পর্বতের সংজ্ঞা দাও। পর্বতের শ্রেণিবিভাগ বিভিন্ন প্রকার পর্বতের উৎপত্তি বৈশিষ্ট্য এবং পাত সংস্থান তত্ত্ব আলোচনা।

 পর্বতের সংজ্ঞা দাও। পর্বতের শ্রেণিবিভাগ বিভিন্ন প্রকার পর্বতের উৎপত্তি বৈশিষ্ট্য এবং পাত সংস্থান তত্ত্ব আলোচনা।

পর্বতের-সংজ্ঞা-দাও-পর্বতের-শ্রেণিবিভাগ-বিভিন্ন-প্রকার-পর্বতের-উৎপত্তি-বৈশিষ্ট্য-এবং-পাত-সংস্থান-তত্ত্ব-আলোচনা

 

● পর্বতের সংজ্ঞা দাও। পর্বতের শ্রেণিবিভাগ আলােচনা করাে।

 

পর্বতের সংজ্ঞা

 

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে 1,000 মিটারের বেশি উঁচু, বিরাট অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত শিলাময় ভূভাগকে পর্বত বলে। পর্বতে অসংখ্য সুউচ্চ শৃঙ্গ, গভীর গিরিখাত, খাড়া ঢাল প্রভৃতি থাকে। ভারতের হিমালয়, বিন্ধ্য, সাতপুরা প্রভৃতি পর্বতের উদাহরণ। 

 

পর্বতের শ্রেণীবিভাগ

 

উপত্যকা, পর্বতকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—

 

ভঙ্গিল পর্বত, আগ্নেয় পর্বত, স্তুপ পর্বত, ক্ষয়জাত পর্বত।

 

 ভঙ্গিল পর্বত–  প্রাচীন, নবীন 

 

আগ্নেয় পর্বত –আকৃতি ও গঠন অনুসারে সক্রিয়তা অনুসারে –জীবন্ত সুপ্ত মৃত শকু আকৃতির গম্বুজ আকৃতির বিস্ফোরিত জ্বালামুখ মিশ্রশঙ্কু বিশিষ্ট বিশিষ্ট।অবিরাম সবিরাম

 

: 1. ভগিল পর্বত : অনুভূমিক ভূ-আলােড়নে সৃষ্ট পার্শ্বচাপের ফলে সমুদ্র বা হ্রদে সতি পলিরাশিতে ভাঁজ পড়ে উঁচু ভঙ্গিল হয়ে যে পর্বতের সৃষ্টি হয়, তাকে ভঙ্গিল পর্বত বলে। ভাজ পড়ে সৃষ্টি হয় বলে এর নাম ভঙ্গিল পর্বত। ভঙ্গিল পর্বতের বিভিন্ন প্রকার ভাজের উঁচু উত্তল অংশকে ঊর্ধ্বোভঙ্গ এবং নীচু অবতল অংশকে অধােভঙ্গ বলে। উৎপত্তির সময়কালের ভিত্তিতে ভঙ্গিল পর্বতকে দুটি বিভাগে ভাগ করা যায়। যথা— 

 প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত: (আনুমানিক 22-32 কোটি বছর বয়স) ভারতের আরাবল্লি, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপালেশিয়ান পর্বতশ্রেণি এর উদাহরণ।

 2. নবীন ভঙ্গিল পর্বত: (আনুমানিক 6-7 অনুভূমিক চাপ কোটি বছর বয়স) ভারতের হিমালয়, উত্তর আমেরিকার রকি পর্বতমালা এর উদাহরণ। 

 2. আগ্নেয় পর্বত : যখন ভূ-অভ্যন্তরের ম্যাগমা ভূত্বকীয় শিলাস্তরের ফাটল দিয়ে লাভারূপে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে এসে নির্গমন মুখের চারপাশে স্তূপকৃত হয়ে জমতে জমতে পর্বতের আকার ধারণ করে, তাকে আগেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত বলা হয়।

 

জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট প্রভৃতি স্তুপ পর্বতের উদাহরণ।

 

 

 

যেমন—জাপানের ফুজিয়ামা, ইটালির ভিসুভিয়াস প্রভৃতি আগ্নেয় পর্বত। আগ্নেয় পর্বত সাধারণত শঙ্কু আকৃতির হয়। আবার, অগ্ন্যুৎপাতের সক্রিয়তা অনুযায়ী আগ্নেয় পর্বত তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথা—জীবন্ত, সুপ্ত এবং মৃত।

 

3. ভূপ পর্বত : মহীভাবক আলােড়নে অর্থাৎ উল্লম্বভাবে ভূ-আলােড়নজনিত টান সংনমনের প্রভাবে ভূত্বকের শিলাস্তরে ফাটল ও চ্যুতি দেখা দেয়। পাশাপাশি অবস্থিত দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ ওপরে উঠে গিয়ে যে পর্বতের সৃষ্টি করে, তাকে স্থূপ পর্বত বলে। যেমন—ভারতের সাতপুরা, জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট প্রভৃতি স্তুপ পর্বতের উদাহরণ।

 

4. কয়জাত পর্বত : কখনাে কখনাে নদী, হিমবাহ, বায়ুপ্রবাহ আবহবিকার প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয়কার্যের ফলে প্রাচ পার্বত্যভূমি বা উচ্চভূমির নরম শিলাগঠিত অংশসমূহ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় সমভূমির আকার ধারণ করে, কিন্তু কঠিন শিলাগঠিত বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত না হয়ে উচ্চভূমি বা পর্বতের আকারে দড়ি । থাকে। একেই ক্ষয়জাত পর্বত বলে। ভারতের আরাবল্লি, আমেরিক যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপালেশিয়ান প্রভৃতি হল ক্ষয়জাত পর্বত। 

 

●  পাতসংস্থান তত্ত্বের আলােকে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি আলােচনা করাে।

 

পাতসংস্থান তত্নের আলােকে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি 

 

পাতসংস্থান (Plate tectonics) তত্ত্বের জনক হলেন ফরাসি বিজ্ঞানী পিঁচো (X Le Pichon, 1968)। এই তত্ত্বের মূলকথা হল, ভূত্বক কতকগুনি বৃহদাকার পাতের সমন্বয়ে গঠিত। এর মধ্যে মহাদেশ গঠনকারী পাতসমূহকে মহাদেশীয় পাত এবং মহাসাগর গঠনকার। পাতসমূহকে মহাসাগরীয় পাত বলা হয়ে থাকে। এইসব পাতগুলির গভীরতা গড়ে 100 কিমি এবং বিস্তার কয়েক লক্ষ থেকে কয়েক কোটি বর্গকিমি হয়। এই পাতগুলি সান্দ্র অ্যাসথেনােস্ফিয়ারের (গুরুমণ্ডলের উপরিভাগ) ওপর ভাসমান অবস্থায় আছে।

 

গুরুমণ্ডলীয় ম্যাগমায় পরিচলন স্রোতের জন্য পাতগুলি গতিশীল হয় এবং এই গতিশীলতার কারণে পাতসীমান্ড (দুটি পাত যেখানে মিলিত হয় পরস্পরের থেকে দূরে সরে যায়) বরাবর নানা ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়। পাতসীমান্ত তিনপ্রকার, যথা—1. অভিসারী পাতসীমান্ত-পরস্পরের অভিমুখে গতিশীল পাতসীমান্ত, 2. প্রতিসারী পাতসীমান্ত—পরস্পরের বিপরীত দিকে গতিশীল পাতসীমান্ত, ও নিরপেক্ষ পাতসীমান্ত—পাশাপাশি বিপরীত দিকে সরণশীল পাতসীমান্ত।

 

 

 

অভিসারী পাতসীমান্তে ভঙ্গিল পর্বতের উত্থান

 

 

অভিসারী পাতসীমান্তে ভঙ্গিল পর্বতের উত্থান

 

উল্লিখিত তিন ধরনের পাতসীমান্তের মধ্যে কেবল অভিসারী পাতসীমান্তে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি হয়।

 

অভিসারী পাতসীমান্ত প্রধানত তিন প্রকার হয়, যথা—1. যখন দুটি মহাদেশীয় পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয়, তাকে মহাদেশীয়মহাদেশীয় পাতসীমান্ত বলে। 2. যখন একটি মহাদেশীয় এবং একটি মহাসাগরীয় পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয়, তাকে মহাদেশীয় মহাসাগরীয় পাতসীমান্ত বলে এবং 3. দুটি মহাসাগরীয় পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হলে তাকে মহাসাগরীয় মহাসাগরীয় পাতসীমান্ত বলে। এই তিন প্রকার অভিসারী পাত সীমান্তের মধ্যে প্রথম দুটি পাতসীমান্তে ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি হয়। এই অঞলে ভঙ্গিল পর্বত উৎপত্তির প্রক্রিয়া নীচে আলােচনা করা হল— 

 

1. মহাদেশীয়-মহাদেশীয় পাতসীমান্ত : সাগর-মহাসাগরের কোনাে অগভীর সংকীর্ণ অংশ, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে পলি, নুড়ি, বালি সঞিত হয়ে ক্রমশ ভরাট হতে থাকে, সেই অংশটিকে মহীখাত বলে। মহীখাতের দু-পাশের মহাদেশীয় পাত দুটি যতই পরস্পরের কাছে আসে, ততই পার্শ্বচাপে ওই অগভীর সমুদ্র তথা মহীখাত সংকীর্ণ হয়। কালক্রমে মহীখাতে সঞ্চিত পলিরাশি দু-পাশের প্রচণ্ড চাপের (পার্শ্বচাপ) ফলে বড়াে বড়াে ভাজের আকারে ওপরে উঠে ভঙ্গিল পর্বত (fold mountain) গঠন করে। উদাহরণ—ভারতীয় পাত ও ইউরেশীয় পাত পরস্পর কাছে আসার ফলে উভয়ের সীমান্তে অবস্থিত টেথিস মহীখাতের সঞ্চিত পলিরাশি তথা পাললিক শিলায় ভঁজ পড়ে হিমালয় পর্বতের উত্থান ঘটেছে।

 

 2. মহাদেশীয়-মহাসাগরীয় পাতসীমান্ত : যখন একটি মহাদেশীয় পাত এবং একটি মহাসাগরীয় পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয়, তখন অপেক্ষাকৃত ভারী শিলাগঠিত মহাসাগরীয় পাতটি হালকা মহাদেশীয় পাতের তলায় নিমজ্জিত হয় এবং তারপর ওই নিম্নগামী মহাসাগরীয় পাতটি যতই এগােতে থাকে, ততই তার সামনের অংশে একটি ধনুকের মতাে নিম্নবাঁকের সৃষ্টি হয়, যাকে অধঃপাত মণ্ডল (subduction zone) বা বেনিয়ফ জোন বলা হয়। এরপর ওই পাতসীমান্ত বরাবর সৃষ্ট মহীখাত অল ক্রমশ পলি ভরাট হতে থাকে। পরবর্তী পর্যায়ে পাত দুটি যখন পরস্পরের দিকে আরও অগ্রসর হয়, তখন দু-পাশের চাপ (পার্শ্বচাপ) এতটাই বেড়ে যায় যে তার ফলে মহীখাতে সঞ্চিত পলিরাশি তথা পাললিক  শিলাস্তর কুঁচকে গিয়ে বা ভাজপ্রাপ্ত হয়ে ওপরে উঠে যায় এবং ভঙ্গিল পর্বতের (fold mountain) সৃষ্টি হয়। উদাহরণ—আমেরিকা পাত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাতের অভিসারী সীমান্তে সৃষ্ট মহীখাতের পাললিক শিলাস্তরে ভাজ পড়ে রকি পর্বতের সৃষ্টি হয়েছে।

 

 

● পাতসংস্থান তত্ত্বের আলােকে হিমালয় পর্বতের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করাে। 

 

পাতসংঘন তত্ত্বের আলোকে হিমালয় পর্বতের উৎপত্তি।

 

পাতসংস্থান মতবাদ অনুসারে, পৃথিবীর ভূত্বক কতকগুলি চলমান খণ্ডে বিভক্ত, যেগুলিকে পাত (Plate) বলা হয়। 1968 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি ভূপদার্থবিদ পিঁচো (X Le Pichon) এই পাতসংস্থান মতবাদকে সরলভাবে ব্যাখ্যা করে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করেন। বর্তমানে ভূবিজ্ঞানীদের মতে ভূত্বক 7 টি বৃহদায়তন, ৪ টি মাঝারি আয়তন এবং 20 টি ক্ষুদ্রায়তন পাতের সমন্বয়ে গঠিত। পাতগুলির আয়তন কয়েক লক্ষ বর্গকিমি থেকে কয়েক কোটি বর্গকিমি পর্যন্ত হতে পারে। পাতগুলি ভূঅভ্যন্তরস্থ অ্যাসথেনােস্ফিয়ার স্তরের ওপর ভাসমান অবস্থায় আছে এবং গুরুমণ্ডলে সৃষ্টি হওয়া পরিচলন স্রোতের প্রভাবে এগুলি সর্বদা চলমান। পাতগুলির চলাচল বা সঞরণের ভিত্তিতে তিন ধরনের পাত সীমান্ত সৃষ্টি হয়, যথা—1. পরস্পর বিপরীতমুখী বা প্রতিসারী পাতসীমান্ত, 2. পরস্পরের অভিমুখে অগ্রসরমান সংঘর্ষ সীমান্ত বা অভিসারী পাতসীমান্ত এবং 3. পাশাপাশি পরস্পরের বিপরীত দিকে সরণশীল নিরপেক্ষ পাতসীমান্ত।

 

ভগিল পর্বত সৃষ্টি ও পাতসীমান্ত : ভঙ্গিল পর্বত সাধারণত পরস্পরের দিকে এগিয়ে আসা অর্থাৎ অভিসারী পাতসীমান্তে সৃষ্টি হয়। এই অভিসারী পাতসীমান্ত আবার 3 প্রকার  হয়। – 1  মহাদেশীয়-মহাদেশীয় পাতসীমান্ত, 2. মহাদেশীয়- মহাসাগরীয় পাতসীমান্ত এবং 3 মহাসাগরীয় মহাসাগরীয় পাতসীমান্ত। এদের মধ্যে প্রথম প্রকার পাতসীমান্তে হিমালয় পর্বত সৃষ্টি হয়েছে। 

 

হিলিয় পর্বত সৃষ্টি ও পাতসীমান্ত : হিমালয় একটি নবীন ভঙ্গিল পর্বতমালা। মহাদেশীয়-মহাদেশীয় পাতসীমান্তে এর উত্থান ঘটেছে।

 

আজ যেখানে হিমালয় পর্বত অবস্থান করছে বহু কোটি বছর পূর্বে ওই স্থানে একটি গভীর সমুদ্র বা মহীখাত (geosyncline) ছিল। এর নাম ছিল টেথিস ।ওই টেথিস মহীখাতের উত্তর দিকে একটি মহাদেশীয় পাত ছিল, যার নাম ইউরেশী পাত। আর টেথিসের দক্ষিণ দিকে ছিল আর একটি তাদের মহাদেশীয় পাত, যার নাম ভারতীয় উপদ্বীপীয় পাত। ওই দুই মহাদেশীয় পাত থেকে বিভিন্ন ভুপ্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত এবং বাহিত পলিরাশি টেথিসের তলদেশে সঞ্চিত হতে থাকে। পরস্পরের দিকে অগ্রসরমান এই দুই পাতের মধ্যে ভারতীয় উপদ্বীপীয় পাতটি বেশি গতিশীল ও ভারী হওয়ার অপেক্ষাকৃত ধীরগতিসম্পন্ন ইউরেশীয় পাতকে ধাক্কা মারে এবং হালকা ইউরেশীয়া পাতের তলায় ঢুকে যায়। এর ফলে টেহিস নহীখাতে সঞ্চিত পলিরাশিতে প্রবল চাপ পড়ে এবং ভাঁজের সৃষ্টি হয়। ওই ভাঁজ ক্রমশ উঁচু হয়ে হিমালয় পর্বত গঠন করে ভূতত্ত্ববিদদের মতে, এখনও ভারতীয় উপদ্বীপীয় পাতটি প্রতি বছর গলে 2-4 সেমি হারে উত্তরদিকে এগিয়ে চলেছে। তাই হিমালয় পর্বতের গঠন প্রক্রিয়া এখনও সক্রিয় আছে।

 

● ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির পর্যায়গুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

 

ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির বিভিন্ন পর্যায়

 

ভূবিজ্ঞানীদের মতে হিমালয়, আল্পস প্রভৃতি নবীন ভঙ্গিল পর্বতগুলি সৃষ্টি হওয়ার আগেও বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে অনেক ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হয়েছিল। সেগুলিকে প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে, ভঙ্গিল পর্বতগুলির সৃষ্টি হয়েছে তিনটি পর্যায়ে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুটি পর্যায়ের মধ্যে একটি শান্ত অবস্থা বিরাজ করে। এই পর্যায়গুলি হল—

 

1. সিরিয়ান ও ডেভােনিয়ান পর্ব : ভূতাত্ত্বিক সময়ের হিসাবে প্যালিওজোইক যুগের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ সিলুরিয়ান ও ডেভােনিয়ান উপযুগে (বিশেষত 37.2 কোটি থেকে 44.5 কোটি বছর আগে) আমেরিকা ও ইউরােপীয় ভূখণ্ডের অভিসারী চলনে ফলে আটলান্টিক মহাসাগর সংকুচিত হয়। এই কারণে ভূত্বকে ভর্তি পড়ে যেসব পর্বতশ্রেণির সৃষ্টি হয়, তাদের ক্যালেডােনিয়ান ভাড় বলে। এই ভঁজের কারণে উত্তর আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, স্ক্যান্ডেনেভিয়ার উপদ্বীপে ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হয়। এরপং কিছুকাল শান্ত অবস্থা বিরাজ করে।

 

2. কার্বোনিফেরাস পর্ব : প্যালিওজোইক যুগের শেষ দিবে কার্বোনিফেরাস এবং পার্সিয়ান উপযুগে (29 থেকে 35 কোটি বই আগে) আবার ভূত্বকে ভাজ পড়ে পর্বতশ্রেণি গঠিত হয়, এদের বন হয় আলটাইড (হার্সিনিয়ান) ভঁজ। ইউরােপে ক্যালেডােনিয়াল পর্বতের দক্ষিণ দিকে আরমােরিকান ও হারসিনিয়ান পর্বত এব উত্তর আমেরিকার অ্যাপালেশিয়ান পর্বত এই সময় গঠিত হয় রাশিয়ার ইউরাল, ভারতের আরাবল্লি, চিনের তিয়েনসান নানসান পর্বতও এই সময়ে সৃষ্টি হয়। :

 

3. টাশিয়ারি পর্ব: আলটাইড গিরিমের পর টার্শিয়ারি যুগে (20 লক্ষ বছর হকে (5.5 কোটি বছর আগে) আবার ভূত্বকে ভাজ তে থাকে। এর ফলে আলটাইড পর্বতশ্রেণির দক্ষিণ দিকে নতুনভাবে পর্বতশ্রেণি গঠিত হয়। একে আলপাইন গিরিম বলে। আল্পস, হিমালয়, রকি ও আন্দিজ পর্বতশ্রেণি এই সময় সৃষ্টি হয়। প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে ক্ষয় হওয়ার ফলে প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বতগুলি বর্তমানে নীচু ও বিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষয়জাত মালভূমিতে পরিণত হয়েছে। যেমন—ইউরােপের ক্যালেডােনিয়ান পর্বতশ্রেণি।

