আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণীর বাংলা

 আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণীর বাংলা

আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর

আফ্রিকা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

 আফ্রিকা কবিতা গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন উত্তর এবং উৎস বিষয়বস্তু আলোচনা করা হয়েছে।

 

আফ্রিকা কবিতার উৎস

 

আফ্রিকা’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ষােলাে সংখ্যক কবিতা। কবি শান্তিনিকেতনে ১০ ফ্রেব্রুয়ারি ১৯৩৭ (২৮ মাঘ ১৩৪৩)কবিতাটি রচনা করেন। কবিতাটি ‘প্রবাসী’ পত্রিকার চৈত্র ১৩৪৩ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। পত্রপুট কাব্যগ্রন্থের প্রথম সংস্করণে কবিতাটি ছিল না। দ্বিতীয় সংস্করণে ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয় ১৩৪৫ বঙ্গাব্দে। পাঠ্য হিসেবে সংকলিত হয়েছে‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থ থেকে। 

আফ্রিকা-কবিতার-প্রশ্ন-উত্তর-দশম-শ্রেণীর-বাংলা

 

আফ্রিকা কবিতার সারাংশ

 

সৃষ্টির ছন্দহীন উদ্দাম সেই আদিযুগ। যে যুগের নতুন সৃষ্টিকাজে স্রষ্টা নিজেই সন্তুষ্ট নন। অসন্তোষের কারণে তিনি নিজেই বারবার ভাঙা-গড়ার উদ্দামতায় মাতােয়ারা। তার অধৈর্য ও অস্থিরতায় ঘনঘন ভূকম্পনে ধরিত্রীর বাইরের ও ভিতরের ভূগঠনের পরিবর্তনও বিবর্তন ঘটছে। ভূকম্পনের প্রচণ্ড ধাক্কায় ক্ষুব্ধ সমুদ্র প্রাচ্য ভূভাগ থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে আলাদা মহাদেশ গড়েছে। ফলে দু-ভাগ ভূখণ্ডের মধ্যে অবস্থান করছে সমুদ্র। সেই থেকে আফ্রিকা বাঁধা পড়েছে অন্ধকারাচ্ছন্ন গভীর অরণ্যের বাঁধনে। যে অরণ্যের গভীরে সূর্যরশ্মি প্রবেশ করতে অক্ষম। বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে ওই গােপন অবকাশে আফ্রিকাপরিণত হয়েছে রহস্যময় দুর্গমে।জল-স্থল-আকাশের দুর্বোধ্য সংকেত আর জাদুতে আফ্রিকার আদিম মানুষের চেতনাতীত হতভম্বদশা।তারাবন্য জন্তু-জানােয়ারের মতাে প্রচণ্ডউগ্র ও হিংস্র হয়ে উঠল।তারই প্রকাশ ঘটল অরণ্য ও মানুষের ভয়ংকর তাণ্ডবে।

 

অরণ্যের ছায়ায় ঢাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ আফ্রিকা। কবি তাকে ছায়াবৃতা মানবীরূপে সম্বােধন করেছেন। আফ্রিকা যেন কবির দৃষ্টিতে ঘােমটায় ঢাকা অপরিচিতা কোনাে দানবী। সে উপেক্ষিতা ও অনাদৃতা। স্বার্থান্বেষী ও নির্লজ্জ অত্যাচারী শ্বেতাঙ্গরা এলাে হাতকড়ি নিয়ে আগ্রাসনের কুমতলবে। যাদের নখাগ্র নেকড়ের নখের মতাে তীক্ষ্ণ ও হিংস্র। তারা আগ্নেয়াস্ত্রের দুর্জয় ক্ষমতার গর্বে অন্ধ সূর্যহারা অরণ্যের চেয়েও। তাদের সভ্য বর্বরতা ও নির্লজ্জ অমানুষিকতার নগ্ন প্রকাশ ঘটল তাদের সীমাহীন শােষণ ও নিষ্ঠুর অত্যাচারে। অত্যাচারিত আফ্রিকাবাসীর রক্তে ও অশুতে ধূলা হলাে পঙ্কিল।দস্যুর পায়ের কাটারজুতাের নির্মম পীড়নে ও শােষণে বীভৎস কাদার পিণ্ড তৈরি হলাে। রচিত হলাে নিপীড়িত আফ্রিকাবাসীর চিরচিহ্নিত অসম্মানিত ইতিহাস।

আফ্রিকা কবিতার বিষয়বস্তু

সমুদ্রপারে আফ্রিকার ওইনিষ্ঠুর অত্যাচারের সমকালে দেবমন্দিরে সন্ধ্যায় সকালে চলল ঘণ্টাধ্বনিসহ পুজোপাঠ। দয়াময় দেবতার কাছে অসহায় মানুষের সহায় প্রার্থনা। মায়ের কোলে খেলা করতে লাগল অবােধ শিশু। মুক্তি কামনায় কবির সংগীতে বেজে উঠল স্রষ্টা সুন্দরের আরাধনা।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার মহা সংকটকাল আসন্ন। সভ্যতার সূর্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহাঝটিকায় অস্তগামী। তাতে বিশ্বমানুষের রুদ্ধশ্বাস অবস্থা। যুদ্ধবাজদের মনের অন্ধকার গুহা থেকে বেরিয়ে আসছে। বর্বর পশুত্ব। তারাই ঘােষণা করতেন যুদ্ধের অশুভ বার্তা। সভ্যতার অন্তিম ঘণ্টা বেজে উঠেছে।তাকেই কবি বলেছেন আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাত। বিশ্বস্রষ্টার কাছে কবির কাতর প্রার্থনা— মানবসভ্যতার শােভনতা প্রতিষ্ঠিত হােক। মানহারা মানবীর মান ফিরে আসুক।

আফ্রিকা কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন>  ‘আফ্রিকা’ কবিতা অবলম্বনে আফ্রিকার আদিম অধিবাসীদের স্বভাব বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করাে।

উওর : কোনাে একটা দেশের মানুষের স্বভাববৈশিষ্ট্য গড়ে ওঠে তার মধ্যে বিভিন্ন জাতির রক্তের সংমিশ্রণ, বিভিন্ন সভ্যতার সংযােগ, তার ভূমি সংগঠন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক পরিবেশ ইত্যাদির ওপর। আফ্রিকার আদিম মানুষের স্বভাববৈশিষ্ট্যও এভাবেই গড়ে উঠেছিল।

ভূ-আলােড়ন, সমুদ্রের রুদ্র আগ্রাসন তথা ঈশ্বরের ইচ্ছায় আফ্রিকা প্রাচ্য পৃথিবী থেকে একদা বিযুক্ত হয়েছিল। সেখানে আদিম মানুষের বসবাস সম্ভব হলাে। অন্য পৃথিবীর কোনাে মানুষের পদার্পণ ঘটল না সেখানে। রক্ত-সংমিশ্রণও ঘটেনি। অন্য সভ্যতার সংযােগও ঘটেনি। তার চতুর্দিকে ছিল দুস্তর সমুদ্র। গােটা স্থলভাগ জুড়ে উঠল গহন অরণ্য। অরণ্যে নানা দুর্দান্ত হিংস্র প্রাণীর রাজত্ব চলল। শিক্ষা, সংস্কৃতি, সভ্যতার নামগন্ধ নেই—সে এক অদ্ভুত জান্তব জীবন।

এই পরিবেশে তাদের আদিম মানুষসুলভ স্বভাব গড়ে উঠল— এক, তারা আরণ্য স্বভাব পেল। দুই, দুর্গমের রহস্য ভেদ করতে চাইল। তিন, প্রকৃতির দুর্বোধ্য সংকেত জানার চেষ্টা করতে লাগল। চার, প্রকৃতির রহস্যকে জাদুমন্ত্র মনে করল। পাঁচ, কিন্তু জন্তু ও প্রাকৃতিক ভয় থেকে বাঁচতে বেপরােয়া হয়ে উঠল। ছয়, ভীষণ ভয়ংকরকে তাচ্ছিল্য করে বিদ্রুপ করতে লাগল। সাত, উগ্রতর হয়ে বিভীষিকাকে ভয় দেখাতে উদ্দাম হয়ে উঠল। আট, অজ্ঞানতায়, অস্তুহীনতায় নির্যাতক উপনিবেশকারীদের কাছে অসহায় বােধ করল। নয়, অনেক কান্নায়, অনেক রক্তপাতে হতমান হলাে। দশ, অসহায়তায় দয়াময় দেবতার কাছে প্রার্থনা জানাতে লাগল। এগারাে, হতভাগিনী মায়েরা শিশুসন্তানদের বুকে আঁকড়ে ধরল। 

 কবি রবীন্দ্রনাথ তাঁর কাব্যভাষায় আফ্রিকার মানুষদের স্বভাববৈশিষ্ট্যে যথাযথ তুলির টান দিয়েছেন।

প্রশ্ন ) চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তােমার অপমানিত ‘ ইতিহাসে।কাকেএকথাবলাহয়েছে?কীভাবেতারঅপমানিত ইতিহাসে চিরচিহ্ন মুদ্রিত হলাে?  অথবা, ‘চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তােমার অপমানিত ইতিহাসে। ‘তােমার’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? তার ‘অপমানের ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। 

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় বনস্পতির নিবিড় পাহারায় ঢাকা আফ্রিকা মহাদেশের কথা বলেছেন।

 

উদ্ভ্রান্ত আদিম যুগে প্রাকৃতিক কারণে প্রাচী ধরিত্রীর বুক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অনেক দূরে সরে যায় আফ্রিকা। সভ্যতাগর্বী দেশগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন আফ্রিকা প্রকৃতির অপরিমেয় দুর্বার রহস্য ও নিজের কৃষ্টি-সংস্কৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু লােভী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি ধর্ম, বর্ণ, স্বর্ণের লােভে বারবার রক্তাক্ত করতে থাকে এই ভূখণ্ডকে। বিধ্বস্ত হলাে আফ্রিকা, ধ্বংস হলাে তার ঐতিহ্য। রবীন্দ্রনাথ সখেদে তাই বলেন

এল মানুষ-ধরার দল। গর্বে যারা অন্ধ তােমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে।” 

পশ্চিমের শ্বেতাঙ্গ সভ্যতা তার জাগতিক লােভকে চরিতার্থ করতে আফ্রিকার আদিম অধিবাসীদের ওপর সংঘটিত করল নিদারুণ অত্যাচার। নিরীহ মানুষেরা দাস হিসেবে প্রেরিত হলাে তথাকথিত সভ্য দুনিয়ায়। হত্যা, লুঠ ও সীমাহীন অত্যাচারের মধ্য দিয়ে অপমানিত ইতিহাসে আফ্রিকা ঠাই পায়।

 

প্রশ্ন ) ‘ হায় ছায়াবৃতা’ছায়াবৃতা বলার কারণ কী? তার সম্পর্কে কবি কী বলেছেন সংক্ষেপে লেখাে।

 

উত্তর : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় আফ্রিকাকে ছায়াবৃতা বলা হয়েছে। ছায়াবৃতা কথার অর্থ হলাে, ছায়া দ্বারা আবৃতা। সৃষ্টিলগ্ন থেকে আফ্রিকা সুগভীর অরণ্যে পরিপূর্ণ। এই অরণ্যভূমি এতটাই সুগভীর যে কোথাও কোথাও অরণ্য ভেদ করে সূর্যালােক পর্যন্ত ভূমি স্পর্শ করতে পারে না। কবি তাই এই অরণ্যভূমিকে । ‘ছায়াবৃতা’বলেছেন।

 

ছায়াবৃতা আফ্রিকা উন্নত বিশ্বের উন্নাসিকতায় আত্মগােপন করেছিল কালাে ঘােমটার আড়ালে। ‘dark continent’ বলে পরিচিত ছিল পাশ্চাত্য দুনিয়ায়। সুতীব্র বর্ণবিদ্বেষবশত শ্বেতাঙ্গ সমাজ বড়াে অবজ্ঞার চোখে দেখত আফ্রিকার সভ্যতা-সংস্কৃতি, তথা জীবনধারাকে। আফ্রিকার সযত্নলালিত মানবরূপ কোনাে পরিচিতি পায়নি। তারা যেন মানবেতর। দুর্গম, বিপদসংকুল অরণ্যভূমির ইতর প্রাণীমাত্র।

 

আফ্রিকার প্রচুর খনিজ ও বনজ সম্পদের লােভে এই উন্নাসিক শ্বেতাঙ্গরাই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আফ্রিকার বুকে। আফ্রিকার সরল, নিস্পাপ মানুষগুলিকে হাতকড়ি পরিয়ে ক্রীতদাস রূপে বিক্রি করে দেয়। প্রাণঘাতি যুদ্ধে পাঠায়। নির্লজ্জ নৃশংসতার পরিচয় দিয়ে নির্বিচার লুণ্ঠনে, হত্যাকাণ্ডে রচনা করে আতঙ্কের পরিবেশ। রক্তে অশ্রুতে মিশে আফ্রিকা দস্যুদের কাটা-মারা জুতাের তলে বীভৎস এক কাদার পিণ্ডে পরিণত হয়। ওদের ইতিহাসে অপমানের চিরচিহ্ন অঙ্কিত হয়ে যায়। ছায়াবৃতা আফ্রিকা যাবতীয় আত্মসম্মান হারিয়ে লুণ্ঠিতা কাঙালিনীতে পরিণত হয়।

 

প্রশ্ন ). ‘সেই হােক তােমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী। সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণীটি কী? কোন্ পরিস্থিতিতে কেন, সেই পুণ্যবাণীটির প্রয়ােগ অনিবার্য হয়ে উঠেছে? 

উত্তর : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘আফ্রিকা’ কবিতায় হিংসায় উন্মত্ত অশান্ত-অস্থির সভ্যতার পাপমােচনের জন্য শেষ পুণ্যবাণীটি উচ্চারণের পরামর্শ দিয়েছেন। এই পুণ্যবাণীটি হলাে‘ক্ষমা করাে।

ইউরােপীয় শ্বেতাঙ্গ ঔপনিবেশিকেরা আফ্রিকার ওপর অত্যাচার, উৎপীড়ন, শােষণ, শাসন অর্থাৎ অপমানের চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আফ্রিকার খনিজ, বনজ, মানব সম্পদের লােভে অমানবিক আক্রমণচালিয়েছেতারা।ওদেরনির্লজ্জআগ্রাসনে,লুণ্ঠনে, হত্যাকাণ্ডে, ভাষাহীন কান্নায় বাষ্পকুল হয়েছে আফ্রিকার অরণ্যপথ। এই দস্যুদের কাটা-মারা জুতাের তলে আফ্রিকা রক্ত- অশুতে মিশে বীভৎসএককাদারপিণ্ডেপরিণত হয়েছে।ওরাকলঙ্কিতইতিহাসের চিরচিহ্ন এঁকে দিয়ে গেছে আফ্রিকার বুকে।

সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিকদের এই পাপ অভিশাপ হয়ে নেমে এসেছে পৃথিবীর বুকে। তাই পশ্চিম দিগন্তে ঘনিয়ে এসেছে প্রদোষকাল। ভয়ংকর ধ্বংসের ঝঞা বাতাস বুকে নিয়ে সময় রুদ্ধশ্বাস হয়ে রয়েছে। গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এসে দিনের অন্তিমকাল ঘােষণা করেছে। পৃথিবীর এই চিত্রটা দেখে আতঙ্কিত কবি সভ্যতার পাপমােচনের পথ খুঁজেছেন। সুগভীর ইতিহাসবােধ থেকে তিনি বুঝতে পেরেছেন একের পর এক হিংসার দৃষ্টান্ত থেকেই হিংস্র হয়ে উঠেছে পৃথিবী। এই দুঃসময়ের হাত থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ মানহারা মানবী আফ্রিকার দ্বারে এসে দাঁড়ানাে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা। এই কর্তব্য সম্পাদনের জন্য সভ্যতার প্রতিনিধি হিসেবে যুগান্তের কবিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আহ্বান জানিয়েছেন।

 প্রশ্ন)  ‘নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা’-কারা, কীভাবে নির্লজ্জ অমানুষতার প্রকাশ ঘটিয়েছিল? 

উত্তর : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি উৎকলিত হয়েছে। ইউরােপীয় শ্বেতাঙ্গঔপনিবেশিকদের নির্লজ্জ অমানুষতার কথাই এখানে বলা হয়েছে।

ছায়াবৃতা আফ্রিকার খনিজ, বনজ এবং মানবসম্পদের বার্তা ইউরােপের শ্বেতাঙ্গ সভ্য ঔপনিবেশিকদের কাছে পৌছালে লােভে অন্ধ হয়ে তারা ছুটে আসে। আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইটালি, জার্মানি নৃশংস আক্রমণ চালিয়ে অধিকার কায়েম করে। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে মুসােলিনির ইটালি আবিসিনিয়ার ওপর নির্লজ্জ আক্রমণ চালায়। তথাকথিত সভ্য এই ঔপনিবেশিকরা শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন করে ক্ষান্ত হয়নি, আফ্রিকার প্রাণীজ সম্পদ তথা মানবকেও গ্রাস করেছে। আফ্রিকার সরল, নিস্পাপ মানুষগুলিকে লােহার হাতকড়ি পরিয়ে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করেছে, তাদের ব্যাবসার কাজে এবং প্রাণঘাতি যুদ্ধক্ষেত্রেও পাঠিয়েছে। চালিয়েছে নির্বিচার হত্যালীলা। ঔপনিবেশিকরা অকথ্য পাশবিক নির্লজ্জ নির্যাচন চালিয়ে আফ্রিকার রক্তে, অশুতে মাটিকে কর্দমাক্ত করেছে। আফ্রিকার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পকুল হয়েছে অরণ্যপথ। দস্যুদের কাটা-মারা জুতাের তলে বীভৎস এক কাদার পিণ্ড হয়ে উঠেছে আফ্রিকা। কবির ভাষায়-পঙ্কিল হলাে ধূলি তােমার রক্তে অণুতে মিশে,/ দস্যু-পায়ের কাটামারা জুতাের তলায়/বীভৎস কাদার পিণ্ড………..’।

মানবতাবাদী কবির দৃষ্টিতে এই ঔপনিবেশিক আগ্রাসন, লুণ্ঠন, হনন এক চরম ও লজ্জাহীনতার দৃষ্টান্ত। বিশ্রীভাবে নগ্ন এই নির্লজ্জতা।

আফ্রিকা কবিতার প্ৰশ্ন উত্তর

প্রশ্ন ) ‘এল ওরা লােহার হাতকড়ি নিয়ে,’—‘ওরা’ কারা? লােহার হাতকড়িনিয়ে এলবলতেকবিকী বুঝিয়েছেন? উদ্ধৃতাংশে কবির কোন্ মানসিকতা ধরা পড়েছে?

 

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত এই অংশে ‘ওরা’বলতে ইউরােপীয় সাম্রাজ্যবাদীদের কথা বলা হয়েছে।

আফ্রিকার খনিজ, বনজ, প্রাকৃতিক সম্পদের লােভে ইউরােপীয় সাম্রাজ্যবাদীরা আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ছুটে এসেছিল। তারা নির্বিচারে আক্রমণ, লুণ্ঠন, উৎপীড়ন চালিয়েছিল। পশুর মতাে আচরণ করেছে আফ্রিকার কৃষাঙ্গ মানুষগুলির সঙ্গে। তাদের ইচ্ছেমতাে বন্দি করেছে। লােহার হাতকড়ি পরিয়ে ক্রীতদাসরূপে বিক্রি করে দিয়েছে। প্রয়ােজনে প্রাণঘাতি যুদ্ধে, নির্মাণকার্যেনৃশংসভাবে ওদের ব্যবহার করেছে। লােহার হাতকড়ি কথাটিতে কবি তথাকথিত শ্বেতাঙ্গ সভ্যজাতির এই অসভ্য বর্বরতা, অমানবিকতাকে প্রতীকায়িত করেছেন।

কবি মানবতাবাদী। শ্বেতাঙ্গ-কৃ ষাঙ্গ ভেদাভেদ, তথা মানুষে মানুষে কোনাে ধরনের ভেদাভেদকে তিনি মেনে নিতে পারেন না। মানুষ মাত্রই তার প্রাপ্য অধিকার পাবে, এটাই তাঁর বক্তব্য। সভ্যতাগী ইউরােপীয় শ্বেতাঙ্গেরা শক্তিগর্বে যে নির্লজ্জ বর্বতার পরিচয় দিয়েছে আফ্রিকায় তাতে কবি মনেপ্রাণে আহত বােধ করেছেন। লােভের বশে এই অমানবিক আক্রমণকে কবি ধিক্কার জানিয়েছেন। ওদের হনন, লুণ্ঠন, শােষণ, নির্যাতনকে কবি ধিক্কার জানিয়েছেন। আফ্রিকার বুকে শ্বেতাঙ্গ ইউরােপীয়দের আক্রমণ তথাকথিত সভ্যজাতিগুলির মুখােশ খুলে দিয়েছে। কবি শানিত শব্দে ওদের নৃশংস বর্বরতা এবং ভণ্ডামিকে তুলে ধরেছেন। ওদের শূন্যগর্ভ সভ্যতাবােধ এবং মানবতাবােধের স্বরুপ তুলে ধরেছেন।

আফ্রিকা কবিতার সংক্ষিপ্ত প্ৰশ্ন

প্রশ্ন ) বাঁধলে তােমাকেবনস্পতির নিবিড় পাহারায়’বক্তব্যটি পরিস্ফুট করাে।

উত্তর : প্রাচ্য ভূখণ্ড থেকে সমুদ্র-বিচ্ছিন্ন আফ্রিকা বিশাল দ্বীপে পরিণত হলাে। অন্য পৃথিবীর সঙ্গে তার সম্পর্ক রইল না। সেই অখণ্ড অবকাশে ভূমিভাগে গড়ে উঠতে লাগল গভীরতর অরণ্য রাজ্য। এত গহন যে, সূর্যালােকও মাটিতে পৌঁছােতে পারল না। এই অগম্য বন দ্বারা পরিবেষ্টিত আফ্রিকাকে কবি বলেছেন, বিরাটকায় বনস্পতি অর্থাৎ, বৃক্ষরাজিই প্রবেশাধিকার বর্জিত নিবিড় পাহারায় বেঁধে ফেলল আফ্রিকাকে।

প্রশ্ন ) আফ্রিকা কীভাবে কৃপণ আলাের অন্তঃপুর হয়ে উঠল লেখাে।

উত্তর : অন্তঃপুর—এর অর্থ হলাে অন্দরমহল। কোনাে গােটা মহলের ভিতর মহল। সাধারণত, রাজবাড়ির মহিলাদের থাকার জন্য যে গােপন স্থান, সেই অন্দরমহলে বাইরের কারওার প্রবেশ ঘটে না। কৃপণ আলাের অন্তঃপুর’ বলতে যেখানে অত্যন্ত দীন বা চান আলাের অবস্থান থাকে, কিংবা নামমাত্র আলাের অবস্থান। থাকে। এরকম ভাগ্যটা ঘটেছিল আফ্রিকার কপালে। গভীর বনে আচ্ছন্ন হওয়ায় আফ্রিকার ভিতরে গােপনে আলােই প্রবেশ করতে পারেনি। আফ্রিকার ভিতরটা এমনই হয়ে গেল।

প্রশ্ন ) আফ্রিকার ওপর প্রকৃতির প্রভাবটি কেমন ছিল?

আফ্রিকার ওপর প্রকৃতির প্রভাব গুরুতর ছিল।

 প্রথমত, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আফ্রিকা বিচ্ছিন্ন ভূভাগ হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, গহন অরণ্য তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছিল। তৃতীয়ত, প্রকৃতি রহস্যময় দুর্গম হয়ে উঠেছিল। চতুর্থত জল-স্থল-আকাশের সংকেত তার কাছে দুর্বোধ্য ঠেকছিল। পঞমত প্রকৃতির বিস্ময়কর ঘটনাগুলি তাদের অজ্ঞান মনে মন্ত্র জাগাচ্ছিল। —এইসবে বিমূঢ় হয়ে পড়েছিল তারা। তবু তারা অদম্য কৌতূহলে ওই প্রকৃতিকে জানতে ও বুঝতে চাইছিল।

প্রশ্ন) প্রকৃতির ওপর আফ্রিকাবাসীর কীরূপ উগ্র প্রতিক্রিয়া হচ্ছিল লেখাে।

উত্তর : প্রকৃতির ভয়ংকর রূপে আফ্রিকার আদিম মানুষ হার মানেনি। তারা হারতে হারতেও বিরূপের ভান করে প্রকৃতির ভীষণতাকে ব্যঙ্গ করছিল। তারা ভয়ের বিভীষিকার চেয়েও নিজেকে উগ্রতর করে ভয়কে হার মানাতে চাইছিল। এই হার-না-মানার মধ্যে ছিল প্রকৃতিকে জেতার অদম্য ইচ্ছা। এমন উগ্র প্রচণ্ডতাকে কবি সম্মান জানিয়েছেন। এই মহিমা যেন দেবাদিদেবের প্রলয় ঘটানাের তাণ্ডবনৃত্য। এ যেন জয়ঢাকের আকাশ ফাটানাে জয়ধ্বনি।

 

প্রশ্ন ) আফ্রিকাবাসীর ওপর শ্বেতাঙ্গদের অত্যাচারের রূপটি চিত্রিত করাে।

 

উত্তর : উপনিবেশকারী শ্বেতাঙ্গরা জোর খাটিয়ে আফ্রিকাকে কার্যত গ্রাস করেছিল। চালিয়েছিল তীব্র অত্যাচার – শােষণপীড়ন এবং ওদের ক্রীতদাস বানিয়েছিল। ওই মানুষ ধরার দল  নির্যাতনের তীক্ষ্ণ নখে ওদের আঁচড়াল, কামড়াল। ওরা শিক্ষা ও সভ্যতার অহংকারে ছিল অন্ধ। আফ্রিকাবাসীদের প্রতি উদ্ধত বর্বর লােভে শ্বেতাঙ্গরা নির্লজ্জ ও অমানুষ হয়ে গেল। অত্যাচারিতদের নির্বাক অণুতে, রক্তে কর্দমিত হলাে ধূলি। ওরা জুতাের তলায় পিষে আফ্রিকাবাসীদের মারল। লেখা হয়ে গেল আফ্রিকার অপমানিত ইতিহাস। 

প্রশ্ন)  রবীন্দ্রনাথের ‘আফ্রিকা’ কবিতাঅনুসারে কবির ইতিহাস-চেতনার পরিচয় দাও।

 

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় তার ইতিহাসচেতনার পরিচয় মেলে। প্রায় সতেরাে শতক থেকে বিশ শতকের কিছু অংশ জুড়ে আফ্রিকার ওপর শ্বেতাঙ্গ উপনিবেশকারীদের অকথ্য শােষণ-নির্যাতন চলেছিল। এ যেমন ইতিহাস, তেমনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিষময় ফল এবং আসন্ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ংকরতার সংকেত ও ইতিহাস হিসেবে অবশ্যই গণ্য হবে। তাই বলতে পারি, বর্তমান কবিতায় কবির ইতিহাস-চেতনা প্রখরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

 

প্ৰশ্ন) “বলাে, “ক্ষমাকরাে কার কাছেক্ষমাচাইতে বলা হয়েছে? কেন?

উত্তর : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত এই অংশে মানহারা মানবী আফ্রিকার কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে।

 

ইউরােপের শ্বেতাঙ্গঔপনিবেশিকরা সর্বগ্রাসী লােভের পরিচয় দিয়ে আফ্রিকায় যে হত্যা, লুণ্ঠন, শােষণ-উৎপীড়নের পরিচয় দিয়েছিল, যেভাবে আফ্রিকার মানুষদের লাঞ্ছিত, অপমানিত, কলঙ্কিত করেছিল তা ছিল সভ্যতার পাপ। এই পাপের ফলেই পশ্চিমে দিনের অন্তিমকাল ঘনিয়ে এসেছে। বিশ্বে মহাসংকটের কালাে মেঘ দেখা দিয়েছে। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কবি বুঝতে পেরেছেন কী ঘটতে চলেছে, কেন ঘটতে চলেছে। তিনি বুঝতে পেরেছেন এই অবস্থায় মানহারা আফ্রিকার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাই একমাত্র উপায়। তাই যুগ বা সভ্যতার প্রতিনিধি হিসেবে যুগান্তের কবিকে তিনি ক্ষমা চাইতে বলেছেন।

 

প্রশ্ন ) নুতন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত, নুতন সৃষ্টির বারবার বিধ্বংসের দিনে আফ্রিকা বাহ্যিক কী রূপ পেল, লেখাে।

 

উত্তর : উদভ্রান্ত সে আদিম যুগ। স্রষ্টার নিজের প্রতি ছিল অসন্তোষ। আত্ম-সন্তোষের জন্য নতুন সৃষ্টিকে তিনি বারবার ভাঙছিলেন। সে এক অধৈর্য অবস্থান। প্রকৃতিলােকে চলছে ভূকম্পনাদির তীব্র আলােড়ন। বিক্ষুব্ধ সমুদ্র প্রাচ্য ভূমিভাগ থেকে আফ্রিকাকে বিচ্ছিন্ন করেছিল। ধীরে ধীরে জেগে উঠল গহন থেকে গহনতর অরণ্য। সূর্যালােক হলাে কৃপণ। অরণ্য ভেদ করে মাটিকে স্পর্শ করতে পারল না। আফ্রিকা হয়ে গেল অন্ধকারাচ্ছন্ন  মহাদেশ।

 

প্ৰশ্ন)‘সেখানে নিভৃত অবকাশে………. -নিভৃত অবকাশকালে আফ্রিকার আন্তঃস্বভাবধর্ম কোন্ পথে চলেছিল, লেখো। 

 

: ভূ-আলােড়নাদিজনিত সম্ভাব্য কোনাে কারণে প্রাচ্য ভূভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন আফ্রিকা যােগাযােগবিহীন নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ল। আশ্চর্য গােপন তাবকাশ তৈরি হলো। ক্ৰমে এক দুর্গম স্থানে পরিণত হলাে। আদিম আফ্রিকাবাসীর কাছে জল-স্থল- আকাশের সংকেত দুর্বোধ্য ঠেকল। প্রকৃতির দুর্লক্ষ রহস্য জাদুর মতাে বােধ হলাে। প্রাকৃতিক ভীষণতাকে ব্যঙ্গ করল তারা। কী মানুষ, কী পশু, সকলেই হলাে বিভীষিকাময়। প্রচণ্ড মহিমায় ভয়কেও হার মানাল। চলল যেন দুন্দুভি-তাণ্ডব। উত্তর

 

প্রঃ) ‘চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তােমার অপমানিত ইতিহাসে।।’—‘অপমানিত ইতিহাসের বিবরণ লেখাে।

 

উত্তর : অরণ্যের দুর্ভেদ্যতা, আর অজ্ঞানতার অন্ধতার কারণে আদিম আফ্রিকা ছিল উপেক্ষিত। লুন্ধ, হিংস্র, গর্বান্ধ, নির্লজ্জ অমানুষ শ্বেতাঙ্গ উপনিবেশকারীরা আফ্রিকাকে সর্বস্বান্ত করল, অনর্গল অশুতে ভেজাল। হত্যায় হত্যায় রক্তে-অশুতে ধূলি-মাটি হলাে পঙ্কিল। কাটা-মারা জুতােয় পিষে মারল জনমানুষকে। আগ্রাসী শ্বেতাঙ্গরা একটি গােটা মহাদেশে অনধিকার প্রবেশ করে স্বাধীনতা হরণ করে, শােষণ-পীড়নে চিরকালের মতাে কলঙ্কের দাগ দিয়ে গেল তার অপমানিত ইতিহাসে।

 

প্ৰশ্ন)  ‘এসাে যুগান্তের কবি,-যুগান্তের কবিকে কবি কখন আহ্বান করেছেন? তাকে কে আহ্বান করেছেন, প্রকাশ কর।

 

উত্তর : কয়েক শতক ধরে পশ্চিমি উপনিবেশকারীরা পৃথিবীর অনুন্নত দেশগুলিকেনিজেদের শােষণে ব্যাপৃত রাখে ।বিশের দ্বিতীয় দশকে বাধবে মানবসভ্যতা বিধ্বংসী বিশ্বযুদ্ধ। ঘনাল সভ্যতার সংকট। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিপন্ন আফ্রিকাকে সহানুভূতি জানাতে কবি যুগান্তের কবিকে আহ্বান জানিয়েছেন।

 

অপমানিত আফ্রিকার দ্বারে এসে পরম কারুণিক স্রষ্টা যেন বলেন, ক্ষমা করাে। মানবতার অপমানে স্রষ্টারও দায় থাকে। ক্ষমা প্রার্থনার মধ্যে থাকে মহত্ত্ব ও প্রগাঢ় সহমর্মিতা। মানবতার প্রতি সম্মান জ্ঞাপনই প্রকৃত সভ্যতার সপক্ষে শেষ পুণ্যবার্তা।

আফ্রিকা কবিতা

প্রশ্ন)‘উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে’-কীভাবে সেই আদিম যুগ উদ্ভ্রান্ত ছিল, ভৌগােলিক দিক থেকে বিচার করাে। 

 

উত্তর : ব্ৰত্মাণ্ডে তখন গ্রহাদি সৃষ্ট হয়েছে। পৃথিবীও সেই আদিম যুগে পৃথিবীতে গঠিত হয়েছে বিস্তীর্ণ জলভাগ এবং তুলনায় অল্পাংশ স্থলভাগ। স্থলভাগে পাহাড়-পর্বত, মালভূমি-সমভূমি, নদনদী গঠিত হয়েছে। জলভাগেও ডুবন্ত বা জেগে-ওঠা পাহাড় গঠিত হয়ে গেছে। সৃষ্টির সেই যুগটি ছিল ভাঙা-গড়ায় উদ্ভ্রান্ত উদ্দাম। ভৌগােলিক ভাবনায় পৃথিবীর বহিঃ ও অন্তর্ভাগে চলছিল বিপর্যয়ের আলােড়ন। তাই সেই আদিম যুগকে স্থিতি, ভাঙন ও গড়নের দিক থেকে উদ্ভ্রান্ত বলা যায়। 

প্ৰশ্ন) ‘সভ্যের বর্বর লােভ’ –‘আফ্রিকা’ কবিতায় কবি সভ্যের বর্বর লােভ বলতে কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর । 

: আফ্রিকার প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদের ওপর ইউরােপীয় শ্বেতাঙ্গ ঔপনিবেশিকদের লােভাতুর দৃষ্টি পড়লে তারা নির্লজ্জের মতাে আগ্রাসন চালায়। আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বর্বরের মতাে ঝাপিয়ে পড়ে আফ্রিকার ওপর। আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন করে অবাধে লুণ্ঠন, হনন, শােষণ-উৎপীড়ন চালায়। সরল, নিস্পাপ মানুষগুলিকে হাতকড়ি পরিয়ে ক্রীতদাস রূপে বিক্রি করে দেয়। অমানবিক লাঞ্ছনায়, অত্যাচারে, অবজ্ঞায়, অপমানে চূড়ান্ত বর্বরতার পরিচয় দেয়। তথাকথিত সভ্য শ্বেতাঙ্গ জাতির এই বর্বরতাকে মানবতাবাদী কবি মেনে নিতে পারেননি, তাই একে সভ্যের বর্বর লােভ বলে উল্লেখ করেছেন।

 

– প্রশ্ন)  ‘সেই হােকতােমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।। – পুণ্যবাণীটি কী? কেন তা পুণ্যবাণী? 

 

– উত্তর : ক্ষমা করাে’-যুগান্তের কবির কণ্ঠে উচ্চারিত এই বাণীটিকে কবি সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী বলেছেন।

 

শুধু লােভর বশবর্তী হয়ে ঔপনিবেশিকরা আফ্রিকায় যে হত্যা, লুণ্ঠন, শােষণ-উৎপীড়নের পরিচয় দিয়েছিল, যেভাবে লাঞ্ছিত, অপমানিত করেছিল মানুষদের তা ছিল সভ্যতার পাপ। এই পাপের ফলশ্রুতিতে বিশ্বে ভয়ংকর সংকটকাল ঘনিয়ে এসেছিল। এই অবস্থায় বিশ্বকে রক্ষা করার একমাত্র উ পায় ছিল মানহারা মানবীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। ক্ষমা । সবচেয়ে বড়াে গুণ। শুধু ক্ষমার ক্ষমতাতেই মানুষ যাবতীয় ভুল,  পাপ, অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে। তাই সভ্যতার চরম সংকটকালে ক্ষমা প্রার্থনাকেই সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী বলেছেন।

 

 আফ্রিকা কবিতার ছোট প্ৰশ্ন উত্তর

 

প্রশ্নঃ ‘বনস্পতি’ শব্দের অর্থ কী?

 

উত্তর : ‘বনস্পতি’ শব্দের অর্থ হলাে বনের পতি, অর্থাৎ বনের সবচেয়ে বড়ো বড়াে গাছ।

 

প্রশ্ন ) ‘উদ্ভ্রান্ত আদিম যুগ’ বলতে কী বােঝানাে

 

উওর : ‘উদভ্রান্ত আদিম যুগ’ বলতে সৃষ্টির প্রথম প্রহরের টালমাটাল ও অস্থির পরিবেশের তথা সময়ের কথা বলা হয়েছে।

 

প্ৰশ্ন:) ‘ছিনিয়ে নিয়ে গেল তােমাকে’—“তােমাকে বলতে কাকে বােঝানাে হয়েছে?

 

উত্তর : কবিতায় তােমাকে’বলতে অন্ধকারাচ্ছন্ন আফ্রিকার কথা বােঝানাে হয়েছে।

 

প্রশ্ন ) ‘এসাে যুগান্তের কবি’—কবির ভূমিকাটি কী –  হবে?

 

উত্তর : ইউরােপীয় শ্বেতাঙ্গ ঔপনিবেশিকেরা আফ্রিকায় আগ্রাসন চালিয়ে যে পৈশাচিক নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছে তার পরিণতিতে বিশ্বের ধ্বংস কাল আসন্ন। যুগান্তের কবি এসে আফ্রিকার কাছে ক্ষমা চেয়ে বিশ্বকে রক্ষা করবেন।

 

– প্রশ্ন ) “বিদ্রুপ করছিলেন ভীষণকে”—কীভাবে বিদ্রুপ করছিল?

 

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে নেওয়া আলােচ্য উদ্ধৃতিটিতে আফ্রিকা মহাদেশের বিদ্রুপের কথা বলা হয়েছে। সে যেন তার দুর্গমতা ও রহস্যাবৃত বিরূপের ছদ্মবেশ দিয়ে প্রকৃতির ভীষণকে বিদ্রুপ করছিল।

 

প্রয় ) ‘তােমার চেতনাতীত মনে।’—মনটি চেতনাতীত ছিল কেন?

 

উত্তর : শিক্ষিত, সভ্য অন্য পৃথিবী থেকে আফ্রি কাবাসী শিক্ষার আলােক থেকে পুরােপুরি বঞ্চিত ছিল। তাই তাদের মনটি চেতনাহীন বা জ্ঞানহীন ছিল।

 

প্রশ্ন ) হায় ছায়াবৃতা,—কে কেন ছায়াবৃতা?

 

উত্তর : ধরিত্রীকন্যা আফ্রিকা ছায়াবৃতা। অরণ্য ও অজ্ঞতার ছায়ায় আচ্ছন্ন, তাই ছায়াবৃতা।

 

প্রশ্ন)  ‘তােমার ভাষাহীন ক্রন্দনে’—ক্রন্দন ভাষাহীন ছিল কেন?

 

উত্তর : শ্বেতাঙ্গদের আগ্রাসনে, অত্যাচারে নিপীড়িত আফ্রিকাবাসীর ক্রন্দন ছিল সার। বলহীনের প্রতিবাদও ছিল না। ক্রন্দন তাই ভাষাহীন নির্বাক।

 

প্রশ্ন ) ‘পঙ্কিল হলাে ধূলি’-কীসে ধূলি পঙ্কিল হলাে?

 

উত্তর : সশস্ত্র শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা আক্রান্ত আফ্রিকাবাসীর অনেক অশু, অনেক রক্ত ঝরল। তাতে সিক্ত ধূলি পঙ্কিল হলাে। কর্দমাক্ত কলঙ্কিত হলাে।

 

প্রশ্ন ) বীভৎস কাদার পিণ্ড’-তাৎপর্যটি লেখাে।

 

উত্তর : শ্বেতাঙ্গরা আফ্রিকাকে দস্যুতায় লুঠ করেছিল। কাটামারা জুতােয় পিষে মেরেছিল। রক্ত, অশ্রু ঝরিয়ে ঘৃণ্য কর্দম পিণ্ডের কলঙ্কিত ইতিহাস গড়েছিল।

 

প্রশ্ন ) ‘বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায়’-ব্যবহৃতশব্দগুলির তাৎপর্য লেখাে।

 

উত্তর : আফ্রিকার অরণ্য, হিংস্র প্রাণী এবং অশিক্ষিত মানব স্বভাব ছিল উগ্র বিভীষিকাময়। স্বকীয় মহত্ত্ব মমতা তাই প্রচণ্ড।

 

প্রশ্নঃ ‘সভ্যের বর্বর লােভ’ অর্থটি বুঝিয়ে দাও। —

 

উত্তর : পশ্চিমি শ্বেতাঙ্গরা সভ্য বলে জাহির করত। নানাভাবে উন্নত হলেও মানবিকতায় ছিল অসভ্য। তাদের ছিল অনধিকার অনুচিত সর্বগ্রাসী লােভ।

 

প্রশ্ন ) ‘আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাতে’ –‘আসন্ন সন্ধ্যা কী? ‘শেষ রশ্মিপাত কী?

 

উত্তর : দেশে দেশে আগ্রাসন ও বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসশীলতায় সভ্যতার ঘনীভূত সংকটই ‘আসন্ন সন্ধ্যা। সভ্যতা-সূর্যের বিলীয়মান শেষ রশ্মিটুকুই‘শেষ রশ্মিপাত।

 

প্রশ্ন ) রবীন্দ্রনাথের ‘আফ্রিকা কবিতায় আফ্রিকাকে মানহারা মানবী বলা হয়েছে কেন?

 

উত্তর : শ্বেতাঙ্গ ঔপনিবেশিকেরা আফ্রিকায় বর্বরােচিত আক্রমণ চালিয়ে আফ্রিকার নিজস্ব সংস্কৃতি ও স্বাভিমানকে পদদলিত করেছিল, তাদের পশুতুল্য গণ্য করেছিল তাই আফ্রিকাকে মানহারা মানবী বলেছেন কবি।

 

প্রশ্ন  )  ‘এসােযুগান্তের কবি’-যুগান্তের কবি’ কথাটির অর্থ কী?

 

উত্তর : ‘যুগান্তের কবি’ বলতে রবীন্দ্রনাথ সেই কবিকে বুঝিয়েছেন যার কাব্যে ধ্বনিত হবে অন্যায়-অবিচার, আগ্রাসনে ভরা যুগের অবসানের দাবি।

 

প্রশ্ন ) ‘আফ্রিকা’ কবিতা কোন্ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল?

 

উত্তর : ‘আফ্রিকা’ কবিতা ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

 

 প্রশ্ন )  ‘আফ্রিকা’ কবিতা রচনার প্রেক্ষাপট কী?

 

উত্তর : ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ফ্যাসিস্ট ইটালির আবিসিনিয়ার স্বাধীনতা হরণ ও ঔপনিবেশিক শাসন স্থাপন।

 

প্রশ্ন ) ‘বিদ্রুপ করেছিলে ভীষণকে’-কে, ভীষণকে কীভাবে বিদ্রুপ করেছে?

 

উত্তর : আফ্রিকা তার প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা ও ভীষণাকে ভয় পায়নি। আরও বিধ্বংসী হয়ে তাকে বিদ্রুপ করছিল।

 

প্রশ্নঃ দস্যু-পায়ের কাটা-মারা জুতাের তলায়বিষয়টি বোঝাও।

 

উঃ : কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ফ্রিকা’ কবিতায় কাটা-মার।জুতাের তলায় বলতে শেতাঙ্গ ঔপনিবেশিকদের দ্বারা নৃশংসভাবে নির্যাতিত ও পদদলিত হওয়ার কথাই ব্যক্ত হয়েছে।

 

প্রশ্ন ) আদিম যুগটি কেমন ছিল?

 

উ : বরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, আদিম যুগটি ছিল উদভ্রান্ত ও দিশাহীন।

 

প্রশ্নঃ) ‘নগ্নকরল আপন নির্লজ্জঅমানুষতা।’— নির্লজ্জ অমানুষতার পরিচয় দাও।

 

উত্তর : উপনিবিষ্ট শ্বেতাঙ্গরা ছিল গর্বান্ধ, সভ্যতাভিমানী, বর্বর, লােভী, নির্লজ্জ। তারা আফ্রি কাবাসীদের কাঁদাল, রাক করল, জুতােয় পিষে মারল। এমনই তাদের নির্লজ্জ অমানুষ।

 

প্রশ্ন ) পশ্চিম দিগন্ত’ বলতে এখানে কী বােঝানাে হয়েছে? প্রদোষকাল কী? কী অর্থে ব্যবহৃত?

 

উত্তর : পশ্চিম দিগন্ত’ বলতে পাশ্চাত্য দেশগুলিকে বােঝানাে হয়েছে। প্রদোষকাল হলাে সন্ধ্যাকাল। বিশ্বযুদ্ধ প্রভাবিত -বিধ্বংসী অন্ধকারই প্রদোষকাল অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। মানব-সভ্যতা

 

প্রশ্নঃ ‘এসাে যুগান্তের কবি,-যুগান্তের কবি কে? তাকে কার কাছে দাঁড়াবার প্রার্থনা করা হয়েছে?

 

উত্তর : যুগান্তের কবি হলেন যুগস্রষ্টা তথা বিশ্বস্রষ্টা। তাঁকে অবমানিত আফ্রিকার সম্মুখে দাঁড়াবার প্রার্থনা করা হয়েছে।

 

আফ্রিকা প্ৰশ্ন উত্তর

 

প্রশ্ন ) “বলাে ‘ক্ষমা করাে’—”কার কাছে ক্ষমা চাইতে এই প্রার্থনা? কেন এই প্রার্থনা?

 

উত্তর : অবমানিত আফ্রিকার কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রার্থনা। স্রষ্টার নিজের সৃষ্ট ভুবনে নারকীয়তা প্রকট। দায়টা তারই। তাই তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা করাে’ বলার প্রার্থনা।

 

প্রশ্ন ) ‘উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে’—সেই আদিম যুগ উদ্ভান্ত ছিল কেন?

 

উত্তর : আদিম যুগ হলাে একেবারে গােড়ার সময়টা। প্রাকৃতিক নিয়মে সৃষ্টির সে যুগে পৃথিবীর অন্তর্ভাগ ও বহির্ভাগের ভাঙা-গড়ার ক্রিয়া ছিল উভ্রান্ত তথা উদ্দাম।

 

প্রশ্ন ) নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত’, -সৃষ্টিনতুন কেন?

 

উত্তর : আধ্যাত্মিক ও বৈজ্ঞানিক মতে আদিতে বিশ্বব্ৰত্মাণ্ড ছিল প্রকাণ্ড এক শূন্য। কোন আশ্চর্য সংঘটনায় গ্রহতারকাদির সৃষ্টি হয়ে গেল। তাই সৃষ্টিটা নতুন।

 

প্রশ্নঃ ‘ঘনঘন মাথা নাড়ার দিনে’ বলতে কী বলা হয়েছে?

 

উত্তর : কোনাে সুদুর আদিম যুগে প্রকৃতির স্বভাবে ত? ঈশ্বরেচ্ছায় ভূ-আলােড়নে পৃথিবীর সৃষ্টিরূপ মুহুর্মুহূওলট পালট হয়ে যাচ্ছিল, সেদিনের সেই কথাই বলা হয়েছে।

 

প্রশ্ন ) ‘কৃপণ আলাের অন্তঃপুরে। -কীভাবে আলো কৃপণ?

 

উত্তর : রুদ্র সমুদ্র আফ্রিকাকে বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড করে প্রায় আলােকহীন অরণ্যে পরিণত করল। এই দীন নিষ্প্রভ আলাে কৃপণ আলাে।

 

প্রশ্ন > স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে…. – স্রষ্টার নিজের প্রতি অসন্তোষের কারণ কী?

 

উত্তর : সৃষ্টিসুন্দরতর না হলে স্রষ্টার সন্তোষে ভাটা পড়ে। আদিম যুগের সৃষ্টি স্রষ্টাকে সেই আনন্দ দিচ্ছিল না। স্রষ্টার নিজের প্রতি অসন্তোষের এটাই কারণ।

 

প্রশ্ন ), ‘রুদ্র সমুদ্রের বাহু.. ‘—সমুদ্র রুদ্র কেন হয়েছিল?

 

উওর : সূর্য-চন্দ্রের আকর্ষণে, ভূকম্পনে, ঝক্কায় সমুদ্র। উত্তাল হয়। সেই আদিম যুগে এমনই কোনাে দুরন্ত কারণে সমুদ্র বিশেষভাবে রুদ্র তথা ক্রুদ্ধ হয়েছিল।

 

প্রশ্ন)  “নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত, পঙক্তিটিতে রবীন্দ্র প্রতিভার কোন্ কোন্ দিক উন্মােচিত হয়?

 

উত্তর : পঙক্তিটিতে সৃষ্টির স্রষ্টা, বিধ্বস্ত সৃষ্টি এবং বিশ্লেষণী চেতনা লক্ষিত হওয়ায় রবীন্দ্র প্রতিভার আধ্যাত্মিক, ভৌগােলিক ও বৈজ্ঞানিক ধারণার দিক উন্মােচিত হয়।

 

প্রশ্ন)  ‘বনস্পতির নিবিড় পাহারায়’—এখানে বনস্পতি শব্দের প্রয়ােগে কবি-হৃদয়ের কোন্ সূক্ষ্ম অনুভূতিটি প্রকাশিত হয়েছে?

 

উত্তর : কবি রবীন্দ্রনাথ চিরকাল অরণ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এখানে ‘বনস্পতি’ (গাছ) শব্দের প্রয়ােগে মমতাময় কবি-হৃদয়ের অরণ্যপ্রীতির সূক্ষ্ম অনুভূতিটি প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *