও সেখানকার জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ছিল হিন্দু। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা ভারতে যােগদানের পক্ষপাতী হলেও নিজাম হায়দরাবাদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে সচেষ্ট হন। পাশাপাশি ভারত বিরােধী কাজকর্মেরও সূচনা করে। তিনি কাশিম রেজভি নামক একজন উগ্র সাম্প্রদায়িক ব্যক্তির প্রভাবে একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাহিনী ‘রাজাকার’ গড়ে তােলেন। এই বাহিনী হায়দরাবাদের অভ্যন্তরে হিন্দু জনসাধারণের ওপর অত্যাচার করত। হায়দরাবাদের ভারতভুক্তি : হায়দরাবাদের শাসক বিভিন্নভাবে নিজের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে ও ভারত সরকারের নির্দেশ অমান্য করতে সচেষ্ট হয়। এই পরিস্থিতিতে ভারতের সামরিক বাহিনীর জেনারেল জয়ন্তনাথ চৌধুরীর নেতৃত্বে ভারতীয় বাহিনী সমগ্র হায়দরাবাদ দখল করে (১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ)। পরের বছর নিজাম একটি চুক্তির মাধ্যমে ভারতচুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করে এবং ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে হায়দরাবাদ ভারতভুক্ত হয়।

 

গুরুত্ব : আনুষ্ঠানিকভাবে হায়দরাবাদের ভারতের অন্তর্ভুক্তি ছিল) খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, কারণ—(১) হায়দরাবাদের বেশিরভাগ মুসলিম)। জনগোষ্ঠী ছাড়াও ভারতের অন্যান্য স্থানের মুসলিমরা নিজাম। বিরােধী আন্দোলনে ভারত সরকারের নীতিকে সমর্থন জানায়। তাই হায়দরাবাদের অন্তর্ভুক্তি ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার সূচনা করে। (২) ভারতীয় সেনাবাহিনী নিজামের সেনাদল ও রাজাকার  বাহিনীকে দমনের পাশাপাশি তেলেঙ্গানার সংগ্রামী কৃষকদের দমন করে। ফলে এই অঞল পূর্বাপেক্ষা নিরাপদ হয়ে ওঠে।

 

মাধ্যমিক ইতিহাস উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত বিংশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব

 

প্রশ্নঃ।। কাশ্মীরের ভারতভুক্তিকরণ সমস্যাকে তুমি কীভাবে বিশ্লেষণ করবে? 

 

 ভূমিকা : ভারতের স্বাধীনতালাভের প্রাক্কালে ৫৬২ টিরও বেশি দেশীয় রাজ্য ছিল এবং এগুলির অধিকাংশই ভারতে যােগ দিলেও কাশ্মীর এক দীর্ঘসূত্ৰী সমস্যার সৃষ্টি করে। 

 

> কাশ্মীর সমস্যার প্রেক্ষাপট : কাশ্মীর সমস্যার প্রেক্ষাপট

 

১) হরি সিং-এর সিদ্ধান্ত : কাশ্মীর রাজ্য ছিল স্বাধীন এবং এই রাজ্যের রাজা হরি সিং ছিলেন হিন্দু, কিন্তু তার অধিকাংশ প্রজাই ছিল মুসলিম। হরি সিং প্রথমদিকে ভারত বা পাকিস্তান কোনাে রাষ্ট্রেই যােগ না দিয়ে তার স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে সচেষ্ট হন।

 

 [২]পাকিস্তানের প্রচেষ্টা : রাজনৈতিক-ভৌগােলিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে কাশ্মীর খুব গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হওয়ায় পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মহম্মদ আলি জিন্না কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করতে সচেষ্ট হন।

 

৩) শেখ আবদুল্লার ভূমিকা : কাশ্মীরের প্রধান রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের সভাপতি শেখ আবদুল্লা কাশ্মীরের ভারতভুক্তির পক্ষে প্রবল জনমত গড়ে তুলেছিলেন।

 

৪) পাক-আক্রমণ : পাকিস্তানের মদতপুষ্ট হানাদারগণ কাশ্মীর রাজ্য আক্রমণ করে উরি, বারমুলা প্রভৃতি স্থান দখল করে (২২ অক্টোবর, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ)।

 

উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত বিংশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব সংক্ষিপ্ত প্ৰশ্ন উত্তর

 

প্রশ্ন।) মহারাষ্ট্র ও গুজরাট কীভাবে গঠিত হয়? অথবা, বােম্বাই প্রদেশ নিয়ে কী সমস্যা দেখা দেয়? 

 

 উত্তর) অবিভক্ত বােম্বাই প্রদেশে মারাঠি ও গুজরাটি ভাষাভাষির মানুষ ছিল। সংযুক্ত মহারাষ্ট্র সমিতি ও মহাগুজরাট নেতা পরিষদ যথাক্রমে মারাঠি ও গুজরাটি ভাষা অধ্যুষিত দুটি স্বতন্ত্র রাজ্যগঠনের দাবিতে প্রবল গণ আন্দোলনের সূচনা করেছিল। এই প্রেক্ষাপটেই ভারতে কেন্দ্র সরকার বােম্বাই প্রদেশকে বিভক্ত করে পৃথক মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্য গঠন করে (মে, ১৯৬০ খ্রি.)। 

 

প্রশ্ন)ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠনের ফল কী ছিল?

 

উত্তর) ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠনের ফলগুলি হল—

 

– প্রথমত, ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠনের ফলে কয়েকটি ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গড়ে ওঠে (যেমন— অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র প্রভৃতি) এবং এর ফলে বিভিন্ন ভাষাগােষ্ঠী গুরুত্ব লাভ করে।

 

দ্বিতীয়ত, ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠন ভারতের জাতীয় সংহতির পক্ষে আপাত ক্ষতিকারক হলেও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গিতে ক্ষতিকারক ছিল না।

 

তৃতীয়ত, ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠিত হলে নদীর গতিপথ নিয়ন্ত্রণ, জলবণ্টন সমস্যা, প্রাকৃতিক সম্পদসহ বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে আন্তঃরাজ্য বিবাদ বা সমস্যা তৈরি হয়েছিল।

 

(প্রশ্নঃ) শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে উদ্বাস্তুদের বন্ধু বলা হয় কেন?

 

 শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার শিল্প ও রাহ মন্ত্রী এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের ঘনিষ্ঠ যােগী। তিনি উদ্বাস্তুদের বন্ধু নামে পরিচিত, কারণ— | 

 

প্রথমত, উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানের জন্য কলকাতায় তি-পাকিস্তান কনফারেন্সে (এপ্রিল, ১৯৪৮ খ্রি.) প্রতিনিধিরূপে যোগ দেন।

 

| দ্বিতীয়ত, ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে নেহরু-লিয়াকৎ-চুক্তি দরিত হলেও শ্যামাপ্রসাদ এই চুক্তিতে উদ্বাস্তুদের স্বার্থযুক্ত দি কবচের জন্য কোনাে কার্যকরী ব্যবস্থা না থাকায় কেন্দ্রীয় সিভা থেকে পদত্যাগ করেন।

 

তৃতীয়ত, তিনি ভারতীয় সংসদে উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানের তিনটি বিকল্প নীতি তুলে ধরেন, যথা—১) ভারত ও কিস্তানের সংযুক্তি; (২) উভয় দেশের সংখ্যালঘু বিনিময়; | পূর্ববঙ্গ থেকে ছিন্নমূল হওয়া নাগরিকদের জন্য পাকিস্তানের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় স্থান সংকুলানের ব্যবস্থা করা। কিন্তু তার এই মতামত জওহরলাল নেহরু গ্রহণ করেননি।

 

(প্রশ্নঃ) সাহিত্য কীভাবে উদ্বাস্তু ইতিহাস রচনার নয়।

 

উ) উদ্বাস্তু ইতিহাস রচনার দুই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল সরকারি নথিপত্র এবং সাহিত্য। প্রথমত, উদ্বাস্তুদের জীবন সংগ্রাম ও বেঁচে থাকার বিভিন্ন ঘটনা দেশভাগ পরবর্তীকালের সাহিত্যে (যেমন— | মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাধীনতার স্বাদ’, দক্ষিণারঞ্জন বসুর ‘ছেড়ে আসা গ্রাম’, শঙ্খ ঘােষের সুপুরি বনের সারি’) প্রতিফলিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, উদ্বাস্তু ইতিহাসের নথিপত্র খুব স্বল্প হওয়ার কারণে উদ্বাস্তু সম্পর্কে জানার জন্য সাহিত্যিক উপাদানই মূল ভরসা। 

 

প্রশ্নঃ।। স্মৃতিকথা কীভাবে উদ্বাস্তু সমস্যার ইতিহাস যায়?

 

  রাজনৈতিক নেতা বা বিশিষ্ট পণ্ডিত বা স্বাধীনতা সংগ্রামী বা উদ্বাস্তুদের স্মৃতিকথা থেকে উদ্বাস্তু সমস্যার কথা জানা যায়। স্মৃতিকথা থেকে (১) দেশভাগের প্রেক্ষাপট, (২) দেশভাগের জন্য মহম্মদ আলি জিন্না-সহ মুসলিম লিগ বা ইংরেজ। জাতীয় কংগ্রেসের দায়িত্ব নিরূপণ, (৩) দেশভাগের প্রতিক্রিয়া, (৪) উদ্বাস্তু সমস্যার উদ্ভব ও তার সমাধান এবং (৫) স্বাধীন ভারত নির্মাণ প্রভৃতির কথা জানা যায়। 

 

প্রশ্নঃ।। দার কমিশন কি?

 

{ উওর) স্বাধীনতা লাভের পর ভারত সরকার ভাষাভিত্তিক প্রদেশ। গঠনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এস. কে. দারের নেতৃত্বে একটি  কমিশন গঠিত হয় যা ‘দার কমিশন’ নামে পরিচিত। এই কমিশনের উল্লেখযােগ্য দিক হল

 

প্রথমত, এই কমিশন তার প্রতিবেদনে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের বিরােধিতা করে এবং মতপ্রকাশ করে যে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠিত হলে ভারতের জাতীয় ঐক্য বিঘ্নিত হবে ও প্রাদেশিক ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতা বৃদ্ধি পাবে।

 

দ্বিতীয়ত, এই কমিশনের রিপাের্টের বিরুদ্ধে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। 

 

প্রশ্ন )‘জে, ভি. পি. কমিটি” কী? অথবা, ‘জে, ভি, পি. কমিটি’ কেন গঠিত হয়েছিল ?

 

উত্তর ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের দাবিকে বিবেচনার জন্য গঠিত হয় ‘জে. ভি. পি. কমিটি’ (ডিসেম্বর, ১৯৪৮ খ্রি.)। এই কমিটির উল্লেখযােগ্য দিক হল—

 

প্রথমত, এই কমিটির সদস্য ছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের বিখ্যাত তিন নেতা, যথা—জওহরলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল ও পটুভি সীতারামাইয়া এবং এই তিনজন সদস্যের নামের ইংরেজি আদ্যক্ষর অনুযায়ী কমিটির নাম ছিল ‘জে. ভি. পি. কমিটি।

 

দ্বিতীয়ত, এই কমিটি তার প্রতিবেদনে (১ এপ্রিল, ১৯৪৯ খ্রি.) ভারতের জাতীয় ঐক্য রক্ষা করতে ও প্রাদেশিক ক্ষেত্রে জটিলতাকে প্রতিহত করতে জানায় যে, ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠন সম্ভব নয়।

 

(প্রশ্নঃ)*রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ কেন গঠিত হয়েছিল? 

 

উত্তর) তেলুগুভাষীদের জন্য পৃথক অন্ত্রপ্রদেশ রাজ্য ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠনের দাবির প্রেক্ষাপটে ফজল আলির নেতৃত্বে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয় (আগস্ট, ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ)। এই কমিশনের কাজ হল

 

প্রথমত, রাজ্য পুনর্গঠন করা হবে কি না বা হলেও এর ভিত্তি কী হবে, কত সংখ্যক রাজ্য পুনর্গঠিত হবে বা রাজ্য পুনর্গঠনের সুফল-কুফল আলােচনা করে সুপারিশ করা ছিল এর প্রধান কাজ।

 

দ্বিতীয়ত, এই কমিশন অনেক আলাপ-আলােচনার পর রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন এবং ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের সুপারিশ করে।

 

প্রশ্নঃ।। পট্টি শ্রীরামালু কে ছিলেন?

 

উত্তর)

 

বিখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী পট্টি শ্রীরামালু (১৯০১-৫২ খ্রি.) প্রথমত, তেলুগু ভাষীদের জন্য পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন (১৯ অক্টোবর, ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ)।

 

 উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত বিংশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব দশম শ্রেণির ইতিহাস

প্রশ্ন।। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে কেন নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি স্বাক্ষর। হয়েছিল? 

– উত্তর) ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি স্বাক্ষরের কারণগুলি হল

 

প্রথমত, ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের মধ্যেই পূর্ববঙ্গে হিন্দু শরণার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান বা ত্রাণ ও পুনর্বাসনে পশ্চিমবঙ্গে সংকটজনক পরিস্থিতি দেখা দেয়।

 

দ্বিতীয়ত, ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের শুরুতেই পাকিস্তান ক্রমশই ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত হতে শুরু করলে পূর্ববঙ্গ থেকে প্রায় প্রত্যেক হিন্দুই পূর্ববঙ্গ ত্যাগ করে ভারতে চলে আসতে চায় এবং ভারত থেকে প্রায় এক লক্ষ মুসলিম পাকিস্তানে চলে যায়।

 

তৃতীয়ত, এভাবে ভারত ও পাকিস্তানে উদ্বাস্তু সমস্যা জটিল আকার ধারণ করলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকৎ আলি খানের মধ্যে আলাপ আলােচনার ভিত্তিতে নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি সম্পাদিত হয়।

 

প্রশ্ন ) দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তি দলিল বলতে কী বােঝায় ?  অথবা, ইনস্ট্রমেন্ট অব অ্যাকসেশন’ (IOA) কী?

 

উত্তর ভারতের দেশীয় রাজ্য দপ্তরের প্রধান সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতভুক্তির জন্য কয়েকটি শর্তযুক্ত যে চুক্তিপত্র তৈরি করেন তা ‘ভারতভুক্তির দলিল’ বা ইনস্ট্রমেন্ট অব অ্যাসেশন’ নামে পরিচিত।

 

প্রথমত, এই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরকারী দেশীয় রাজারা নিজ রাজ্যকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হত এবং ভারত সরকারের কাছ থেকে ভাতা, খেতাব ও অন্যান্য সুযােগসুবিধা লাভ করত। 

 

দ্বিতীয়ত, কয়েকটি দেশীয় রাজ্য ব্যতীত অধিকাংশ দেশীয় রাজ্যের রাজারা এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।

 

প্রশ্ন ), কাকে, কেন ভারতের ‘লৌহ মানব’ বলা হয়? অথবা, কাকে, কেন ‘ভারতের বিসমার্ক’ বলা হয়?

 

উত্তর স্বাধীন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বল্লভভাই প্যাটেলকে ভারতের ‘লৌহ মানব’ বা ‘ভারতের বিসমার্ক’ বলা হয়, কারণ—

 

প্রথমত, তিনি স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব ভি. পি. মেনন ও বড়ােলাট লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সহযােগিতায় কূটনীতি ও যুদ্ধনীতির মাধ্যমে ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতভুক্ত করে ভারতকে রাজনৈতিক সংকটমুক্ত করেন।

 

দ্বিতীয়ত, তার এই পদক্ষেপে ভারতের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বা পাকিস্তানের পক্ষে যােগদানে ইচ্ছুক দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতভুক্ত করে ভারতের ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *