সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে আলােচনা কর।

 ■  সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে আলােচনা কর। 

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের গঠন

 

সম্মিলিত-জাতিপুঞ্জের-নিরাপত্তা-পরিষদের-গঠন-ক্ষমতা-ও-কার্যাবলী-সম্পর্কে-আলােচনা-কর

 

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদ:

 

উত্তর। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জকে একটি প্রকৃত কার্যকরী সংস্থায় পরিণত করতে হলে, ‘শান্তি ও নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করতে হলে এমন একটি ছােট অথচ শক্তিশালী সংহ দরকার যা বৃহৎ শক্তিগুলির ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করবে—এই বিশ্বাসে পরিচালিত হয়ে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদ রচয়িতাগণ অত্যন্ত উচ্চশক্তি সম্পন্ন নিরাপত্তা শরিষদ নামক সংস্থাটি গঠনের পরিকল্পনা করেন। আন্তর্জাতিক সংকটের মােকাবিলায় এই সংস্থাটি যে-কোন সময়, যে-কোন দিন এবং যে-কোন স্থানে কাজ করতে প্রস্তুত থাকে। উদাহরণস্বরূপ জরুরি প্রয়ােজনে ১৯৭২ সালে আদ্দিস আবাবায় এবং ১৯৭৩ সালে পানামা শহরে নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন বসে।

 

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের গঠন : 

 

 সনদের ২৩ নং ধারা অনুসারে নিরাপত্তা পরিষদ প্রথমে মােট ১১ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। এই ১১ জনের মধ্যে ৫ জন ছিল স্থায়ী এবং বাকি ৬ জন অস্থায়ী সদস্য। ১৯৬৫ সালে পরিষদের সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করে ১৫ জন করা হয়েছে। ৫ জন স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, সেভিয়েত ইউনিয়ন ও গণপ্রজাতন্ত্রী চীন। ১০ জন অস্থায়ী সদস্যকে সাধারণ সভা ২ বছরের জন্য নির্বাচিত করে। কার্যকাল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পুনর্নির্বাচিত করা যায় না। ১০ জন অস্থায়ী সদস্যের মধ্যে আফ্রোএশীয় রাষ্ট্রগুলি থেকে ৫ জন, পূর্ব ইউরােপ থেকে ১ জন, লাতিন আমেরিকা থেকে ২ জন এবং পশ্চিম ইউরােপ ও অন্যান্য দেশগুলি থেকে ২ জন নির্বাচিত হবে। প্রসঙ্গত, ১৯১১ সালের ডিসেম্বর সােভিয়েত ইউনিয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাওয়ার পর রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ লাভ করে।

 

নিরাপত্তা পরিষদে কোন রাষ্ট্রকে অস্থায়ী সদস্যপদ প্রদানের সময় ২টি বিষয় বিবেচনা করা হয় : (১) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় রাষ্ট্রের অবদান, এবং (২) ন্যায়সঙ্গত ভৌগােলিক বণ্টন। পরিষদের অধিবেশনে প্রতিটি সদস্যরাষ্ট্র অনধিক একজন করে প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারে। সদস্যবর্গের নামের ইংরেজী বর্ণানুসারে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা প্রতি মাসে ১ জন করে সভাপতি নির্বাচন করে।

 

ভােটদান ব্যবস্থা : নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র ১টি করে ভােট দিতে পারে। নিরাপত্তা পরিষদের নিকট প্রেরিত বিষয়গুলিকে পদ্ধতিগত বিষয় (Procedural matters) এবং অন্যান্য বিষয় (Other matters)—এই দু’ভাগে ভাগ করা হয়। সমস্ত পদ্ধতিগত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য যে কোন ৯ জন সদস্যের সম্মতিসূচক ভােট থাকা আবশ্যক। অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ৫ জন স্থায়ী সদস্যের সন্মতিসূচক ভোট সহ মােট ৯ জন সদস্যের সম্মতি প্রয়ােজন। পাঁচজন স্থায়ী সদস্যের মধ্যে যেকেন একজনের অসম্মতি বা নেতিবাচক ভােটপ্রদানকে ভেটো (Veto) বলা হয়।

 

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলী :

 

  সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদের পঞ্চম অধ্যায়ের ২৪-২৬ নং ধারায় নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের কার্যাবলীকে নিম্নোক্ত কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা কর।

 

(১) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত মমতা ও সনদেন ২৪ নং ধারা । আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রাথমিক দায়িত্ব নিরাপত্তা পরিষদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্যে ও নীতি অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদ এই কর্তব্য পালন করে। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রশ্নে নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্বগুলি নিম্নলিখিতভাবে বর্ণনা করা যায়।

 

