বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো আন্তর্জাতিক গল্পের প্রশ্ন উত্তর এবং বিষয়বস্তু ও নামকরণ আলোচনা
বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো আন্তর্জাতিক গল্পের প্রশ্ন উত্তর এবং বিষয়বস্তু ও নামকরণ আলোচনা
বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ (১৯২৭-২০১৪)-মানবেন্দ্র বন্দোপাধ্যায়।
বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো প্রশ্ন উত্তর:
প্রশ্নঃ) পড়ে থাকা শরীরটার দিকে তাকিয়ে তারা কেমন হতভম্ব হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল”কারা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল? পড়ে থাকা শরীরটার বিবরণ তােমার নিজের ভাষার লেখাে। ১+৪
উত্তরঃ
গার্সিয়া মার্কেজের ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো বন্ধে -এলিসেন্দারা চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল।
কাদার মধ্যে মুখ গুঁজে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা থুরথুরে বুড়াের দিকে তাকিয়ে পেলাইও ও এলিসেন্দা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। তার পরনে ন্যাকড়াকুড়ুনির মতাে ময়লা, ছেড়া পােশাক, টাকপড়া চকচকে আবার বিবর্ণ কয়েকটি চুল আর ফোকলা মুখে দাঁত ছিল খুবই কম। প্রস্থ ঝড়বৃষ্টিতে এই জরাগ্রস্ত বৃদ্ধের চেহারার যাবতীয় আঁকজমক উধাও হরে গিয়েছিল। তার পিঠে ছিল একজোড়া অতিকায় শিকারি পাখির ডানা | নােংরা এবং অর্ধেকটাই পালক খসা। কাদায় তা জট পাকিয়ে গিয়েছিল পেলাইও-এলিসেন্দা তাদের বিস্ময়ের প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে যখন তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করল, তীক্ষ্ণ এক দুর্বোধ্য বুলিতে সে তার জবাব দিয়েছিল| বৃদ্ধের এই অবাস্তব, অসম্ভব এবং জরাজীর্ণ চেহারা দেখে পেলাই: ও এলিসেন্দা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল |
বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো বড় প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নও) বিশাল ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়ােকে দেখে বিভিন্ন জনের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তা নিজের ভাষায় লেখাে।
উত্তর:
গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের লেখা ‘ বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ে গল্পে পেলাইওর বাড়িতে ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ােকে দেখে সমাজের নানা স্তরের মানুষের নানা প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। পেলাইও এবং এলিসেন্দা প্রথমে মনে হয়েছিল যে, সে ছিল তুফানে ডুবে যাওয়া কোনাে ভিনদেশি । জাহাজের নিঃসঙ্গ নাবিক। পেলাইও-দের জ্ঞানী প্রতিবেশিনী বলেছিল যে ডানাওয়ালা বুড়াে আসলে এক ফরিশতা বা দেবদূত। কৌতূহলী জনতার একাংশের আচরণে, রঙ্গতামাশা করার ধরনে মনে হচ্ছিল যে, থুরথুরে বুড়ােটি যেন কোনও অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন জীব নয়, সার্কাসের জন্তু আবার দর্শকদের মধ্যে সরলমতি কেউ ভেবে নিয়েছিল তাকে সমস্ত জগতের পুরপিতা করে দেওয়া উচিত। কঠিন হৃদয়ের কারও কারও মনে হয়েছিল, তাকে একজন পাঁচতারা সেনাপতির পদে উন্নীত করে দেওয়া দরকার, যাতে দেশের হয়ে লড়াই করে সব যুদ্ধই সে জিতিয়ে দিতে পারে। কিছু কিছু দর্শক ভেবেছিল যে, ডানাওয়ালা বুড়াে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। অনেকের আবার মনে হয়েছিল ওই বুড়ােকে দিয়ে জ্ঞানে গুণে সেরা এক ডানাওয়ালা জাতির জন্ম দেওয়া সম্ভব হলে, তারাই বিশ্বব্রম্মান্ডের দায়িত্ব নিতে পারবে। পাদরি গােনসাগার অবশ্য এই ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়ােকে জোচ্চোর ফেরেববাজ বলে মনে হয়। গােনসাগার মতে, এই ডানাওয়ালা বুড়াে মােটেও কোনাে দেবদূত নয়, কারণ তাকে বড্ড বেশি মানুষের মতাে দেখাচ্ছে, এবং সে মােটেও ঈশ্বরের ভাষা বােঝে না। সে জানেও না, কীভাবে যাজক বা পাদরিদের সম্ভাষণ করে কথা বলতে হয়। পাদরি গােনসাগা এও ভেবেছিলেন যে, বুড়াে লােকটি হয়তাে আসলে শয়তান। রােমান ক্যাথােলিকদের উৎসবকে আচমকা পন্ড করে দেওয়ার তালে আছে সে।
প্রশ্নঃ) “সকাল সাতটার আগেই পাদে গােনগা এসে হাজির” —পাড়ে গােনসাগা কে? তিনি কেন এসেছিলেন? ‘বন্দীর ভবিষ্যৎ নিয়ে জড়াে হওয়া দর্শকরা কী ভেবেছিল? ১+১+৩
উত্তর
পাদ্রে গােনসাগা একজন যাজক পুরােহিত।
তিনি এসেছিলেন বিশাল ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়ােটি আসলে কে, তা নির্ধারণ করতে।
বন্দীর ভবিষ্যৎ নিয়ে জড়াে হওয়া দর্শকরা নানারকম ভাবনাচিন্তা করেছিল| পেলাইও-দের জ্ঞানী প্রতিবেশিনী ডানাওয়ালা বুড়াে সম্পর্কে মন্তব্য করেছিল যে, বুড়ােটি একটি দেবদূত| আবার কৌতূহলী জনতার একাংশের ইচ্ছা ছিল বুড়ােটার সঙ্গে একটু মজা করার। তাদের কাছে বুড়ােটি কোনাে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন জীব নয়, যেন সার্কাসের জন্তু। আবার যারা সরলমতির দর্শক তাদের মধ্যে কেউ ভেবে নিয়েছিল তাকে সমস্ত জগতের পুরপিতা করে দেওয়া উচিত। যারা কঠিন হৃদয়ের আধিকারী তাদের মন্তব্য ছিল বুড়ােটাকে একজন পাঁচতারা সেনাপতির পদে উন্নীত করে দেওয়া দরকার, যাতে দেশের হয়ে লড়াই করে সব যুদ্ধ জিতিয়ে দিতে পারে। অর্থাৎ তারা ভেবে নিয়েছিল বুড়ােটি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। অনেকের মনে হয়েছিল যদি এর দ্বারা ডানাওয়ালা জাতির বংশবিস্তার হয় তবে সে জাতি হবে জ্ঞানে ও গুণে সবার সেরা এবং তারাই বিশ্বব্রয়ান্ডের দায়িত্ব নিতে পারবে। কিন্তু পাদরি গােনসাগার মনে হয়েছিল বুড়ােটি জোচ্চোর এবং ফেরেববাজ।
প্রশ্ন) সে তাে আর তখন তার জীবনের কোনাে উৎপাত বা জ্বালাতন নয়,বরং সমুদ্রের দিকচক্রবালে নিছকই কাল্পনিক একটা ফুটকিই যেন।”-উদ্দিষ্ট ব্যক্তিটিকে কাল্পনিক একটা ফুটকির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে কেন?
• উত্তর
মার্কেজের লেখা ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে তাকে দেখিয়ে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ আদায় করলেও ডানাওয়ালা বুড়ােটি কিন্তু উপেক্ষিতই ছিল এলিসেন্দাদের বাড়িতে। শহরে একটি মাকড়সা কন্যার প্রদর্শনী এলে, কৌতূহলী জনতা ডানাওয়ালা বুড়াে লােকটিকে ছেড়ে মাকড়সা-মেয়েটিকেই দেখতে ভিড় জমায়। ফলে, বাড়ির মালিক পেলাইও ও এলিসেন্দাদের দর্শনি বাবদ উপার্জন আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়, আর বুড়ো লােকটিও ক্রমাগত আরও অবহেলার শিকার হতে শুরু করে। অযত্নে অবহেলায় রােদেবৃষ্টিতে ভেঙে যায় তার থাকার খাঁচাটি! ‘দেবদূত’ আখ্যা পাওয়া বুড়ােটি এরপর ‘পথহারা দিকভােলা মুমূর্মুর মতাে’ এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়।
ডিসেম্বরের গােড়ায় প্রথম রােদুর ভরা দিনগুলি আসতেই সেই অসুস্থ মৃতপ্রায় বৃদ্ধের ডানায় ‘মস্ত কতগুলাে’ আড়ধরা পালক গজাতে থাকে তার ডানা ঝাপটানােটা তখনও অবশ্য ঠিক ওড়ার মতাে হয় না। এভাবেই সে একসময়ে নড়বড় করতে করতে ওপরে ওঠে৷ এলিসেন্দা লক্ষ করে ডানাওয়ালা বুড়াে ধীরে ধীরে উড়ে যায় বাড়িগুলাের উপর দিয়ে। শেষে তাকে আর দেখা যায় না। ডানাওয়ালা বুড়াে লােকটি তখন ‘উৎপাত’-এর গঞ্জনাকে বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে ফুটকির মতাে হয়ে দিগন্তে মিলিয়ে যায়।
প্রশ্নঃ) “এলিসেন্দা একটাস্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললে”—এলিসেন্দা কী দেখেছিল? এলিসেন্দা কেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল ? সেকেমনভাবেউড়ে যাচ্ছিল ?এলিসেন্দা কেনতাকিয়ে তাকে দেখতে থাকে? ১+১+১+২
উত্তর
পাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের লেখা ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে এলিসেন্দা দেখেছিল যে, ডানাওয়ালা বুড়াে তার বিশাল ডানা মেলে শেষ বাড়িগুলাের ওপর দিয়ে কোনােক্রমে উড়ে যাচ্ছে।
এলিসেন্দা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল, তার কারণ ডানাওয়ালা বুড়াে যেভাবে ক্রমশ উপদ্রব হয়ে উঠছিল তার জীবনে, তা থেকে তার মুক্তি ঘটেছিল অন্যদিকে ডানাওয়ালা বুড়ােরও এই অবাঞ্ছিত জীবন থেকে মুক্তি ঘটেছিল। ।
সে উড়ে যাচ্ছিল কোনাে মতিচ্ছন্ন জরাগ্রস্ত শকুনের ঝুঁকিতে ভরা ডানাঝাপটানি
এলিসেন্দা তাকিয়ে দেখতে থাকে, কারণ এর আগে সে ডানাওয়ালা বুড়ােকে দেখেছিল জরাগ্রস্ত অবস্থায়। কোনাে বিষয়েই প্রায় তার কোনাে উৎসাহ ছিল না| এই অবস্থায় যখন সে প্রথম ডানা ছড়িয়ে উড়বার চেষ্টা করে, অগােছালাে এবং অনভ্যস্ত সেই চেষ্টায় নখ দিয়ে মাটিতে আঁচড়ায়, তারপর ডানা ছড়িয়ে উড়ে যায়—তখন এই পরিবর্তন এলিসেন্দার দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেয়।
প্রশ্নঃ) ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো’ গল্পে জাদুবাস্তবতা (magic realism)র যে ব্যবহার লক্ষ করা যায় তা নিজের ভাষায় আলােচনা করাে।
উত্তর :
গাবরিয়েল গার্সিয়া মাকেজের লেখা গল্পটি আপাত অবাস্তব এবং অসম্ভবের। মধ্যেও অসামান্য ব্যঞ্জনা লাভ করেছে জাদুবাস্তবতার বিস্তারে। ডানাওয়ালা বুড়াে যেমন জাদু বাস্তবতাকে ধরে রেখেছে, মাকড়সায় রূপান্তরিত হওয়া মেয়েটিও এই জাদুবাস্তবতারই ফসল। কিন্তু গল্পের উপযােগী আবহ । পরিবেশ সৃজনে এবং ঘটনা পরম্পরার মধ্যেও লেখক জাদুবাস্তবতার প্রচ্ছন্ন। বিস্তার ঘটিয়েছেন। গল্পের শুরুতেই অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে বিষন্ন জগৎ, নবজাত শিশুর স্বরসব মিলিয়ে প্রকৃতি আর মানব অনুভূতির জাদুকরি বিস্তারে অপরিচিত আর অতিপ্রাকৃত মিলেমিশে একাকার হয়েছে। ডানাওয়ালা বুড়াে ‘দেবদূত’ আখ্যা পেয়েছে, আর তাকে কেন্দ্র করে কল্পনার নানামুখী বিস্তার ঘটেছে। তার সংস্পর্শে বা সংসর্গেই নাকি একজন অন্ধ আতুরের তিনটি নতুন দাঁত গজিয়েছিল, একজন পঙ্গু ব্যক্তি একটা লটারি প্রায় জিতে যাচ্ছিল, কিংবা একটি কুষ্ঠরােগীর ঘা থেকে গজিয়ে উঠেছিল সূর্যমুখী ফুল। বাস্তবের সঙ্গে অলৌকিকতার দ্বন্দ্বও এখানে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ডিসেম্বর মাসের প্রথম রােদুর পাওয়ার পর থেকেই তার ডানায় পালক গজিয়েছে এবং শেষ অবধি ডানা মেলে আকাশে উড়ে গিয়েছে সে| মানবসমাজের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যকে তথা যাজকতন্ত্রের ধর্মীয় গোঁড়ামিকে উন্মুক্ত করতে ডানাওয়ালা বুড়ােকে আশ্রয় করেই জাদুবাস্তবতাকে প্রায় অস্ত্রের মতাে ব্যবহার করেছেন লেখক মার্কেজ।
বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো
প্রশ্নঃ ) “বাড়ির মালিকদের অবশ্য বিলাপ করার কোনােই কারণ ছিল না।”-বাড়ির মালিকদের নাম কী? তাদের বিলাপ করার কারণ ছিল না কেন? ১+৪
উত্তর
গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ-এর লেখা ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে উল্লিখিত বাড়ির মালিকরা হল পেলাইও ও এলিসেন্দা।
মার্কেজের ‘ বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে মাকড়সায় রূপান্তরিত হওয়া মেয়েটি একটি ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনীর সূত্রে শহরে আসার পরে ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়ােটিকে নিয়ে মানুষের কৌতূহল কমে যায়। ফলে, পেলাইও-এলিসেন্দাদের উঠোনে তাকে দর্শনি দিয়ে দেখার জন্য মানুষের যে সারি দিগন্ত ছুঁয়েছিল, তা সম্পূর্ণ ফঁাকা হয়ে যায়।
পেলাইও এবং এলিসেন্দা অবশ্য এতে একটুও চিন্তিত অথবা দুঃখিত হয়নি, কারণ ইতিমধ্যে যে প্রচুর অর্থ তারা থুরথুরে ডানাওয়ালা বুড়ােকে দেখিয়ে উপার্জন করেছিল, তা দিয়ে তারা উঁচু তারের জাল দিয়ে ঘেরা অলিন্দ আর বাগান সমৃদ্ধ একটি চকমেলানাে দোতলা বাড়ি বানিয়ে ফেলেছিল। পেলাইও তার সাধ্যপালের কাজে ইস্তফা দিয়ে খরগােশ পালনের ক্ষেত্র বানিয়ে নিয়েছিল শহরের কাছেই | এলিসেন্দা অনেকগুলাে উঁচুখুরওয়ালা জুতাে আর রামধনু রঙের রেশমের বাহারি পােশাক বানিয়ে নিয়েছিল—যা তখনকার দিনে কেবল অভিজাত ও কাঙ্ক্ষিত মহিলারাই প্রতি রবিবারে পরত। খুব স্বাভাবিকভাবেই হাতে প্রচুর অর্থ আসায় ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়াে কমে তাদের মনােযােগ হারিয়ে ফেলেছিল। আর সে কারণেই খাঁচার ভিড় কমে যাওয়াতেও তারা কোনাে বিলাপ করেনি।
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি
প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান ১
কমবেশি ২০টি শব্দে উত্তর দাও।
১, পেলাইওদের বাড়ির সামনে থেকে ভিড় সরে যাওয়া সত্ত্বেও তারা বিলাপ করেনি কেন?
উত্তর: পেলাইওদের বাড়ির সামনে থেকে ভিড় সরে যাওয়া সত্ত্বেও তারা দুঃখিত হয়নি কারণ ইতিমধ্যেই তারা দর্শনিবাবদ প্রচুর টাকা কামিয়ে ফেলেছিল।
২. গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে গল্পে এলিসেন্দাদের নতুন বাড়িটা কেমন ছিল?
উত্তর: এলিসেন্দার নতুন দোতলা চকমেলানাে বাড়িটিতে ছিল অলিন্দ ও বাগান, জানলায় ছিল লােহার গরাদ এবং চারিদিক ছিল উঁচু তারের জাল দিয়ে ঘেরা।
৩, শহরের কাছে পেলাইও কী বানিয়েছিল?
উত্তর: ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে শহরের কাছে পেলাইও খরগােশ পালন করবার একটি ঘিঞ্জি গােলকধাঁধা বানিয়েছিল।
৪, এলিসেন্দা দর্শনি-বাবদ পাওয়া অর্থ থেকে কী তৈরি করেছিল?
উত্তর: এলিসেন্দা দর্শনি বাবদ পাওয়া অর্থ থেকে কতগুলাে উঁচু খুরওয়ালা ঢাকা জুতাে আর রামধনু রঙা রেশমি কাপড়ের পােশাক তৈরি করেছিল।
৫, পেলাইও, এলিসেন্দা কেন রাসায়নিক দিয়ে মুরগির খাঁচাটিকে ধুয়েছিল?
উত্তর: পেলাইও, এলিসেন্দা সম্ভবত গােবরের তূপের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য রাসায়নিক দিয়ে মুরগির খাঁচাটিকে ধুয়েছিল।
৬. কে দেবদূতের হৃদপিণ্ডের ধুকধুক শব্দ শােনার লােভ সামলাতে পারেনি?
উত্তর: যে ডাক্তার পেলাইও, এলিসেন্দার জলবসন্তে আক্রান্ত শিশুটির চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন তিনি দেবদূতের হৃদপিণ্ডের ধুকধুক শব্দ শােনার লােভ সামলাতে পারেননি।
৭, গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘ বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে গল্পে ডাক্তারের সবচেয়ে অবাক লেগেছিল কোন্ জায়গায়?
. উত্তর: আলােচ্য গল্পে ডাক্তারের সবচেয়ে অবাক লেগেছিল বৃদ্ধ লােকটির ডানা দুটির যুক্তি ও প্রকৃতি নিয়ে যা দেখলে মানুষেরই স্বাভাবিক ও আবশ্যিক অঙ্গ বলে মনে হয়।
৮, পেলাইও, এলিসেন্দার বাচ্চা কবে স্কুলে যাওয়া শুরু করে?
উত্তর: পেলাইও, এলিসেন্দার বাচ্চা রােদেবৃষ্টিতে মুরগির খাঁচা সম্পূর্ণ ধ্বংস হওয়ার কিছুকাল পরে স্কুলে যাওয়া শুরু করে।
৯. দেবদূত কেন নানা জিনিসপত্রে ধাক্কা খেত?
উত্তর: দেবদূত নানা জিনিসপত্রে ধাক্কা খেত কারণ বয়সের সাথে সাথে তার চোখ আরও ঘােলাটে হয়ে দৃষ্টিশক্তি কমে গিয়েছিল।
১০, গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে গল্পে কখন দেবদূত প্রলাপ বকে?
উত্তর: পেলাইওদের বাচ্চা যখন স্কুলে যেতে শুরু করল তখন রােজ রাতে ত্বর এলে বিকারের ঘােরে দেবদূত প্রলাপ বকত।
১১, গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে কখন পেলাইও, এলিসেন্দা খুব ভয় পেয়েছিল?
উত্তর: পেলাইও, এলিসেন্দা যখন ভেবেই নিয়েছিল দেবদূত মরতে বসেছে এবং মরা দেবদূতকে নিয়ে তাদের ভীষণ সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে, তখন তারা খুব ভয় পেয়েছিল।
১২. পেলাইও-এলিসেন্দার কখন মনে হয় যে, দেবদূত ক্রমশ সেরে উঠেছে?
উত্তর: আলােচ্য গল্পে ডিসেম্বরের গােড়ার দিককার প্রথম রােদুরে ভরা দিনগুলােয় পেলাইও, এলিসেন্দার মনে হয় যে, দেবদূত ক্রমশ সেরে উঠছে।
বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো mcq
১৩. প্রশ্ন দেবদূতের ডানায় গজিয়ে ওঠা নতুন পালক গুলি দেখতে কেমন ছিল?
উত্তর: দেবদূতের ডানায় গজিয়ে ওঠা নতুন পালকগুলি অনেকটা আর ধরা কাকাতুয়ার পালকের মতো অসংলগ্ন দেখতে ছিল।
১৪, গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘ বিশাল ডানাওয়ালা এক পুরপুরে বুড়াে’ গল্পে দেবদূত কী গুনগুন করত?
উত্তর: আকাশভরা ঝিকিমিকি তারার তলায় দেবদূত সিন্ধুরােলের পর গুনগুন করত।
১৫. পেঁয়াজকলির গুচ্ছ কাটা বন্ধ করে জানলায় গিয়ে এলিসেন্দা কী দেখতে পেল?
উত্তর: পেঁয়াজকলির গুচ্ছ কাটা বন্ধ করে জানলায় গিয়ে এলিসেন্দা দেখতে পায় দেবদূত প্রথমবারের জন্য ডানা ছড়িয়ে ওড়বার চেষ্টা করছে।
১৬, গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে সবজিবাগানে গভীর খাঁজ সৃষ্টি হয়েছিল কীভাবে?
উত্তর: দেবদূতের অগােছালাে ও অনভ্যস্ত ওড়বার অপচেষ্টায় তার নখগুলাে সবজিবাগানে গভীর খাঁজ কেটে দিয়েছিল।
১৭, কখন এলিসেন্দা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে? নিজেকে উড়ালটায় ধরে রেখেছিল।
উত্তর: এলিসেন্দা যেদিন দেখে যে, বৃদ্ধ লােকটি নড়বড়েভাবে ‘ এলােমেলােভাবে হলেও উড়তে পারল, সেদিন সে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
১৮. দেবদূত কীভাবে নিজেকে উড়ালটায় ধরে রেখেছিল?
উত্তর: দেবদূত মতিচ্ছন্ন জরাগ্রস্ত শকুনের ঝুঁকিতে ভরা ডানাঝাপটানি দিয়ে
১১. দেবদূতকে উড়ে যেতে দেখে এলিসেন্দার স্বস্তি হয়েছিল কেন?
উত্তর: দেবদূতকে উড়ে যেতে দেখে এলিসেন্দার স্বস্তি হয়েছিল কারণ সে তখন তার কাছে আর কোনাে উৎপাত বা জ্বালাতনের বিষয় ছিল না।
২০, গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে উড়ে যাবার শেষে দেবদূতকে কেমন দেখতে লেগেছিল?
উত্তর: উড়ে যাবার শেষে দেবদূতকে সমুদ্রের দিকচক্রবালে নিছকই কাল্পনিক একটা ফুটকির মতাে দেখতে লেগেছিল।
প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান কমবেশি ২০টি শব্দে উত্তর দাও।
১. বন্দি দেবদূতের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ায় কী হয়েছিল?
উত্তর: বন্দি দেবদূতের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ায় পেলাইওদের বাড়ির সামনে হাটবাজারের মতাে ভিড় এসে জমায়েত হয়েছিল যাদের সরানাের জন্য আবার ডাকতে হয়েছিল সেনাবাহিনীকে
২. গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ে গল্পে ভিড় সামলাতে প্রথমদিকে পেলাইওদের কী করতে হয়েছিল?
উত্তর: দেবদূতের খবর পেয়ে দেখতে আসা মারাত্মক ভিড় সামলাতে প্রথমদিকে পেলাইওদের সঙিনসমেত সেনাবাহিনীকে ডাকতে হয়েছিল।
৩, “শেষটায় তার মাথায় খেলে গেল”—কী খেলে গেল?
উত্তর: এত ভিড় আর তার জঞ্জাল পরিষ্কার করে ক্লান্ত এলিসেন্দার মাথ ফন্দি খেলে গেছিল যে—বুড়ােকে দেখার জন্য দর্শনি বাবদ পাঁচ সেন্ট ক আদায় করা যেতে পারে।
৪. “কৌতূহলীরা এল দূর-দূরান্তর থেকে।”—ডানাওয়ালা থুরথু বুড়ােকে দেখতে আসা কৌতূহলীদের দলে ছিল এমন দুজনের পরিচয় দাও ?
উত্তর: ডানাওয়ালা বুড়ােকে দেখতে আসা কৌতূহলীদের মধ্যে স্বাস্থ্যের সন্ধানে আসা কিছু দুর্ভাগা ও অশক্ত মানুষেরা, আর জন্ম থে হৃদয়ের অসুখে কাতর একটি মেয়ে।
৫. গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বু গল্পে বৃদ্ধের ডানাগুলাে দেখতে কেমন ছিল?
উত্তর: বৃদ্ধের ডানাগুলাে দেখতে ছিল কোনাে নক্ষত্র বাদুড়ের মতাে।
৬. গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে গল্পে ভ্রাম্যমাণ সার্কাস দল কী নিয়ে এসেছিল?
উত্তর: ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে দেবদূতকে দেখতে আসা ভ্রাম্যমাণ সার্কাস দল এক উড়ন্ত দড়বাজিকর নিয়ে এসেছিল।
৭. গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে গল্পে বেচারি মেয়েটির কী সমস্যা ছিল?
উত্তর: আলােচ্য গল্পে দেবদূতের দর্শনে আসা বেচারি মেয়েটির সমস্যা ছিল— সে জন্ম থেকেই তার বুকের ধুকধুক শুনে গুনতে গিয়ে সব সংখ্যা শেষ করে ফেলেছিল।
৮. গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে দেবদূতের কাছে কারা এসেছিল?
উত্তর: দেবদূতের কাছে অনেক দুর্ভাগা-অশত্তরা, জন্ম থেকেই হৃদয়ের অসুখে ভােগা এক বেচারি মেয়ে, ঘুমের সমস্যায় ভােগা পাের্তুগিজ, ঘুমে হাঁটা এক লােক এবং আরও অনেকে এসেছিল।
৯. বুড়াে লােকটিকে দেখতে আসা একটি পাের্তুগিজ লােকের ঘুমের সমস্যা হওয়ার কারণ কী ছিল?
উত্তর: দেবদূতকে দেখতে আসা পাের্তুগিজ ব্যক্তিটি ঘুমের সমস্যা হওয়ার কারণ হিসেবে বলেছিল যে, তারাদের কোলাহল কেবলই তার ঘুম চটিয়ে দেয়।
১০. ঘুমে-হাঁটা লােকের সমস্যা কী ছিল?
উত্তর: মার্কেজের ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পের ঘুমে হাঁটা লােকটি দিনে জেগে থাকা অবস্থায় যা কাজ করত, রাত্তিরে ঘুমের ঘােরে উঠে সেসব পণ্ড করে দিত।
১১. গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে সেই সময়ের কোন্ ঘটনা পৃথিবী কাপিয়ে দিচ্ছিল?
উত্তর: যখন পেলাইওদের বাড়িতে দেবদূতকে দেখতে আসার হিড়িক, তখন প্রচণ্ড ঝড়ঝায় জাহাজডুবির বিশৃঙ্খলার ঘটনা পৃথিবী কাপিয়ে দিচ্ছিল। .
১২. থুরথুরে বুড়াে লােকটিকে নিয়ে পেলাইও, এলিসেন্দা খুশি ছিল কেন?
উত্তর: : থুরথুরে বুড়াে লােকটিকে নিয়ে পেলাইও, এলিসেন্দা খুশি ছিল কারণ সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে তাদের ঘরগুলাে টাকায় ভরতি হয়ে উঠেছিল।
১৩, গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে তীর্থযাত্রীদের লাইন কতটা বড়াে হয়েছিল?
উত্তর: পেলাইও-এলিসেন্দার বাড়িতে দেবদূতকে দেখতে আসা তীর্থযাত্রীদের লাইন দিগন্ত পেরিয়ে কোথায় চলে গিয়েছিল তার সন্ধান ছিল না।
১৪, গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে দেবদূত কীসের চেষ্টায় সারাদিন কাটাত?
উত্তর: মার্কেজের গল্পে দেবদূত পেলাইওদের বাড়িতে ধার করে-পাওয়া আশ্রয়ে একটু আরাম পাওয়ার চেষ্টায় সারাদিন কাটাত।
১৫. ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে সেই দেবদূতকে ন্যাপথলিন খাওয়ানাের চেষ্টা করা হয় কেন?
উত্তর: দেবদূতকে ন্যাপথলিন খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয় কারণ ওদের জ্ঞানী প্রতিবেশীর মতে ন্যাপথলিন হলো দেবদূতদের উপযুক্ত খাদ্য।
১৬. গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো গল্পটি প্রায় মাথা খারাপের জোগাড় হয়েছিল কেন?
উত্তর: বুড়োকে দেবদূত মনে করে তাদের খাঁচায় সকলে মোমবাতি ও তেলের বাতি জ্বালিয়ে মানত করে যেত। সারাক্ষণ এই অসহ্য উত্তাপের জন্যই বুড়াের মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হয়েছিল।
১৭, গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে দেবদূতকে কী কী খাবার দেওয়া হয়েছিল?
উত্তর: মার্কেজের ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে দেবদূতকে ন্যাপথলিন, পাপীতাপীদের মানতের পােপের ভােজ ইত্যাদি খাবার দেওয়া হয়েছিল।
১৮. গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে মুরগিরা দেবদূতকে ঠোকরাত কেন?
উত্তর: ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে মুরগিরা দেবদূতকে ঠোকরাত, তার ডানায় গজিয়ে ওঠা পরভৃৎগুলাে খাওয়ার জন্য।
১৯. গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘ বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে কী কী ধরনের জ্বালাতন দেবদূতকে সহ্য করতে হয়েছিল?
উত্তর: আলােচ্য গল্পে দেখা যায় দেবদূতকে মুরগিরা ঠোকরাত, পঙ্গু লােকেরা তার ডানা থেকে পালক ছিড়ত, লােকেরা ঢিল ছুঁড়ত এবং তপ্ত লােহার ছ্যাকা দিত।
২০. বুড়াে লােকটির উদ্দেশে ঢিল ছোঁড়া হত কেন?
উত্তর: আলােচ্য গল্পের বুড়াে লােকটির উদ্দেশে ঢিল ছোঁড়া হত যাতে উত্যক্ত হয়ে সে উঠে দাঁড়ালে তাকে কেমন লাগে তা দেখা যায়।
২১. কখন সেই বুড়াে লােকটির চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এসেছিল?
উত্তর: যখন বুড়াে লােকটিকে তপ্ত লােহা দিয়ে ছ্যাকা দেওয়া হয়েছিল তখন সেই বুড়াে লােকটির চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এসেছিল।
২২. গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে বৃদ্ধ দেবদূতের কোন্ কাজটা এ জগতের বলে মনে হয়নি ওদের?
উত্তর: বৃদ্ধ দেবদূতের তীব্র আতঙ্কে দমকা ডানা ঝাপটানােটা এ জগতের বলে মনে হয়নি ভিড় করে থাকা সাধারণ মানুষদের।
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি
প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান ১
১, গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো গয়ে বৃষ্টির তৃতীয় দিনে পেলাইও ও এলিসেন্দা প্রচুর কাকড়া মারায় পেলাইওকে কী করতে হয়েছিল?
উত্তর: বৃষ্টির তৃতীয় দিনে পেলাইও ও এলিসেন্দা প্রচুর কাকড়া মারায় পেলাইওকে ভিজে একশা উঠোন পেরিয়ে সেগুলােকে সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হয়েছিল।
২. কাঁকড়াগুলােকে কেন সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হয়েছিল? উত্তর: পেলাইও আর এলিসেন্দা ভেবেছিল তাদের নবজাত সন্তানের জ্বর হয়েছে মরা কাঁকড়ার পচা গন্ধের জন্য। তাই সেগুলােকে সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলার দরকার হয়েছিল।
৩. পেলাইও দম্পতির নবজাত শিশুর কী কারণে জ্বর হয়েছিল বলে তারা অনুমান করেছিল?
উত্তর: ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে মরা কাকড়ার পচা বদ গন্ধ থেকে তাদের নবজাত শিশুর জ্বর হয়েছিল বলে পেলাইওরা অনুমান করেছিল।
৪, বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে সেই সময় বেলাভূমির বালিকে কেমন দেখাচ্ছিল?
উত্তর: বৃষ্টির দিনগুলিতে বেলাভূমির বালিকে কাদা আর পচা খােলকমাছের ভাপে সেদ্ধ হওয়া দগদগে এক স্থূপের মতাে দেখাচ্ছিল।
৫. দুপুরবেলার আলাে ম্লান হয়ে আসায় পেলাইওর কী অসুবিধা হয়েছিল?
উত্তর: দুপুরবেলার আলাে ম্লান হয়ে আসায় পেলাইওর উঠোনের পিছনের কোণে কাদার মধ্যে কী ছটফট করছে সেটা দেখতে অসুবিধা হয়েছিল।
৬, উঠোনের পেছনের কোণের কাছে গিয়ে পেলাইও কী দেখতে পায়?
উত্তর: উঠোনের পেছনের কোলে গিয়ে পেলাইও দেখতে পায় যে, একটি বুড়াে লােক কাদার মধ্যে মুখ গুঁজে উপুড় হয়ে শুয়ে ছটফট করে কাতরাচ্ছে।
৭. থুরথুরে বুড়ােটি উঠতে পারছিল না কেন?
উত্তর: কাদায় পড়ে থাকা থুরথুরে বুড়ােটি উঠতে পারছিল না কারণ তার বিশাল দুটি ডানায় সে কেবলই বাধা পাচ্ছিল।
৮, “সেই দুঃস্বপ্ন দেখে আঁতকে ওঠে—কোন্ দুঃস্বপ্নের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: পেলাইওদের বাড়ির উঠোনের পিছনের কোনায় কাদার মধ্যে মুখ খুঁজে উপুড় হয়ে পড়ে আছে এক থুরথুরে বুড়াে, ছটফট করছে, কাতরাচ্ছে এবং ওঠার চেষ্টা করলে তার বিশাল দুটো ডানায় কেবলই বাধা পাচ্ছে—এই দৃশ্যকেই দুঃস্বপ্ন বলা হয়েছে।
৯, বৃদ্ধ লােকটির অবস্থা কেমন ছিল?
উত্তর: মার্কেজের ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে বৃদ্ধ লােকটির অবস্থা ছিল ঝােড়াে কাকের প্র-প্রপিতামহের করুণ দশার মতাে।
১০. বুড়ােটির সম্বন্ধে পেলাইও ও এলিসেন্দা কী
উত্তর: পেলাইওএলিসেন্দার মতে এই থুরথুরে বুড়ােটি ছিল ‘ভিনদেশি জাহাজের নিঃসঙ্গ ভরাডুবি নাবিক।
১১. থুরথুরে বুড়াে লােকটির সেখানে আসার কী কারণ ছিল বলে প্রতিবেশিনী মনে করেছিল?
উত্তর: প্রতিবেশিনী মনে করেছিল থুরথুরে বুড়াে লােকটি যেহেতু দেবদূত, সেহেতু সে পেলাইও আর এলিসেন্দার বাচ্চাকে নিয়ে যেতে এসেছিল।
১২. “পড়ােশিনি তাদের বললে”—পড়ােশিনি কী বলেছিল?
উত্তর: পেলাইও আর এলিসেন্দাকে পড়ােশিনি বলেছিল যে, বুড়ােটি আসলে এক দেবদূত আর সে এসেছিল বাচ্চাটিকে নিয়ে যেতে। কিন্তু প্রবল বৃষ্টি তাকে পেড়ে ফেলেছে।
বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো গল্পের বিষয়বস্তু
তিন দিনের একটানা প্রবল বৃষ্টিতে পেলাইওদের বাড়ির উঠোন ছেয়ে যায় সামুদ্রিক কাকড়ায়। পেলাইও আর এলিসেন্দা মনে করে মরা কঁকড়ার পচা বদ গন্ধে তাদের নবজাত শিশুর জ্বর এসেছে। তাই পেলাইও সেই কাকড়া সমুদ্রে ফেলে দিয়ে আসে। ফেরার সময় পেলাইও উঠোনের পিছন কোপটায় আবিষ্কার করে বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ােকে। কাদার মধ্যে মুখ এঁজে উপুড় হয়ে শুয়ে সে ছটফট করছিল। পেলাইও এবং এলিসেন্দা সেই অদ্ভুতদর্শন এবং অদ্ভুত পােশাকের বুড়ােকে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। পরে তারা অনুমান করে যে, সে নিশ্চয়ই তুফানে ডুবে যাওয়া কোনাে ভিনদেশি জাহাজের নিঃসঙ্গ এক নাবিক। তাদের প্রতিবেশিনী তাকে ‘দেবদূত’ আখ্যা দেয়। এরপর তাকে দেখতে পাড়া প্রতিবেশীরা ভিড় জমানাে শুরু করে আসেন পাদরি গােনসাগাও। থুরথুরে বুড়াের কাছ থেকে উপযুক্ত কোনাে প্রত্যুত্তর না পেয়ে গােনসাগা তাকে ‘জোচ্চোর’, ‘ফেরেববাজ’ বলে সম্বােধন করেন। সকলকে তিনি ডানাওয়ালা বুড়াের বিষয়ে সাবধান করে দেন। চার্চের উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়ে গােনসাগা এই ডানাওয়ালা বুড়াের বিষয়ে মতামত চান। এদিকে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এলিসেন্দা উঠোনের চারপাশে বেড়া দিয়ে প্রতিটি দর্শনার্থীর কাছ থেকে দর্শনি বাবদ পাঁচ সেন্ট করে আদায় করা শুরু করে। অতৃপ্ত, অসুস্থ এবং অসুখী মানুষেরা নিজেদের স্বাস্থ্য ও সুখের সন্ধানে ভিড় করে ডানাওয়ালা বুড়াের খাঁচার সামনে। |
অন্যদিকে তাকে নিয়ে শােরগােলের মধ্যে ডানাওয়ালা বুড়াে কিন্তু থাকে প্রতিক্রিয়াহীন এবং উদাসীন। তাকে দেওয়া কোনাে খাবারই সে খায়নি, কারণ বেগুনভর্তা ছাড়া সে আর কিছুই খায় না। এমনকি তাকে টিল ছুঁড়লেও সে শান্তই থাকত। শুধু তপ্ত লােহা দিয়ে ছ্যাকা দেওয়া হলে সে আঁতকে জেগে উঠে দুর্বোধ্য ভাষায় প্রলাপ বকতে শুরু করেছিল, আর তার চোখ দিয়ে জলও বেরিয়ে এসেছিল। তার ডানার ঝাপটায় ধুলাের এক ঘূণিহাওয়ার সৃষ্টি হয়েছিল।
এরই মধ্যে মাকড়সায় রূপান্তরিত হয়ে যাওয়া একটি মেয়েকে নিয়ে এক ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী শহরে আসে| একদিকে দর্শনি বাবদ কম পয়সা, অন্যদিকে প্রশ্ন করার সুযােগ এবং উপযুক্ত উত্তর পেয়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণে সেই মাকড়সায় রূপান্তরিত মেয়েটির কাছে সকলে ভিড় জমায় এবং ফঁকা হয়ে যায় পেলাইওদের উঠোন। ইতিমধ্যে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা পেলাইওদের কাছেও থুরথুরে বুড়াের প্রয়ােজনীয়তা কমে যায়। অযত্নে অবহেলায় ছিড়ে যায় তার খাঁচার তার। উপেক্ষা আর গঞ্জনায় পেলাইওদের বাড়ির এখানে ওখানে ইতস্তত ঘুরে বেড়ায় সেই ডানাওয়ালা বুড়াে। এর মধ্যেই রােজ রাত্তিরে তার জ্বর হতে শুরু করে, আর পেলাইওরা চিন্তিত হয়ে পড়ে মরা দেবদূতকে নিয়ে তারা কী করবে—এই কথা ভেবে।
ডিসেম্বরের শুরুতেই ঘটে এক আশ্চর্যজনক ঘটনা| ডানাওয়ালা বুড়াের অসুখ ক্রমশ সেরে যায়। তার ডানায় পালক গজিয়ে ওঠে এবং এক সকালে এলিসেন্দা লক্ষ করে সেই ‘দেবদূত’ তার ডানা ছড়িয়ে ওড়ার চেষ্টা করছে। অগােছালাে এবং অনভ্যস্ত ছিল সেই ওড়ার চেষ্টা। কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই সে উড়তে পারে এবং শেষ বাড়িগুলাের মাথা ছাড়িয়েও উড়ে যায় ডানাওয়ালা বুড়াে। ক্রমশ দিগন্তে একটা ফুটকির মতাে হয়ে মিলিয়ে যায় সে।
বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো নামকরণ :
গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ-এর ‘ বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পটির কেন্দ্রে রয়েছে ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়াের চরিত্রটি। অদ্ভুত দর্শন এই চরিত্রটির পেলাইওদের উঠোনে হঠাৎ চলে আসা, তাকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের প্রবল কৌতূহল, নিজেদের মতাে করে তার সম্পর্কে ভেবে নেওয়া, সেই কৌতুহলী মানুষদের কাছ থেকে দর্শনি আদায় করে পেলাইওএলিসেন্দার রাতারাতি বড়ােলােক হয়ে যাওয়া—অজস্র ঘটনাপ্রবাহ এই গল্পে তৈরি হয়েছে। আসলে তুজুগ, সংস্কার, স্বার্থপরতা, সুযােগ সন্ধান, সরল বিশ্বাস—মানবসমাজের এইসব নানাধরনের চরিত্র-বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটানােই ছিল মার্কেজের লক্ষ্য। আর সেই উদ্দেশ্য পূরণে লেখকের অবলম্বন হয়েছে ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে। গল্পে ধর্মের ছড়ি-ঘােরানাের প্রবণতা স্পষ্ট হয়েছে পাদ্রে গােনসাগার আসার ফলে।
আর এর বিপরীতে নিজের বিচিত্র ভাষা অথবা শব্দ ব্যবহার, অত্যন্ত নিস্পৃহ স্বভাব এবং উদাসীনতা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে ডানাওয়ালা বুড়াে নিজেও পাঠকের মনােযােগ আকর্ষণ করে নিয়েছে। নিজে সক্রিয় না থেকেও কাহিনিতে যত দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে—তার মূলে রয়েছে এই ডানাওয়ালা বুড়াে। মাকড়সা হয়ে যাওয়া মেয়েটির আগমনে কাহিনিতে যে পরিবর্তনের সূচনা হয়, তাও আসলে থুরথুরে বুড়াের জীবননাট্যেরই এক দ্বন্দ্বময় পটভূমি। কাহিনির বিস্ময়কর সমাপ্তিও ঘটে থাকে থুরথুরে ডানাওয়ালা বুড়াের হাত ধরেই। ডিসেম্বরের গােড়াতেই প্রথম রােদুরের ছোঁয়ায় তার ডানায় পালক গজায়। কয়েকবার ব্যর্থ চেষ্টার পরে ডানা ছড়িয়ে দিগন্তে মিলিয়ে যায় থুরথুরে ডানাওয়ালা বুড়াে। মায়াবাস্তবতার অসামান্য বিস্তারে বাস্তবের তুচ্ছতাকে দক্ষতার সঙ্গে মার্কেজ তুলে ধরেন, আর সেই মায়াবাস্তবতার আধার হয়ে থাকে বিশাল ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়াে। তাই তার চরিত্রকে ভিত্তি করে গল্পের নামকরণ অত্যন্ত যথার্থ হয়েছে।