 

 

● আগ্নেয় পর্বতের উৎপত্তি ব্যাখা করাে এবং আগ্নেয় পর্বতের বৈশিষ্ট্য লেখাে। 

অগ্নেয় পর্বতের উৎপত্তি

 

ভূ-অভ্যন্তরের ম্যাগমা কখনাে কখনো ভূত্বকের কোনাে গভীর ফাটল বা সুরঙ্গ পথ ধরে ভূপঠে উঠে আসে এবং নির্গমন মুখের চারধারে স্তুপকৃত হয়ে জমতে জমতে পর্বতের আকার ধারণ করে। এইভাবে আগনিয় পদার্থ সঞ্জয়ের ফলে সৃষ্টি হয় বলে এর নাম আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত।

 যেমন জাপানের ফুজিয়ামা, ইটালির ভিসুভিয়াস প্রভৃতি আগ্নেয় পর্বত পাত সংস্থান তত্ত্বের সাহায্যে আগ্নেয় পর্বতের উৎপত্তি সহজে ব্যাখ্যা করা যায়।

 

1. অভিসারী পাত সীমান্ত: যখন দুটি পাত পরপরের দিকে অগ্রসর হয় তখন তাদের মধ্যবর্তী পাত সীমান্ত কে অভিসারী পাতসীমান্ত বলে। দুটি পাতের সংঘর্ষে অপেক্ষাকৃত ভারী পাতটি নিচে নেমে যায় ভূগর্ভস্থ তাপে ওই নিমজ্জিত পাতের সামনের অংশ গলে গিয়ে ঘাটাল বরাবর বাইরে বেরিয়ে এসে সঞ্চিত হয়ে আগ্নেয় পর্বতের সৃষ্টি করে।

 

 

2. প্রতিসারী পাতসীমান্ত : যে পাতসীমান্ত বরাবর দুটি পাত পরস্পরের বিপরীত দিকে সালিত হয়, তখন সেই পাতমীমান্তকে প্রতিসারী পাতসীমান্ত বলে। এক্ষেত্রে দুটি পাতের বিপরীত দিকে চলনের ফলে মধ্যবর্তী শূন্যস্থান বরাবর ভূঅভ্যন্তরের ম্যাগমা বাইরে বেরিয়ে এসে আগ্নেয়গিরি তথা আগ্নেয় পর্বতের সৃষ্টি করে।

 

3. উত্তাপ কেন্দ্র বা হটস্পট : ভূগর্ভের যেসব সথানে পরিচলন স্রোতের উর্ধ্বমুখী প্রবাহের কারণে তাপমাত্রা তাত্যন্ত বেশি, সেই  উত্তাপ কেন্দ্র বা হটস্পটগুলির ওপর সৃষ্ট ম্যাগমার উর্ধ্বমুখী প্রবাহ বা প্লিউম ভূত্বকের দুর্বল অংশ ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে এসে আগ্নেয়গিরি তথা আগ্নেয় পর্বত সৃষ্টি করে।

 

উদাহরণ : সাহারার টিবেস্টি এরকম একটি আগ্নেয় পর্বত।

 

 আগ্নেয় পর্বতের বৈশিষ্ট্য 

 

1. আকৃতি : আগ্নেয় পর্বতের আকৃতি কিছুটা ত্রিভুজ বা শর মতাে। :

 

2. জ্বালামুখের উপস্থিতি : আগ্নেয় পর্বতে এক বা একাধিক জ্বালামুখ থাকে।

 

3. ম্যাগমা গহ্বরের সাথে সংযােগ : একটি নলাকৃতি পথের মাধ্যমে ভূগর্ভের ম্যাগমা গহ্বরের সাথে আগ্নেয় পর্বতের সংযােগ থাকে।

 

4. ঢাল : আগ্নেয় পর্বতের ঢাল যথেষ্ট খাড়া হয়।

 

5. উচ্চতা : আগ্নেয় পর্বতের উচ্চতা মাঝারি প্রকৃতির হয়। তবে, অগ্ন্যুৎপাতের ফলে এর উচ্চতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে।

 

6. ভূগঠন : অস্থিতিশীল ভূগঠনযুক্ত অঞ্চলে আগ্নেয় পর্বত সৃষ্টি হয় (যেমন- সঞ্চরণশীল পাতসীমান্ত বরাবর)। :

 

7. শিলা ; মূলত আন্নিক ও ক্ষারকীয় প্রকৃতির আগ্নেয়শিলা দ্বারা গঠিত হয়।

 

 

● গঠন ও আকৃতি অনুসারে আগ্নেয়গিরির শ্রেণিবিভাগ করে আলােচনা করাে।

 

অথবা, গঠন ও আকৃতি অনুসারে আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বতের প্রকারভেদ আলােচনা করাে। 

 

গঠন ও আকৃতি অনুসারে আগ্নেয়গিরির শ্রেণিবভাগ

 

গঠন ও আকৃতি অনুসারে আগ্নেয়গিরি প্রধানত চার প্রকার। এই চার প্রকার আগ্নেয়গিরির সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হল—

 

 1. শঙ্কু আকৃতির আগ্নেয়গিরি : গঠনের প্রক্রিয়া: অনেকসময় ভূগর্ভ থেকে উৎক্ষিপ্ত ম্যাগমা, ভস্ম, শিলাখণ্ড (পাইরােক্লাস্ট) জ্বালাম চারপাশে সঞ্চিত হয়ে এই ধরনের আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি করে। এজন্য একে অনেকসময় পাইরােক্লাস্ট শকুও বলা হয়। 

বৈশিষ্ট্য [i] এই জাতীয় আগ্নেয়গিরির ঢাল সাধারণত উত্তল হয়। [i] সূক্ষ পদার্থে গঠিত শকুর ঢাল স্থল পদার্থে গঠিত শঙ্কুর ঢাল অপেক্ষা কম খাড়া হয়। [i] এই ধরনের আগ্নেয়গিরি সাধারণত কম উচ্চতাবিশিষ্ট হয়। উদাহরণ: মেক্সিকোর পারিকুর্টিন।

 

2. গম্বুজ আকৃতির আগ্নেয়গিরি : গঠনের প্রক্রিয়া: কখনাে কখনাে কোনােরকম বিস্ফোরণ ছাড়াই ভূপৃষ্ঠের কোনাে ফাটল বা ছিদ্রপথ দিয়ে ভূগর্ভস্থ লাভা ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে এবং জ্বালামুখের চারপাশে সঞ্চিত হয়ে বিশালাকার গম্বুজ আকৃতির আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি করে। 

বৈশিষ্ট্য: [1] এই প্রকার আগ্নেয়গিরির ঢাল কম হয়। [ii] এই ধরনের আগ্নেয়গিরি ক্ষারকীয় বা আম্লিক যে-কোনাে ধরনের লাভার দ্বারাই হতে পারে। উদাহরণ : হাওয়াই দ্বীপের মৌনালােয়া। 

 

3. বিস্ফোরণ জ্বালামুখবিশিষ্ট আগ্নেয়গিরি: গঠনের প্রক্রিয়া: অনেকসময় প্রচণ্ড বিস্ফোরণের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের শিলাখণ্ড ওপরে উৎক্ষিপ্ত হয়ে একটি বড়াে ধরনের গহ্বর বা গর্ত সৃষ্টি হয় এবং তার চারপাশে শিলাখণ্ড ও লাভা সঞ্চিত হয়ে বিস্ফোরণ জ্বালামুখবিশিষ্ট আগ্নেয়গিরির সৃস্টি করে।

 

বৈশিষ্ট্য: [i] এই জাতীয় আগ্নেয়গিরিতে একটিমাত্র নিম্ন জ্বালামুখ থাকে। [i] বিস্ফোরণের সময় তরল লাভা নির্গত হয়ে জ্বালামুখের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। উদাহরণ : আইসল্যান্ডের ক্রাফলা।

 

4 কম্পোজিট বা বিমিশ্র শঙ্কুবিশি: গঠনের প্রক্রিয়া : অনেকদিন ধরে ছােটোবড়াে নানা ধরনের অগ্ন্যুৎপাত হলে এই জাতীয় আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি হয়। অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে উৎক্ষিপ্ত শিলাখণ্ড ছিদ্রপথের চারপাশে জমা হয় এবং পরে তার ওপর লাভাপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়ে। এইভারে বারেবারে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে আগ্নেয়গিরি ক্রমশ উঁচু হয়ে যায় এবং তার গায়ে অনেকগুলি স্তরের (লাভাস্তর) সৃষ্টি হয়ে বিমিশ্র শঙ্কুজাতীয় আগ্নেয়গিরির উৎপত্তি ঘটে। পৃথিবীর অধিকাংশ আগ্নেয়গিরি এই জাতীয়।

 

বৈশিষ্ট্য [i] এই প্রকার আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাতের সময়ে আগের শঙ্কু আকৃতির ভূমিরূপ ধ্বংস হয়ে নতুন শঙ্কুর সৃষ্টি হয়। [ii] এই ধরনে আগ্নেয়গিরির ঢাল সমান ও খাড়া হয়।

 উদাহরণ : জাপানের ফুজিয়ামা।

 

● স্তুপ পর্বতের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করাে ও বৈশিষ্ট্য লেখাে।

 

 

শুপ পর্বতের উৎপত্তি

 

মহীভাবক আলােড়নের ফলে ভূপৃষ্ঠে সৃষ্ট চ্যুতিরেখার একদিকের শিলাস্তর পার্শ্ববর্তী তাংশে অপেক্ষা ওপরে উঠে পর্বতের আকার ধারণ করলে, তাকে স্থূপ পর্বত বলে। যেমন—ভারতের সাতপুরা পর্বত। ” স্তুপ পর্বত তিনটি উপায়ে সৃষ্টি হতে পারে। সেগুলি হল—1. দুটি সমান্তর চ্যুতিরেখার মধ্যবর্তী অংশ ভূ-আলােড়নের ফলে ওপরে উঠে পর্বতে আকার নিতে পারে। উদাহরণ: সাতপুরা এই ধরনের স্কুপ পর্বত। 2. । সমান্তরাল চ্যুতিরেখার দুই পাশের ভূমি নীচে বসে গেলে, মধ্যবর্তী ভূমিভাগ একই অবস্থানে থেকে স্কুপ পর্বত গঠন করে। 3. সমান্তরাল চ্যুতিরেখা দুটির মধ্যবর্তী অংশ নীচে বসে গেলে ওই অবনমিত অংশে দু-পাশে যে দুটি উচ্চভূমি সৃষ্টি হয়, তাকেও স্তুপ পর্বত বলে। উদাহরণ: ফ্রান্সের ভােজ এবং জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট এই ধরনের দুটি তুপ পর্বত 4. চুতির ফলে বেঁকে বা তির্যকভঙ্গিতে ভূমির উত্থান হয়ে স্তুপ সৃষ্টি হতে পারে। উদাহরণ: দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বত।

 

 

স্তুপ পর্বতের বৈশিষ্ট্য

 

তূপ পর্বতের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

 

1. উৎপত্তির সময়কাল : ক্রুপ পর্বতের উৎপত্তি আকস্মিকভাবে ঘটে। 

2. উচ্চতা : ভঙ্গিল পর্বত অপেক্ষা স্থূপ পর্বতের উচ্চতা কম হয়। 

3. শীর্ষভাগ: স্তৃপ পর্বতের শীর্ষভাগ চ্যাপটা ধরনের হয় এবং সেখানে শৃঙ্গ বিশেষ থাকে না।

 

4. ভূমির ঢাল : স্তুপ পর্বতের চারপাশের ঢাল খাড়া থাকে।

 

5. গ্ৰস্ত উপত্যকা ; স্তুপ পর্বতের পাশে গ্রস্ত উপত্যকার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

 

6. বিস্তার : স্তুপ পর্বতের বিস্তার ভঙ্গিল পর্বতের তুলনায় কম হয়।

 

 7. শিলা : ভূপ পর্বত পাললিক এবং রূপান্তরিত শিলা দিয়ে গঠিত হয়।

 

৪. ভূ-আলোড়ন : স্তুপ পর্বতের দু-পাশে খাড়া ঢাল থাকার জন্য জলপ্রপাত সৃষ্টি হতে পারে।

 

● ক্ষয়জাত পর্বতের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করাে ও বৈশিষ্ট্য লেখাে। 

 

ক্ষয়জাত পর্বতের উৎপত্তি

 

অনেক সময় নদী, হিমবাহ, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ প্রভৃতি বিভিন্নপ্রকার বৰ্হিজাত প্রাকৃতিক শক্তিসমূহের ক্ষয়কার্যের ফলে প্রাচীন পার্বত্যভূমি বা উচ্চভূমির নরম শিলাগঠিত অংশসমূহ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সমভূমির আকার ধারণ করে, কিন্তু কঠিন শিলাগঠিত অংশসমূহ কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে উচ্চভূমি বা পর্বতের আকারে দাঁড়িয়ে থাকে। এই ধরনের উচ্চভূমি ক্ষয়জাত পর্বত নামে পরিচিত। যেমন ভারতের আরাবল্লি পর্বত। মূল পর্বত বা মালভূমির অবশিষ্ট অংশ নিয়ে গঠিত হয় বলে ক্ষয়জাত পর্বতের আর এক নাম অবশিষ্ট পর্বত। ক্ষয়জাত পর্বত সাধারণত দু-ভাবে সৃষ্টি হয়—

 

1. শিলাস্তরের বিষম গঠন : কোনাে উঁচু পর্বত বা উঁচু মালভূমি অল একইসাথে কঠিন ও কোমল শিলা দিয়ে গঠিত হলে, কোমল শিলা ক্ষয়কারী শক্তিগুলির প্রভাবে সহজেই ক্ষয় পায়। তখন কঠিন শিলায় গঠিত অংশগুলি পর্বতের অবস্থান যেমন—ভারতের আরাবল্লি পর্বত। 

 

2. পাললিক শিলাস্তরে অগ্ন্যুৎপাত : পাললিক শিলাস্তরে উদবেধী অগ্ন্যুৎপাতের ফলে, ম্যাগমা জমা হয়ে কঠিন আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি করে। কালক্রমে ওপরের পাললিক শিলা অপসারিত হলে ওই কঠিন। আগ্নেয় শিলাস্তর উন্মােচিত হয় এবং অবশিষ্ট পর্বত (residual mountain) রূপে অবস্থান করে। যেমন—উত্তর আমেরিকার হেনরি পর্বত।

 

ক্ষয়জাত পর্বতের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

 

1. উৎপত্তি : দীর্ঘদিন ধরে বহির্জাত প্রাকৃতিক শক্তিসমূহের ক্ষয়কার্যের ফলে ক্ষয়জাত পর্বত সৃষ্টি হয়।

 

2. উচ্চতা : ক্ষয়জাত পর্বতের উচ্চতা কম হয় এবং ক্ষয়কার্য ক্রিয়াশীল থাকায় উচ্চতা ক্রমশ হ্রাস পায়।

 

3. উপরিভাগ : ক্ষয়জাত পর্বতের উপরিভাগ আবহবিকার ও  ক্ষয়ের ফলে গােলাকার হয়।

 

4. শিলা : এই পর্বতগুলি সাধারণত কঠিন আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা দ্বারা গঠিত হয়।

 

5. ঢাল : ক্ষয়জাত পর্বতের ঢাল সাধারণত কম হয়।

 

: 6. বন্ধুরতা : এই ধরনের পর্বতের বন্ধুরতা খুব বেশি হয় না। 

 

7. প্রাচীনত্ব : ক্ষয়জাত পর্বতগুলি বয়সে প্রাচীন হয়।

 

 

● উদাহরণসহ পর্বতের গুরুত্ব আলােচনা করাে।

Is

 

পর্বতের গুরুত্বসমূহ

 

1. নদনদীর উৎস: পার্বত্য অঞলের বরফগলা জল এবং ঝরনা থেকে বহু নদনদীর সৃষ্টি হয়। মানবজীবনে এইসব নদনদীর গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন—হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল থেকে সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রম্মপুত্র যমুনা, তিস্তা প্রভৃতি নদীর সৃষ্টি হয়েছে।

 

2. জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ : ১. অধিক উচ্চতার কারণে পর্বতের উপরিভাগে শীতল জলবায়ু বিরাজ করে, অনেকক্ষেত্রে তুষারপাতও হয়। ২. পর্বতের প্রতিবাত ঢালে জলীয় বাষ্প বাধা পেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায় এবং অনুবাত ঢালে বৃষ্টিচ্ছায় অঞলের সৃষ্টি হয়। ৩. পর্বত বায়ুপ্রবাহকেও নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন শীতকালে সাইবেরিয়ার শীতল বায়ু হিমালয় পর্বতে বাধা পায় বলে  ভারত তীব্র শীত থেকে রক্ষা পায়। 

 

3. জলবিদ্যুতের উৎস : উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলিতে সারাবছর জল থাকে। (বরফগলা জলে পুষ্ট বলে) এবং নদীগুলি খরস্রোতা হয় বলে এই জল থেকে প্রযুক্তি সহায়তায় জলবিদ্যুৎ তৈরি করা যায়। 

 

4. বনজ সম্পদ : পার্বত্য অঞলের অরণ্য থেকে প্রচুর পরিমাণে বনজ সম্প। যেমন—কাঠ, মধু, ফল, ভেষজ ওষুধ প্রভৃতি সম্পদ পাওয়া যায়।

 

5. পর্যটন শিল্প : তুষারক্ষেত্র, নদী, জলপ্রপাত, উপত্যকা, ফুল ও ফলের বাগিচা প্ৰভৃতি মনােরম ভূদৃশ্য মানুষকে আকর্ষণ করে বলে পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটে।  যেমন — হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের অঞলের সিমলা, কাশ্মীর, দার্জিলিং, প্রভৃতি পর্যটনের জন্য খ্যাত।

 

6.পশুপালন :পর্বতের ঢাল বরাবর বিস্তৃত তৃণভূমিগুলিতে পশুপালন করা হয়, যা পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীদের অন্যতম জীবিকা 

 

7. নিরাপত্তা প্রদান সুউচ্চ পর্বতমালা প্রাচীরের মতাে অবস্থান করায় বাইরের দেশের শত্রুরা সহজে দেশের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে ।

 

8. অন্যান্য গুৰুত্ব : 1. পর্বত আরােহীদের কাছে পর্বতের গুরুত্ব অপরিসীম। 2. ভঙ্গিল পর্বতের শিলায় বিভিন্ন ধরনের জীবাশ্ম পাওয়া প্রাচীন জীবের গবেষণায় সহায়ক হয়। 3.পর্বতের উৎপত্তি ভূতাত্ত্বিক, ভূবিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 4. বিভিন্ন ধরনের পরিবেশগত বৈচিত্র্য স্থানীয় মানুষের আর্থসামাজিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে। 5.পর্বতের বৈচিত্র্য সাংস্কৃতিক পরিবেশকেও প্রভাবিত করে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *