গুরু নাটকের বিষয়বস্তু বা কাহিনিসংক্ষেপ একাদশ শ্রেণি বাংলা
গুরু নাটকের বিষয়বস্তু বা কাহিনিসংক্ষেপ একাদশ শ্রেণি বাংলা
গুরু
গুরু নাটক
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)
গুরু নাটকের বিষয়বস্তু
গুরু নাটকের বিষয়বস্তু:গুরু নাটক প্রথম দৃশ্য
গুরু আসছেন—উপাধ্যায়মশায়ের কাছ থেকে এই কথা শুনে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বালক চঞ্চল হয়ে ওঠে। গুরুকে তারা কখনােই দেখেনি। তারা শুধু শুনেছে যে গুরু খুব বড়াে। তাদের পকদাদা বলেছে যে অচলায়তনে কোথাও গুরুকে ধরবে না। তারা ভেবেছে গুরু এলে বুঝি খুব মজা হবে।
বালকেরা মঞ্চ ছেড়ে বেরিয়ে গেলে পকের প্রবেশ ঘটে।তার গলায় গান— সে যেন গুরুকে আহবান করেই গান গাইছে। এরপর মঞ্চে প্রবেশ ঘটে সঞ্জীবের| সে পঞ্চককে তৈরি হতে বললে পক জানায় যে গুরুর কাছ থেকে হাতেকলমে সব শিখবে বলে সে নিজের পুথিপত্র ফেলে দিয়েছে। সঞ্জীবের প্রস্থান ঘটলে জয়ােত্তমকে দেখা যায় মঙ্গল্য নিয়ে গুরুর জন্য সিংহদ্বার সাজাতে চলেছে। পক তার এই বােঝা বয়ে বেড়ানাে নিয়ে মজা করে। জয়ােত্তম চলে যায়, পঞ্চকের গলায় থেকে যায় গান।
মহাপঞ্চক মঞ্চে প্রবেশ করে পঞ্চকের গান গাওয়াকে মতিভ্রম বলে বর্ণনা করেন। অন্যদিকে, পঞ্চক দাদাকেও গান ধরার আহবান জানিয়ে বলে যে, গুরুর আগমনে অচলায়তনে মন্ত্র ঘুচে গান আরম্ভ হবে। মহাপঞ্চক পঞ্চকের লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবেন না বলায়, পঞ্চক জানায় সে নির্লজ্জ হয়ে একলাই গুরুকে মুখ দেখাবে। এমনকি মহাপঞ্চক অমিতায়ুর্ধারিগী মন্ত্রের কথা বললে পঞ্চক জানায় যে সে যন্ত্রটা গুরুর কাছ থেকে শিখবে বলেই তা ভােলার চেষ্টায় আছে। এই সময় সুভ্রদের কান্না শুনে ব্যস্ত হয়ে পঞ্চকের প্রস্থান ঘটে।
সুভদ্রা কে নিয়ে পঞ্চকের পুনঃপ্রবেশ ঘটে। পঞ্চক তাকে শান্ত করে কী হয়েছে জানতে চাইলে সুভদ্র জানায় যে, সে পাপ করেছে। সেই পাপ হল, উত্তর দিকের জানলা খুলে সে বাইরের দৃশ্য দেখে ফেলেছে। এই সময়ে বালকদল আসে। সুভদ্রের উত্তর দিকের জানলা খুলে একটা দেবীর দিকটা দেখে ফেলার মতাে ভয়ানক পাপ নিয়ে তারাও শঙ্কিত। পঞ্চক তার নিজের অভিজ্ঞতার উদাহরণ দিয়ে শাস্ত্র বিধানের অর্থহীনতার কথা বলে এবং তাদের ভয় না পেতে উপদেশ দেয়। কিন্তু শাম্র আচারে তীব্র বিশ্বাসী বালকের দল পঞ্চকের থেকে অচলায়তনের বিধানের ওপরেই বেশি ভরসা রাখে।
গুরু নাটক
বালকেরা চলে যাওয়ার পরেই উপাধ্যায় মঞ্চে আসেন। সুভদ্রর মুখ থেকে তার ‘পাপ’-এর কাহিনি শুনে সর্বনাশের আশঙ্কায় অস্থির হয়ে ওঠেন তিনি। পক কিন্তু তিনশাে পঁয়তাল্লিশ বছরের আগল ঘােচানাের জন্য সুভদ্রকে অভিনন্দিত করে।
প্রথমে সুভদ্র- পঞ্চক এবং তারপরে উপাধ্যায়ের প্রস্থানের পরে আচার্য ও উপাচার্যের প্রবেশ ঘটে। উপাচার্যের ধারায় আয়তনের সব নিয়মকানুন কঠোরভাবে পালন করা হয়েছে বলেই খুশি হয়ে গুরু আসছেন। অন্যদিকে, আচার্যের এতদিন পরে মনে হয়েছে অপরাধের মাত্রা পূর্ণ হয়েছে বলেই হয়তাে তিনি আসছেন| আচার্যের এই দ্বিধা এবং মানসিক পরিবর্তনে উপাচার্য অবাক হন। তার মতে, আয়তনে সমস্ত নিয়মকানুন এবং আচার শাস্ত্র অনুযায়ী | মেনে চলার জন্য তাদের সমস্ত শিক্ষা সমাপ্ত, সমস্ত লাভ পর্যাপ্ত হয়ে গেছে| তিনি আচার্যকে আর্জি জানান আয়তনের নিয়মকানুন না-মানা বেমানান ছাত্র পঞ্চককে ভর্ৎসনা করে দেওয়ার জন্য।
গুরু নাটকের বিষয়বস্তু
উপাচার্য চলে যাওয়ার পরে পঞ্চক আসে। কিন্তু ভসনার বদলে আচার্যের গলায় যেন প্রশ্রয়ের সুর শােনা যায়। নিয়ম ভেঙে নিয়মের সত্যতার পরীক্ষা নেওয়াই হােক বা শূনক জাতির সঙ্গে মেশাই হােক, আচার্য পঞ্চককে কোনাে বিষয়ে কোনাে নিষেধ তাে করেনই না, বরং তঁার বা অচলায়তনের অন্য কারুর কথা না শােনার উপদেশ দেন।
পঞ্চকের প্রস্থানের পরই উপাচার্য ও উপাধ্যায় প্রবেশ করেন। তারা আচার্যকে সুভদ্রের উত্তর দিকের জানলা খােলার কথা জানান, কিন্তু এ পাপের প্রায়শ্চিত্তের বিধান আচার্য মনে করতে পারেন না।
এমন সময়ে মহাপঞ্চক মঞ্চে আবার প্রবেশ করেন। উপাধ্যায়, উপাচার্যরা তার কাছে প্রায়শ্চিত্তের বিধান চাইলে শাস্ত্র উল্লেখ করে তিনি মহাতামস ব্রত পালনের কথা বলেন। কিন্তু আচার্য প্রায়শ্চিত্তের প্রয়ােজন নেই জানিয়ে সব অপরাধের দায়ভার নিজে নেবেন বলে জানান। উপাধ্যায় আচার্যের এই আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
এরপর ভীত সুভদ্রকে নিয়ে পঞ্চক মঞ্চে আসে। আচার্য সুভদ্রকে সাহস দেন। তার কথায় শাস্ত্রবিধানের প্রতি প্রবল অনাস্থা প্রকাশ পায়। সুভদ্র আর পঞ্চকের সঙ্গে উপাচার্য চলে গেলে আচার্যের এই আচরণ আর সনাতন ধর্ম বিনাশের আশঙ্কায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মহাপঞ্চক-উপাধ্যায়। সঞ্জীব, বিশ্বম্ভর আর জয়ােত্তমের কথাতেও প্রকাশ পায় আচার্য অদীনপুণ্যকে আচার্যরূপে মান্য না করার ঘােষণা। এরই মধ্যে অধ্যেতা এসে জানায়, আচার্যের আপত্তিতেই সুভদ্রকে মহাতামসে সে বসাতে পারেনি।
এই সময় আচার্য আসেন। তার মুখে শােনা যায় অন্তহীন অপরাধের কথা— যে অপরাধ ঘটেছে পুঁথিগত বিদ্যার গতানুগতিক পুনরাবৃত্তিতে অন্ধবিশ্বাস,
ও কুসংস্কারকে প্রতিপালন করার মধ্য দিয়ে। এরপর প’ড়কের পাবে । তার কণ্ঠে শােনা যায় নববর্যার সজল হাওয়ায় শুকনাে পাতাকে। নিয়ে যাওয়ার গান। মহাপক অচলায়তনের বদ্ধ জীবনে এই একজটা দেবীর অভিশাপ বলে মন্তব্য করেন এবং অন্য ছাত্রদের আত্মবিস্মৃত না হওয়ার কথা বলেন। সুভদ্রকে জোর করে মহাত্রামস করানাের চেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ করেন আচার্য। ক্রমশ সংঘাত অনিবার্য। ওঠে। মহাপক আচার্যকে জোর করে ঘরে বন্ধ করে রাখতে উদ্যত জয়ােত্তম-বিশ্বশুর তাতে আপত্তি জানায়, যদিও আচার্যের আচরণকেও সমর্থন করে না।
গুরু নাটকের বিষয়বস্তু: প্রথম দৃশ্যের শেষ ভাগ
এসময় সুভদ্র নিজেই ছুটে আসে মহাতামস ব্রত করানাের আর্জি জানিয়ে আচার্য তাকে নিজের কাছে আঁকড়ে ধরে রাখতে চান। কিন্তু মহাপঞ্চকের নেতৃত্বে সঞ্জীব, বিশ্বম্ভর প্রমুখ সুভদ্রের ইচ্ছাকে ধন্য ধন্য করতে থাকে আচার্যের নির্দেশে পদক প্রায় জোর করে সুভদ্রকে নিয়ে মঞ্চ ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
এরপর আগমন ঘটে স্থবিরপত্তনের রাজা মন্থরগুপ্তের। তিনি রাজ্যসীমার কাছে দাদাঠাকুরের দলের বাসা বাঁধার খবর জানান। দাদাঠাকুরের নয় অর্থাৎ শূনকদের আগমনের খবরের উত্তেজনার মধ্যেই মহাপঞ্চক রাজাকে শােনান সুভদ্রের উত্তর দিকের জানালা খােলার পাপের কথা এবং তার প্রায়শ্চিত্ত করতে আচার্য অদীনপুণ্যের বাধাদানের কথা। এই কথা শুনে উত্তেজিত রাজা আচার্যকে অচলায়তনেরই একপ্রান্তে অন্ত্যজ দৰ্ভকদের পাড়ায় নির্বাসন দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং মহাপঞ্চককে আচার্যের পদে প্রতিষ্ঠিত করেন। মহাপঞ্চক আয়তনের রীতিনীতি ভাঙার অপরাধে পঞ্চককেও দৰ্ভক পাড়ায় নির্বাসনের বিধান দেন।
গুরু নাটক বিষয়বস্তু দ্বিতীয় দৃশ্য
দ্বিতীয় দৃশ্য
কাহিনিসংক্ষেপ
পঞ্চকের গান দিয়ে দ্বিতীয় দৃশ্য শুরু হয়। তার অজান্তে পিছনে এসে যুনকের দল নাচতে থাকে। পঞ্চক তাদের গুরুর আসার খবর দেয়। কিন্তু যুনকেরা গুরু কী তা জানে না, নিজেদেরকে তারা দাদাঠাকুরের দল বলেই জানে। এরই
মধ্যে যুনকরা তাকে ছুঁয়ে ফেলবে বলে পঞ্চক শঙ্কা প্রকাশ করে৷ যুনকরা চাষ করে—শুধু চাষ করে না, কঁাকুড়ের চায, খেসারি ডালে করে। পঞ্চক তার অচলায়তনে অর্জিত প্রাথমিক ধারণায় এ কঠোরভাবে শাস্ত্রবিরুদ্ধ বলে মনে করে। লােহার কাজ করাকেও তার
অপরাধ বলে মনে হয়। বজ্রবিদারণ, কেয়ূরী, মরীচী, মহাশীতবতী, উন্নীষবিজয় ইত্যাদি মন্ত্রের কথা যুনকরা জানে কি না তা জানতে চায় সে। অচলায়তনের নিয়ম ভেঙে পঞ্চকের উত্তরণ তখন সবেমাত্র শুরু হয়েছে, তাই যুনকদের এই নিষেধহীন জীবন আর যে-কোনাে কাজ করতে পারার স্বাধীনতা পককেও দ্বিধায় ফেলে। যূনকদের নাচের তালে তালে তার পাও নেচে উঠতে চায়। এ সময়েই আর-এক দল যূনক আসে দাদাঠাকুরের আগমনবার্তা নিয়ে।
এরপরই মঞ্চে দাদাঠাকুরের প্রবেশ ঘটে। পঞ্চক তার মানসিক দ্বন্দ্বের কথা তাকে জানায় এবং তা থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে গুরুর জন্য তার প্রতীক্ষার কথা জানায়।
স্থবিরক সম্প্রদায়ের মন্ত্র জানার জন্য চণ্ডক গােপনে বনের মধ্যে এক পােড়া মন্দিরে সাধনা করছিল বলে স্থবিরপত্তনের রাজা মন্থরগুপ্ত তাকে মেরে ফেলেছে—এই খবর নিয়ে এইসময় কয়েকজন শূনক প্রবেশ করে। কুদ্ধ ও উত্তেজিত দাদাঠাকুর স্থবিরপত্তনে যাওয়ার জন্য যুনকদের ডাক দেন। অচলায়তনের পাপ যেহেতু প্রাচীরের আকার ধারণ করে আকাশের আলােকে রুদ্ধ করতে চাইছে, তাই দাদাঠাকুরের উদ্দেশ্য হল সেই প্রাচীরকে ধুলােয় লুটিয়ে দেওয়া। দাদাঠাকুর সেই ভাঙা প্রাচীরের ওপর দিয়ে রাজপথ তৈরি করে সেই রাজপথে রাজার বিজয়রথ চালানাের ঘােষণা করেন। পককে তিনি নির্দেশ দেন অচলায়তনে ফিরে গিয়ে গুরুর জন্য অপেক্ষা করতে।
তৃতীয় দৃশ্য
গুরু নাটকের বিষয়বস্তু: গুরু নাটক তৃতীয় দৃশ্য কাহিনিসংক্ষেপ
দর্ভক পল্লিতে নির্বাসিত পঞ্চক বাঁচার আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। সে দর্ভকের কাছে খেতে চায়। দৰ্ভকরা ইতস্তত করলে সে জানায় যে খিদের আগুন সবকিছু পবিত্র করে দেয় | দর্ভকেরা পঞ্চকের মুখে মন্ত্রের কথা এনে তাকে মন্ত্র পড়ে সব শুদ্ধ করে দিতে বলে।পঞ্চক তাতে আপত্তি জানিয়ে বলে যে, অচলায়তনের প্রথা যদি এখানেও পালন করতে হয় তাহলে তাে আর নির্বাসনের দরকারই ছিল না। দৰ্ভকরা সকালবেলায় যে নামগান করে,
পঞ্চক সেই গান শুনতে চায় দর্ভকদের কাছে। আর সেই গান শুনে মুগ্ধ হয়ে তাকেও সেই গান শিখিয়ে দেওয়ার জন্য প্রার্থনা জানায়।
নির্বাসিত আচার্যও এরপর সেখানে চলে আসেন| দৰ্ভকরা এতে খুবই খুশি হয়। এরই মধ্যে পঞ্চক এবং আচার্য সুভদ্রের জন্য শঙ্কিত হন। তাকে হয়তাে মহাতামসে বসিয়ে অচলায়তনের সকলে দূর থেকে বাহবা দিচ্ছে—এই ভেবেই তাদের মনে শঙ্কা জাগে।
এরই মধ্যে দর্ভকদে রুণ্ডে পুনঃপ্রবেশ ঘটে। তারা জানায় যে, দাদাঠাকুরের দল অচলায়তনে প্রবেশ করে সব ভেঙেচুরে দিচ্ছে। আবার গুরুর আগমনের
কথাও তারা শুনেছে বলে জানায়। দর্ভকরা তাদের সঙ্গে লড়াইয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করে। পঞ্চকও তাদের সঙ্গে যােগ দিতে চায়।
অচলায়তনের মালি এসে জানায় যে সেখানে গুরু আসছেন। এরপর আর একদল দৰ্ভক সেখানে প্রবেশ করে। তারা বলে, এই গুরু অচলায়তনের গুরু নন, তিনি আসলে দর্ভকদের গোঁসাই। তার যােদ্ধার সাজে চোখ ঝলসে যায়। দর্ভকরা গুরুকে আপ্যায়নের উদ্যোগ নেয়।
ইতিমধ্যে দাদাঠাকুরের প্রবেশ ঘটে। দেখা যায়, আচার্য যাঁকে গুরুজি বলছেন, পঞ্চক তঁাকেই চেনে দাদাঠাকুররূপে—আর দর্ভকদের কাছে তিনিই গোসাই ঠাকুর। জানা যায়, দৰ্ভকদের সঙ্গে দাদাঠাকুরের নিবিড় সম্পর্কের কথাও। দাদাঠাকুর জানিয়ে দেন, অন্ধবিশ্বাস কুসংস্কার ও গতানুগতিক অভ্যাসের চক্র থেকে অচলায়তনের মানুষদের বের করে এনে বিশ্বের সকল যাত্রীর সঙ্গে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার জন্যই তার আগমন। কারাগার ভেঙে ফেলার পরে সেই ধ্বংসস্তুপের ওপর মন্দির গেঁথে তােলার জন্য পককে তিনি অচলায়তনে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
গুরু নাটক কাহিনিসংক্ষেপ বা বিষয়বস্তুর
চতুর্থ দৃশ্য
কাহিনিসংক্ষেপ
পরের দৃশ্যপট অচলায়তন। শত্রুসৈন্য অচলায়তনের প্রাচীর ফুটো করে দিয়েছে, এই খবরে বিশ্বস্তর আতঙ্কিত হলেও মহাপঞ্চক তাকে নির্ভয়ে থাকতে বলেন। জয়ােত্তম গুরুর আসার কথা বললে মহাপঞ্চক জানান, সমস্ত আয়ােজন ঠিক হয়ে গেলেও শুধু শাস্ত্রে যেমন লেখা আছে, দ্বাররক্ষার জন্য ঠিক তেমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এরপর গুরুর আগমনবার্তা নিয়েই উপাধ্যায়ের প্রবেশ ঘটে অচলায়তনে।তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ একটি খবর তিনি দেন, আর তা হল অচলায়তনের দ্বার এবং প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়েছে। এই খবরে উত্তেজিত সঞ্জীব-বিশ্বম্ভররা অচলায়তনের মন্ত্রতন্ত্র এবং মহাপঞ্চকের প্রতি অনাস্থা জানায়। জয়ােত্তম আচার্যকে এই সংকটের মুহূর্তে ফিরিয়ে আনতে চায়। ভিতরের লােহার দরজা বন্ধ—তা ভাঙা সম্ভব নয়, এই কথা বলে মহাপঞ্চক সকলকে আশ্বস্ত করতে চান। কিন্তু তার কথায় ভরসা না রেখে উপাধ্যায় বেরােবার রাস্তা খুঁজতে থাকেন| অন্যান্য বালকদের হয়ে বিশ্বম্ভরও একই ইচ্ছা প্রকাশ করে। এরই মধ্যে তারা প্রবল শব্দ শুনে অনুমান করে দরজা ভেঙে পড়েছে। বালকদের চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে মাথার ওপরের নীল আকাশ, যা অচলায়তনের দেয়াল দিয়ে এতদিন অবরুদ্ধ ছিল।
এরপর বালকদলকে প্রাণের আনন্দে নাচ করতে দেখা যায়। চারদিক থেকে আসা আলােয়, পাখির ডাকে তাদের খুব মজা হয় তাদের ছুটতে ইচ্ছা করে। মহাপঞকের সম্মতিতেই অচলায়তনে সেদিনের জন্য ষড়াসন, পঙক্তিধৌতি সব বন্ধ হয়ে যায়। জয়ােত্তম, বিশ্বম্ভর, সঞ্জীবরাও ভয়মুক্ত হয়ে খুশিতে শামিল হতে চায়। এসময়ে শঙ্খবাদক ও মালী গুরুর আগমনের সংবাদ নিয়ে প্রবেশ করে।
যােদ্ধার বেশে অচলায়তনের ‘গুরু’ অর্থাৎ দাদাঠাকুরের প্রবেশ ঘটে। মহাপঞ্চক তঁাকে প্রণাম করতে অস্বীকার করায় দাদাঠাকুর জানিয়ে দেন যে, তিনি মহাপঞ্চকের প্রণাম গ্রহণ করবেন না, তাকে প্রণত করবেন। দাদাঠাকুরের অনুবর্তী যুনকদের দেখে মহাপঞ্চক দাদাঠাকুরকে আদেশ দেন সেই ম্লেচ্ছদলকে সঙ্গে নিয়ে তখনই বের হয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু গুরু বা দাদাঠাকুর জানিয়ে দেন যে, তিনি যাকে আচার্যরূপে নিযুক্ত করবেন তিনিই আচার্য, তঁার আদেশই একমাত্র আদেশ। উপাধ্যায় যুনকদের অচলায়তনের দরজা ভেঙে আকাশের সমান করে দেওয়াকে স্বাগত জানান। ফলে, মহাপঞ্চক একা হয়ে যান। তিনি তার নিজের ইন্দ্রিয়ের সমস্ত দ্বার রুদ্ধ করে আপন বিশ্বাসে অচল থাকার কথা বলেন। যুনকরা তার কথা শুনে মজা পায়। কিন্তু শত অপরাধ সত্ত্বেও মহাপঞ্চকের আপন বিশ্বাসের প্রতি এরূপ অবিচলতাকে গুরু শ্রদ্ধার সাথে স্বীকৃতি জানান।
গুরু নাটকের চতুর্থ দৃশ্যের কাহিনী সংক্ষেপ এর শেষ ভাগ
এরপর বালকদলের প্রবেশ ঘটে। গুরু তাদের সঙ্গে খেলার কথা বলেন। খেলতে গেলে পাপ হবে কি না, বালকেরা তা জানতে চাইলে গুরু জানান মস্ত
খােলা মাঠে সেই খেলায় সব পাপ পালিয়ে যাবে| জয়ােত্তম, বিশ্বম্ভররাও তার সঙ্গে যাওয়ার কথা বলে। সঞ্জীব মহাপঞ্চককেও আহবান করে। কিন্তু মহাপঞ্চক যেতে অস্বীকার করেন।
সুভদ্র মঞ্চে প্রবেশ করে। তার মুখে প্রায়শ্চিত্ত শেষ না হওয়ার উদ্বো | দাদাঠাকুর তাকে দেয়াল ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে সব পাপ ধুলােয় মিশে গিয়েছে আর একজটা দেবীও সেই সঙ্গে মিলিয়ে গিয়েছে বলে আশ্বস্ত করেন। পঞ্চক সুভদ্রকে আহবান করে চারদিকের সমস্ত দরজা-জানলা খুলে খুলে বেড়ানাের জন্য। যুনক ও দর্ভকদলের প্রবেশ ঘটে আর গুরুকে প্রদক্ষিণ করে তারা গান
ধরে—
“ভেঙেছে দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তােমারি হউক জয়…”