সনদের যষ্ঠ অধ্যায়ের ৩৩ নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোন বিবাদের ফলে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার আশঙ্কা দেখা দিলে বিবাদের সঙ্গে জড়িত সকল পক্ষের প্রাথমিক কাজ হল আলােচনা, অনুসন্ধান, মধ্যস্থতা, মিটমাটের ব্যবস্থা, বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত বা অন্য কোন শান্তিপূর্ণ উপায়ে ঐ বিরােধের মীমাংসা করা। প্রয়ােজনবােধে নিরাপত্তা পরিষদ বিবদমান সকল পক্ষকে ঐসব পদ্ধতির মাধ্যমে বিরােধের নিষ্পত্তি করে নিতে বলতে পারে। এ ছাড়া বিবদমান রাষ্ট্রগুলি আঞ্চলিক সংস্থাসমূহের মাধ্যমেও নিজেদের বিরােধ মিটিয়ে নিতে পারে। ন্যাটো (NATO), সিয়াটো (SEATO), এশিয়ান (ASEAN) ইত্যাদি হল আঞ্চলিক সংস্থার উদাহরণ।

 

; উপরােক্ত শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্তর্জাতিক বিরােধের নিষ্পত্তি না হলে নিরাপত্তা পরিষদ শান্তিভঙ্গকারী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে ; রেলপথ, সমুদ্রপথ, বিমানপথ, ডাক সরবরাহ, টেলিগ্রাফ বা বেতার যােগাযােগ বন্ধ করতে ; এমনকি কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে নির্দেশ দিতে পারে। এইসব ব্যবস্থাও ফলপ্রসূ না হলে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রয়ােজনে নিরাপত্তা পরিষদ বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী ও স্থলবাহিনীর সাহায্য নিতে পারে। নিরাপত্তা পরিষদ সামরিক উপদেষ্টা কমিটির (Military Staff Committee) সাহায্যে শান্তিভঙ্গকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়ােগের পরিকল্পনা রচনা করে। এই ব্যবস্থাকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বলা হয়। ১৯৬১ সালে কঙ্গো এবং ১৯৯০ সালে ইরাকের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদ এই ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব নেয়।

 

(২) অছিসংক্রান্ত ক্ষমতা ও নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচজন সদস্য অছি-পরিষদের সদস্য। অছি ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত সামরিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ এলাকাগুলির ব্যাপারে জাতিপুঞ্জের যাবতীয় দায়দায়িত্ব নিরাপত্তা পরিষদ পালন করে। এই সমস্ত এলাকাকে কেন্দ্র করে যাতে কোন উত্তেজনার সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদকে নজর রাখতে হয়। তবে এক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদ, অছি-পরিষদের সাহায্য নিয়েই কার্য সম্পাদন করে (৮৩নং বারা)।

 

(৩) নিয়ােগ সংক্রান্ত ক্ষমতা ও নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ অনুসারে সাধারণ সভা জাতিপুঞ্জের মহাসচিব, আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের বিচারকদের নিয়ােগ এবং জাতিপুঞ্জের নতুন সদস্যদের গ্রহণ করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদের ৫ জন স্থায়ী সদস্য সহ ৯ জন সদস্যের সম্মতি প্রয়ােজন হয়।

 

(৪) সনদ সংশােধনের ক্ষমতা ও সনদ সংশােধনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সনদ সংশোধনের প্রস্তাব কার্যকরী হতে গেলে নিরাপত্তা পরিষদের ৫ জন স্থায়ী সদস্য সহ ৯ জন সদস্যের এবং সাধারণ সভার দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়ােজন।

 

(৫) সদস্যপদ বাতিল সংক্রান্ত ক্ষমতা ও শান্তিভঙ্গকারী বা আগ্রাসী কোন সদস্যরাষ্ট্রের বিক: নিবাত্তা পরিষদ নিবর্তনমূলক বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সেই সব রাষ্ট্রকে সাময়িককালের জন্য তার অধিকার ও সুযােগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যায়। এছাড়া জাতিপুঞ্জের কোন সদস্যরাষ্ট্র যদি বারবার সনদে বর্ণিত নীতিগুলি ভঙ্গ করে হলে নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে সাধারণ সভা উক্ত সদস্যরাষ্ট্রকে জাতিপুঞ্জ কে বহিষ্কার করতে পারে।

 

(৬) নিরস্ত্রীকরণ সম্পর্কিত ক্ষমতা ও সনদের ২৬ নং ধারা অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও নিরস্ত্রীকরণের জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। এই ব্যাপারে সামরিক উপদেষ্টা কমিটি নিরাপত্তা পরিদকে সাহায্য ও প্রয়ােজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকে।

 

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের মূল্যায়ন : 

 

আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার যে মহান লক্ষ্য ও আদর্শ নিয়ে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা, সেই লক্ষ্য ও আদর্শকে রূপদানের প্রধান দায়িত্ব নিরাপত্তা পরিষদের ওপর বর্তান হয়। তবে সনদে বর্ণিত নিরাপত্তা পরিষদের কার্যাবলী ও বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলা যায়, যে প্রত্যাশা নিয়ে সনদ রচয়িতাগণ পরিষদের হাতে গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন, সে প্রত্যশা পূর্ণ হয় নি। নিকোলাস (H. G. Nicholas) মন্তব্য করেছেন, “সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সকল সংস্থার মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদের ন্যায় অন্য কোন সংস্থার প্রতিশ্রুতি ও কার্যাবলীর মধ্যে এত বেশি তারতম্য লক্ষ্য করা যায় না” (“Of all the organs of the U.N. none has shown a greater discrepancy between promise and performance than the Security Council.”) 

 

সম্মিলিত জাতীপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের দুর্বলতাগুলি হল নিম্নরূপ :

 

প্রথমত, নিরাপত্তা পরিষদের গঠনের মধ্যেই এর দুর্বলতার কারণ লুকিয়ে রয়েছে। যে সার্বভৌম সমানাধিকার নীতির কথা সনদে বলা হয়েছে, বৃহৎ পঞ্চশক্তিকে নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ এবং ভেটো ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে সেই নীতিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এই পঞ্চশক্তির ঐকমত্যের ওপর আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নির্ভরশীল, অথচ বাস্তবে দেখা যায় খুব কম ক্ষেত্রেই এই পঞ্চশক্তি ঐকমত্যে পৌছাতে পেরেছে। আর এই ঐকমত্যের অভাবের জন্যই নিরাপত্তা পরিষদ অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পরিষদ ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে লেবাননকে বাঁচাতে পারে নি। লাওস, কাম্পুচিয়া, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশের ওপর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নগ্ন আক্রমণও প্রতিহত করা যায় নি, রক্ষা করা যায়নি ব্রিটেনের হাত থেকে সাইপ্রাসকে। বর্তমানে কিউবা ও ইরাকের ওপর ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অন্যায় জুলুমের ক্ষেত্রে পরিষদ নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ ।

 

দ্বিতীয়ত, শান্তিভঙ্গকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রেও নিরাপত্তা পরিষদের ব্যর্থতা প্রকট হয়ে ওঠে। বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক বিরােধের ক্ষেত্রেই কোন না কোন বৃহৎ শক্তি মদতদাতা হিসাবে কাজ করে এবং কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব উঠলে ভেটো প্রয়ােগের মাধ্যমে সেই উদ্যোগ বানচাল করে দেয়। এজন্যই ইভান লুয়ার্ড (Evan Luard) বলেছেন, “স্থায়ী সদস্যদের ভেটো না থাকলে নিরাপত্তা পরিষদ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় আরও বেশি কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে পারত” (“Veto, even in its limited form, brought constant paralysis.”) |

 

তৃতীয়ত, পরিষদের নিজস্ব স্থায়ী সৈন্যবাহিনী বা শান্তিবাহিনী না থাকাও পরিষদের একটি দুর্বলতা। কোন শান্তিভঙ্গকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হলে নিরাপত্তা পরিষদকে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের কাছে সৈন্যবাহিনী প্রেরণের জন্য অনুরােধ জানাতে হয়। কোন সদস্য-রাষ্ট্র সামরিক সাহায্য দিতে প্রস্তুত না থাকলে তার বিরুদ্ধে পরিষদ কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না।

 

চতুর্থত, নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রেও পরিষদ খুব একটা সাফল্যের পরিচয় দিতে পারে নি। পরিষদের নিরস্ত্রীকরণ কমিশন এক্ষেত্রে খুব একটা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে নি।

 

সবশেষে উল্লেখ করতে হয়, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপর্যয় এবং চীনের নিষ্ক্রিয়তার ফলে বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদ পুরোপুরি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিককালে নিরাপত্তা পরিষদের এই শােচনীয় অবস্থা প্রকট হয়ে ওঠে কিউবার ব্যাপারে পরিষদের ভূমিকা থেকে। কিউবার মত একটি ছােট্ট দেশকে সবদিক থেকে অবরােধ করেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষান্ত হয় নি, দেশটিকে ধ্বংস করার জন্য সামরিক প্রস্তুতি নিয়ে চলেছে, অথচ নিরাপত্তা পরিষদ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে চলেছে।

 

তবে ব্যর্থতার পরিমাণ বেশি বলে নিরাপত্তা পরিষদের সাফল্যের নজির যে একেবারেই নেই তা বলা চলে না। অতীতে সাইপ্রাস, কঙ্গো, কাশ্মীর প্রভৃতি প্রশ্নে পরিষদের শাস্তি স্থাপনের উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। সম্প্রতি ১৯১১ সালে কুয়েত দখলকারী ইরাকের বিরুদ্ধে জাতিপুঞ্জের সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করে নিরাপত্তা পরিষদ বিশ্ব জনমতের সমর্থন আদায় করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *