Geography Class ix

পৃথিবীর অনুসূর ও অপসূর অবস্থান| পৃথিবীর বার্ষিক গতির সপক্ষে প্রমাণ সমূহ| পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলাফল|

 পৃথিবীর অনুসূর ও অপসূর অবস্থান|পৃথিবীর বার্ষিক গতির সপক্ষে প্রমাণসমূহ|পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলাফল|

পৃথিবীর-অনুসূর-ও-অপসূর-অবস্থান-পৃথিবীর-বার্ষিক-গতির-সপক্ষে-প্রমাণসমূহ-পৃথিবীর-বার্ষিক-গতির-ফলাফল

 

পৃথিবীর অনুসূর ও অপসূর অবস্থান

অনুসূর ও অপসূরের ধারণা দাও। 

 

অনুসূর ও অপসূরের ধারণা

 

  1. পৃথিবীর অনুসূর ও অপসূর অবস্থান পৃথিবীর কক্ষপথ উপবৃত্তাকার। এই উপবৃত্তের একটি বড় অক্ষ ও একটি ছােটো অক্ষ এবং দুটি নাভি থাকে। এর মধ্যে সূর্য এই উপবৃত্তাকার কক্ষপথের একটি নাভি বা ফোকাস-এ অবস্থিত। এজন্য পরিক্রমণের

 

সময় সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সারাবছর সমান থাকে না, কখনও একটু বাড়ে বা একটু কমে। সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব প্রায় 15 কোটি কিমি। 

পৃথিবীর অনুসূর ও অপসূর অবস্থান

অনুসূর

 

3 জানুয়ারি সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে কম থাকে, প্রায় 14 কোটি 70 লক্ষ কিমি। কক্ষপথে সূর্যের সাপেক্ষে পৃথিবীর এই নিকটতম অবস্থানের নাম অনুসূর’ (perihelion)।

 

ফলাফল

 

1) অনুসূর অবস্থানে পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যেকার দুরত্ব কমে যায়।

 (2) এই অবস্থানের ফলে উত্তর গােলার্ধে শীতকালে সুর্যকে একটু বড়ো দেখায়। কম দূরত্বের জন্য পৃথিবীর পরিক্রমণ বেগও সামান্য বৃদ্ধি পায়।

 

অপসূর

 

4 জুলাই সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে, প্রায় 15 কোটি 20 লক্ষ কিমি। কক্ষপথে সূর্যের সাপেক্ষে পৃথিবীর এই দূরতম অবস্থানের নাম ‘অপসূর’ (aphelion)।

পৃথিবীর অনুসূর ও অপসূর অবস্থান

ফলাফল

 

1) অপসূর অবস্থানে পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যেকার দূরত্ব বেড়ে যায়।

 2 এই অবস্থানের ফলে উত্তর গােলার্ধে গ্রীষ্মকালে সূর্যকে ছােটো দেখায়।

 3 বেশি দূরত্বের জন্য পৃথিবীর পরিক্রমণ বেগও সামান্য কমে যায়।

 

■ পৃথিবীর বার্ষিক গতির সপক্ষে প্রমাণগুলি লেখাে। অথবা, পৃথিবীর যে বার্ষিক গতি আছে কীভাবে প্রমাণ করা যায়?

 

পৃথিবীর বার্ষিক গতির সপক্ষে প্রমাণসমূহ

 

গতিতে পৃথিবী তার মেরুরেখা বা অক্ষের চারিদিকে আবর্তন করতে রতে একটি নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, তাকে পৃথিবীর পরিক্রমণ গতি বা বার্ষিক গতি বলা হয়। সূর্যকে একবার। মিনিট প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে 365 দিন 5 ঘণ্টা 48 সেকেন্ড। বিভিন্ন ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ, সমীক্ষা ও যুক্তির দ্বারা পৃথিবীর প্রমাণ করা যায়

 

 1. সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সমান পরিবর্তন: পৃথিবীর গতির জন্য আকাশে সূর্যের একটি আপাত বার্ষিক গতি দেখা যায়। 21 মার্চ ও 23 সেপ্টেম্বর সূর্য ঠিক পূর্ব দিকে উদিত হয়ে পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। কিন্তু বছরের বাকি দিনগুলিতে সূর্য হয় একটু উত্তরে অথবা একটু দক্ষিণে সরে উদিত হয় এবং অস্ত যায়। পৃথিবীর যদি বার্ষিক গতি না থাকত তবে প্রত্যেক দিন সূর্য ঠিক পূর্ব দিকেই উদিত হয়ে পশ্চিম দিকে অস্ত যেত। কয়েকটি

 

2. রাতের আকাশে নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ : রাতের আকাশে নির্দিষ্ট নক্ষত্র লক্ষ করলে দেখা যায়, নক্ষত্রগুলি প্রতি রাতে নিজের থান থেকে সামান্য একটু করে পশ্চিম দিকে সরে উদিত হয় এবং অস্ত যায়। এইভাবে কিছুদিন পরে এরা একেবারেই অদৃশ্য হয়ে যায়। এর পরিবর্তে কতকগুলি নতুন নক্ষত্র আকাশে দেখা যায় এবং সেগুলিও ক্রমশ অদৃশ্য হয়ে যায়। একবছর পরে নক্ষত্রগুলিকে আবার আগের জায়গায় উদিত হতে দেখা যায়। এতে প্রমাণিত হয়, পৃথিবী সূর্যকে পরিক্রমণ করতে করতে একবছর পরে আবার আগের জায়গায় ফিরে আসে।

 

3. মহাকর্ষ সূত্র:নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র অনুযায়ী কোনাে বড়াে বস্তু ছােটো বস্তুর চারিদিকে প্রদক্ষিণ করতে পারে না। সূর্য পৃথিবী থেকে আয়তনে 13 লক্ষ গুণ বড়াে এবং 31/; লক্ষ গুণ ভারী। তাই মহাকর্ষ সূত্র অনুযায়ী পৃথিবীর পক্ষে সূর্যকে পরিক্রমণ করাটাই স্বাভাবিক।

 

4. অন্যান্য গ্রহের বার্ষিক গতি পর্যবেক্ষণ: শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায়, সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ যেমনবুধ, মঙ্গল, বৃহস্পতি প্রভৃতি সূর্যকে পরিক্রমণ করে। পৃথিবী সৌরজগতের একটি গ্রহ। সুতরাং, পৃথিবীও সূর্যকে পরিক্রমণ করে।

 

5. উপগ্রহ থেকে তােলা আলােকচিত্র : উপগ্রহ থেকে যে আলােক চিত্রগুলি পাওয়া হয় তার সাহায্যে সহজেই প্রমাণ করা যায় যে, পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে। অর্থাৎ, পৃথিবীর বার্ষিক গতি আছে।

 

পৃথিবীর পরিক্রমণ বা বার্ষিক গতির ফলাফল আলোচনা করো।

 

 

পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলাফলসমূহ

 

যে গতির দ্বারা সূর্যকে সামনে রেখে পৃথিবী তার মেরুদণ্ডের ওপর অনবরত ঘুরতে ঘুরতে নির্দিষ্ট কক্ষপথে, পশ্চিম থেকে পূর্বে (ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে) 365 দিন 5 ঘণ্টা 48 মিনিট 46 সেকেন্ড বা প্রায় 365 দিন 6 ঘণ্টায় সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে, সেই গতিকেই পরিক্রমণ বা বার্ষিক গতি বলে।

 

 পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলাফলগুলি হল—

 1. দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যের হাসবৃদ্ধি: সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় পৃথিবীর মেরুরেখা তার কক্ষতলের সঙ্গে 66%° কোণে হেলে অবস্থান করে। এর ফলে, সূর্য কখনও উত্তর গােলার্ধে কর্কটক্রান্তিরেখার ওপর, আবার কখনও দক্ষিণ গােলার্ধে মকরক্রান্তিরেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। সেইজন্য উত্তর গােলার্ধে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে বছরের বিভিন্ন সময়ে দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে। দেখা গেছে-0 21 জুন উত্তর গােলার্ধে দিন সবচেয়ে বড়াে এবং রাত্রি সবচেয়ে ছােটো হয় ও দক্ষিণ গােলার্ধে এর ঠিক বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি হয়। 2.  21 মার্চ ও 23 সেপ্টেম্বর পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য সমান হয়, তাই এই দুই দিনকে ‘বিষুব’ বলে।

 3. 22 ডিসেম্বর দক্ষিণ গােলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য সর্বাধিক ও রাত্রি সবচেয়ে ছােটো এবং উত্তর গােলার্ধে এর ঠিক বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি হয়।

 

2. ঋতুপরিবর্তন: সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব বছরের বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়। পৃথিবীর মেরুরেখা কক্ষতলের সঙ্গে 66%° কোণে হেলে থাকার ফলে এবং পৃথিবী গােলকাকার হওয়ায় ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র সূর্যরশ্মি একই কোণে পড়ে না। সূর্যরশ্মি কোথাও লম্বভাবে, কোথাও তির্যকভাবে পড়ার ফলে বিভিন্ন স্থানে তাপের তারতম্য হয়। এইভাবে উয়তার হ্রাসবৃদ্ধি অনুযায়ী বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা স্থানে নানা ঋতু বিরাজ করে। যেমন—

 

উত্তর গােলার্ধ। দক্ষিণ গােলার্ধ 

21 জুনের 1-1/২ মাস আগে থেকে1-1/2মাস পর পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল শীতকাল 

 

 23 সেপ্টেম্বরের 1-1/2 মাস আগে 1-1/2 মাস পর্যন্ত শরৎকাল বসন্তকাল ।

 

 22 ডিসেম্বরের 1-1/2মাস আগে 1-1/2 মাস পর্যন্ত শীতকাল গ্রীষ্মকাল।

 

21 মার্চের 1-1/2 মাস আগে থেকে 1-1/2 মাস পর্যন্ত বসন্তকাল শরৎকাল। 

 

. ৪ বর্ষ ও অধিবর্ষ: সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে 365 দিন 5 ঘণ্টা 48 মিনিট 46 সেকেন্ড। একে বছর বা বর্ষ বলা হয়। 4 বছর অন্তর 1 দিন বাড়িয়ে বছরকে অধিবর্ষ ধরা হয়।

 

» পৃথিবীর তাপমণ্ডলের সৃষ্টি: বছরের বিভিন্ন সময় সূর্যের আলাে পৃথিবীতে বিভিন্ন কোণে পতিত হয়। এর ওপর নির্ভর করে পৃথিবীকে তিনটি তাপমণ্ডলে ভাগ করা হয়েছে, যথা—উয়মণ্ডল, নাতিশীতােষ মণ্ডল ও হিমমণ্ডল।

 

■ পৃথিবীতে দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি কীভাবে হয় চিত্রসহ ব্যাখ্যা করাে। 

 

পৃথিবীতে দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যের সবৃদ্ধির সংগঠন:

 

 21 মার্চ ও 23 সেপ্টেম্বর এই দুটি দিন ছাড়া বছরের বাকি দিনগুলিতে পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি হয়। পৃথিবীর সূর্যকে

 

পথটি উপবৃত্তাকার। এই উপবৃত্তাকার কক্ষপথের বিভিন্ন অংশে পৃথিবীর অবস্থান, সূর্য থেকে দূরত্বের তারতম্য এবং পৃথিবীর (মরুরেখার কতলের সঙ্গে সর্বদা 66%° কোণে হেলে অবস্থানের জন্য ভূপৃষ্ঠে দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি হয় 

 

 

1. কর্কটসংক্রান্তিতে : 21 জুন তারিখে পৃথিবী তার কক্ষপথের এমন এক স্থানে অবস্থান করে যে উত্তর গােলার্ধ সূর্যের দিকে ঝুঁকে থাকে এবং ওই দিন সূর্য কর্কটক্রান্তিরেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে ওই দিন উত্তর গােলার্ধে সবচেয়ে বড়াে দিন ও সবচেয়ে ছােটো রাত হয় এবং দক্ষিণ গােলার্ধে এর ঠিক বিপরীত অবস্থা বিরাজ করে।

 

2. কর্কটসংক্রান্তির পরবর্তী সময়ে : 21 জুনের পর থেকে দক্ষিণ গােলার্ধ সূর্যের দিকে ঝুঁকতে থাকে এবং উত্তর গােলার্ধ সূর্যের থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। এইভাবে উত্তর গােলার্ধে ক্রমশ দিন ছােটো ও রাত বড়াে হতে থাকে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে এই সময় ঠিক এর বিপরীত ঘটনা ঘটে।

 

3. জলবিষুবের সময়: 23 সেপ্টেম্বর তারিখে পৃথিবী নিজের কক্ষপথের এমন এক স্থানে অবস্থান করে যে উভয় গােলার্ধ সূর্য থেকে সমান দূরত্বে থাকে এবং উভয় গােলার্ধে দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য সমান হয়।

 

4. জলবিষুবের পরবর্তী সময়ে: 23 সেপ্টেম্বরের পর থেকে দক্ষিণ গােলার্ধ ক্রমাগত সূর্যের কাছে আসতে থাকে এবং উত্তর গােলার্ধ আরও দূরে সরে যেতে থাকে। এইভাবে দক্ষিণ গােলার্ধে ক্রমশ দিন বড়াে এবং রাত ছােটো হতে থাকে এবং উত্তর গােলার্ধে এর বিপরীত অবস্থা হয়। মকরক্রান্তিরেখার

 

5. মককর সংক্রান্তিতে 22 ডিসেম্বর তারিখে সূর্য ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। ওই দিন দক্ষিণ গােলার্ধে সব থেকে বড়াে দিন ও ছােটো রাত হয়। উত্তর গােলার্ধে এর ঠিক বিপরীত অবস্থা ঘটে অর্থাৎ দিন সবচেয়ে ছােটো এবং রাত সবচেয়ে বড়াে হয়।

 

6. করসংক্রান্তির পরবর্তী সময়ে 22 ডিসেম্বরের পর থেকে দক্ষিণ গােলার্ধ সূর্য থেকে দূরে যেতে থাকে এবং উত্তর গােলার্ধ সূর্যের দিকে সরে আসতে থাকে। এর ফলে দক্ষিণ গােলার্ধে দিন ছােটো ও রাত বড়াে এবং উত্তর গােলার্ধে দিন বড়াে ও রাত ছােটো হতে থাকে।

 

7. হানিয়ুবের সময় 21 মার্চ তারিখে পৃথিবী তার কক্ষপথের এমন এক অবস্থানে আসে যে, উভয় গােলার্ধের দূরত্ব সূর্য থেকে সমান হয় এবং সেই দিন পৃথিবীতে দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য পুনরায় সমান হয়।

 

8. মহাবিষুবের পরবর্তী সময় 21 মার্চের পর থেকে উত্তর গােলার্ধ ক্রমশ সূর্যের নিকটে আসতে থাকে এবং দক্ষিণ গােলার্ধ দূরে সরে যেতে থাকে। ফলে উত্তর গােলার্ধে ক্রমশ দিন বড়াে এবং রাত ছােটো হয়ে থাকে। দক্ষিণ গােলার্ধে এর বিপরীত অবস্থা দেখা যায়। বিভিন্ন তারিখে উভয় গােলার্ধে দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি ও ঋতুপর্যায় নীচে সারণির আকারে দেওয়া হল—

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *